জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত দু-একদিনের মধ্যে

আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

গাজীপুরের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় তার মেয়র পদ থাকবে কিনা, সে বিষয়ে দু’য়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হওয়ায় জাহাঙ্গীর আর পদে থাকতে পারেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘আইনে যে সমস্ত বিষয় আছে, তা পর্যালোচনা করার পর বলা যাবে। আইনটা দেখা হচ্ছে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট আছে, তারা পর্যালোচনা করছে। দুই-একদিন লাগতে পারে।’

সেক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনা হোক, তারপরে বলব। মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করবে। আইনগতভাবে তার অবস্থানটা কী হবে এখন, সেটা পর্যালোচনা করছি।’

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম। বঙ্গবন্ধু ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ গত শুক্রবার তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।

নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে মেয়রদের কেউ আদালতে দ-িত হলে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে তাকে অপসারণের বিধান রয়েছে। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কৃত হলে কী হবে, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।

তাছাড়া দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরুর পর গত পাঁচ বছরে কোন মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম। ফলে সরকারের কর্মকর্তারা বার বার আইন পর্যালোচনা করে দেখার কথা বলছেন।

টক অব দ্যা টাউন

গাজীপুর প্রতিনিধির জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের ঘটনাটি এখনও গাজীপুরে টব অব দ্যা টাউন। শুক্রবার বহিষ্কারাদেশের রাতে এবং পরদিন শনিবার তার পক্ষ-বিপক্ষ দল সরব থাকলেও গত দুইদিন কোন পক্ষের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কার এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল কি হতে পারে অথবা জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্য কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তা নিয়ে সরগরম সমগ্র গাজীপুর। এমনকি ট্রেনে বা বাসে চলতি পথের যাত্রীদের এ নিয়ে আলোচনার কমতি নেই। মহানগরসহ গাজীপুর জেলার সর্বত্র চায়ের দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট এমন সরব ছোটখাটো লোকসমাগমে চলছে জাহাঙ্গীরকে সরব আলোচনা। ভাগ্যবিধাতা জাহাঙ্গীর আলমকে কোন পথে নিয়ে যায় সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয়। তবে মেয়র সমর্থকরা সবাই বিমর্ষ, অনেকেই মূষড়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীরের ভাগ্য বিপর্যয়ের পরিণতি নিয়ে। অপরদিকে মেয়রবিরোধী শিবিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই।

এদিকে বহিষ্কারের পর চারদিন অতিবাহিত হলেও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম যথারীতি নিরবতা পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কর্মী-সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। দল বা দলের নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা পালন করার কথা তিনি বলে আসছেন বার বার। গতকাল প্রায় সমস্ত দিনই নগরীর ছয়দানা এলাকায় বাসভবনে অবস্থান করেন মেয়র। সন্ধ্যার দিকে তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বিরোধী শিবিরে চাঙ্গা ভাবের পাশাপাশি জল্পনা-কল্পনা চলছে জাহাঙ্গীরের হারানো পদে কে হচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। এক্ষেত্রে তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে।

তারা হচ্ছেন- মো. আতাউল্লাহ মন্ডল, মো. মতিউর রহমান মতি ও এসএম মোকছেদ আলম। প্রথম দুইজন মেয়রবিরোধী শিবিরে আর তৃতীয়জন মেয়রের লোক হিসেবে পরিচিত। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্যবিপর্যয়ের বদৌলতে কার ভাগ্যে ভারপ্রাপ্তের তকমা জুটবে সেটাও বড় দাগের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে রোববার রাতে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেখা যায় গুজবটি নিতান্তই গুজব। মূলত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ললাট লিখন কী সেটা অজানার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নির্ভর করলেও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম যে ধরাশায়ী হয়েছেন তা বহাল থাকবে বলে বিরোধী পক্ষের ধারণা। তবে মহানগরীর উন্নয়নের স্বার্থ অব্যাহত রাখতে মেয়র জাহাঙ্গীরের এ বিপর্যয় কেটে যাবে বলে সমর্থকদের ধারণা।

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত দু-একদিনের মধ্যে

আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গাজীপুরের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় তার মেয়র পদ থাকবে কিনা, সে বিষয়ে দু’য়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হওয়ায় জাহাঙ্গীর আর পদে থাকতে পারেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘আইনে যে সমস্ত বিষয় আছে, তা পর্যালোচনা করার পর বলা যাবে। আইনটা দেখা হচ্ছে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট আছে, তারা পর্যালোচনা করছে। দুই-একদিন লাগতে পারে।’

সেক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনা হোক, তারপরে বলব। মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করবে। আইনগতভাবে তার অবস্থানটা কী হবে এখন, সেটা পর্যালোচনা করছি।’

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম। বঙ্গবন্ধু ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ গত শুক্রবার তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।

নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে মেয়রদের কেউ আদালতে দ-িত হলে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে তাকে অপসারণের বিধান রয়েছে। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কৃত হলে কী হবে, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।

তাছাড়া দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরুর পর গত পাঁচ বছরে কোন মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম। ফলে সরকারের কর্মকর্তারা বার বার আইন পর্যালোচনা করে দেখার কথা বলছেন।

টক অব দ্যা টাউন

গাজীপুর প্রতিনিধির জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের ঘটনাটি এখনও গাজীপুরে টব অব দ্যা টাউন। শুক্রবার বহিষ্কারাদেশের রাতে এবং পরদিন শনিবার তার পক্ষ-বিপক্ষ দল সরব থাকলেও গত দুইদিন কোন পক্ষের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কার এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল কি হতে পারে অথবা জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্য কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তা নিয়ে সরগরম সমগ্র গাজীপুর। এমনকি ট্রেনে বা বাসে চলতি পথের যাত্রীদের এ নিয়ে আলোচনার কমতি নেই। মহানগরসহ গাজীপুর জেলার সর্বত্র চায়ের দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট এমন সরব ছোটখাটো লোকসমাগমে চলছে জাহাঙ্গীরকে সরব আলোচনা। ভাগ্যবিধাতা জাহাঙ্গীর আলমকে কোন পথে নিয়ে যায় সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয়। তবে মেয়র সমর্থকরা সবাই বিমর্ষ, অনেকেই মূষড়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীরের ভাগ্য বিপর্যয়ের পরিণতি নিয়ে। অপরদিকে মেয়রবিরোধী শিবিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই।

এদিকে বহিষ্কারের পর চারদিন অতিবাহিত হলেও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম যথারীতি নিরবতা পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কর্মী-সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। দল বা দলের নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা পালন করার কথা তিনি বলে আসছেন বার বার। গতকাল প্রায় সমস্ত দিনই নগরীর ছয়দানা এলাকায় বাসভবনে অবস্থান করেন মেয়র। সন্ধ্যার দিকে তিনি ঢাকায় যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বিরোধী শিবিরে চাঙ্গা ভাবের পাশাপাশি জল্পনা-কল্পনা চলছে জাহাঙ্গীরের হারানো পদে কে হচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। এক্ষেত্রে তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে।

তারা হচ্ছেন- মো. আতাউল্লাহ মন্ডল, মো. মতিউর রহমান মতি ও এসএম মোকছেদ আলম। প্রথম দুইজন মেয়রবিরোধী শিবিরে আর তৃতীয়জন মেয়রের লোক হিসেবে পরিচিত। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্যবিপর্যয়ের বদৌলতে কার ভাগ্যে ভারপ্রাপ্তের তকমা জুটবে সেটাও বড় দাগের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে রোববার রাতে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেখা যায় গুজবটি নিতান্তই গুজব। মূলত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ললাট লিখন কী সেটা অজানার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নির্ভর করলেও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম যে ধরাশায়ী হয়েছেন তা বহাল থাকবে বলে বিরোধী পক্ষের ধারণা। তবে মহানগরীর উন্নয়নের স্বার্থ অব্যাহত রাখতে মেয়র জাহাঙ্গীরের এ বিপর্যয় কেটে যাবে বলে সমর্থকদের ধারণা।