এনায়েতপুরে যমুনার ৬ কিমি. জুড়ে ভাঙন

‘১০/১২ বছর ধইড়া খালি ভাংত্যাছে, তো ভাংত্যাছেই। ভোটের সময় প্রার্থীরা আইসা কয় যে হ্যাগোরে ভোট দিলে নদীতে বাঁধ দিবো। আমাগোরে ভাঙন ওইতে মুক্ত করবো। নির্বাচন আইসে নির্বাচন যায়। কিন্তু আমাগোরে আর বাঁধ ওয়না। আঙ্গরে কি কোন উপায় ওইবো না? নদীতে বন্যার পানি বাইড়া হোতে ব্যাবাক ভাংগা যাইত্যাছে কেউ ব্যবস্থা নিত্যাছে না। আমাগোরে কি কেউ রক্ষা করবো না।’ এমনি হতাশা, আকুতি ও বুক ভরা ক্ষোভের কথা বলছিলেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ব্রাক্ষ্মনগ্রাম থেকে ভেকা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত আড়কান্দি গ্রামের বৃদ্ধ আবুল কাশেম ব্যাপারী। তিনি জানান, ভাঙন রোধে গত ৫ বছরে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় কয়েকটি গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি ও হাজার-হাজার একর আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। আমরা এখন সর্বশান্ত।

গোয়াল ভরা গরু, জমি-জমা,ঘর-বাড়ি নিয়ে পরিপাটি সংসার ছিল। সবই গিলে খেয়েছে যমুনা। বর্তমানে পানি বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে নদীর পশ্চিম তীরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী ভাঙন। কিন্তু অতীতের মতোই প্রতিকারে নেই কোন ব্যবস্থা। অথচ সিরাজগঞ্জ শহর তথা এর আশপাশে হলে প্রতিকারে কাজ করার জন্য পাউবো হুমরি খেয়ে পড়ত। আমরা অভিভাবকহীন হওয়ায় নেই কোন ব্যবস্থা। তার মতো আড়কান্দি চরের দুখু মিয়া, শুকুর আলী, হিরা আকন্দ, বাঐখোলা গ্রামের আমীর চাঁন শেখের স্ত্রী আলেয়া খাতুন জানালেন হতাশার কথা। তারা জানান, গত কয়েক মাস আগেও ছিল ঘর-বাড়ি এখন তা ছলছল জলরাশী। এখন আমরা অন্যের বাড়ির আশ্রীতা। এইতো যমুনার ভাঙনে নিয়তীর লিখন। আমরা অনেক মানববন্ধন, আন্দোলন-সংগ্রাম, করেছি। মন্ত্রী-এমপি, অফিসাররা ঘরে গেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই আরও ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে সবাই।

গত ২ সপ্তাহের ব্যবধান অন্তত শতাধিক ঘর-বাড়ি ও কয়েক শ’ একর আবাদী জমি বিলীন হয়েছে। আরও বিলীন হবার অপেক্ষায় হাজারও ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি। গত মাস খানেক আগে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত ব্রাক্ষ্মমগ্রামে বালি ভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলে ভাঙন রোধে ভূমিকা রেখেছে। তবে এর দক্ষিণে ৫ কিলোমিটার অরক্ষিত থাকায় ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

এলাকাবাসীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি করে আরও জানান, পদ্মা সেতু হবে কেউ কল্পনা করেনি। কত বাঁধা সত্যেও শেখ হাসিনা করে দেখাচ্ছে। আমরা তার কাছে রিলিপ চাইনা, আমাদের ৬ কিলোমিটার বাঁধ করে দিক। আর আপাতত ব্রাক্ষ্মমগ্রামের মতো দক্ষিণ এলাকায় জরুরি জিও টেক্স বস্তা ফেলে আমাদের এলাকা ভাঙন রোধ করুক।

ভাঙন বিষয়ে খুকনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানান, আমরা জনগনের কাছে এখন নগন্য জনপ্রতিনিধি।

কারন তাদের কাছ থেকে ভোট নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েও কোন উপকারে আসতে পারছি না। শুধুই ভাঙনে প্রতিরোধ কাজ না হওয়ায়। আমরাও অনেক তদবির করেছি সব জায়গায় কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। আমরা চাই দ্রুত ভাঙন রোধে পাউবো যেন উদ্যোগী হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, গুরুত্বপূর্ণ তাঁথ শিল্প সমৃদ্ধ ওই এলাকা যমুনার হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় ৭৯০ কোটি টাকার প্রকল্প দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। তা অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশা করছি ভাঙনের গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে হঠাৎ করেই পাটাগ্রাম ও সিংড়াবাড়ী এলাকায় ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। পাটাগ্রাম সলিডস্পারের ভাটিতে ও উজানে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে স্পারের দুই পাশের গোড়ার মাটি প্রায় দুইশ মিটার ধসে গেছে। দুই পাশে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। ভাঙনের কারণে স্পারটি যেকোন সময় নদীতে ধসে যেতে পারে। এতে মধ্যে সিংড়াবাড়ী সলিডস্পারটি ধসে গেছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ঘরবাড়ি। ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়া ঘববাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৫, ৮ জিলকদ ১৪৪০

এনায়েতপুরে যমুনার ৬ কিমি. জুড়ে ভাঙন

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

image

‘১০/১২ বছর ধইড়া খালি ভাংত্যাছে, তো ভাংত্যাছেই। ভোটের সময় প্রার্থীরা আইসা কয় যে হ্যাগোরে ভোট দিলে নদীতে বাঁধ দিবো। আমাগোরে ভাঙন ওইতে মুক্ত করবো। নির্বাচন আইসে নির্বাচন যায়। কিন্তু আমাগোরে আর বাঁধ ওয়না। আঙ্গরে কি কোন উপায় ওইবো না? নদীতে বন্যার পানি বাইড়া হোতে ব্যাবাক ভাংগা যাইত্যাছে কেউ ব্যবস্থা নিত্যাছে না। আমাগোরে কি কেউ রক্ষা করবো না।’ এমনি হতাশা, আকুতি ও বুক ভরা ক্ষোভের কথা বলছিলেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ব্রাক্ষ্মনগ্রাম থেকে ভেকা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত আড়কান্দি গ্রামের বৃদ্ধ আবুল কাশেম ব্যাপারী। তিনি জানান, ভাঙন রোধে গত ৫ বছরে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় কয়েকটি গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি ও হাজার-হাজার একর আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। আমরা এখন সর্বশান্ত।

গোয়াল ভরা গরু, জমি-জমা,ঘর-বাড়ি নিয়ে পরিপাটি সংসার ছিল। সবই গিলে খেয়েছে যমুনা। বর্তমানে পানি বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে নদীর পশ্চিম তীরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী ভাঙন। কিন্তু অতীতের মতোই প্রতিকারে নেই কোন ব্যবস্থা। অথচ সিরাজগঞ্জ শহর তথা এর আশপাশে হলে প্রতিকারে কাজ করার জন্য পাউবো হুমরি খেয়ে পড়ত। আমরা অভিভাবকহীন হওয়ায় নেই কোন ব্যবস্থা। তার মতো আড়কান্দি চরের দুখু মিয়া, শুকুর আলী, হিরা আকন্দ, বাঐখোলা গ্রামের আমীর চাঁন শেখের স্ত্রী আলেয়া খাতুন জানালেন হতাশার কথা। তারা জানান, গত কয়েক মাস আগেও ছিল ঘর-বাড়ি এখন তা ছলছল জলরাশী। এখন আমরা অন্যের বাড়ির আশ্রীতা। এইতো যমুনার ভাঙনে নিয়তীর লিখন। আমরা অনেক মানববন্ধন, আন্দোলন-সংগ্রাম, করেছি। মন্ত্রী-এমপি, অফিসাররা ঘরে গেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই আরও ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে সবাই।

গত ২ সপ্তাহের ব্যবধান অন্তত শতাধিক ঘর-বাড়ি ও কয়েক শ’ একর আবাদী জমি বিলীন হয়েছে। আরও বিলীন হবার অপেক্ষায় হাজারও ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি। গত মাস খানেক আগে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত ব্রাক্ষ্মমগ্রামে বালি ভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলে ভাঙন রোধে ভূমিকা রেখেছে। তবে এর দক্ষিণে ৫ কিলোমিটার অরক্ষিত থাকায় ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

এলাকাবাসীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি করে আরও জানান, পদ্মা সেতু হবে কেউ কল্পনা করেনি। কত বাঁধা সত্যেও শেখ হাসিনা করে দেখাচ্ছে। আমরা তার কাছে রিলিপ চাইনা, আমাদের ৬ কিলোমিটার বাঁধ করে দিক। আর আপাতত ব্রাক্ষ্মমগ্রামের মতো দক্ষিণ এলাকায় জরুরি জিও টেক্স বস্তা ফেলে আমাদের এলাকা ভাঙন রোধ করুক।

ভাঙন বিষয়ে খুকনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানান, আমরা জনগনের কাছে এখন নগন্য জনপ্রতিনিধি।

কারন তাদের কাছ থেকে ভোট নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েও কোন উপকারে আসতে পারছি না। শুধুই ভাঙনে প্রতিরোধ কাজ না হওয়ায়। আমরাও অনেক তদবির করেছি সব জায়গায় কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। আমরা চাই দ্রুত ভাঙন রোধে পাউবো যেন উদ্যোগী হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, গুরুত্বপূর্ণ তাঁথ শিল্প সমৃদ্ধ ওই এলাকা যমুনার হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় ৭৯০ কোটি টাকার প্রকল্প দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। তা অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশা করছি ভাঙনের গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে হঠাৎ করেই পাটাগ্রাম ও সিংড়াবাড়ী এলাকায় ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। পাটাগ্রাম সলিডস্পারের ভাটিতে ও উজানে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে স্পারের দুই পাশের গোড়ার মাটি প্রায় দুইশ মিটার ধসে গেছে। দুই পাশে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। ভাঙনের কারণে স্পারটি যেকোন সময় নদীতে ধসে যেতে পারে। এতে মধ্যে সিংড়াবাড়ী সলিডস্পারটি ধসে গেছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ঘরবাড়ি। ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়া ঘববাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।