দশ বছর পর গতি ফিরেছে উড়াল সড়ক নির্মাণে

প্রকল্প সম্পন্ন হবে ২০২২ সালে

অর্থ সংকট ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় ১০ বছর পিছিয়ে গেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) নির্মাণ কাজ। রাজধানীর যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর গতি ফিরেছে প্রকল্পের কাজে। ২০০৯ সালে অনুমোদন হয় প্রকল্পের ডিপিপি। পরে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর রুট জটিলতা ও অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ আর শুরু হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে এক্সপ্রেসওয়ের রুট সংশোধন করা হয়। এর ভিত্তিতে সংশোধন করা হয় এক্সপ্রেসওয়ের নকশা। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন ধাপে নির্মাণ হচ্ছে প্রকল্পটি। এর মধ্যে চায়না এক্সিম ব্যাংক ও আইসিবি চায়না যৌথভাবে ৭ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকারে ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। তিন ধাপে প্রকল্পের নির্মাণ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। ২৫ বছর টোল আদায়ের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় তুলে নেবে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীবাসীর স্বপ্নের প্রকল্প। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজটি পিপিপি প্রজেক্ট করছে। চায়না এক্সিম ব্যাংক এই প্রজেক্টের অর্থায়ন করছে। প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল অর্থায়নের জন্য। এখন কাজ পুরোদমে চলছে। ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসের কাজও এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে এয়ারপোর্ট থেকে বনানী, দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার ও শেষ ধাপে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত কাজ হবে। প্রথম ধাপের কাজ আগামী জানুয়ারিতে সম্পন্ন হবে। আর পুরো কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের মার্চ মাসে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ১ হাজার ৩৩৩টি পাইল সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া ৩০২টি পাইল ক্যাপ, ৮৩টি ক্রস-বিম, ১৮৭টি কলাম পুরোপুরি ও ১২৮টি আংশিক শেষ হয়েছে। ১৮৬টি আই গার্ডার ও ১৪টি স্প্যান আই গার্ডার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ শেষ হবে ২০২০ সালে, দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হবে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে ও তৃতীয় ধাপে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের মার্চে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) এটি নির্মাণে বিনিয়োগ করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। আর জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করছে সরকার। তবে রুট জটিলতায় ও অর্থায়ন সমস্যার কারণে এর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর। অবশেষে গত বছর এই প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সেতু বিভাগ। সর্বশেষ গত ১১ জুন চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেতু বিভাগ কর্তৃপক্ষে বৈঠকে এ প্রকল্পের অর্থ দ্রুত ছাড়তে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। এর আগে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (বিনিয়োগকারী) সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। আর সংশোধনের পর ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবার চুক্তি সই করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৩০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সংশোধিত অ্যালাইনমেন্টে তা কমে দাঁড়ায় ২৬ একরে। তবে নতুন হিসাবে সরকারি জমি লাগবে ১৯৪ একর। কারণ, এক্সপ্রেসওয়ের বেশিরভাগ অংশই রেললাইনের ওপর দিয়ে যাবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেল লাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হবে। এর পর সওজের অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ওপর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাবে। পরের অংশটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে কুতুবখালি পর্যন্ত যাবে। তাই প্রকল্পটির আওতায় কারিগরি জ্ঞান স্থানান্তরের (টেকনিক্যাল নলেজ ট্রান্সফার) জন্য কমিটি গঠন করেছে সেতু বিভাগ।

জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে ২০০৯ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ীর-কুতুবখালী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়াল সড়কটি নির্মাণে নকশা চূড়ান্ত করা হয়। প্রকল্পটির ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি) লিমিটেডকে। এটি নির্মাণে চুক্তি হয় ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। সে বছর জুনে প্রকল্পটির কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নকশা জটিলতার কারণে আটকে যায় এর নির্মাণকাজ। এর পর দুই দফা নকশা পরিবর্তন করে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যয় বাড়িয়ে পুনরায় চুক্তি করে সেতু বিভাগ। এরপর প্রায় সাড়ে তিন বছর গত বছর ৩০ অক্টোবর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ কাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত জমিতে অবস্থিত বেশকিছু ভবন অপসারণ না হওয়ায় প্রকল্পটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে নতুন নকশায় এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুনরায় চুক্তি করেছে সেতু বিভাগ।

এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিয়ে চলাচল করতে পারবে যানবাহন। প্রাথমিকভাবে টোল ধরা হয়েছে মোটর গাড়িতে ১২৫ টাকা, যাত্রীবাহী বাসে ২৫০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাকে ৫০০ টাকা আর ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৬২৫ টাকা। তবে তিন বছর পর পর টোলের হার সমন্বয় করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২৫ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তাই প্রকল্প ব্যয় ও টোলের হার বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয় বলে সেতু বিভাগের সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আকতার সংবাদকে বলেন, পিপিপি ভিত্তিতে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২৫% টোল আদায় করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। তিন ধাপে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পটি। ১ম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী রেল স্টেশন পর্যন্ত। এই অংশের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া বনানী রেল স্টেশন থেকে রেলক্রসিং মগবাজার পর্যন্ত ২য় অংশ এবং মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৩য় অংশের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এতদিন অর্থায়ন জটিলতার কাজ ধীরগতি ছিল। এখন এই সমস্যা কেটে গেছে তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ , ২২ আষাঢ় ১৪২৫, ২ জ্বিলকদ ১৪৪০

বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী

দশ বছর পর গতি ফিরেছে উড়াল সড়ক নির্মাণে

প্রকল্প সম্পন্ন হবে ২০২২ সালে

মাহমুদ আকাশ

অর্থ সংকট ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় ১০ বছর পিছিয়ে গেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) নির্মাণ কাজ। রাজধানীর যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর গতি ফিরেছে প্রকল্পের কাজে। ২০০৯ সালে অনুমোদন হয় প্রকল্পের ডিপিপি। পরে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর রুট জটিলতা ও অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ আর শুরু হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে এক্সপ্রেসওয়ের রুট সংশোধন করা হয়। এর ভিত্তিতে সংশোধন করা হয় এক্সপ্রেসওয়ের নকশা। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন ধাপে নির্মাণ হচ্ছে প্রকল্পটি। এর মধ্যে চায়না এক্সিম ব্যাংক ও আইসিবি চায়না যৌথভাবে ৭ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকারে ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। তিন ধাপে প্রকল্পের নির্মাণ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। ২৫ বছর টোল আদায়ের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় তুলে নেবে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীবাসীর স্বপ্নের প্রকল্প। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজটি পিপিপি প্রজেক্ট করছে। চায়না এক্সিম ব্যাংক এই প্রজেক্টের অর্থায়ন করছে। প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল অর্থায়নের জন্য। এখন কাজ পুরোদমে চলছে। ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসের কাজও এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে এয়ারপোর্ট থেকে বনানী, দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার ও শেষ ধাপে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত কাজ হবে। প্রথম ধাপের কাজ আগামী জানুয়ারিতে সম্পন্ন হবে। আর পুরো কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের মার্চ মাসে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ১ হাজার ৩৩৩টি পাইল সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া ৩০২টি পাইল ক্যাপ, ৮৩টি ক্রস-বিম, ১৮৭টি কলাম পুরোপুরি ও ১২৮টি আংশিক শেষ হয়েছে। ১৮৬টি আই গার্ডার ও ১৪টি স্প্যান আই গার্ডার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ শেষ হবে ২০২০ সালে, দ্বিতীয় ধাপে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হবে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে ও তৃতীয় ধাপে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের মার্চে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) এটি নির্মাণে বিনিয়োগ করছে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। আর জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করছে সরকার। তবে রুট জটিলতায় ও অর্থায়ন সমস্যার কারণে এর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর। অবশেষে গত বছর এই প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সেতু বিভাগ। সর্বশেষ গত ১১ জুন চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেতু বিভাগ কর্তৃপক্ষে বৈঠকে এ প্রকল্পের অর্থ দ্রুত ছাড়তে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। এর আগে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির (বিনিয়োগকারী) সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। আর সংশোধনের পর ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবার চুক্তি সই করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৩০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সংশোধিত অ্যালাইনমেন্টে তা কমে দাঁড়ায় ২৬ একরে। তবে নতুন হিসাবে সরকারি জমি লাগবে ১৯৪ একর। কারণ, এক্সপ্রেসওয়ের বেশিরভাগ অংশই রেললাইনের ওপর দিয়ে যাবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেল লাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হবে। এর পর সওজের অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ওপর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাবে। পরের অংশটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে কুতুবখালি পর্যন্ত যাবে। তাই প্রকল্পটির আওতায় কারিগরি জ্ঞান স্থানান্তরের (টেকনিক্যাল নলেজ ট্রান্সফার) জন্য কমিটি গঠন করেছে সেতু বিভাগ।

জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে ২০০৯ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ীর-কুতুবখালী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়াল সড়কটি নির্মাণে নকশা চূড়ান্ত করা হয়। প্রকল্পটির ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি) লিমিটেডকে। এটি নির্মাণে চুক্তি হয় ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। সে বছর জুনে প্রকল্পটির কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নকশা জটিলতার কারণে আটকে যায় এর নির্মাণকাজ। এর পর দুই দফা নকশা পরিবর্তন করে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যয় বাড়িয়ে পুনরায় চুক্তি করে সেতু বিভাগ। এরপর প্রায় সাড়ে তিন বছর গত বছর ৩০ অক্টোবর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ কাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত জমিতে অবস্থিত বেশকিছু ভবন অপসারণ না হওয়ায় প্রকল্পটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে নতুন নকশায় এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুনরায় চুক্তি করেছে সেতু বিভাগ।

এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিয়ে চলাচল করতে পারবে যানবাহন। প্রাথমিকভাবে টোল ধরা হয়েছে মোটর গাড়িতে ১২৫ টাকা, যাত্রীবাহী বাসে ২৫০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাকে ৫০০ টাকা আর ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৬২৫ টাকা। তবে তিন বছর পর পর টোলের হার সমন্বয় করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২৫ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তাই প্রকল্প ব্যয় ও টোলের হার বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয় বলে সেতু বিভাগের সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আকতার সংবাদকে বলেন, পিপিপি ভিত্তিতে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২৫% টোল আদায় করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। তিন ধাপে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পটি। ১ম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী রেল স্টেশন পর্যন্ত। এই অংশের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া বনানী রেল স্টেশন থেকে রেলক্রসিং মগবাজার পর্যন্ত ২য় অংশ এবং মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৩য় অংশের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এতদিন অর্থায়ন জটিলতার কাজ ধীরগতি ছিল। এখন এই সমস্যা কেটে গেছে তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।