শঙ্খের গ্রাসে মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে পুকুরিয়া

শঙ্খ নদীর করাল ঘ্রাসে দিনের পর দিন বিলীন হতে চলছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। জোয়ারের তোড়ে ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের তেচ্ছিপাড়া গ্রামের বেশ কিছু বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও অনেক বাড়িঘর রয়েছে বিলীনের পথে। এ নিয়ে চরম সঙ্কটে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। একের পর এক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সরজমিনে ভাঙন কবলিত পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের তোড়ে শঙ্খ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর। সাধারণ মানুষ বসতঘর ও জায়গা জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এছাড়াও টানা কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণের ফলে একই ইউনিয়নের চান্দপুর, চন্দ্রপুর, হাজীগাঁও, বরুমছড়া, দক্ষিণ হাজীগাঁও ও বৈলগাঁও গ্রামের সহস্র্রাধিক ফসলি জমি ও মৎস্য প্রজেক্ট প্লাবিত হয়ে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদীর জোয়ার এবং পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহের কুনিয়াপিরা, কোড়াখালী ও শিয়ালখালী নামে ৩টি খাল প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনসাধারণ। এই সমস্যা নিরসনে ওই ৩টি খাল খনন করা অতীব প্রয়োজন বলে জানান তারা।

এদিকে তেচ্ছিপাড়া এলাকায় ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে মৃত ফজর আহমদের পুত্র আবদুল গণি, মৃত আবুল হোছনের পুত্র হাছন চৌধুরী ও কবির চৌধুরী, মৃত দানু মিয়ার পুত্র ফজলুল কাদের চৌধুরী, মৃত ফৌজুল কবির চৌধুরীর পুত্র শফিকুল মন্নান ও গোলাম মোস্তফা, মৃত আবদুচ ছমদের পুত্র মাহমুদ আলী, মৃত কবির আহমদ চৌধুরীর পুত্র ছাবের আহমদ, মুজিবুল হক, আনোয়ারুল হক, মৃত ফয়েজুর রহমানের পুত্র হাবিবুর রহমান, আবদুল মতলবের পুত্র রশিদ আহমদ ও ছালেহ আহমদ, জেবুল হোছনের পুত্র নুরুল মনির ও নুরুল কবির, রশিদ আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আলী, মৃত গুনু মিয়ার পুত্র নুরুল আমিন ও আজিজুল হক, মৃত ফরোখ আহমদের পুত্র মাহামুদুল হক ও মো. হারুন, মৃত ফয়েজুর রহমানের পুত্র আবদুর রহমান, মৃত অলি আহমদের পুত্র নাছির উদ্দীন, মৃত নুরুল হকের পুত্র শামশুল হক, মৃত জিন্নত আলীর পুত্র জাফর আহমদ এবং আব্দুচ ছবুরের পুত্র ফয়েজ আহমদের বসতবাড়ি। সরজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ জানান, আমার ওয়ার্ডের (তেচ্ছিপাড়ার) অসংখ্য বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে চর পুকুরিয়া এবং পুকুরিয়া নামে দুইটি মৌজা নদী গর্ভে হারিয়েছে। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অবগত করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা না হলে অচিরেই তেচ্ছিপাড়া গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

পুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আসহাব উদ্দিন জানান, আমার ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দিনের পর দিন বসতগৃহ ও সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এখানকার জনসাধারণ। অচিরেই সমস্যার সমাধান করতে ভাঙন কবলিত এলাকায় ব্লক নির্মাণ করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষনে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নœাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে আউশ মৌসুমে চাষাবাদে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানি চলাচলের ৩টি খাল প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, পুকুরিয়া নদী গর্ভে বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। অচিরেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। এদিকে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নে একের পর এক শঙ্খের এই ভয়াবহ ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। জনবসতিপূর্ণ এই এলাকাটি রক্ষা করতে হলে স্থানীয় সাঙ্গু ব্রিজ থেকে তেচ্ছিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী পাড়ে টেকসই ব্লক নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। না হয় একের পর এক শঙ্খের করাল ঘ্রাসে মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে পুকুরিয়া ইউনিয়নটি।

শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৫, ৮ জিলকদ ১৪৪০

শঙ্খের গ্রাসে মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে পুকুরিয়া

সৈকত আচার্য্য, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

image

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : শঙ্খ নদীর করাল গ্রাসে এভাবেই বিলীন হচ্ছে বসতি-সংবাদ

শঙ্খ নদীর করাল ঘ্রাসে দিনের পর দিন বিলীন হতে চলছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। জোয়ারের তোড়ে ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের তেচ্ছিপাড়া গ্রামের বেশ কিছু বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও অনেক বাড়িঘর রয়েছে বিলীনের পথে। এ নিয়ে চরম সঙ্কটে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। একের পর এক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সরজমিনে ভাঙন কবলিত পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের তোড়ে শঙ্খ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর। সাধারণ মানুষ বসতঘর ও জায়গা জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এছাড়াও টানা কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণের ফলে একই ইউনিয়নের চান্দপুর, চন্দ্রপুর, হাজীগাঁও, বরুমছড়া, দক্ষিণ হাজীগাঁও ও বৈলগাঁও গ্রামের সহস্র্রাধিক ফসলি জমি ও মৎস্য প্রজেক্ট প্লাবিত হয়ে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদীর জোয়ার এবং পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহের কুনিয়াপিরা, কোড়াখালী ও শিয়ালখালী নামে ৩টি খাল প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনসাধারণ। এই সমস্যা নিরসনে ওই ৩টি খাল খনন করা অতীব প্রয়োজন বলে জানান তারা।

এদিকে তেচ্ছিপাড়া এলাকায় ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে মৃত ফজর আহমদের পুত্র আবদুল গণি, মৃত আবুল হোছনের পুত্র হাছন চৌধুরী ও কবির চৌধুরী, মৃত দানু মিয়ার পুত্র ফজলুল কাদের চৌধুরী, মৃত ফৌজুল কবির চৌধুরীর পুত্র শফিকুল মন্নান ও গোলাম মোস্তফা, মৃত আবদুচ ছমদের পুত্র মাহমুদ আলী, মৃত কবির আহমদ চৌধুরীর পুত্র ছাবের আহমদ, মুজিবুল হক, আনোয়ারুল হক, মৃত ফয়েজুর রহমানের পুত্র হাবিবুর রহমান, আবদুল মতলবের পুত্র রশিদ আহমদ ও ছালেহ আহমদ, জেবুল হোছনের পুত্র নুরুল মনির ও নুরুল কবির, রশিদ আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আলী, মৃত গুনু মিয়ার পুত্র নুরুল আমিন ও আজিজুল হক, মৃত ফরোখ আহমদের পুত্র মাহামুদুল হক ও মো. হারুন, মৃত ফয়েজুর রহমানের পুত্র আবদুর রহমান, মৃত অলি আহমদের পুত্র নাছির উদ্দীন, মৃত নুরুল হকের পুত্র শামশুল হক, মৃত জিন্নত আলীর পুত্র জাফর আহমদ এবং আব্দুচ ছবুরের পুত্র ফয়েজ আহমদের বসতবাড়ি। সরজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ জানান, আমার ওয়ার্ডের (তেচ্ছিপাড়ার) অসংখ্য বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে চর পুকুরিয়া এবং পুকুরিয়া নামে দুইটি মৌজা নদী গর্ভে হারিয়েছে। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অবগত করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা না হলে অচিরেই তেচ্ছিপাড়া গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

পুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আসহাব উদ্দিন জানান, আমার ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দিনের পর দিন বসতগৃহ ও সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এখানকার জনসাধারণ। অচিরেই সমস্যার সমাধান করতে ভাঙন কবলিত এলাকায় ব্লক নির্মাণ করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষনে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নœাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে আউশ মৌসুমে চাষাবাদে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানি চলাচলের ৩টি খাল প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, পুকুরিয়া নদী গর্ভে বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। অচিরেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। এদিকে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নে একের পর এক শঙ্খের এই ভয়াবহ ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। জনবসতিপূর্ণ এই এলাকাটি রক্ষা করতে হলে স্থানীয় সাঙ্গু ব্রিজ থেকে তেচ্ছিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী পাড়ে টেকসই ব্লক নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। না হয় একের পর এক শঙ্খের করাল ঘ্রাসে মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে পুকুরিয়া ইউনিয়নটি।