যুক্তরাষ্ট্রে আটককেন্দ্রে কয়েকশ’ অভিবাসী শিশুর মানবেতর জীবন

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অভিবাসী আটককেন্দ্রে (ডিটেনশন সেন্টার) চিকিৎসার অভাবে মানবেতর পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে কয়েকশ’ শিশু। সেখানে প্রবেশাধিকার পাওয়া এক আইনজীবী (অ্যাটর্নি) ইলোরা মুখার্জির দাবি, আটককেন্দ্রে জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বরে ভোগা শিশুদের অন্যদের থেকে আলাদা করা হলেও তাদের চিকিৎসা হচ্ছে কিনা- তাও নিশ্চিত নয়। শিশুদের এমন অমানবিক পরিস্থিতি নিরসনে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা।

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রত্যাশায় আসা প্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সরকার জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতি ঘোষণার পর এই শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে ওই আটককেন্দ্রে রাখা হতো। পরে এক রায়ে বলা হয়, অভিভাবকহীন শিশুদের ৭২ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা যাবে না। সম্প্রতি কলম্বিয়া ‘ল’ স্কুলের অভিবাসন অধিকার ক্লিনিকের পরিচালক ইলোরা মুখার্জি টেক্সাসের ক্লিন্ট নামের আটককেন্দ্র পরিদর্শনে যান। তার নেতৃত্বাধীন দলটি জানায়, ‘আটককেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই, ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতা নেই। যেকোন সময় ঠান্ডা লেগে যেতে পারে শিশুদের। নেই পর্যাপ্ত খাবার বা পানির ব্যবস্থা।’ ইলোরা বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে আটককেন্দ্রের শিশুদের দেখে আসছি। কিন্তু এমন দৃশ্য এর আগে কখনোই দেখিনি।’ দুই সপ্তাহ আগেই পাঁচ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী পর্যন্ত ৬০ জন শিশুর সঙ্গে দেখা করেন আইনজীবীরা। ওই কেন্দ্রে ৩৫০ জন শিশু আটক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনজীবীরা জানান, তাদের অনেকের কাপড়েই দুধ, খাবার ও প্রস্রাব লেগে ছিল। অনেকেই দিনের পর দিন একই পোশাকে কাটাচ্ছেন।

এর আগে ইলোরা বলেন, তিনি আটককেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে তারা সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানান, আটককেন্দ্র থেকে মুক্তি পাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সাতটি শিশু মারা যায়। বিগত ১০ বছরে এমন ঘটনা এবারই প্রথম। ইলোরা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত ছিলাম যে এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে না আনলে আরও শিশুর মৃত্যু হতে পারে’। ক্লিন্টে গিয়ে আইনজীবীরা দেখতে পান, জ্বরের কারণে শিশুদের আলাদা করা হয়েছে। তবে তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে কিনা- সেই বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। ক্লিন্টে যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই টেক্সাসের ম্যাকঅ্যালেন আটককেন্দ্র পরিদর্শন করেন আইনজীবীরা। সেখানেও এমন পাঁচ শিশুকে চিহ্নিত করেন তারা, যাদের জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিতে হবে। সেখানে পরিদর্শনে যাওয়া চিকিৎসক ডলি লুসিও সেভিয়ের বলেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, তা নিপীড়ন কেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়।’ মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (সিবিপি) প্রাথমিকভাবে আইনজীবীদের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তাদের নিজেদের নজরদারি কেন্দ্র ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মহাপরিচালকের দফতর থেকে করা প্রতিবেদনেও এমন চিত্র উঠে আসে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তে টহলকেন্দ্রগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি মানুষ অবস্থান করছে।

এর আগে ১০ জুন অডিটর জানায়, তারা ৪-৫টি কেন্দ্রে অনেক মানুষের ভিড় দেখেছেন। সেখানে শিশুসহ সবারই অনেক সমস্যা হচ্ছে যার জরুরি ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন। সিবিপি এক বিবৃতিতে জানায়, আমাদের হেফাজতে থাকাদের আমরা সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ যত্ন করার চেষ্টা করি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও সিবিপি নেতারা অসংখ্যবার আমাদের এই সমস্যা দেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে অস্থায়ী এ কেন্দ্রগুলো এত মানুষের আশ্রয়ের জন্য তৈরি করা হয়নি। প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, তারা তাদের কার্যক্রমের পরিধি আরও বিস্তৃত করছে। গতকাল এই অভিবাসী কেন্দ্রের এমন পরিস্থিতি নিয়ে শুনানি আয়োজন করে প্রতিনিধি পরিষদের একটি কমিটি। আগামী সপ্তাহে একটি স্বাধীন মধ্যস্থতাকারী সংগঠন এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। একইদিন লাইটস ফর লিবার্টি গ্রুপ শিশুদের যত্নে সরকারের এ ব্যর্থতার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করবে। অভিবাসী শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ইয়াং সেন্টার ফর ইমিগ্রেন্টস চিলড্রেন রাইটস-এর পলিসি পরিচালক জেনিফার নাগড়া বলেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আসলে ওই আটককেন্দ্রগুলোকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার না করে আইন প্রয়োগের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই হতাশাজনক যে, যখন আপনি জানতে পারবেন বিষয়টি সরবরাহের অভাবে হয়নি বরং সদিচ্ছার অভাবে হয়েছে। নাগড়ার মতো শতশত অধিকারকর্মীরা এই অভিবাসন কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তবে বিগত দুই দশকে এমন অভিবাসী আটককেন্দ্রের পরিধি দ্রুতগতিতে বাড়িয়েই চলছে যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের করা আইনের পরই অভিবাসী আটকের সংখ্যা বেড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

যুক্তরাষ্ট্রে আটককেন্দ্রে কয়েকশ’ অভিবাসী শিশুর মানবেতর জীবন

সংবাদ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অভিবাসী আটককেন্দ্রে (ডিটেনশন সেন্টার) চিকিৎসার অভাবে মানবেতর পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে কয়েকশ’ শিশু। সেখানে প্রবেশাধিকার পাওয়া এক আইনজীবী (অ্যাটর্নি) ইলোরা মুখার্জির দাবি, আটককেন্দ্রে জরুরি জনস্বাস্থ্য সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বরে ভোগা শিশুদের অন্যদের থেকে আলাদা করা হলেও তাদের চিকিৎসা হচ্ছে কিনা- তাও নিশ্চিত নয়। শিশুদের এমন অমানবিক পরিস্থিতি নিরসনে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা।

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রত্যাশায় আসা প্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সরকার জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতি ঘোষণার পর এই শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে ওই আটককেন্দ্রে রাখা হতো। পরে এক রায়ে বলা হয়, অভিভাবকহীন শিশুদের ৭২ ঘণ্টার বেশি আটক রাখা যাবে না। সম্প্রতি কলম্বিয়া ‘ল’ স্কুলের অভিবাসন অধিকার ক্লিনিকের পরিচালক ইলোরা মুখার্জি টেক্সাসের ক্লিন্ট নামের আটককেন্দ্র পরিদর্শনে যান। তার নেতৃত্বাধীন দলটি জানায়, ‘আটককেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই, ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতা নেই। যেকোন সময় ঠান্ডা লেগে যেতে পারে শিশুদের। নেই পর্যাপ্ত খাবার বা পানির ব্যবস্থা।’ ইলোরা বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে আটককেন্দ্রের শিশুদের দেখে আসছি। কিন্তু এমন দৃশ্য এর আগে কখনোই দেখিনি।’ দুই সপ্তাহ আগেই পাঁচ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী পর্যন্ত ৬০ জন শিশুর সঙ্গে দেখা করেন আইনজীবীরা। ওই কেন্দ্রে ৩৫০ জন শিশু আটক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনজীবীরা জানান, তাদের অনেকের কাপড়েই দুধ, খাবার ও প্রস্রাব লেগে ছিল। অনেকেই দিনের পর দিন একই পোশাকে কাটাচ্ছেন।

এর আগে ইলোরা বলেন, তিনি আটককেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে তারা সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানান, আটককেন্দ্র থেকে মুক্তি পাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সাতটি শিশু মারা যায়। বিগত ১০ বছরে এমন ঘটনা এবারই প্রথম। ইলোরা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত ছিলাম যে এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে না আনলে আরও শিশুর মৃত্যু হতে পারে’। ক্লিন্টে গিয়ে আইনজীবীরা দেখতে পান, জ্বরের কারণে শিশুদের আলাদা করা হয়েছে। তবে তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে কিনা- সেই বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। ক্লিন্টে যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই টেক্সাসের ম্যাকঅ্যালেন আটককেন্দ্র পরিদর্শন করেন আইনজীবীরা। সেখানেও এমন পাঁচ শিশুকে চিহ্নিত করেন তারা, যাদের জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিতে হবে। সেখানে পরিদর্শনে যাওয়া চিকিৎসক ডলি লুসিও সেভিয়ের বলেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, তা নিপীড়ন কেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়।’ মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (সিবিপি) প্রাথমিকভাবে আইনজীবীদের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তাদের নিজেদের নজরদারি কেন্দ্র ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মহাপরিচালকের দফতর থেকে করা প্রতিবেদনেও এমন চিত্র উঠে আসে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তে টহলকেন্দ্রগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি মানুষ অবস্থান করছে।

এর আগে ১০ জুন অডিটর জানায়, তারা ৪-৫টি কেন্দ্রে অনেক মানুষের ভিড় দেখেছেন। সেখানে শিশুসহ সবারই অনেক সমস্যা হচ্ছে যার জরুরি ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন। সিবিপি এক বিবৃতিতে জানায়, আমাদের হেফাজতে থাকাদের আমরা সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ যত্ন করার চেষ্টা করি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও সিবিপি নেতারা অসংখ্যবার আমাদের এই সমস্যা দেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে অস্থায়ী এ কেন্দ্রগুলো এত মানুষের আশ্রয়ের জন্য তৈরি করা হয়নি। প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, তারা তাদের কার্যক্রমের পরিধি আরও বিস্তৃত করছে। গতকাল এই অভিবাসী কেন্দ্রের এমন পরিস্থিতি নিয়ে শুনানি আয়োজন করে প্রতিনিধি পরিষদের একটি কমিটি। আগামী সপ্তাহে একটি স্বাধীন মধ্যস্থতাকারী সংগঠন এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। একইদিন লাইটস ফর লিবার্টি গ্রুপ শিশুদের যত্নে সরকারের এ ব্যর্থতার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করবে। অভিবাসী শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ইয়াং সেন্টার ফর ইমিগ্রেন্টস চিলড্রেন রাইটস-এর পলিসি পরিচালক জেনিফার নাগড়া বলেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আসলে ওই আটককেন্দ্রগুলোকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার না করে আইন প্রয়োগের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই হতাশাজনক যে, যখন আপনি জানতে পারবেন বিষয়টি সরবরাহের অভাবে হয়নি বরং সদিচ্ছার অভাবে হয়েছে। নাগড়ার মতো শতশত অধিকারকর্মীরা এই অভিবাসন কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তবে বিগত দুই দশকে এমন অভিবাসী আটককেন্দ্রের পরিধি দ্রুতগতিতে বাড়িয়েই চলছে যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের করা আইনের পরই অভিবাসী আটকের সংখ্যা বেড়ে যায়।