ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোচের পদত্যাগের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বরিস জনসনকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখার সংকীর্ণ স্বার্থে তিনি রাষ্ট্রদূত ডারোচকে ‘বাসের নীচে ফেলে দিয়েছেন।’
রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোচ বনাম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংঘাতের পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট রাষ্ট্রদূত ডারোচের সমর্থনে এগিয়ে আসায় কিছুটা আশার আলো দেখা দেয়। সম্ভাব্য হবু প্রধানমন্ত্রী সেই সম্ভাবনায় পানি ঢেলে দিতে আর শেষরক্ষা হলো না। রাষ্ট্রদূত ডারোচকে হাল ছেড়ে দিয়ে পদত্যাগ করতে হলো।
ডারচ নিজের দায়িত্ব পালন করে ওয়াশিংটনের পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে গেছেন। তাতে তিনি ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন সম্পর্কে অনেক অপ্রিয় মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোষে ফেটে পড়েন এবং ডারচ-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। বিদায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট রাষ্ট্রদূত ডারচের প্রতি আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে জোরালো অবস্থান নেন। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে হান্ট এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সার্বভৌমত্বকেই প্রাধান্য দেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন গত মঙ্গলবারের টেলিভিশন বিতর্কে ডারচের প্রতি আস্থা দেখানো থেকে বিরত থাকেন। সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণে হতাশ হয়েই ডারচ সম্ভবত আর সময় নষ্ট না কওে পরদিন (বুধবার) পদত্যাগের ঘোষণা করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, যে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বন্ধন যে কোনো ব্যক্তির তুলনায় অনেক বড় এবং অ্যামেরিকা এ সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান বলেন, জনসন নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করতে এই অসাধারণ কূটনীতিককে ‘বাসের নীচে ফেলে দিয়েছেন।’ ডানকান মনে করেন, কিম ডারচ-এর প্রতি জনসনের অবজ্ঞা ও তার প্রতি সমর্থন না দেখানো অত্যন্ত ঘৃণ্য আচরণ।
এমন এক সময়ে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে অপ্রিয় এ ঘটনাটি ঘটলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সই করতে আগ্রহী। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি লন্ডনে পছন্দের এক মানুষ পাবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডারচ এমন এক প্রেক্ষাপটে বড়ই বেমানান ছিলেন।
ট্রাম্প এর আগে ব্রেক্সিট আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা নাইজেল ফারাজ’কে ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে চেয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহে ফারাজ সেই সম্ভাবনা প্রত্যাখান করলেও ডারচের পদত্যাগের পর তিনি এক টুইট বার্তায় লেখেন, এবার ওয়াশিংটনে এমন কাউকে রাষ্ট্রদূত করার সময় এসেছে, যিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার বিপক্ষে এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী।
শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৯ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৫, ৮ জিলকদ ১৪৪০
সংবাদ ডেস্ক |
ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোচের পদত্যাগের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বরিস জনসনকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখার সংকীর্ণ স্বার্থে তিনি রাষ্ট্রদূত ডারোচকে ‘বাসের নীচে ফেলে দিয়েছেন।’
রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোচ বনাম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংঘাতের পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট রাষ্ট্রদূত ডারোচের সমর্থনে এগিয়ে আসায় কিছুটা আশার আলো দেখা দেয়। সম্ভাব্য হবু প্রধানমন্ত্রী সেই সম্ভাবনায় পানি ঢেলে দিতে আর শেষরক্ষা হলো না। রাষ্ট্রদূত ডারোচকে হাল ছেড়ে দিয়ে পদত্যাগ করতে হলো।
ডারচ নিজের দায়িত্ব পালন করে ওয়াশিংটনের পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে গেছেন। তাতে তিনি ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন সম্পর্কে অনেক অপ্রিয় মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোষে ফেটে পড়েন এবং ডারচ-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। বিদায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট রাষ্ট্রদূত ডারচের প্রতি আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে জোরালো অবস্থান নেন। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে হান্ট এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সার্বভৌমত্বকেই প্রাধান্য দেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন গত মঙ্গলবারের টেলিভিশন বিতর্কে ডারচের প্রতি আস্থা দেখানো থেকে বিরত থাকেন। সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণে হতাশ হয়েই ডারচ সম্ভবত আর সময় নষ্ট না কওে পরদিন (বুধবার) পদত্যাগের ঘোষণা করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, যে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বন্ধন যে কোনো ব্যক্তির তুলনায় অনেক বড় এবং অ্যামেরিকা এ সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান বলেন, জনসন নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করতে এই অসাধারণ কূটনীতিককে ‘বাসের নীচে ফেলে দিয়েছেন।’ ডানকান মনে করেন, কিম ডারচ-এর প্রতি জনসনের অবজ্ঞা ও তার প্রতি সমর্থন না দেখানো অত্যন্ত ঘৃণ্য আচরণ।
এমন এক সময়ে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে অপ্রিয় এ ঘটনাটি ঘটলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সই করতে আগ্রহী। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি লন্ডনে পছন্দের এক মানুষ পাবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডারচ এমন এক প্রেক্ষাপটে বড়ই বেমানান ছিলেন।
ট্রাম্প এর আগে ব্রেক্সিট আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা নাইজেল ফারাজ’কে ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে চেয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহে ফারাজ সেই সম্ভাবনা প্রত্যাখান করলেও ডারচের পদত্যাগের পর তিনি এক টুইট বার্তায় লেখেন, এবার ওয়াশিংটনে এমন কাউকে রাষ্ট্রদূত করার সময় এসেছে, যিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার বিপক্ষে এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী।