বিচারিক দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া মোছা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা জব্দ (সিজ) করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত এবং ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর সাবেক বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার অদ্য সকাল ৯টা ৩০ ঘটিকায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগে সশরীরে উপস্থিত হন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ অদ্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১নং ক্রমিকের মামলায় শুনানি শেষে তার ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা ‘সিজ (ংবরুব) করা হয়েছে’ মর্মে আদেশ প্রদান করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।”

এর আগে স্থগিতাদেশ থাকার পরও ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে জামিন দেয়ায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর সাবেক বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারকে তলব করে আপিল বিভাগ। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল ৯টার দিকে বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার আপিল বিভাগে হাজির হন।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তার বিষয়ে রুদ্ধদ্বার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টার দিকে শুনানি শেষ হয়। এ সময় কেউই এজলাস কক্ষে ঢুকতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর বিচারক কামরুন্নাহার কোর্টের ভিন্ন একটি দরজা দিয়ে বের হয়ে যান। তবে এ বিষয়ে আদেশের বিষয়টি অনেক সময় পরে বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান।

যে মামলায় জামিন নিয়ে কামরুন্নাহারকে তলব করা হয়েছিল, সেই ফৌজদারি আবেদনটি গতকাল ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম সিকদার’ শিরোনামে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১নং ক্রমিকে ছিল। মামলা থেকে জানা যায়, ধর্ষণের মামলায় ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট থেকে জামিন পান বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাবেক অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক আসলাম সিকদার। ওই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত ওই বছরের ২৫ জুন জামিন স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। আবেদনটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ২ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ ওই আসামিকে জামিন দেয়। সর্বোচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের পরও আসামিকে জামিন দেয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১২ মার্চ আপিল বিভাগসংশ্লিষ্ট বিচারককে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে আসলাম সিকদারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মামলাটি আপিল বিভাগের তালিকায় আসে।

এদিকে, গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে বিচারক কামরুন্নাহার ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে পুলিশকে ‘পরামর্শ’ দেয়। রায়ের পর্যবেক্ষণ দেয়ার পর সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় ১৪ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি তাকে বিচার কাজ থেকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করেন। যদিও ৪৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায়ে কোন পর্যবেক্ষণ দেননি বিচারক।