শিক্ষা বাজেট ও দৃষ্টিভঙ্গির কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন প্রসঙ্গ

অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ সালের বাজেট উপস্থাপনকালে যে বক্তৃতা দেন তাতে অনুষ্ঠানিকতা থাকলেও বাস্তবতার প্রতিফলনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনারও উল্লেখ আছে। এ নিয়ে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে জাতীয় বিবেচনায় আলোচনা হওয়া দরকার। বাজেট পাসের পরও তা চলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অভিমতের বাইরে তৃণমূলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত সংগ্রহ সম্ভব হলে তা হতে পারে একটা কাজের কাজ। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। অনভ্যস্ত মানুষদের প্রচলিত গতানুগতিকতার বাইরে নিয়ে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। অর্থমন্ত্রীর মুদ্রিত বাজেট বক্তৃতায় প্রথমেই কারও কারও হোঁচট খাওয়ার কথা। কারণ সেখানে বলা হয়েছে- ‘প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার সর্বস্তরে আমাদের উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কাছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে হস্তান্তর করতে চাই’ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, তা হলে এ কথা মেনেই নেয়া হচ্ছেÑ এখন শিক্ষার মূল দায়িত্বে নেই শিক্ষকেরা। আরও প্রশ্ন উঠতে পারে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব কিভাবে? অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, শিক্ষার সকল স্তরের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক বাছাইকরণ, তাদের প্রশিক্ষণ, সময়োপযোগী শিক্ষার বিষয়ে বস্তু নির্ধারণ এখন একান্তই সময়ের দাবি। আমাদের সরকার এই বছর থেকে এ সবের বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’ এসব নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। তারপর কথা থাকে। এগুলো করা হলেই কি শিক্ষকদের পক্ষে শিক্ষার দায়িত্ব পালনে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে? ইউনেস্কো যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষক অভিভাবকের যৌথ অংশীদারিত্ব ও বহিরাগত হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা বলেছে তার কি হবে? শিক্ষককে শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই তো হবে না। তার ক্ষমতায়ন ও তো জরুরি। সেজন্য তো শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত শক্তি সদ্ব্যবহারে সমাজে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার।

নয় বছর পর বেসকারি শিক্ষদের এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্তকে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ‘সুসংবাদ’ বললে ও সিভিল সোসাইটির প্রভাবশালী একটি অংশ মনে করেন, এমপিওভুক্তি করলে যে, শিক্ষার মান বাড়বে সেটি নিশ্চিত নয়। এটি ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থেকেই যাচ্ছে। কাদের এমপিওভুক্ত করা হবে সেটিও সুনির্দিষ্ট করা দরকার। এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তো কয়েক বছর আগেই নির্ধারিত যোগ্যতা অনুসারে যারা এমপিও পাবেন তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। এখন সেখানে একজনের বদলে আরেকজনের নাম না ঢোকালেই চলে। কোনো জনপ্রতিনিধির সুপারিশে যোগ্যকে বাদ দিয়ে অযোগ্যকে নিয়োগ না দিলেই হয়। এত গেল সমস্যার একটা দিক। অন্যদিকে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক হিসেবে পরিচিতদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করেন যে, শিক্ষার মান উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশই চলে যায় শিক্ষকদের বেতন ভাতা দিতে। যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে শিক্ষা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতদের একটা অংশ এখনও শিক্ষার উন্নয়ন বলতে দালানকোঠার উন্নয়নকেই বুঝিয়ে থাকেন। পাঠদানের গুরুদায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকের অবস্থান সেখানে অপাঙ্ক্তেয়। এ প্রেক্ষাপটে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন নামীয় বিশ্বসংস্থাটির কাম্য শিক্ষা বাজেট বরাদ্দের যে নমুনা তালিকা দিয়েছে তাতে আমি অবাক হয়েছি। সেখানে প্রথমে শিক্ষকের আর্থিক প্রাপ্যতা বা বেতন-ভাতা পরিশোধের উল্লেখ আছে। এরপরই আছে শিক্ষর্থীর পাঠ্যপুস্তক, কম্পিউটার ও যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণের। তার পরে আছে অন্যান্য। জিপিই পরিবেশিত শিক্ষার নমুনা বাজেটে অগ্রাধিকারের এ ক্রমবিন্যাস কে কিভাবে নেবেন জানি না। তবে আমি এতে আশান্বিতই হয়েছি। আশা করি দেরিতে হলেও আমাদের বোদ্ধাজনদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে।

বাজেট মনিটরিং দরকার

এ কথা মানতে হবে যে, বিভিন্ন দেশে শিক্ষায় বরাদ্দ ও তদনুযায়ী কর্মসূচি বা পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়িত হয় তা জানা থাকলে অনেক বিভ্রান্তি দূর হয়। অন্যের অভিজ্ঞতা হুবহু অনুসরণযোগ্য নয় ঠিকই। তবে তা আনেক ক্ষেত্রে কাজেও আসে। উল্লেখ্য, বাজেট বিশেষ করে শিক্ষা বাজেট মূল্যায়নে অতীত থেকে বর্তমানে উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার বিষয়টি বর্তমানে শুধু জাতীয় পরিসর বা পরিধিতেই সীমাবদ্ধ নয়। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ এবং সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে নিয়োজিত ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন’ (জিপিই) এ বছর (২০১৯) ফেব্রুয়ারি মাসে শিক্ষা বাজেট মনিটরিং সংক্রান্ত ৪৭ পৃষ্টার একটি সহায়ক নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। যাতে ১. বাজেট প্রণয়ন ২. বাজেট অনুমোদন ৩. বাজেট বাস্তবায়ন ৪. বাজেট মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। এ বিশ্ব সংস্থাটি স্বীকার করেছে যে, শিক্ষায় অর্থায়নে বাইরের সহায়তা শূন্যস্থান পূরণে সহায়ক হলেও শিক্ষায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে ও কাক্সিক্ষত ফল অর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিসরে অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ও শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এ পরিপ্রেক্ষিতে জিপিই’র মতে শিক্ষা ২০৩০ : ইন্চিয়ন ঘোষণা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৪-এর প্রাসঙ্গিকতায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে শিক্ষা বাজেট মনিটরিং করা আবশ্যকÑ ১. মোট ব্যয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৪ থেকে ৬ শতাংশ গণশিক্ষায় বরাদ্দ হচ্ছে কিনা; ২. শিক্ষার বিভিন্ন স্তর ও এক্ষেত্রে তথ্য পরিসংখ্যানের প্রাপ্যতা উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে; ৩. বরাদ্দ নির্ধারণে চাহিদার অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী ও শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কতটা গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়েছে; ৪. দক্ষতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কতটা সন্তোষজনক। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত শিক্ষা বাজেটের মনিটরিং, স্বচ্ছ ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও জ্ঞানের ভিত্তিতে সংলাপ আয়োজন, মতবিনিময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন দ্বারা কিভাবে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা সম্ভব, জিপিই’র প্রস্তাবগুলোতে তার সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।

শিক্ষক আমদানি কতটুকু প্রাসঙ্গিক

‘প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসতে হবে’ বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন হলেও কথাগুলো নতুন নয়। ‘আমদানি তালিকায় শিক্ষক ও বিজ্ঞানী’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে ৯ এপ্রিল ২০০৮ সালে আমার লেখাটি প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এখানে উল্লেখ্য। ইংরেজি, অংক ও বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক স্বল্পতা ও প্রতি বছর বিজ্ঞানীদের অবসর গ্রহণজনিত কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করা যায়Ñ সেটাই ছিল এ লেখার প্রধান বিষয় বস্তু। সে সময়কার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের কথার রেশ ধরে আমি লিখি, আমদানির তালিকায় এবার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন শিক্ষক ও বিজ্ঞানী! যুক্তরাজ্য বিশেষ করে লন্ডনে কর্মসংস্থানের- চাকরির জন্য ইংরেজিতে দক্ষ বাংলাদেশি তরুণদের সংখ্যা হ্রাস ও তার পেছনের কারণ হিসেবে দেশে ইংরেজি শিক্ষকের ঘাটতির কথা জানতে পেরে তিনি বলেন, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ইংরেজি শিক্ষক আমদানি করা হবে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এ সম্পর্কিত বক্তব্য আমি সদিচ্ছাপ্রসূত বলে মনে করি। বর্তমানে শিক্ষা একটি বিশ্ব ব্যবস্থার অংশ। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এসডিজি বিশেষ শিক্ষা সংক্রান্ত করে ৪ নম্বরটি এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তথ্য প্রযুক্তি ও অ্যাপসের বহুমুখী ব্যবহার নতুন নতুন উদ্ভাবনে প্রণোদনা জুগিয়ে চলেছে। অনলাইনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং পাঠদানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ঢালাও শিক্ষক আমদানি রফতানির বিষয়টিকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকের বদলে রোবটের ব্যবহার আমাদের দেশে এখনও প্রযোজ্য নয় সত্য। তবে এ নিয়ে উন্নত দেশগুলো যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা থেকে আমাদের অগ্রিম শিক্ষা নিলে আখেরে ভালোই হবে।

আমার পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ

এবারের বাজেটে মানব উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ধারাবাহিকতা রক্ষার সঙ্গে নতুন বক্তব্য ও উদ্যোগের কথা আছে। নতুন এমপিওভুক্তির সঙ্গে আগে থেকে এমপিওভুক্তদের বৈশাখী ভাতাসহ কিছু প্রত্যাশা পূরণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত যেমন হয়েছেÑ শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়া আরও ২৮ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নিয়ে শিক্ষা তথা মানবসম্পদ উন্নয়নে সমন্বিত শিক্ষা বাজেটের কথা ভাবা যেতে পারে। মানব উন্নয়নে কর্মসংস্থান যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে গুরুত্বারোপ একটি ভালো চিন্তা। শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় দেশে একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া দরকার। একইভাবে আসতে পারে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা। ভবিষ্যতে এর সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবা যেতে পারে। তবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটেই কারিগরি ও ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য থোক বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। টাকার অংকে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে স্বীকার করে নিয়েই বলতে চাই, যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে, উদ্যোক্তা হতে সহায়ক গবেষণা খাতে সহায়ক শিক্ষার জন্য, বরাদ্দ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্তত খাত অনুল্লেখিত বিশেষ আর্থিক তহবিল থেকে তা মেটানোর সংস্থান রাখা দরকার।

বাজেটের আকার নিয়ে এবং বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের দুটি বিষয় মনে রাখা দরকার। এক. বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান অর্থনীতির সঙ্গে আগের মতো এবারের বাজেট সঙ্গতিপূর্ণ। বরং এর আকার ও ব্যাপ্তি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দুই. বাজেট বাস্তবায়নের হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি যদিও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দাবি করেছেন যে, বিগত বছরের বাজেট ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাজেটের আকার না বাড়লে যেটুকু অর্জন হয়েছে তা কিভাবে হতে পারতো। অপচয়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার মাত্রা কমানো গেলে অর্জন আশাব্যঞ্জকভাবে বাড়বে। আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই বাজেট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর। জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সংগঠিত, জোরালো ভূমিকা সেজন্য অপরিহার্য। বাজেটে সরকার যা বলে তা করে কিনা, কতটুকু করে, অতীতে যা বলেছে তা করেছে কিনা- সেটা নিরূপণ বা পরিমাপের এবং প্রকৃত সহায়ক শিক্ষা বরাদ্দ নিশ্চিতে এছাড়া আর কোনো কার্যকর পন্থা নেই।

[লেখক : জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য। শিক্ষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা]

principalqfahmed@yahoo.com

রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪০

শিক্ষা বাজেট ও দৃষ্টিভঙ্গির কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন প্রসঙ্গ

অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ সালের বাজেট উপস্থাপনকালে যে বক্তৃতা দেন তাতে অনুষ্ঠানিকতা থাকলেও বাস্তবতার প্রতিফলনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনারও উল্লেখ আছে। এ নিয়ে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে জাতীয় বিবেচনায় আলোচনা হওয়া দরকার। বাজেট পাসের পরও তা চলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অভিমতের বাইরে তৃণমূলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত সংগ্রহ সম্ভব হলে তা হতে পারে একটা কাজের কাজ। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। অনভ্যস্ত মানুষদের প্রচলিত গতানুগতিকতার বাইরে নিয়ে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। অর্থমন্ত্রীর মুদ্রিত বাজেট বক্তৃতায় প্রথমেই কারও কারও হোঁচট খাওয়ার কথা। কারণ সেখানে বলা হয়েছে- ‘প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার সর্বস্তরে আমাদের উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কাছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে হস্তান্তর করতে চাই’ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, তা হলে এ কথা মেনেই নেয়া হচ্ছেÑ এখন শিক্ষার মূল দায়িত্বে নেই শিক্ষকেরা। আরও প্রশ্ন উঠতে পারে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব কিভাবে? অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, শিক্ষার সকল স্তরের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক বাছাইকরণ, তাদের প্রশিক্ষণ, সময়োপযোগী শিক্ষার বিষয়ে বস্তু নির্ধারণ এখন একান্তই সময়ের দাবি। আমাদের সরকার এই বছর থেকে এ সবের বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’ এসব নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। তারপর কথা থাকে। এগুলো করা হলেই কি শিক্ষকদের পক্ষে শিক্ষার দায়িত্ব পালনে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে? ইউনেস্কো যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষক অভিভাবকের যৌথ অংশীদারিত্ব ও বহিরাগত হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা বলেছে তার কি হবে? শিক্ষককে শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই তো হবে না। তার ক্ষমতায়ন ও তো জরুরি। সেজন্য তো শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত শক্তি সদ্ব্যবহারে সমাজে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার।

নয় বছর পর বেসকারি শিক্ষদের এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্তকে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় ‘সুসংবাদ’ বললে ও সিভিল সোসাইটির প্রভাবশালী একটি অংশ মনে করেন, এমপিওভুক্তি করলে যে, শিক্ষার মান বাড়বে সেটি নিশ্চিত নয়। এটি ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থেকেই যাচ্ছে। কাদের এমপিওভুক্ত করা হবে সেটিও সুনির্দিষ্ট করা দরকার। এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তো কয়েক বছর আগেই নির্ধারিত যোগ্যতা অনুসারে যারা এমপিও পাবেন তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। এখন সেখানে একজনের বদলে আরেকজনের নাম না ঢোকালেই চলে। কোনো জনপ্রতিনিধির সুপারিশে যোগ্যকে বাদ দিয়ে অযোগ্যকে নিয়োগ না দিলেই হয়। এত গেল সমস্যার একটা দিক। অন্যদিকে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক হিসেবে পরিচিতদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করেন যে, শিক্ষার মান উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশই চলে যায় শিক্ষকদের বেতন ভাতা দিতে। যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে শিক্ষা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতদের একটা অংশ এখনও শিক্ষার উন্নয়ন বলতে দালানকোঠার উন্নয়নকেই বুঝিয়ে থাকেন। পাঠদানের গুরুদায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকের অবস্থান সেখানে অপাঙ্ক্তেয়। এ প্রেক্ষাপটে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন নামীয় বিশ্বসংস্থাটির কাম্য শিক্ষা বাজেট বরাদ্দের যে নমুনা তালিকা দিয়েছে তাতে আমি অবাক হয়েছি। সেখানে প্রথমে শিক্ষকের আর্থিক প্রাপ্যতা বা বেতন-ভাতা পরিশোধের উল্লেখ আছে। এরপরই আছে শিক্ষর্থীর পাঠ্যপুস্তক, কম্পিউটার ও যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণের। তার পরে আছে অন্যান্য। জিপিই পরিবেশিত শিক্ষার নমুনা বাজেটে অগ্রাধিকারের এ ক্রমবিন্যাস কে কিভাবে নেবেন জানি না। তবে আমি এতে আশান্বিতই হয়েছি। আশা করি দেরিতে হলেও আমাদের বোদ্ধাজনদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে।

বাজেট মনিটরিং দরকার

এ কথা মানতে হবে যে, বিভিন্ন দেশে শিক্ষায় বরাদ্দ ও তদনুযায়ী কর্মসূচি বা পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়িত হয় তা জানা থাকলে অনেক বিভ্রান্তি দূর হয়। অন্যের অভিজ্ঞতা হুবহু অনুসরণযোগ্য নয় ঠিকই। তবে তা আনেক ক্ষেত্রে কাজেও আসে। উল্লেখ্য, বাজেট বিশেষ করে শিক্ষা বাজেট মূল্যায়নে অতীত থেকে বর্তমানে উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার বিষয়টি বর্তমানে শুধু জাতীয় পরিসর বা পরিধিতেই সীমাবদ্ধ নয়। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ এবং সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে নিয়োজিত ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন’ (জিপিই) এ বছর (২০১৯) ফেব্রুয়ারি মাসে শিক্ষা বাজেট মনিটরিং সংক্রান্ত ৪৭ পৃষ্টার একটি সহায়ক নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। যাতে ১. বাজেট প্রণয়ন ২. বাজেট অনুমোদন ৩. বাজেট বাস্তবায়ন ৪. বাজেট মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। এ বিশ্ব সংস্থাটি স্বীকার করেছে যে, শিক্ষায় অর্থায়নে বাইরের সহায়তা শূন্যস্থান পূরণে সহায়ক হলেও শিক্ষায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে ও কাক্সিক্ষত ফল অর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিসরে অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ও শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এ পরিপ্রেক্ষিতে জিপিই’র মতে শিক্ষা ২০৩০ : ইন্চিয়ন ঘোষণা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৪-এর প্রাসঙ্গিকতায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে শিক্ষা বাজেট মনিটরিং করা আবশ্যকÑ ১. মোট ব্যয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৪ থেকে ৬ শতাংশ গণশিক্ষায় বরাদ্দ হচ্ছে কিনা; ২. শিক্ষার বিভিন্ন স্তর ও এক্ষেত্রে তথ্য পরিসংখ্যানের প্রাপ্যতা উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে; ৩. বরাদ্দ নির্ধারণে চাহিদার অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী ও শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কতটা গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়েছে; ৪. দক্ষতা ও জবাবদিহিতা উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কতটা সন্তোষজনক। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত শিক্ষা বাজেটের মনিটরিং, স্বচ্ছ ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও জ্ঞানের ভিত্তিতে সংলাপ আয়োজন, মতবিনিময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন দ্বারা কিভাবে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা সম্ভব, জিপিই’র প্রস্তাবগুলোতে তার সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।

শিক্ষক আমদানি কতটুকু প্রাসঙ্গিক

‘প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসতে হবে’ বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন হলেও কথাগুলো নতুন নয়। ‘আমদানি তালিকায় শিক্ষক ও বিজ্ঞানী’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে ৯ এপ্রিল ২০০৮ সালে আমার লেখাটি প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এখানে উল্লেখ্য। ইংরেজি, অংক ও বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক স্বল্পতা ও প্রতি বছর বিজ্ঞানীদের অবসর গ্রহণজনিত কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করা যায়Ñ সেটাই ছিল এ লেখার প্রধান বিষয় বস্তু। সে সময়কার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের কথার রেশ ধরে আমি লিখি, আমদানির তালিকায় এবার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন শিক্ষক ও বিজ্ঞানী! যুক্তরাজ্য বিশেষ করে লন্ডনে কর্মসংস্থানের- চাকরির জন্য ইংরেজিতে দক্ষ বাংলাদেশি তরুণদের সংখ্যা হ্রাস ও তার পেছনের কারণ হিসেবে দেশে ইংরেজি শিক্ষকের ঘাটতির কথা জানতে পেরে তিনি বলেন, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ইংরেজি শিক্ষক আমদানি করা হবে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এ সম্পর্কিত বক্তব্য আমি সদিচ্ছাপ্রসূত বলে মনে করি। বর্তমানে শিক্ষা একটি বিশ্ব ব্যবস্থার অংশ। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এসডিজি বিশেষ শিক্ষা সংক্রান্ত করে ৪ নম্বরটি এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তথ্য প্রযুক্তি ও অ্যাপসের বহুমুখী ব্যবহার নতুন নতুন উদ্ভাবনে প্রণোদনা জুগিয়ে চলেছে। অনলাইনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং পাঠদানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ঢালাও শিক্ষক আমদানি রফতানির বিষয়টিকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকের বদলে রোবটের ব্যবহার আমাদের দেশে এখনও প্রযোজ্য নয় সত্য। তবে এ নিয়ে উন্নত দেশগুলো যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা থেকে আমাদের অগ্রিম শিক্ষা নিলে আখেরে ভালোই হবে।

আমার পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ

এবারের বাজেটে মানব উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ধারাবাহিকতা রক্ষার সঙ্গে নতুন বক্তব্য ও উদ্যোগের কথা আছে। নতুন এমপিওভুক্তির সঙ্গে আগে থেকে এমপিওভুক্তদের বৈশাখী ভাতাসহ কিছু প্রত্যাশা পূরণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত যেমন হয়েছেÑ শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়া আরও ২৮ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নিয়ে শিক্ষা তথা মানবসম্পদ উন্নয়নে সমন্বিত শিক্ষা বাজেটের কথা ভাবা যেতে পারে। মানব উন্নয়নে কর্মসংস্থান যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে গুরুত্বারোপ একটি ভালো চিন্তা। শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় দেশে একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া দরকার। একইভাবে আসতে পারে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা। ভবিষ্যতে এর সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবা যেতে পারে। তবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটেই কারিগরি ও ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য থোক বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। টাকার অংকে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে স্বীকার করে নিয়েই বলতে চাই, যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে, উদ্যোক্তা হতে সহায়ক গবেষণা খাতে সহায়ক শিক্ষার জন্য, বরাদ্দ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্তত খাত অনুল্লেখিত বিশেষ আর্থিক তহবিল থেকে তা মেটানোর সংস্থান রাখা দরকার।

বাজেটের আকার নিয়ে এবং বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের দুটি বিষয় মনে রাখা দরকার। এক. বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান অর্থনীতির সঙ্গে আগের মতো এবারের বাজেট সঙ্গতিপূর্ণ। বরং এর আকার ও ব্যাপ্তি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দুই. বাজেট বাস্তবায়নের হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি যদিও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দাবি করেছেন যে, বিগত বছরের বাজেট ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাজেটের আকার না বাড়লে যেটুকু অর্জন হয়েছে তা কিভাবে হতে পারতো। অপচয়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার মাত্রা কমানো গেলে অর্জন আশাব্যঞ্জকভাবে বাড়বে। আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই বাজেট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর। জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সংগঠিত, জোরালো ভূমিকা সেজন্য অপরিহার্য। বাজেটে সরকার যা বলে তা করে কিনা, কতটুকু করে, অতীতে যা বলেছে তা করেছে কিনা- সেটা নিরূপণ বা পরিমাপের এবং প্রকৃত সহায়ক শিক্ষা বরাদ্দ নিশ্চিতে এছাড়া আর কোনো কার্যকর পন্থা নেই।

[লেখক : জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য। শিক্ষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা]

principalqfahmed@yahoo.com