সারাদেশে পুলিশের ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

রাজধানীর গুলিস্তানের পর এবার মালিবাগে পুলিশের দুটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা অফিসের সামনে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে পুলিশের এক এএসআই ও এক রিকশাচালকসহ দুজন আহত হয়েছে। এক মাসের মধ্যে পুলিশের ওপর দুটি হামলা বড় ধরনের হামলার মহড়া হতে পারে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের হামলা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল দুর্বল করার লক্ষ্যে। এ ঘটনার পর পুলিশের সদর দফতর থেকে সারাদেশে পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে হামলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গুলিস্তানের পর মালিবাগে পুলিশের ওপর হামলার দায়ও স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ সাইট ইন্টিলিজেন্স জানিয়েছে।

রোববার রাতে মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) অফিসের কোনায় পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পল্টন থানায় স্পেশাল ব্রাঞ্চ এসবির পক্ষ থেকে সন্ত্রাস ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

হামলায় আহত পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এএসআই রাশেদাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে এবং রিকশাচালক লাল মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করেছে জঙ্গিরা। শুধু বাংলাদেশেই নয় পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেই জঙ্গিদের টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে জঙ্গিদের নির্মূলে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের আইজি বলেন, দলবদ্ধ হামলার চেয়ে একাকি জঙ্গি হামলার প্রবণতা বাড়ছে।’ কেউ যদি আত্মঘাতী হয় তখন তাকে ঠেকানো দুস্কর। তবে ‘জঙ্গিদের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব হয়নি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। জঙ্গি বা সন্দেহভাজনদের নিয়ে মানুষ তথ্য দিলে ‘একাকি হামলা’র প্রবণতাও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর বোমা হামলা হয়। ওই হামলায় আহত হন পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল (৪৫), লিটন (৪২) এবং কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আশিক (২৮)।

রোববার রাতে হামলার পর মালিবাগ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দারা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছেন। এলাকার আশপাশের লোকজন জানান, মালিবাগ মোড়ের ফ্লাইওভারের পিলার, এসবির ও সিআইডিতে প্রবেশের মূল গেটের পাশে দ্বিতীয় গেটে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এসব ক্যামেরা সার্বক্ষণিক চালু থাকে। বিশেষ করে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও সিআইডির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থার প্রধান অফিস হওয়ায় গোটা এলাকা সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হয়। যে স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার পাশেই এসবি অফিসের দ্বিতীয় গেটের চূড়ায় রয়েছে শক্তিশালী সিসি ক্যামেরা। ওই অফিসের সামনে দেয়াল সংলগ্ন এবং ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গায় এসবি ও সিআইডির কর্মকর্তাদের গাড়ি পার্কিং করা থাকে সবসময়। দেশি-বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট, বিদেশ যাত্রাসহ বিভিন্ন কাজে এসবিতে যাতায়াত করে। দেশের চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তদন্ত করে সিআইডি।

হামলার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জনমনে ভীতি, নৈরাজ্য, অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য এমন ঘটনা ঘটছে। এতে জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। বিস্ফোরিত ককটেলটি বেশ শক্তিশালী ছিল। এটি আগে থেকেই পুলিশের ভ্যানের পেছনে রাখা ছিল। কাউন্টার টেররিজম, ডিবি, সিআইডি ঘটনাস্থলে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। কারা কী উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এটি কী ধরনের বিস্ফোরক তা কাউন্টার টেররিজমের বোম ডিসপোজাল ইউনিট খতিয়ে দেখছে। হামলার লক্ষ্য পুলিশ না অন্য কেউ তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ককটেল বিস্ফোরণে আহত রিকশাচালক লাল মিয়ার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। গতরাতে তার মাথার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক আছে। তবে অবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। তার চিকিৎসার জন্য সবকিছুই করা হচ্ছে।

জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, গত মাসে গুলিস্তানে ট্রাফিক পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনার এর এবার মালিবাগে এসবি ও সিআইডির মতো শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা এবং তদন্ত সংস্থার সামনে এ ধরনের হামলা ভিন্নকিছু ইঙ্গিত করে। এ ধরনের হামলায় প্রো আইএসের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আইএস আগেই ঘোষণা দিয়েছিল এবার তাদের হামলার লক্ষ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা করেছে আইএস। বাংলাদেশ আইএস না থাকলেও প্রো-আইএস হিসেবে নব্য জেএমবির সদস্যরা কাজ করে। তারা নিজেদের আইএসের অনুসারী মনে করে। তাদের মধ্যে কোন একটি গ্রুপ এ ধরনের হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মূলত নব্য জেএমবির বড় ধরনের হামলার করার সক্ষমতা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে নিজের প্রচার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরীর চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। আইএসের অস্তিত্ব বা কোন কার্যক্রম বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে কোন ঘটনা ঘটলেই আইএস বিবৃতি দিয়ে দ্বায় স্বীকার করে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে আইএস জঙ্গিদের কার্যক্রম রয়েছে এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করা।

পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, ১ মাসের ব্যবধানে পুলিশের ওপর দুটি বোমা হামলার ঘটনা জঙ্গিরা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন যে দ্বায় স্বীকার করেছে সেটা কতটা সত্য তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এছাড়া আইএসের প্রধান এক ভিডিও বার্তায় আগেই বলেছিলো তাদের মতাদর্শের বা তাদের মতো কর্মকান্ড যারা করে পৃথিবীর যে দেশেই হোক এমন কর্মকান্ড করলে তার পক্ষে আমরা দায় করে করে বিবৃতি দেব।

রোববার পুলিশের ওপর যে হামলা হয়েছে সে স্থানের আশেপাশের কিছু সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ফুটেজে অবশ্যই হামলা কে কিভাবে করেছে এর একটি চিত্র পাওয়া যেতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনা যদি জঙ্গিরা করে থাকে তাহলে এটি তাদের কর্মকান্ডের মহড়ার একটি অংশ হতে পারে। কারণ এভাবে ছোট ছোট হামলা করে তারা ফিডব্যাগ কি তা বুঝার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের হামলা প্রতিরোধ না করা হলে বড় ধরনের হামলা হতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হামলার টার্গেট হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ হচ্ছে, তাদের কর্মকান্ডের প্রধান বাধা হচ্ছে আইনশৃঙ্কলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারলে তারা নিরাপদে নিজেদের কর্ম করতে পারবে।

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯ , ১৪ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২২ রমজান ১৪৪০

পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা

সারাদেশে পুলিশের ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর গুলিস্তানের পর এবার মালিবাগে পুলিশের দুটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা অফিসের সামনে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে পুলিশের এক এএসআই ও এক রিকশাচালকসহ দুজন আহত হয়েছে। এক মাসের মধ্যে পুলিশের ওপর দুটি হামলা বড় ধরনের হামলার মহড়া হতে পারে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের হামলা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল দুর্বল করার লক্ষ্যে। এ ঘটনার পর পুলিশের সদর দফতর থেকে সারাদেশে পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে হামলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গুলিস্তানের পর মালিবাগে পুলিশের ওপর হামলার দায়ও স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ সাইট ইন্টিলিজেন্স জানিয়েছে।

রোববার রাতে মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) অফিসের কোনায় পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পল্টন থানায় স্পেশাল ব্রাঞ্চ এসবির পক্ষ থেকে সন্ত্রাস ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

হামলায় আহত পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এএসআই রাশেদাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে এবং রিকশাচালক লাল মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করেছে জঙ্গিরা। শুধু বাংলাদেশেই নয় পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেই জঙ্গিদের টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে জঙ্গিদের নির্মূলে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের আইজি বলেন, দলবদ্ধ হামলার চেয়ে একাকি জঙ্গি হামলার প্রবণতা বাড়ছে।’ কেউ যদি আত্মঘাতী হয় তখন তাকে ঠেকানো দুস্কর। তবে ‘জঙ্গিদের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব হয়নি। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। জঙ্গি বা সন্দেহভাজনদের নিয়ে মানুষ তথ্য দিলে ‘একাকি হামলা’র প্রবণতাও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর বোমা হামলা হয়। ওই হামলায় আহত হন পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল (৪৫), লিটন (৪২) এবং কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আশিক (২৮)।

রোববার রাতে হামলার পর মালিবাগ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দারা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছেন। এলাকার আশপাশের লোকজন জানান, মালিবাগ মোড়ের ফ্লাইওভারের পিলার, এসবির ও সিআইডিতে প্রবেশের মূল গেটের পাশে দ্বিতীয় গেটে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এসব ক্যামেরা সার্বক্ষণিক চালু থাকে। বিশেষ করে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও সিআইডির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থার প্রধান অফিস হওয়ায় গোটা এলাকা সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হয়। যে স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার পাশেই এসবি অফিসের দ্বিতীয় গেটের চূড়ায় রয়েছে শক্তিশালী সিসি ক্যামেরা। ওই অফিসের সামনে দেয়াল সংলগ্ন এবং ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গায় এসবি ও সিআইডির কর্মকর্তাদের গাড়ি পার্কিং করা থাকে সবসময়। দেশি-বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট, বিদেশ যাত্রাসহ বিভিন্ন কাজে এসবিতে যাতায়াত করে। দেশের চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তদন্ত করে সিআইডি।

হামলার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জনমনে ভীতি, নৈরাজ্য, অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য এমন ঘটনা ঘটছে। এতে জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। বিস্ফোরিত ককটেলটি বেশ শক্তিশালী ছিল। এটি আগে থেকেই পুলিশের ভ্যানের পেছনে রাখা ছিল। কাউন্টার টেররিজম, ডিবি, সিআইডি ঘটনাস্থলে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। কারা কী উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এটি কী ধরনের বিস্ফোরক তা কাউন্টার টেররিজমের বোম ডিসপোজাল ইউনিট খতিয়ে দেখছে। হামলার লক্ষ্য পুলিশ না অন্য কেউ তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ককটেল বিস্ফোরণে আহত রিকশাচালক লাল মিয়ার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। গতরাতে তার মাথার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক আছে। তবে অবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। তার চিকিৎসার জন্য সবকিছুই করা হচ্ছে।

জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, গত মাসে গুলিস্তানে ট্রাফিক পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনার এর এবার মালিবাগে এসবি ও সিআইডির মতো শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা এবং তদন্ত সংস্থার সামনে এ ধরনের হামলা ভিন্নকিছু ইঙ্গিত করে। এ ধরনের হামলায় প্রো আইএসের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আইএস আগেই ঘোষণা দিয়েছিল এবার তাদের হামলার লক্ষ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা করেছে আইএস। বাংলাদেশ আইএস না থাকলেও প্রো-আইএস হিসেবে নব্য জেএমবির সদস্যরা কাজ করে। তারা নিজেদের আইএসের অনুসারী মনে করে। তাদের মধ্যে কোন একটি গ্রুপ এ ধরনের হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মূলত নব্য জেএমবির বড় ধরনের হামলার করার সক্ষমতা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে নিজের প্রচার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরীর চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। আইএসের অস্তিত্ব বা কোন কার্যক্রম বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে কোন ঘটনা ঘটলেই আইএস বিবৃতি দিয়ে দ্বায় স্বীকার করে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে আইএস জঙ্গিদের কার্যক্রম রয়েছে এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করা।

পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, ১ মাসের ব্যবধানে পুলিশের ওপর দুটি বোমা হামলার ঘটনা জঙ্গিরা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন যে দ্বায় স্বীকার করেছে সেটা কতটা সত্য তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এছাড়া আইএসের প্রধান এক ভিডিও বার্তায় আগেই বলেছিলো তাদের মতাদর্শের বা তাদের মতো কর্মকান্ড যারা করে পৃথিবীর যে দেশেই হোক এমন কর্মকান্ড করলে তার পক্ষে আমরা দায় করে করে বিবৃতি দেব।

রোববার পুলিশের ওপর যে হামলা হয়েছে সে স্থানের আশেপাশের কিছু সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ফুটেজে অবশ্যই হামলা কে কিভাবে করেছে এর একটি চিত্র পাওয়া যেতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনা যদি জঙ্গিরা করে থাকে তাহলে এটি তাদের কর্মকান্ডের মহড়ার একটি অংশ হতে পারে। কারণ এভাবে ছোট ছোট হামলা করে তারা ফিডব্যাগ কি তা বুঝার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের হামলা প্রতিরোধ না করা হলে বড় ধরনের হামলা হতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হামলার টার্গেট হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ হচ্ছে, তাদের কর্মকান্ডের প্রধান বাধা হচ্ছে আইনশৃঙ্কলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারলে তারা নিরাপদে নিজেদের কর্ম করতে পারবে।