শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ স্মারকলিপি
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। হল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গায় রয়েছে ফলজ গাছ, শালবৃক্ষ ও গোলাপজামসহ নানান প্রজাতির ১১৩২টি গাছ। জীববৈচিত্র রক্ষায় সম্প্রতি ‘অপরিকল্পিতভাবে’ শিক্ষার্থীদের হল নির্মাণের স্থান পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে তারা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত করে এবং ৭ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। এদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অপরিকল্পিতভাবে হল নির্মাণের প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাত করে স্মারকলিপি প্রদান করে। জানা যায়, গত ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৪৫ কোটি টাকার ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১০তলা বিশিষ্ট পাঁচটি হল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। হলগুলোর মধ্যে তিনটি ছাত্রদের এবং দুইটি ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ছাত্রদের তিনটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ পার্শ্বে (টারজান পয়েন্ট) ছাত্রীদের জন্য দুটি নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ফলে পাঁচটি হল নির্মাণের কারণে সর্বমোট এক হাজার ১শত ৩২টি গাছ কাটা যাবে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তরে (শান্তিনিকেতন) ৫৩৯টি গাছ কাটতে হবে। যেখানে ফলজ গাছের মধ্যে ৬৩টি গোলাপজাম, ১৭টি অমলকি, ২৩টি কামরাঙা, ১২টি চালতা গাছ ছাড়াও রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পূর্বে নির্ধারিত জায়গায় হল নির্মাণের জন্য কেটে ফেলতে হবে ৩৫৮টি গাছ। যেখানে কিছু সংখ্যক কাঠগাছ ছাড়া রয়েছে মেহগনি ও বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পূর্বে পার্শ্বে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত জায়গাটিও ছাড় পাচ্ছে না এই অপরিকল্পিত হল নির্মাণ থেকে। মাঠের মধ্যে হল নির্মাণের ফলে মাঠের পাশে ২৮টি গাছ কাটা পড়ছে। আবার হলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করার জন্য জায়গা হিসেবে থাকছে না কোন খেলার মাঠ। এদিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ পার্শ্বে (টারজান পয়েন্ট) ছাত্রীদের জন্য দুটি হল নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ১৭৮টি কাঠাল গাছসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০৭টি গাছ। ফলে পাঁচটি হল নির্মাণের কারণে কাটা পড়তে যাচ্ছে বিরল প্রজাতিরসহ সর্বমোট ১১৩২টি গাছ। গাছ কেটে হল নির্মাণের সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ পরিপন্থী হিসেবে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অলিউর রহমান সান বলেন, উন্নয়ন মানে শুধুই বহুতল অবকাঠামো নির্মাণ হয়ে দাড়িয়েছে। প্রাণ-প্রকৃতির উন্নয়নের বদলে যত্রতত্র দালান নির্মাণ করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের অবকাঠামো প্রযয়োজন কিন্তু হাজারো গাছের প্রাণের বিনিময়ে, ছোট ছোট জীবের আবাস ধ্বংস করে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণ, গণরুম সংস্কৃতি, মানসম্মত গবেষণার তীব্র অভাব ও ক্ষমতার দাপটকে অগ্রাহ্য করে ভবন বানিয়ে আমরা কি মানুষের উন্নয়ন করতে পারবো? এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দৈনিক সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জায়গা নষ্ট হয়েছে এবং পরিবেশেরও ক্ষতি হয়েছে। আর কোন ক্ষতি আমরা গ্রহণ করতে পারি না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান যেহেতু শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার তাই প্রশাসনের উচিত তা পাবলিক করা। সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংলাপে বসতে হবে। এবং পর্যালোচনার করে মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করার পর নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। এরআগে সকল নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অপরিকল্পিত কাজ অদূরদর্শী প্রসূত। কেননা সময়ের সঙ্গে মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন অনুযায়ী রিভাইস হবে এটাই নিয়ম। পৃথিবীতে যেকোনো স্থাপনার প্ল্যান করা হলে এর এনভায়রনমেন্ট, ইকোলজি এবং ইকোসিস্টেমকে প্রাধান্য দিয়েই করা হয়। প্ল্যান করার সময় এনভায়রনমেন্ট এসেস করে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। এরপর তা মিটিগেশন করে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। প্রশাসন এই অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ বন্ধ করে মহাপরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান প্রকাশ করেনি বিষয়টি সত্য নয়। তবে প্রশাসন যা ভাল মনে করেন তাই করছেন বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ স্মারকলিপি
জোবায়ের কামাল, জাবি
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। হল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গায় রয়েছে ফলজ গাছ, শালবৃক্ষ ও গোলাপজামসহ নানান প্রজাতির ১১৩২টি গাছ। জীববৈচিত্র রক্ষায় সম্প্রতি ‘অপরিকল্পিতভাবে’ শিক্ষার্থীদের হল নির্মাণের স্থান পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে তারা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত করে এবং ৭ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। এদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অপরিকল্পিতভাবে হল নির্মাণের প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাত করে স্মারকলিপি প্রদান করে। জানা যায়, গত ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৪৫ কোটি টাকার ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১০তলা বিশিষ্ট পাঁচটি হল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। হলগুলোর মধ্যে তিনটি ছাত্রদের এবং দুইটি ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ছাত্রদের তিনটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ পার্শ্বে (টারজান পয়েন্ট) ছাত্রীদের জন্য দুটি নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ফলে পাঁচটি হল নির্মাণের কারণে সর্বমোট এক হাজার ১শত ৩২টি গাছ কাটা যাবে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তরে (শান্তিনিকেতন) ৫৩৯টি গাছ কাটতে হবে। যেখানে ফলজ গাছের মধ্যে ৬৩টি গোলাপজাম, ১৭টি অমলকি, ২৩টি কামরাঙা, ১২টি চালতা গাছ ছাড়াও রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পূর্বে নির্ধারিত জায়গায় হল নির্মাণের জন্য কেটে ফেলতে হবে ৩৫৮টি গাছ। যেখানে কিছু সংখ্যক কাঠগাছ ছাড়া রয়েছে মেহগনি ও বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পূর্বে পার্শ্বে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত জায়গাটিও ছাড় পাচ্ছে না এই অপরিকল্পিত হল নির্মাণ থেকে। মাঠের মধ্যে হল নির্মাণের ফলে মাঠের পাশে ২৮টি গাছ কাটা পড়ছে। আবার হলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করার জন্য জায়গা হিসেবে থাকছে না কোন খেলার মাঠ। এদিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ পার্শ্বে (টারজান পয়েন্ট) ছাত্রীদের জন্য দুটি হল নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ১৭৮টি কাঠাল গাছসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০৭টি গাছ। ফলে পাঁচটি হল নির্মাণের কারণে কাটা পড়তে যাচ্ছে বিরল প্রজাতিরসহ সর্বমোট ১১৩২টি গাছ। গাছ কেটে হল নির্মাণের সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ পরিপন্থী হিসেবে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অলিউর রহমান সান বলেন, উন্নয়ন মানে শুধুই বহুতল অবকাঠামো নির্মাণ হয়ে দাড়িয়েছে। প্রাণ-প্রকৃতির উন্নয়নের বদলে যত্রতত্র দালান নির্মাণ করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের অবকাঠামো প্রযয়োজন কিন্তু হাজারো গাছের প্রাণের বিনিময়ে, ছোট ছোট জীবের আবাস ধ্বংস করে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণ, গণরুম সংস্কৃতি, মানসম্মত গবেষণার তীব্র অভাব ও ক্ষমতার দাপটকে অগ্রাহ্য করে ভবন বানিয়ে আমরা কি মানুষের উন্নয়ন করতে পারবো? এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দৈনিক সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জায়গা নষ্ট হয়েছে এবং পরিবেশেরও ক্ষতি হয়েছে। আর কোন ক্ষতি আমরা গ্রহণ করতে পারি না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান যেহেতু শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার তাই প্রশাসনের উচিত তা পাবলিক করা। সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংলাপে বসতে হবে। এবং পর্যালোচনার করে মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করার পর নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। এরআগে সকল নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অপরিকল্পিত কাজ অদূরদর্শী প্রসূত। কেননা সময়ের সঙ্গে মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন অনুযায়ী রিভাইস হবে এটাই নিয়ম। পৃথিবীতে যেকোনো স্থাপনার প্ল্যান করা হলে এর এনভায়রনমেন্ট, ইকোলজি এবং ইকোসিস্টেমকে প্রাধান্য দিয়েই করা হয়। প্ল্যান করার সময় এনভায়রনমেন্ট এসেস করে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। এরপর তা মিটিগেশন করে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। প্রশাসন এই অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ বন্ধ করে মহাপরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান প্রকাশ করেনি বিষয়টি সত্য নয়। তবে প্রশাসন যা ভাল মনে করেন তাই করছেন বলে জানান তিনি।