হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ : বাসে ভাঙচুর শিক্ষার্থীদের

গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে গতকালও সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে তারা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

এছাড়া রাজধানীর আবদুল্লাপুর এলাকায় কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে উত্তরার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। হাফ ভাড়ার দাবিতে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সড়কের সব যানবাহন বন্ধ করে দেয় তারা।

একই সঙ্গে ফার্মগেট, রামপুরা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় বিভিন্ন সড়কে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয় আমরা মনিটরিং করছি।’

গতকাল গণপরিবহনে ভাড়া অর্ধেক করার দাবিতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ৮-১০টি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ ও নিউমার্কেটসহ পুরো ধানমন্ডি এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জানান, গণপরিবহনে বিশেষ করে বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে কয়েকদিন ধরেই ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব এলাকার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে রাস্তা অবরোধ করছেন। শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। দুই কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরানো হয়।’

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাজধানীর সব বাস-মিনিবাসে পুলিশের ভাড়া নেয় না চালকরা। অথচ ছাত্রছাত্রীদের হাফ ভাড়া দিতে চাইলে দুর্ব্যবহার করা হয়। ঢাকায় টিউশনি করে চলতে হয়। গাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে সব টাকা চলে যায়।’

এ বিষয়ে ট্রান্সসিলভা পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম খোকন সংবাদকে বলেন, ‘শনিবার ট্রান্সসিলভার ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের হাফ ভাড়ার বিষয়ে সরকারি কোন নির্দেশনা নেই। তবুও অনেক বাস মালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে হাফ ভাড়া নেয়। এক্ষেত্রে ওয়েবিলে তা উল্লেখ করতে হয়। তবে হাফ ভাড়ার জন্য গাড়ি ভাঙচুর করা এটা অন্যায়। এ বিষয়টি মালিক সমিতির কাছে জানানো হয়।’

একই দাবিতে আবদুল্লাপুরে সড়ক অবরোধ করে উওরার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে উওরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ্ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ‘হাফ বাস ভাড়ার দাবিতে উত্তরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। হাফ ভাড়া বলতে ছাত্ররা ১০ টাকার বেশি ভাড়া দিতে চায় না। তারা দুপুর ২টা পর্যন্ত রাস্তায় ছিল। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’ তবে আন্দোলনরত অবস্থায় তারা কোন বাস বা গাড়ি ভাঙচুর করেনি বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি

গতকাল দুপুর ১টার দিকে রামপুরার ব্রিজসংলগ্ন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ সময় বাড্ডা-রামপুরা রোডে চলাচলকারী রাইদা, আকাশ, স্বাধীন, তরঙ্গ, রমজানের বাস থামিয়ে বাসচালকদের জেরা করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা পুলিশের কাছে ছয়টি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো- সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেলপথ) শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। সিটিং সার্ভিস বাতিল করার পরও ওয়েবিল কার্যক্রম চলছে। ওয়েবিল বন্ধ করে কাউন্টার ভিত্তিক টিকিট সিস্টেম চালু করতে হবে। নারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি গণপরিবহনে নয়টি আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে হবে ও ট্রাফিক ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করতে হবে। বাস সম্পূর্ণ থামিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাসে ওঠাতে হবে এবং নামাতে হবে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো কঠোর আইনের আওতায় বন্ধ করতে হবে।

রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১ , ৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ : বাসে ভাঙচুর শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

হাফ ভাড়ার দাবিতে গতকাল সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে শিক্ষার্থীরা গাড়ি ভাঙচুর করে -সংবাদ

গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে গতকালও সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে তারা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

এছাড়া রাজধানীর আবদুল্লাপুর এলাকায় কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে উত্তরার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। হাফ ভাড়ার দাবিতে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সড়কের সব যানবাহন বন্ধ করে দেয় তারা।

একই সঙ্গে ফার্মগেট, রামপুরা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় বিভিন্ন সড়কে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয় আমরা মনিটরিং করছি।’

গতকাল গণপরিবহনে ভাড়া অর্ধেক করার দাবিতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ৮-১০টি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ ও নিউমার্কেটসহ পুরো ধানমন্ডি এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জানান, গণপরিবহনে বিশেষ করে বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে কয়েকদিন ধরেই ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব এলাকার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে রাস্তা অবরোধ করছেন। শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। দুই কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরানো হয়।’

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাজধানীর সব বাস-মিনিবাসে পুলিশের ভাড়া নেয় না চালকরা। অথচ ছাত্রছাত্রীদের হাফ ভাড়া দিতে চাইলে দুর্ব্যবহার করা হয়। ঢাকায় টিউশনি করে চলতে হয়। গাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে সব টাকা চলে যায়।’

এ বিষয়ে ট্রান্সসিলভা পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম খোকন সংবাদকে বলেন, ‘শনিবার ট্রান্সসিলভার ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের হাফ ভাড়ার বিষয়ে সরকারি কোন নির্দেশনা নেই। তবুও অনেক বাস মালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে হাফ ভাড়া নেয়। এক্ষেত্রে ওয়েবিলে তা উল্লেখ করতে হয়। তবে হাফ ভাড়ার জন্য গাড়ি ভাঙচুর করা এটা অন্যায়। এ বিষয়টি মালিক সমিতির কাছে জানানো হয়।’

একই দাবিতে আবদুল্লাপুরে সড়ক অবরোধ করে উওরার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে উওরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ্ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ‘হাফ বাস ভাড়ার দাবিতে উত্তরার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। হাফ ভাড়া বলতে ছাত্ররা ১০ টাকার বেশি ভাড়া দিতে চায় না। তারা দুপুর ২টা পর্যন্ত রাস্তায় ছিল। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’ তবে আন্দোলনরত অবস্থায় তারা কোন বাস বা গাড়ি ভাঙচুর করেনি বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি

গতকাল দুপুর ১টার দিকে রামপুরার ব্রিজসংলগ্ন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ সময় বাড্ডা-রামপুরা রোডে চলাচলকারী রাইদা, আকাশ, স্বাধীন, তরঙ্গ, রমজানের বাস থামিয়ে বাসচালকদের জেরা করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা পুলিশের কাছে ছয়টি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো- সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেলপথ) শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। সিটিং সার্ভিস বাতিল করার পরও ওয়েবিল কার্যক্রম চলছে। ওয়েবিল বন্ধ করে কাউন্টার ভিত্তিক টিকিট সিস্টেম চালু করতে হবে। নারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি গণপরিবহনে নয়টি আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে হবে ও ট্রাফিক ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করতে হবে। বাস সম্পূর্ণ থামিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাসে ওঠাতে হবে এবং নামাতে হবে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো কঠোর আইনের আওতায় বন্ধ করতে হবে।