উৎসে কর নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ

  • ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মধ্যবিত্ত
  • পুরনো সঞ্চয়পত্রের উৎসে করের বর্তমান হার অনৈতিক

সঞ্চয়পত্রে পাওয়া আগের অর্থবছরের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ কেটে রাখাকে অনৈতিক মনে করছেন গ্রাহক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ১০ শতাংশ উৎসে কর হবে চলতি অর্থবছরের জন্য। আগের অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ হারে কর নিতে পারে সরকার। অথচ আগের অর্থবছরগুলোতে সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা ছিল। এছাড়া মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নতুন হারে করারোপ করাকেও অনিয়ম বলছেন অনেকে। এভাবে নিয়ম বহির্ভূত কর কেটে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা। বিশেষ করে নারী গ্রাহকরা সরকারের এমন আচরণে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সব সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি অর্থবছরে। যা গত অর্থবছর ৫ শতাংশ হারে ছিল। অর্থবিলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপ প্রস্তাবের পর থেকেই গ্রাহকদের মধ্যে এ নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। অনেকে আগের মুনাফায় ১০ শতাংশ হারে কর কাটা হবে এই আশঙ্কায় ৩০ জুনের আগেই সঞ্চয়পত্রের টাকা তুলে নেন। তবে অনেকে এটি অযৌক্তিক হওয়ায় তাতে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন সোমবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর দেখা গেল গ্রাহকদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। নতুন বা পুরনো সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকেই উৎসে কর সমানভাবে কাটা হচ্ছে। শুধু তাই নয় সঞ্চয়পত্রের আগের যেকোন বছরের মুনাফায় ১০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে গ্রাহককে।

গাজীপুরের বাসিন্দা হানুফা বানু নামের একজন গ্রাহকের ৪ লাখ টাকা মূল্যের পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০০৩ সালে। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরা সঞ্চয়পত্রের অংশীদার দাবি করে মামলা করার কারণে হানুফা বানু এর কোন অর্থই তুলতে পারেননি এত দিন। এই দীর্ঘ সময় পরে ২০১৯ সালে সেই মামলার রায় হানুফা বানুর পক্ষেই আসে। কিন্তু মামলার রায় তার পক্ষে এলেও খুশি হতে পারেননি এই গ্রাহক। তার মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কারণ তাকে এখন গুনতে হবে আগের তুলনায় দ্বিগুণ উৎসে কর। তার মতো অন্য একাধিক গ্রাহকও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, আমরা এখন কর্মঅক্ষম, তাই বৃদ্ধ বয়সে এই সামান্য অর্থের উপর নির্ভরশীল। তার পরও যদি বাড়তি উৎসে করের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়Ñ তাহলে সেটা হবে চরম অমানবিক। বিশ্লেষকরা বলছেন পুরনো সঞ্চয়পত্রে নতুন নিয়মে উৎসে কর আরোপ করা অনৈতিক। একই সঙ্গে এটা আন্তর্জাতিক কর নীতিরও পরিপন্থী। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ হিসেবে সরকার এই ঋণ নিয়ে সেখানে উৎসে কর বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। হানুফা বানু সংবাদকে বলেন, আমার টাকা এতদিন পর পাব তারপর আবার আগের চেয়ে দ্বিগুণ উৎসে কর দিতে হবে! এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের মতো অবসরপ্রাপ্ত মানুষের ওপর এটা এক ধরনের জুলুম করা হচ্ছে। এটা আমার শেষ সম্বল। তা পেতেও অনেক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়েছে আমাকে। আমার টাকা এতদিন সরকারের কাছেই ছিল। তাহলে এই টাকার এত বছরের সুদ না দিয়ে উল্টো দ্বিগুণ কর নিবে কেন?

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ সংবাদকে বলেন, পুরনো সঞ্চয়পত্রে নতুন উৎসে করহার ধার্য করা অনৈতিক। কারণ পুরনো সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হলেও সেই অর্থের কোন সুবিধা গ্রাহক ভোগ করেননি। বরং সেই অর্থ সরকারের কাছে ছিল। ফলে গ্রাহককে অতিরিক্ত সময়ের মুনাফা সুবিধা না দিয়ে দ্বিগুণ উৎসে কর ধার্য করা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

তবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর বলছে উৎসে কর্তন নিয়মের মধ্যেই হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুন নাহার বেগম সংবাদকে বলেন, সঞ্চয়পত্র এবং গ্রাহকের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তি হয়। সেখানে মুনাফা এবং করের বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ থাকে না। ফলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা এবং উৎসে করের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। যখন যে কর নীতি পাস হয় সে অনুযায়ী কর দিতে হবে। এর ফলে নতুন বা পুরনো যেটাই হোক চলতি অর্থবছরে যারা মুনাফা তুলবে সব ক্ষেত্রেই ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে। যদি এমন হয় যে, সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত কয়েক বছর আগে, কিন্তু টাকা উঠায়নি সে ক্ষেত্রেও উৎসে কর ১০ শতাংশই কাটা হবে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের মধ্যে মুনাফা উত্তোলন করলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ দিতে হবে। চলতি বছরের গত সোমবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে বলে তিনি সংবাদকে জানান।

সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল খালেক সংবাদকে বলেন, আমাদের মতো বৃদ্ধ এবং কর্মঅক্ষম মানুষের জীবনযাপনের জন্য সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর নির্ভরশীল। যেখানে অনেক বিধবা আছে এই মুনাফার উপর ভরসা করে টিকে আছে। অনেকে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে। তাদের উৎসে কর বাড়ালেও কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমাদের মতো সামান্য মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে নেয়া অমানবিক হবে। তাই সরকারের উচিৎ আমাদের দিকে সুনজর দেয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করনীতি বিভাগের প্রথম সচিব ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ মামুন সংবাদকে বলেন, কারও ৫ বছরমেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ যদি আগামী দুই বছর পরও শেষ হয়, সেক্ষেত্রে ওই সময় যে হারে উৎসে কর ধার্য থাকবে সে হিসাবেই দিতে হবে। চলতি অর্থবছরে মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎসে কর আর কমানোর সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে যদি করনীতিতে কোন পরিবর্তন আসে তখন সেটা দেখা যাবে, অন্তত এ বছর সে সম্ভাবনা নেই।

এ দিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সারাদেশে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সঞ্চয় অধিদফতর এর আগে তিন দফা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে অনলাইন পদ্ধতির বাইরে আর সঞ্চয়পত্রের লেনদেন করা যাবে না। আসল ও মুনাফা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে। অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনার বিষয়ে অর্থ বিভাগ গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদফতর, ডাক অধিদফতর ও সোনালী ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার সে বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ : অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় অর্থ বিভাগ জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে। ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে এটি চলমান। এতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোন কথা বলা হয়নি। যদিও অর্থ বিভাগের গত ২৯ মে’র ভিন্ন এক চিঠিতে দেখা যায়, সব জেলাকে মে এবং সব উপজেলাকে জুন মাসের মধ্যে অনলাইন পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগ এবং সঞ্চয় অধিদফতরের সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা নেয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) এবং ব্যাংক হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। তবে নগদে মাত্র এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। সেক্ষেত্রে টিআইএন লাগবে না। এই খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সরকার এই নিয়ম চালু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

সঞ্চয়পত্র

উৎসে কর নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ

রোকন মাহমুদ/জাকির হোসাইন

  • ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মধ্যবিত্ত
  • পুরনো সঞ্চয়পত্রের উৎসে করের বর্তমান হার অনৈতিক

সঞ্চয়পত্রে পাওয়া আগের অর্থবছরের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ কেটে রাখাকে অনৈতিক মনে করছেন গ্রাহক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ১০ শতাংশ উৎসে কর হবে চলতি অর্থবছরের জন্য। আগের অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ হারে কর নিতে পারে সরকার। অথচ আগের অর্থবছরগুলোতে সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা ছিল। এছাড়া মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নতুন হারে করারোপ করাকেও অনিয়ম বলছেন অনেকে। এভাবে নিয়ম বহির্ভূত কর কেটে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা। বিশেষ করে নারী গ্রাহকরা সরকারের এমন আচরণে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সব সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি অর্থবছরে। যা গত অর্থবছর ৫ শতাংশ হারে ছিল। অর্থবিলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপ প্রস্তাবের পর থেকেই গ্রাহকদের মধ্যে এ নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। অনেকে আগের মুনাফায় ১০ শতাংশ হারে কর কাটা হবে এই আশঙ্কায় ৩০ জুনের আগেই সঞ্চয়পত্রের টাকা তুলে নেন। তবে অনেকে এটি অযৌক্তিক হওয়ায় তাতে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন সোমবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর দেখা গেল গ্রাহকদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। নতুন বা পুরনো সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকেই উৎসে কর সমানভাবে কাটা হচ্ছে। শুধু তাই নয় সঞ্চয়পত্রের আগের যেকোন বছরের মুনাফায় ১০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে গ্রাহককে।

গাজীপুরের বাসিন্দা হানুফা বানু নামের একজন গ্রাহকের ৪ লাখ টাকা মূল্যের পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০০৩ সালে। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরা সঞ্চয়পত্রের অংশীদার দাবি করে মামলা করার কারণে হানুফা বানু এর কোন অর্থই তুলতে পারেননি এত দিন। এই দীর্ঘ সময় পরে ২০১৯ সালে সেই মামলার রায় হানুফা বানুর পক্ষেই আসে। কিন্তু মামলার রায় তার পক্ষে এলেও খুশি হতে পারেননি এই গ্রাহক। তার মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কারণ তাকে এখন গুনতে হবে আগের তুলনায় দ্বিগুণ উৎসে কর। তার মতো অন্য একাধিক গ্রাহকও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, আমরা এখন কর্মঅক্ষম, তাই বৃদ্ধ বয়সে এই সামান্য অর্থের উপর নির্ভরশীল। তার পরও যদি বাড়তি উৎসে করের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়Ñ তাহলে সেটা হবে চরম অমানবিক। বিশ্লেষকরা বলছেন পুরনো সঞ্চয়পত্রে নতুন নিয়মে উৎসে কর আরোপ করা অনৈতিক। একই সঙ্গে এটা আন্তর্জাতিক কর নীতিরও পরিপন্থী। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ হিসেবে সরকার এই ঋণ নিয়ে সেখানে উৎসে কর বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। হানুফা বানু সংবাদকে বলেন, আমার টাকা এতদিন পর পাব তারপর আবার আগের চেয়ে দ্বিগুণ উৎসে কর দিতে হবে! এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের মতো অবসরপ্রাপ্ত মানুষের ওপর এটা এক ধরনের জুলুম করা হচ্ছে। এটা আমার শেষ সম্বল। তা পেতেও অনেক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়েছে আমাকে। আমার টাকা এতদিন সরকারের কাছেই ছিল। তাহলে এই টাকার এত বছরের সুদ না দিয়ে উল্টো দ্বিগুণ কর নিবে কেন?

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ সংবাদকে বলেন, পুরনো সঞ্চয়পত্রে নতুন উৎসে করহার ধার্য করা অনৈতিক। কারণ পুরনো সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হলেও সেই অর্থের কোন সুবিধা গ্রাহক ভোগ করেননি। বরং সেই অর্থ সরকারের কাছে ছিল। ফলে গ্রাহককে অতিরিক্ত সময়ের মুনাফা সুবিধা না দিয়ে দ্বিগুণ উৎসে কর ধার্য করা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

তবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর বলছে উৎসে কর্তন নিয়মের মধ্যেই হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুন নাহার বেগম সংবাদকে বলেন, সঞ্চয়পত্র এবং গ্রাহকের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তি হয়। সেখানে মুনাফা এবং করের বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ থাকে না। ফলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা এবং উৎসে করের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। যখন যে কর নীতি পাস হয় সে অনুযায়ী কর দিতে হবে। এর ফলে নতুন বা পুরনো যেটাই হোক চলতি অর্থবছরে যারা মুনাফা তুলবে সব ক্ষেত্রেই ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে। যদি এমন হয় যে, সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত কয়েক বছর আগে, কিন্তু টাকা উঠায়নি সে ক্ষেত্রেও উৎসে কর ১০ শতাংশই কাটা হবে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের মধ্যে মুনাফা উত্তোলন করলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ দিতে হবে। চলতি বছরের গত সোমবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে বলে তিনি সংবাদকে জানান।

সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল খালেক সংবাদকে বলেন, আমাদের মতো বৃদ্ধ এবং কর্মঅক্ষম মানুষের জীবনযাপনের জন্য সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর নির্ভরশীল। যেখানে অনেক বিধবা আছে এই মুনাফার উপর ভরসা করে টিকে আছে। অনেকে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে। তাদের উৎসে কর বাড়ালেও কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমাদের মতো সামান্য মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে নেয়া অমানবিক হবে। তাই সরকারের উচিৎ আমাদের দিকে সুনজর দেয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করনীতি বিভাগের প্রথম সচিব ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ মামুন সংবাদকে বলেন, কারও ৫ বছরমেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ যদি আগামী দুই বছর পরও শেষ হয়, সেক্ষেত্রে ওই সময় যে হারে উৎসে কর ধার্য থাকবে সে হিসাবেই দিতে হবে। চলতি অর্থবছরে মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ আরোপ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে উৎসে কর আর কমানোর সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে যদি করনীতিতে কোন পরিবর্তন আসে তখন সেটা দেখা যাবে, অন্তত এ বছর সে সম্ভাবনা নেই।

এ দিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সারাদেশে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সঞ্চয় অধিদফতর এর আগে তিন দফা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে অনলাইন পদ্ধতির বাইরে আর সঞ্চয়পত্রের লেনদেন করা যাবে না। আসল ও মুনাফা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে। অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনার বিষয়ে অর্থ বিভাগ গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদফতর, ডাক অধিদফতর ও সোনালী ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার সে বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ : অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় অর্থ বিভাগ জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে। ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে এটি চলমান। এতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোন কথা বলা হয়নি। যদিও অর্থ বিভাগের গত ২৯ মে’র ভিন্ন এক চিঠিতে দেখা যায়, সব জেলাকে মে এবং সব উপজেলাকে জুন মাসের মধ্যে অনলাইন পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগ এবং সঞ্চয় অধিদফতরের সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা নেয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) এবং ব্যাংক হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। তবে নগদে মাত্র এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। সেক্ষেত্রে টিআইএন লাগবে না। এই খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সরকার এই নিয়ম চালু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।