সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের অভিমত

ওবামা-বিদ্বেষেই পরমাণু চুক্তি বর্জন করেন ট্রাম্প

এবার ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার নেপথ্য কারণ জানা গেল সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের এক বিস্ফোরক মেমো থেকে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোচ বিশ্বাস করতেন যে, উত্তরসূরি বারাক ওমাবার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান পরমাণু চুক্তি বর্জন করেছিলেন। গত রোববার ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য মেইল দ্বিতীয় দফায় নতুন যে নথি ফাঁস করেছে তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সতর্কতা সত্ত্বেও বিস্ফোরক এ নথি ফাঁস করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

এক প্রতিবেদনে দ্য মেইল জানিয়েছে, গত বছরের (২০১৮ সাল) মে মাসে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু চুক্তি বহাল রাখার অনুরোধ জানানোর পর সদ্য ফাঁস হওয়া তার বার্তায় পাঠানো ওই মেমোটি লেখেন ব্রিটিশ দূত ডারোচ। বিস্ফোরক ওই মেমোতে তিনি লিখেছেন, বারাক ওবামার প্রতি বিদ্বেষ থেকেই ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে ওয়াশিংটনকে প্রত্যাহার করে নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওতে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপকে কূটনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দেন তিনি। এবং আদর্শগত ভিন্নতার ভিত্তিতে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত বলে দাবি তার। এদিকে দেশটির অপর সংবাদ মাধ্যম সানডে টাইমস পৃথক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে , ব্রিটিশ সরকারের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, স্যার কিম ডারোচের প্রথম দফায় ফাঁস হওয়া নথিটি ফাঁসের পেছনে দেশটির এক সরকারী কর্মকর্তা রয়েছেন। যার জেরে গত সপ্তাহের শেষ দিকে স্যার ডারোচকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়।

২০১৫ সালের ১৫ জুন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন (পি-ফাইভ) ও জার্মানি (ওয়ান) ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সীমিত রেখে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ প্রত্যাহারেরই অংশ হিসেবে গত নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়। দ্য মেইল জানিয়েছে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রিটেনে ফিরে আসার পর স্যার কিম লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে তার। কারণ এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন তার পূর্বসূরি বারাক ওবামা। ব্রিটিশ দূত নথিতে বলেন, চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কী করা হবে তা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের ও হোয়াইট হাউসের প্রতিদিনের কৌশল নির্ধারণ করা ছিল না। এক সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ দূত স্যার কিম ডারোচের প্রথম একটি নথি ফাঁস হয়। তাতে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘অদ্ভুত ও নিষ্ক্রিয়’ আখ্যা দেন। তার এমন মন্তব্যে ক্ষিপ্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্যার কিমকে অতিশয় নির্বোধ ব্যক্তি (ভেরি স্টুপিড গাই) বলে অভিহিত করেন। ওই নথি ফাঁসের পর পরই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে ব্রিটিশ সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব বলে মন্তব্য করে গত বুধবার পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ দূত স্যার কি ড্যারোচ।

এমন ঘটনার জেরে আর কোনও ফাঁস হওয়া কূটনৈতিক নথি প্রকাশের বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে সতর্ক করে দেয় দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। যে সব সাংবাদিক সাবেক ব্রিটিশ দূতের যোগাযোগের বিস্তারিত ফাঁস করে দেবেন তারা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়বেন বলে সতর্ক বার্তায় জানানো হয়। এমন সতর্কতা সত্ত্বেও কিম ডারোচের নতুন নথি ফাঁস করলো দ্য মেইল। যা নতুন করে লন্ডন ও ওয়াশিংটন কূটনৈতিক সম্পর্কে আবারও উত্তেজনার মুখে ঠেলে দেবে বলে অভিমত রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের।

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের অভিমত

ওবামা-বিদ্বেষেই পরমাণু চুক্তি বর্জন করেন ট্রাম্প

সংবাদ ডেস্ক

image

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বারাক ওবামা

এবার ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার নেপথ্য কারণ জানা গেল সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের এক বিস্ফোরক মেমো থেকে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোচ বিশ্বাস করতেন যে, উত্তরসূরি বারাক ওমাবার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান পরমাণু চুক্তি বর্জন করেছিলেন। গত রোববার ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য মেইল দ্বিতীয় দফায় নতুন যে নথি ফাঁস করেছে তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সতর্কতা সত্ত্বেও বিস্ফোরক এ নথি ফাঁস করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

এক প্রতিবেদনে দ্য মেইল জানিয়েছে, গত বছরের (২০১৮ সাল) মে মাসে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু চুক্তি বহাল রাখার অনুরোধ জানানোর পর সদ্য ফাঁস হওয়া তার বার্তায় পাঠানো ওই মেমোটি লেখেন ব্রিটিশ দূত ডারোচ। বিস্ফোরক ওই মেমোতে তিনি লিখেছেন, বারাক ওবামার প্রতি বিদ্বেষ থেকেই ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে ওয়াশিংটনকে প্রত্যাহার করে নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওতে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপকে কূটনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দেন তিনি। এবং আদর্শগত ভিন্নতার ভিত্তিতে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত বলে দাবি তার। এদিকে দেশটির অপর সংবাদ মাধ্যম সানডে টাইমস পৃথক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে , ব্রিটিশ সরকারের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, স্যার কিম ডারোচের প্রথম দফায় ফাঁস হওয়া নথিটি ফাঁসের পেছনে দেশটির এক সরকারী কর্মকর্তা রয়েছেন। যার জেরে গত সপ্তাহের শেষ দিকে স্যার ডারোচকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়।

২০১৫ সালের ১৫ জুন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন (পি-ফাইভ) ও জার্মানি (ওয়ান) ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সীমিত রেখে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ প্রত্যাহারেরই অংশ হিসেবে গত নভেম্বরে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়। দ্য মেইল জানিয়েছে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রিটেনে ফিরে আসার পর স্যার কিম লিখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে তার। কারণ এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন তার পূর্বসূরি বারাক ওবামা। ব্রিটিশ দূত নথিতে বলেন, চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কী করা হবে তা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের ও হোয়াইট হাউসের প্রতিদিনের কৌশল নির্ধারণ করা ছিল না। এক সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ দূত স্যার কিম ডারোচের প্রথম একটি নথি ফাঁস হয়। তাতে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘অদ্ভুত ও নিষ্ক্রিয়’ আখ্যা দেন। তার এমন মন্তব্যে ক্ষিপ্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্যার কিমকে অতিশয় নির্বোধ ব্যক্তি (ভেরি স্টুপিড গাই) বলে অভিহিত করেন। ওই নথি ফাঁসের পর পরই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে ব্রিটিশ সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব বলে মন্তব্য করে গত বুধবার পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ দূত স্যার কি ড্যারোচ।

এমন ঘটনার জেরে আর কোনও ফাঁস হওয়া কূটনৈতিক নথি প্রকাশের বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে সতর্ক করে দেয় দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। যে সব সাংবাদিক সাবেক ব্রিটিশ দূতের যোগাযোগের বিস্তারিত ফাঁস করে দেবেন তারা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়বেন বলে সতর্ক বার্তায় জানানো হয়। এমন সতর্কতা সত্ত্বেও কিম ডারোচের নতুন নথি ফাঁস করলো দ্য মেইল। যা নতুন করে লন্ডন ও ওয়াশিংটন কূটনৈতিক সম্পর্কে আবারও উত্তেজনার মুখে ঠেলে দেবে বলে অভিমত রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের।