প্রতিবাদের মুখে পদ ছাড়লেন শেরপুর আ’লীগের সা. সম্পাদক

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর ও বেফাঁস বক্তব্য দিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার দলীয় পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া। নেতাকর্মীসহ দলীয় সর্মথকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে তিনি দলীয় পদ থেকে রোবরার রাতে পদত্যাগপত্র জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন। গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু পদত্যাগপত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া একটি ঘরোয়া আলোচনায় নির্বাচন বিষয়ে বির্তকিত বক্তব্য দেন। এতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য দেন।

ইউপি নির্বাচনের গত সপ্তাহে ১৫ মিনিটের একটি অডিও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এর পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। গত শুক্রবার শেরপুর মাদ্রাসা মাঠ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ লোকজন বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার ধৃষ্ঠতাপূর্ণ ও আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া ওই আওয়ামী লীগ নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ ও সড়ক অবরোধও হয়। পরের দিনও বিক্ষোভসহ কুশপুত্তলিকা দাহ হয়। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই ওই আওয়ামী লীগ নেতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও কটূক্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বহে ও বিক্ষোভ পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল।

এ পরিস্থিতিতে রোববার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এই বির্তকিত সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনি পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।

মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের সভায় এটি নিয়ে আলোচনা ও অনুমোদন হতে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু পদত্যাগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তরিত তার জানা নেই। উল্লেখ, আহসান হাবিব আম্বিয়া দু’দফা শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রায় ৮ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

মূলত শেরপুর উপজেলার ইউপি নির্বাচনে খানপুর ইউনিয়নে তার ভাই নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তাপ ছিল। এই নির্বাচনের আগেও আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ চলে আসছিল বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। তবে সর্বশেষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাকর ও বেসামাল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন পর্যায় থেকে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ক্রমশঃ জোড়ালো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যদানকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে শারীরিক ও পারিবারিক বিষয় উল্লেখ করে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার অনুরোধ করেছেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জানিয়েছেন। এদিকে আহসান হাবিব আম্বিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ , ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য

প্রতিবাদের মুখে পদ ছাড়লেন শেরপুর আ’লীগের সা. সম্পাদক

প্রতিনিধি, বগুড়া

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর ও বেফাঁস বক্তব্য দিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার দলীয় পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া। নেতাকর্মীসহ দলীয় সর্মথকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে তিনি দলীয় পদ থেকে রোবরার রাতে পদত্যাগপত্র জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন। গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু পদত্যাগপত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া একটি ঘরোয়া আলোচনায় নির্বাচন বিষয়ে বির্তকিত বক্তব্য দেন। এতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য দেন।

ইউপি নির্বাচনের গত সপ্তাহে ১৫ মিনিটের একটি অডিও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এর পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। গত শুক্রবার শেরপুর মাদ্রাসা মাঠ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ লোকজন বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার ধৃষ্ঠতাপূর্ণ ও আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া ওই আওয়ামী লীগ নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ ও সড়ক অবরোধও হয়। পরের দিনও বিক্ষোভসহ কুশপুত্তলিকা দাহ হয়। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই ওই আওয়ামী লীগ নেতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও কটূক্তি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বহে ও বিক্ষোভ পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল।

এ পরিস্থিতিতে রোববার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এই বির্তকিত সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনি পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।

মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের সভায় এটি নিয়ে আলোচনা ও অনুমোদন হতে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু পদত্যাগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তরিত তার জানা নেই। উল্লেখ, আহসান হাবিব আম্বিয়া দু’দফা শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রায় ৮ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

মূলত শেরপুর উপজেলার ইউপি নির্বাচনে খানপুর ইউনিয়নে তার ভাই নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তাপ ছিল। এই নির্বাচনের আগেও আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ চলে আসছিল বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। তবে সর্বশেষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাকর ও বেসামাল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন পর্যায় থেকে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ক্রমশঃ জোড়ালো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যদানকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে শারীরিক ও পারিবারিক বিষয় উল্লেখ করে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার অনুরোধ করেছেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জানিয়েছেন। এদিকে আহসান হাবিব আম্বিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।