কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পকে মধ্যস্থতা করতে বলেননি মোদি : ভারত

বিতর্কিত কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সহায়তা চেয়েছেন- মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন দাবি দৃঢ়ভােেব প্রত্যাখান করেছে নয়াদিল্লি। এ বিষয় নিয়ে জি-২০ সম্মেলনে এ দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে কোন কথাও হয়নি বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে, এ সমস্যা সমধান করতে হলে আলোচনার জন্য পাকিস্তানকে আগে সীমান্ত-সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে বলে আবারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। গত সোমবার হোয়াইট হাউজে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

এনডিটিভি জানায়, ওয়াশিংটন সফররত পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে স্থানীয় সময় সোমবার রাতে হোয়াইট হাউজে সাক্ষাৎ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ সময় ইমরানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, সম্প্রতি জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হতে অনুরোধ জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, দুই সপ্তাহ আগে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ছিলাম ও আমরা এ বিষয়ে (কাশ্মীর) কথা বলেছি। তিনি (মোদি) বলেছেন, আপনি কি মধ্যস্থতাকারী হতে চান? আমি বললাম, কোথায়? (মোদি বললেন) কাশ্মীর। ‘কারণ এটা (বিরোধ) অনেক অনেক বছর ধরে চলছে। এত সময় দেখে আমি অবাক! এটা চলছেই’ ইমরান খান জানান, ৭০ বছর।

ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয়, তারা (ভারতীয়রা) এর সমাধান দেখতে পছন্দ করবে। মনে হয়, আপনিও (ইমরান খান) এটা পছন্দ করবেন। আর, যদি সহায়তা করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমি মধ্যস্থতাকারী হতে পারি। এটাই হওয়া উচিত দুটি চমৎকার দেশ, যাদের অত্যন্ত বুদ্ধিমান নেতৃত্ব আছে, (তারা) এমন একটা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না? কিন্তু, যদি আপনারা আমাকে মধ্যস্থতা করতে বলেন, আমি তাতে রাজি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। তিনিও (মোদি) আমার কাছে সেটাই বলেছেন। হতে পারে তিনি তার (ইমরান) সঙ্গে কথা বলবেন। না হয়, আমি তার সঙ্গে কথা বলব। দেখা যাক, কিছু করা যায় কিনা। এ সময় ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান বলেন, প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) যদি সত্যিই এ ইস্যুতে মধ্যস্থতা বা সমাধান করতে পারতেন, আপনাকে বলতে পারি, এ মুহূর্তে একশ’ কোটিরও বেশি মানুষের প্রার্থনা আপনার সঙ্গে থাকত। তবে, ট্রাম্পের এমন দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ধরনের কোন অনুরোধ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে করেননি। কাশ্মীর নিয়ে কোন আলোচনা হলে তা দ্বিপাক্ষিক স্তরেই হবে।’

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার এক টুইট বার্তায় বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে মধ্যস্থতা করার বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্য আমরা দেখেছি। বাস্তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধানমন্ত্রী মোদি এ ধরনের কোন অনুরোধ করেননি। আরেক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত সব ইস্যুর ক্ষেত্রে ভারত বরাবরই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পক্ষে। তবে যেকোনো কার্যক্রমের জন্য পাকিস্তানকে অবশ্যই আগে সীমান্ত-সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বি-পক্ষীয় সব ইস্যু সমাধানের ভিত্তি সিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণাতেই আছে। এদিকে, কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একান্তই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। তাদের আলোচনাকে সব সময়ই স্বগত জানাবে যুক্তরাষ্ট্র। আর, এর জন্য তারা প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতেও প্রস্তুত। অপরদিকে কাশ্মীর বিরোধকে ‘দ্বিপাক্ষিক সমস্যা’ মনে করা ভারতের জন্য ট্রাম্পের মন্তব্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর বলে জানিয়েছে দেশটির অন্য সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার। এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের পর দিল্লিতে তোলপাড় শুরু হয়।

হোয়াইট হাউজের সোমবারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইমরান ও ট্রাম্প আফগানিস্তান পরিস্থিতি এবং পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে মত বিনিময় করেন। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আগ্রহ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ায় পুলিশের ভূমিকা পালন করতে চায় না।

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯ , ৯ শ্রাবন ১৪২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪০

কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পকে মধ্যস্থতা করতে বলেননি মোদি : ভারত

সংবাদ ডেস্ক

image

ইমরান খান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিতর্কিত কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সহায়তা চেয়েছেন- মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন দাবি দৃঢ়ভােেব প্রত্যাখান করেছে নয়াদিল্লি। এ বিষয় নিয়ে জি-২০ সম্মেলনে এ দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে কোন কথাও হয়নি বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে, এ সমস্যা সমধান করতে হলে আলোচনার জন্য পাকিস্তানকে আগে সীমান্ত-সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে বলে আবারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। গত সোমবার হোয়াইট হাউজে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

এনডিটিভি জানায়, ওয়াশিংটন সফররত পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে স্থানীয় সময় সোমবার রাতে হোয়াইট হাউজে সাক্ষাৎ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ সময় ইমরানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, সম্প্রতি জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হতে অনুরোধ জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, দুই সপ্তাহ আগে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ছিলাম ও আমরা এ বিষয়ে (কাশ্মীর) কথা বলেছি। তিনি (মোদি) বলেছেন, আপনি কি মধ্যস্থতাকারী হতে চান? আমি বললাম, কোথায়? (মোদি বললেন) কাশ্মীর। ‘কারণ এটা (বিরোধ) অনেক অনেক বছর ধরে চলছে। এত সময় দেখে আমি অবাক! এটা চলছেই’ ইমরান খান জানান, ৭০ বছর।

ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয়, তারা (ভারতীয়রা) এর সমাধান দেখতে পছন্দ করবে। মনে হয়, আপনিও (ইমরান খান) এটা পছন্দ করবেন। আর, যদি সহায়তা করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমি মধ্যস্থতাকারী হতে পারি। এটাই হওয়া উচিত দুটি চমৎকার দেশ, যাদের অত্যন্ত বুদ্ধিমান নেতৃত্ব আছে, (তারা) এমন একটা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না? কিন্তু, যদি আপনারা আমাকে মধ্যস্থতা করতে বলেন, আমি তাতে রাজি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। তিনিও (মোদি) আমার কাছে সেটাই বলেছেন। হতে পারে তিনি তার (ইমরান) সঙ্গে কথা বলবেন। না হয়, আমি তার সঙ্গে কথা বলব। দেখা যাক, কিছু করা যায় কিনা। এ সময় ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান বলেন, প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) যদি সত্যিই এ ইস্যুতে মধ্যস্থতা বা সমাধান করতে পারতেন, আপনাকে বলতে পারি, এ মুহূর্তে একশ’ কোটিরও বেশি মানুষের প্রার্থনা আপনার সঙ্গে থাকত। তবে, ট্রাম্পের এমন দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ধরনের কোন অনুরোধ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে করেননি। কাশ্মীর নিয়ে কোন আলোচনা হলে তা দ্বিপাক্ষিক স্তরেই হবে।’

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার এক টুইট বার্তায় বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে মধ্যস্থতা করার বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্য আমরা দেখেছি। বাস্তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধানমন্ত্রী মোদি এ ধরনের কোন অনুরোধ করেননি। আরেক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত সব ইস্যুর ক্ষেত্রে ভারত বরাবরই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পক্ষে। তবে যেকোনো কার্যক্রমের জন্য পাকিস্তানকে অবশ্যই আগে সীমান্ত-সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বি-পক্ষীয় সব ইস্যু সমাধানের ভিত্তি সিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণাতেই আছে। এদিকে, কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একান্তই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। তাদের আলোচনাকে সব সময়ই স্বগত জানাবে যুক্তরাষ্ট্র। আর, এর জন্য তারা প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতেও প্রস্তুত। অপরদিকে কাশ্মীর বিরোধকে ‘দ্বিপাক্ষিক সমস্যা’ মনে করা ভারতের জন্য ট্রাম্পের মন্তব্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর বলে জানিয়েছে দেশটির অন্য সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার। এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের পর দিল্লিতে তোলপাড় শুরু হয়।

হোয়াইট হাউজের সোমবারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইমরান ও ট্রাম্প আফগানিস্তান পরিস্থিতি এবং পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে মত বিনিময় করেন। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আগ্রহ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ায় পুলিশের ভূমিকা পালন করতে চায় না।