সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে
দেশে গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ প্রায় সাত শতাংশ বেড়েছে। তবে মৃত্যু কিছুটা কমেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’। ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করাসহ ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এখন পর্যন্ত ১৩টি দেশে করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’র সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গ নিয়ে গঠিত দেশটির একটি প্রদেশে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় পাওয়া নমুনায় দেখা গেছে, এ সপ্তাহের মাঝামাঝি দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১০০ জনের, যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ ‘ওমিক্রন’ ধরনে আক্রান্ত।
এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্তসংলগ্ন দেশ বতসোয়ানায় ১৯ জনের, যুক্তরাজ্যে তিনজনের শরীরে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জার্মানির মিউনিখ বিমানবন্দরে যাওয়া দু’জনের দেহে ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডসে যাওয়া কয়েকশ যাত্রীর নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ডেনমার্কে যাওয়া দুজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। বেলজিয়ামেও একজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
ইতালিতে একজনের দেহে ওমিক্রন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ওই ব্যক্তির দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আগে তিনি গোটা দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। চেক প্রজাতন্ত্রে একজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানিয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যম।
ইসরায়েলে একজনের শরীরে ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। হংকংয়ে সন্দেহভাজন আক্রান্ত হিসেবে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা দুজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত দুজন শনাক্ত হয়েছেন। তারা দুজনই সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
সম্প্রতি নাইজেরিয়া সফর করা কানাডার দুই ব্যক্তির দেহে ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
১৫ দফা নির্দেশনা
বিভিন্ন দেশে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ধরন ‘ওমিক্রন’র সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনার কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ওমিক্রন সম্পর্কে সতর্ক করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি ও লেসোথোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশ আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, করোনার ‘ডেল্টা’ ধরনের চেয়ে নতুন ‘ওমিক্রন’ আরও বেশি সংক্রামক। এজন্য এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো- ১. দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো এবং ডব্লিউএইচও সামনে যেসব আক্রান্ত দেশের নাম ঘোষণা করবে, সেসব দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।
২. সব ধরনের (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে,
৩. প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে।
৫. সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটনস্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বউভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে।
৬. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা, প্রাক্?-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
১২. করোনার উপসর্গ বা লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজেটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে।
১৪. অফিসে প্রবেশ ও অবস্থানকালে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. করোনা নিয়ন্ত্রণ ও কমানোর জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচার চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
এক সপ্তাহে দেশে সংক্রমণ ৬ : ৯ শতাংশ বেড়েছে
দেশে গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
আর গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২২৭ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনায় এই সময়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে দেশে মোট এক হাজার ৬৯৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল এক হাজার ৫৮৭ জন। এ হিসেবে এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।
আর গত এক সপ্তাহে করোনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আগের সপ্তাহে তা ছিল ৩১ জন। এ হিসাবে এক সপ্তাহে মৃত্যু ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।
এক সপ্তাহে মারা যাওয়া ২৫ জনের মধ্যে ১৩ জনের কোন না কোন ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি বা কোমরবিডিটি ছিল। এর মধ্যে ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ ডায়াবেটিসে, ৫০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ২৫ শতাংশের বক্ষব্যাধি রোগ ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ হাজার ৯৮০ জন মারা গেছেন।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৮০ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭ জন।
গত একদিনে শনাক্ত রোগীর মধ্যে ১৭৫ জনই ঢাকা বিভাগের। এদিন মৃত্যু হওয়া দু’জনও ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। গত একদিনে দেশের ৩৬টি জেলায় কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।
গত এক দিনে সারাদেশে মোট ১৬ হাজার ৮৯১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি আট লাখ ৬৮ হাজার ৯৪৯টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা আগের দিন এক দশমিক ০৩ শতাংশ ছিল। আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৮ শতাংশ।
একদিনে মৃত্যু হওয়া দু’জনই পুরুষ। দুজনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ , ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৩
সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দেশে গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ প্রায় সাত শতাংশ বেড়েছে। তবে মৃত্যু কিছুটা কমেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’। ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করাসহ ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এখন পর্যন্ত ১৩টি দেশে করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’র সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গ নিয়ে গঠিত দেশটির একটি প্রদেশে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় পাওয়া নমুনায় দেখা গেছে, এ সপ্তাহের মাঝামাঝি দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১০০ জনের, যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ ‘ওমিক্রন’ ধরনে আক্রান্ত।
এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্তসংলগ্ন দেশ বতসোয়ানায় ১৯ জনের, যুক্তরাজ্যে তিনজনের শরীরে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জার্মানির মিউনিখ বিমানবন্দরে যাওয়া দু’জনের দেহে ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডসে যাওয়া কয়েকশ যাত্রীর নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ডেনমার্কে যাওয়া দুজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। বেলজিয়ামেও একজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
ইতালিতে একজনের দেহে ওমিক্রন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ওই ব্যক্তির দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আগে তিনি গোটা দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। চেক প্রজাতন্ত্রে একজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানিয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যম।
ইসরায়েলে একজনের শরীরে ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। হংকংয়ে সন্দেহভাজন আক্রান্ত হিসেবে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা দুজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত দুজন শনাক্ত হয়েছেন। তারা দুজনই সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
সম্প্রতি নাইজেরিয়া সফর করা কানাডার দুই ব্যক্তির দেহে ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
১৫ দফা নির্দেশনা
বিভিন্ন দেশে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ধরন ‘ওমিক্রন’র সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনার কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ওমিক্রন সম্পর্কে সতর্ক করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি ও লেসোথোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশ আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, করোনার ‘ডেল্টা’ ধরনের চেয়ে নতুন ‘ওমিক্রন’ আরও বেশি সংক্রামক। এজন্য এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো- ১. দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো এবং ডব্লিউএইচও সামনে যেসব আক্রান্ত দেশের নাম ঘোষণা করবে, সেসব দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।
২. সব ধরনের (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে,
৩. প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে।
৫. সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটনস্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বউভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে।
৬. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা, প্রাক্?-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
১২. করোনার উপসর্গ বা লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজেটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে।
১৪. অফিসে প্রবেশ ও অবস্থানকালে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. করোনা নিয়ন্ত্রণ ও কমানোর জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচার চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
এক সপ্তাহে দেশে সংক্রমণ ৬ : ৯ শতাংশ বেড়েছে
দেশে গত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
আর গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২২৭ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনায় এই সময়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে দেশে মোট এক হাজার ৬৯৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল এক হাজার ৫৮৭ জন। এ হিসেবে এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।
আর গত এক সপ্তাহে করোনায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আগের সপ্তাহে তা ছিল ৩১ জন। এ হিসাবে এক সপ্তাহে মৃত্যু ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।
এক সপ্তাহে মারা যাওয়া ২৫ জনের মধ্যে ১৩ জনের কোন না কোন ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি বা কোমরবিডিটি ছিল। এর মধ্যে ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ ডায়াবেটিসে, ৫০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ২৫ শতাংশের বক্ষব্যাধি রোগ ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ হাজার ৯৮০ জন মারা গেছেন।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৮০ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭ জন।
গত একদিনে শনাক্ত রোগীর মধ্যে ১৭৫ জনই ঢাকা বিভাগের। এদিন মৃত্যু হওয়া দু’জনও ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। গত একদিনে দেশের ৩৬টি জেলায় কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।
গত এক দিনে সারাদেশে মোট ১৬ হাজার ৮৯১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি আট লাখ ৬৮ হাজার ৯৪৯টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা আগের দিন এক দশমিক ০৩ শতাংশ ছিল। আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৮ শতাংশ।
একদিনে মৃত্যু হওয়া দু’জনই পুরুষ। দুজনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।