করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলায় চাই সার্বিক প্রস্তুতি

মহামারী করোনা যে পৃথিবী থেকে সহসাই বিদায় নিচ্ছে না সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই বলেছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এর নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনই একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাসের নতুন এ ভ্যারিয়েন্টকে ‘উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ধরন’ বা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করেছে। গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় বলে জানায় এ সংস্থা। পরে বতসোয়ানা, ইসরায়েল, বেলজিয়াম ও হংকংয়েও এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটির বিপুলসংখ্যক মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মাঝে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর রয়েছে বলেও জানান তারা।

অতীতে দেখা গেছে একটি ভ্যারিয়েন্ট কোথাও সংক্রমিত হলেই বিশ্বের অন্য দেশে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। ইতোপূর্বে কয়েকটি দেশে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দেশে ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই উদ্যোগ সময়োপযোগী।

তবে করোনার যে বৈশিষ্ট্য তাতে দুই-একটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়। করোনা মোকাবিলায় সার্বিক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সবচেয়ে জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যারিয়েন্ট যেমনই হোক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বিকল্প নেই। কোভিড ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা। এর ফলে অন্তত ৫০ ভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। গত কিছুদিন ধরে দেশের করোনাভাইরাস আক্রান্ত, শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেশ কমে গেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তির মনোভাব চলে এসেছে। আর এসব কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে অবহেলা বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধ করতে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। সেখানে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কোভিড-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও সব জায়গায় সামাজিক সুরক্ষা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করার সুপারিশ করেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশে জনসমাগম সীমিত রাখারও সুপারিশ করেছে এ কমিটি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা জরুরি।

আমাদের দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩০-৩৫ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কোন নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটলে সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। কারণ অনেক দেশেই ৮০-৯০ ভাগ মানুষ ভ্যাকসিন দেয়ার পরও করোনা নতুন ওয়েভ দেখা গেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

বিমানবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশপথগুলোতে কড়াকড়ি আরোপসহ যথাযথ নজরদারি করতে হবে। বিদেশ থেকে যারা আসবেন তাদের স্ক্রিনিংয়েও যেন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। প্রয়োজন হলে তাদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি কারও করোনা শনাক্ত হলে অবশ্যই কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে প্রথম যখন করোনা শনাক্ত হয় তখন এগুলো যথাযথভাবে করা হয়নি। তাই করোনার বিস্তারও বেশিদিন ঠেকানো যায়নি। এবার যেন সেটির পুনরাবৃত্তি না হয়।

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ , ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলায় চাই সার্বিক প্রস্তুতি

মহামারী করোনা যে পৃথিবী থেকে সহসাই বিদায় নিচ্ছে না সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই বলেছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এর নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনই একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাসের নতুন এ ভ্যারিয়েন্টকে ‘উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ধরন’ বা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করেছে। গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় বলে জানায় এ সংস্থা। পরে বতসোয়ানা, ইসরায়েল, বেলজিয়াম ও হংকংয়েও এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটির বিপুলসংখ্যক মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মাঝে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেদ করার কিছু ক্ষমতাও সম্ভবত এর রয়েছে বলেও জানান তারা।

অতীতে দেখা গেছে একটি ভ্যারিয়েন্ট কোথাও সংক্রমিত হলেই বিশ্বের অন্য দেশে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। ইতোপূর্বে কয়েকটি দেশে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দেশে ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই উদ্যোগ সময়োপযোগী।

তবে করোনার যে বৈশিষ্ট্য তাতে দুই-একটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়। করোনা মোকাবিলায় সার্বিক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সবচেয়ে জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যারিয়েন্ট যেমনই হোক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বিকল্প নেই। কোভিড ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা। এর ফলে অন্তত ৫০ ভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। গত কিছুদিন ধরে দেশের করোনাভাইরাস আক্রান্ত, শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেশ কমে গেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তির মনোভাব চলে এসেছে। আর এসব কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে অবহেলা বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধ করতে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। সেখানে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কোভিড-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও সব জায়গায় সামাজিক সুরক্ষা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করার সুপারিশ করেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশে জনসমাগম সীমিত রাখারও সুপারিশ করেছে এ কমিটি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা জরুরি।

আমাদের দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩০-৩৫ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কোন নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটলে সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। কারণ অনেক দেশেই ৮০-৯০ ভাগ মানুষ ভ্যাকসিন দেয়ার পরও করোনা নতুন ওয়েভ দেখা গেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

বিমানবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশপথগুলোতে কড়াকড়ি আরোপসহ যথাযথ নজরদারি করতে হবে। বিদেশ থেকে যারা আসবেন তাদের স্ক্রিনিংয়েও যেন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। প্রয়োজন হলে তাদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি কারও করোনা শনাক্ত হলে অবশ্যই কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে প্রথম যখন করোনা শনাক্ত হয় তখন এগুলো যথাযথভাবে করা হয়নি। তাই করোনার বিস্তারও বেশিদিন ঠেকানো যায়নি। এবার যেন সেটির পুনরাবৃত্তি না হয়।