কুমিল্লায় কাউন্সিলর ও শ্রমিক লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

ওয়ার্ড কার্যালয়ে মুখোশধারীদের হামলা : গুলিবিদ্ধ অন্তত ৮

কুমিল্লার পাথরিয়াপাড়ায় অজ্ঞাত মুখোশধারীরা কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সোহেল এবং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ নেতা হরিপদ সাহাকে। গতকাল বিকেল পৌনে ৫টায় ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়ে মুখোশধারীদের হামলায় অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে কাউন্সিলর সোহেলের ‘নিহত হওয়ার’ খবরে পাথুরিয়াপাড়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কাউন্সিলরের সমর্থকরা বেশকিছু ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয় ওই ওয়ার্ডে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা পুলিশের সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে রাতে সর্বশেষ জানা গেছে।

পুলিশ বলছে, স্থানীয় এক অপরাধীর সঙ্গে কাউন্সিলরের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। ওই সন্ত্রাসীকে কাউন্সিলের এক প্রতিপক্ষ সেল্টার দিতো। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই বিরোধের যোগসূত্র থাকতে পারে। অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কাউন্সিলর সোহেল এলাকায় খুব জনপ্রিয় ছিলেন। তাই এলাকায় একটি গ্রুপ কাউন্সিলর সোহেলের এ ওয়ার্ডে আধিপত্য, বালু মহাল ও ঠিকাদারি কাজসহ নানা কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তাই তাকে হত্যার জন্য গুলি চালানো হয়।

হাসপতাল সূত্র জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা প্রথমে কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ অন্যদের মধ্যে ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ নেতা ও কাউন্সিলর সোহেলের রাজনৈতিক ঘনিষ্ট হরিপদ সাহা চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ৮টায় মারা যান।

কাউন্সিলর সোহেলের ভাগনে মোহাম্মদ হানিফ জানান, ‘সবাই আসরের নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ কানে আসে। গিয়ে দেখেন তার মামা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি নিজে তার মামাকে কাঁধে করে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’ পরে সেখানে চিকিৎসক তার মামাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে নগরের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম জানান, বিকেল ৪টার দিকে কাউন্সিলর সোহেল তার কার্যালয়ে বসেছিলেন। এ সময় মুখোশ পরা ১৫ থেকে ২০ জন তাকে গুলি করে। এতে কাউন্সিলর সোহেল লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আরও ৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। তারা হলেনÑ আউয়াল হোসেন রিজু, মো. জুয়েল, মো. রাসেল, মাজেদুল হক, মো. বাদল, সোহেল চৌধুরী ও শ্রমিকলীগ সভাপতি হরিপদ সাহা। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করতে করতে চলে যায়। পরে হরিপদ শাহা চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যান।

পুলিশের একটি গোয়েন্দা শাখার ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, কুমিল্লায় সন্ত্রাসী হামলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সৈয়দ সোহেল এবং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ সভাপতি হরিপদ সাহা নামে দুই নেতার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

ডিআইজি পদপর্যদার ওই কর্মকর্তা সংবাদকে আরও বলেন, বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কোতয়ালি মডেল থানার ১৭নং সুজা নগর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সৈয়দ সোহেল কার্যালয়ে ছিলেন। এ সময় ৫ থেকে ৬ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী কাউন্সিলর সোহেলকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে কাউন্সিলর সোহেলের মাথায়, পিঠে ও পায়ে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ কাউন্সিলর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তার কার্যালয়ে থাকা নগরীর শাহবাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ নেতা হরিপদ সাহাও গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের ওই সূত্র বলছে, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেলের সঙ্গে কুমিল্লার স্থানীয় সন্ত্রাসী শাহ আলমের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। কাউন্সিলর সোহেলের প্রতিপক্ষ স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ী আমির নামের এক ব্যক্তি। আমিরই কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহ আলমকে লালন-পালন করতেন। শাহ আলমের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্যের সেল্টারদাতা ওই আমির। শাহ আলমের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে ১৬ থেকে ১৭টি মামলা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ত্রাসী শাহ আলমের বাহিনীই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আর এর নেপথ্যে ফার্নিচার ব্যবসায়ী আমিরের ইন্ধন থাকতে পারে। ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহ আলমের বাবাও একজন সন্ত্রাসী ছিলেন। ক্রসফায়ারে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।’

আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, সোহেল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর প্যানেল মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য। মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কের দয়িত্বও তিনি পালন করছেন। কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে সোহেল এর আগেও এক মেয়াদে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন। ওই ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ সভাপতি হরিপদ সাহা সাহাপাড়ার রমনী মোহন সাহার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর সোহেল গতকাল বিকেলে তার পাথরিয়াপাড়া থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে বসা ছিলেন। এ সময় মুখোশ পরিহিত ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল কাউন্সিলরের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে কাউন্সিলর সোহেলসহ কয়েকজন গুলিবিব্ধ হন। সন্ত্রাসীরা কাউন্সিলরসহ কয়েকজনকে গুলি করার পর আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা।

কাউন্সিলরকে গুলি করার ঘটনা স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করার পর শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। দুই নেতার মৃত্যুর খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এ ঘটনার পর সুজানগর পাথুরিয়াপাড়া, বউ বাজার, সংরাইশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কাউন্সিলর ও হরিপদ সাহার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাতে শত শত লোকজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় জমায়। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেন, খুব কাছ থেকে ওই কাউন্সিলরকে গুলি করা হয়েছে। পিস্তলের দুটি গুলি তার মাথায়, দুটি বুকে, অন্য চারটি গুলি পেট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে। এ ঘটনায় এলাকায় কয়েকটি বাসা বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাব পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজিত শত শত জনতা পাথরিয়াপাড়া সড়কে বিক্ষোভ করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আহাম্মদ সোহেল নগরীর সুজানগর এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে। ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৭ সালে তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি প্যানেল মেয়র ছিলেন।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেন, সোহেল আমাদের দলের একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তার মাথা ও শরীরে অন্তত ১০টি গুলি করা হয়েছে। সোহেল তার এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। এ হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত রয়েছে আমরা হত্যার বিচার চাই।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, কাউন্সিলর সোহেলের উপর কেন গুলি করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, কুমিল্লায় গুলির ঘটনায় একজন কাউন্সিলরসহ দুইজন নিহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

কুমিল্লায় কাউন্সিলর ও শ্রমিক লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

ওয়ার্ড কার্যালয়ে মুখোশধারীদের হামলা : গুলিবিদ্ধ অন্তত ৮

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ঢাকা ও জেলা বার্তা পরিবেশক কুমিল্লা

image

কাউন্সিলর ও শ্রমিক লীগ নেতা হত্যার পর কার্যালয়ের সামনে সমর্থকদের ভিড় -সংবাদ

কুমিল্লার পাথরিয়াপাড়ায় অজ্ঞাত মুখোশধারীরা কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সোহেল এবং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ নেতা হরিপদ সাহাকে। গতকাল বিকেল পৌনে ৫টায় ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়ে মুখোশধারীদের হামলায় অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে কাউন্সিলর সোহেলের ‘নিহত হওয়ার’ খবরে পাথুরিয়াপাড়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কাউন্সিলরের সমর্থকরা বেশকিছু ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয় ওই ওয়ার্ডে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা পুলিশের সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে রাতে সর্বশেষ জানা গেছে।

পুলিশ বলছে, স্থানীয় এক অপরাধীর সঙ্গে কাউন্সিলরের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। ওই সন্ত্রাসীকে কাউন্সিলের এক প্রতিপক্ষ সেল্টার দিতো। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই বিরোধের যোগসূত্র থাকতে পারে। অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কাউন্সিলর সোহেল এলাকায় খুব জনপ্রিয় ছিলেন। তাই এলাকায় একটি গ্রুপ কাউন্সিলর সোহেলের এ ওয়ার্ডে আধিপত্য, বালু মহাল ও ঠিকাদারি কাজসহ নানা কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তাই তাকে হত্যার জন্য গুলি চালানো হয়।

হাসপতাল সূত্র জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা প্রথমে কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ অন্যদের মধ্যে ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ নেতা ও কাউন্সিলর সোহেলের রাজনৈতিক ঘনিষ্ট হরিপদ সাহা চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ৮টায় মারা যান।

কাউন্সিলর সোহেলের ভাগনে মোহাম্মদ হানিফ জানান, ‘সবাই আসরের নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ কানে আসে। গিয়ে দেখেন তার মামা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি নিজে তার মামাকে কাঁধে করে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’ পরে সেখানে চিকিৎসক তার মামাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে নগরের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম জানান, বিকেল ৪টার দিকে কাউন্সিলর সোহেল তার কার্যালয়ে বসেছিলেন। এ সময় মুখোশ পরা ১৫ থেকে ২০ জন তাকে গুলি করে। এতে কাউন্সিলর সোহেল লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আরও ৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। তারা হলেনÑ আউয়াল হোসেন রিজু, মো. জুয়েল, মো. রাসেল, মাজেদুল হক, মো. বাদল, সোহেল চৌধুরী ও শ্রমিকলীগ সভাপতি হরিপদ সাহা। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করতে করতে চলে যায়। পরে হরিপদ শাহা চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যান।

পুলিশের একটি গোয়েন্দা শাখার ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, কুমিল্লায় সন্ত্রাসী হামলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সৈয়দ সোহেল এবং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ সভাপতি হরিপদ সাহা নামে দুই নেতার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

ডিআইজি পদপর্যদার ওই কর্মকর্তা সংবাদকে আরও বলেন, বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কোতয়ালি মডেল থানার ১৭নং সুজা নগর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সৈয়দ সোহেল কার্যালয়ে ছিলেন। এ সময় ৫ থেকে ৬ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী কাউন্সিলর সোহেলকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে কাউন্সিলর সোহেলের মাথায়, পিঠে ও পায়ে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ কাউন্সিলর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তার কার্যালয়ে থাকা নগরীর শাহবাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ নেতা হরিপদ সাহাও গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের ওই সূত্র বলছে, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেলের সঙ্গে কুমিল্লার স্থানীয় সন্ত্রাসী শাহ আলমের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। কাউন্সিলর সোহেলের প্রতিপক্ষ স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ী আমির নামের এক ব্যক্তি। আমিরই কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহ আলমকে লালন-পালন করতেন। শাহ আলমের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্যের সেল্টারদাতা ওই আমির। শাহ আলমের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে ১৬ থেকে ১৭টি মামলা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ত্রাসী শাহ আলমের বাহিনীই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আর এর নেপথ্যে ফার্নিচার ব্যবসায়ী আমিরের ইন্ধন থাকতে পারে। ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহ আলমের বাবাও একজন সন্ত্রাসী ছিলেন। ক্রসফায়ারে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।’

আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, সোহেল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর প্যানেল মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য। মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কের দয়িত্বও তিনি পালন করছেন। কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে সোহেল এর আগেও এক মেয়াদে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন। ওই ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ সভাপতি হরিপদ সাহা সাহাপাড়ার রমনী মোহন সাহার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর সোহেল গতকাল বিকেলে তার পাথরিয়াপাড়া থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে বসা ছিলেন। এ সময় মুখোশ পরিহিত ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল কাউন্সিলরের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে কাউন্সিলর সোহেলসহ কয়েকজন গুলিবিব্ধ হন। সন্ত্রাসীরা কাউন্সিলরসহ কয়েকজনকে গুলি করার পর আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা।

কাউন্সিলরকে গুলি করার ঘটনা স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করার পর শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। দুই নেতার মৃত্যুর খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এ ঘটনার পর সুজানগর পাথুরিয়াপাড়া, বউ বাজার, সংরাইশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কাউন্সিলর ও হরিপদ সাহার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাতে শত শত লোকজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় জমায়। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেন, খুব কাছ থেকে ওই কাউন্সিলরকে গুলি করা হয়েছে। পিস্তলের দুটি গুলি তার মাথায়, দুটি বুকে, অন্য চারটি গুলি পেট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে। এ ঘটনায় এলাকায় কয়েকটি বাসা বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাব পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজিত শত শত জনতা পাথরিয়াপাড়া সড়কে বিক্ষোভ করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আহাম্মদ সোহেল নগরীর সুজানগর এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে। ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৭ সালে তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি প্যানেল মেয়র ছিলেন।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেন, সোহেল আমাদের দলের একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তার মাথা ও শরীরে অন্তত ১০টি গুলি করা হয়েছে। সোহেল তার এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। এ হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত রয়েছে আমরা হত্যার বিচার চাই।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, কাউন্সিলর সোহেলের উপর কেন গুলি করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, কুমিল্লায় গুলির ঘটনায় একজন কাউন্সিলরসহ দুইজন নিহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।