লন্ডনে পালানো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরখাস্ত হওয়া কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানের জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে সেখানকার পুলিশ। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা শহীদ খানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি উল্লেখ করেছে লন্ডন পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা।
২০০৯ সালের দিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে ইংল্যান্ডের গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করে শহিদ উদ্দিন খান পালিয়ে যান বাংলাদেশ থেকে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে পরিবারসহ বসবাস করছেন। ওই অঞ্চলের ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে ২০ হাজার পাউন্ড ঘুষ দিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নৈতিক স্খলনের দায়ে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হন কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান। তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে মদদ দেয়া, জঙ্গি অর্থায়ন করা, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতারণা এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে তার ঢাকাস্থ বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট অবৈধ অস্ত্র, জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জেহাদি বই উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে সানডে টাইমসের কাছে শহিদ উদ্দিন খান দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও মদদ দেয়াসহ সব অভিযোগ অসত্য। গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর করে। তার কর্মচারী এবং তার পক্ষে আইনি লড়াই করা আইনজীবীদের অপহরণ করা হয়েছে। তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিস হ্যামন্ডকে অর্থ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য কাগজপত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন হ্যামন্ড। এ জন্য তিনি তাকে পছন্দ করেন। এ কারণে খুশি হয়ে তিনি ২০ হাজার পাউন্ড দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শহিদ উদ্দিন খানের ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি বিস্ফোরক, ২টি বন্দুক, ২টি শর্টগান, ৭ টি জেহাদি বই উদ্ধার করে। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বইও রয়েছে।
এরপর এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। আদালতে তার বিষয়ে লিখিত একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। এতে তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন, মদদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা ও ইসলামি শিক্ষার প্রসারের কথা বলে জঙ্গি অর্থায়ন করার অভিযোগে ৫৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে তারা। এর সঙ্গে শহিদ উদ্দিন খানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহলে তার যোগাযোগ ছিল। এর সূত্র ধরে যুক্তরাজ্যে জঙ্গিবাদের পিছনে অর্থায়ন করার তথ্য পেয়েছে তারা। তিনি ১০ বছর আগে বিনিয়োগ ভিসা সংগ্রহ করে লন্ডনের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ওই ভিসার মূল বিশেষত্ব হলো ২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করলে ইউরোপের বাইরের যেকোন দেশের নাগরিক ইংল্যান্ডে সাড়ে ৩ বছর মেয়াদে থাকার মতো ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।
দুবছর পর আরও ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করলে স্থায়ীভাবে যেকোন বিনিয়োগকারী বসবাস করতে পারবেন। শহিদ উদ্দিন খান এ সুযোগ নিয়েই লন্ডনে বসবাস করছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে পরিমাণ অর্থ তিনি নিয়ে গেছেন তা দিয়ে লন্ডনে বাড়ি ও জমি কিনেছেন। সেখানে বিনিয়োগও করেছেন।
সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত প্রতিবেদনের কারণে বাংলাদেশ সরকার আল জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনার পর শহিদ খানের মেয়ে ব্যারিস্টার শেহতাজ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে ব্যারিস্টার শেহতাজ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের নাগরিকদের অধিকার হরণ করার অভিযোগ এনে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, তার বিরুদ্ধে দেশে জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার পাশাপাশি অর্থায়ন করার যে অভিযোগ তারা তা পর্যবেক্ষণ করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ।
বুধবার, ২৯ মে ২০১৯ , ১৫ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৩ রমজান ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
লন্ডনে পালানো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরখাস্ত হওয়া কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানের জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে সেখানকার পুলিশ। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা শহীদ খানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি উল্লেখ করেছে লন্ডন পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা।
২০০৯ সালের দিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে ইংল্যান্ডের গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করে শহিদ উদ্দিন খান পালিয়ে যান বাংলাদেশ থেকে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে পরিবারসহ বসবাস করছেন। ওই অঞ্চলের ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে ২০ হাজার পাউন্ড ঘুষ দিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নৈতিক স্খলনের দায়ে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হন কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান। তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে মদদ দেয়া, জঙ্গি অর্থায়ন করা, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতারণা এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে তার ঢাকাস্থ বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট অবৈধ অস্ত্র, জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জেহাদি বই উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে সানডে টাইমসের কাছে শহিদ উদ্দিন খান দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও মদদ দেয়াসহ সব অভিযোগ অসত্য। গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর করে। তার কর্মচারী এবং তার পক্ষে আইনি লড়াই করা আইনজীবীদের অপহরণ করা হয়েছে। তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিস হ্যামন্ডকে অর্থ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য কাগজপত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন হ্যামন্ড। এ জন্য তিনি তাকে পছন্দ করেন। এ কারণে খুশি হয়ে তিনি ২০ হাজার পাউন্ড দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শহিদ উদ্দিন খানের ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি বিস্ফোরক, ২টি বন্দুক, ২টি শর্টগান, ৭ টি জেহাদি বই উদ্ধার করে। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বইও রয়েছে।
এরপর এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। আদালতে তার বিষয়ে লিখিত একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। এতে তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন, মদদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা ও ইসলামি শিক্ষার প্রসারের কথা বলে জঙ্গি অর্থায়ন করার অভিযোগে ৫৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে তারা। এর সঙ্গে শহিদ উদ্দিন খানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহলে তার যোগাযোগ ছিল। এর সূত্র ধরে যুক্তরাজ্যে জঙ্গিবাদের পিছনে অর্থায়ন করার তথ্য পেয়েছে তারা। তিনি ১০ বছর আগে বিনিয়োগ ভিসা সংগ্রহ করে লন্ডনের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ওই ভিসার মূল বিশেষত্ব হলো ২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করলে ইউরোপের বাইরের যেকোন দেশের নাগরিক ইংল্যান্ডে সাড়ে ৩ বছর মেয়াদে থাকার মতো ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।
দুবছর পর আরও ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করলে স্থায়ীভাবে যেকোন বিনিয়োগকারী বসবাস করতে পারবেন। শহিদ উদ্দিন খান এ সুযোগ নিয়েই লন্ডনে বসবাস করছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে পরিমাণ অর্থ তিনি নিয়ে গেছেন তা দিয়ে লন্ডনে বাড়ি ও জমি কিনেছেন। সেখানে বিনিয়োগও করেছেন।
সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত প্রতিবেদনের কারণে বাংলাদেশ সরকার আল জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনার পর শহিদ খানের মেয়ে ব্যারিস্টার শেহতাজ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে ব্যারিস্টার শেহতাজ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের নাগরিকদের অধিকার হরণ করার অভিযোগ এনে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, তার বিরুদ্ধে দেশে জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার পাশাপাশি অর্থায়ন করার যে অভিযোগ তারা তা পর্যবেক্ষণ করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ।