উত্তরাঞ্চলে আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্নস্থানে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা এবং বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি আবারও বেড়েছে। বগুড়ার ৫ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে। সিরাজগঞ্জে বানভাসী মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইলে ৪০১ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। রাজিবপুরে পানিতে ডুবে ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা ও আড়িয়াল খার ভাঙনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে আবারও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

ধরলা নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে আবারও বাঁধে, উঁচু বাড়িতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বন্যাকবলিতরা। সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, ছাটকালুয়া, চর হলোখা, বারোঘরিয়া, আঠারোঘরিয়া, মাস্টারের হাট গ্রাম, পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপা ও চর ভেলাকোপা, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নন্দদুলারের ভিটা, মাধবরাম, সর্দারপাড়া, পাছগাছী ইউনিয়নের দক্ষিণ নওয়াবশ, কদমতলা, চৌধুরীপাড়া, মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়, মুন্সিপাড়া, তেলীপাড়া, গাড়িয়ালপাড়া, বালাবাড়ীসহ প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের মানুষ আবারও দুর্ভোগে পড়েছে।

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দির অধিকাংশ নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধের পশ্চিমাঞ্চলে সারিয়াকান্দি, গাবতলী, শেরপুর, ধুনট ও সোনাতলা অধিকাংশ ফসলী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গাইবান্ধার বাঁধভাঙা পানি বাঙ্গালীতে প্রবেশ করায় এ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এবারের বন্যায় সরকারি হিসেবে বগুড়ার সারিয়াকান্দী সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ২৯টি ইউনিয়নের ৫৬৯টি গ্রামের ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগস্ত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : আবারও সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জেলার কাজিপুর, চৌহালি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে ।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল জেলার ৯টি উপজেলার ৪৬ ইউনিয়নের ৪০১টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। আর এতে প্রায় ৪ লাখ ২২ হাজার ৯২৮ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এছাড়া এসব গ্রামের রাস্তা এবং ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর নদীভাঙনের ফলে ১ হাজার ৩৩০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

ইসলামপুর (জামালপুর) : ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের সব রাস্তাই লণ্ডভণ্ড হয়েছে বন্যায়। বিধস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের। বানভাসিদের চোখেমুখে বেঁচে থাকার আহাজারি।

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে আবার নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাউবি জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিবের ডাঙ্গী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র আল-আমিন (আড়াই বছর) মারা গেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল জানিয়েছেন।

শিবচর (মাদারীপুর) : পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদের ভাঙনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবন্দী প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯ , ১১ শ্রাবন ১৪২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪০

উত্তরাঞ্চলে আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সংবাদ ডেস্ক |

image

কুড়িগ্রাম : ফের বন্যায় তলিয়ে গেছে বাড়িঘর

কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্নস্থানে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা এবং বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি আবারও বেড়েছে। বগুড়ার ৫ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে। সিরাজগঞ্জে বানভাসী মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইলে ৪০১ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। রাজিবপুরে পানিতে ডুবে ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা ও আড়িয়াল খার ভাঙনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে আবারও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

ধরলা নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে আবারও বাঁধে, উঁচু বাড়িতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বন্যাকবলিতরা। সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, ছাটকালুয়া, চর হলোখা, বারোঘরিয়া, আঠারোঘরিয়া, মাস্টারের হাট গ্রাম, পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপা ও চর ভেলাকোপা, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নন্দদুলারের ভিটা, মাধবরাম, সর্দারপাড়া, পাছগাছী ইউনিয়নের দক্ষিণ নওয়াবশ, কদমতলা, চৌধুরীপাড়া, মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়, মুন্সিপাড়া, তেলীপাড়া, গাড়িয়ালপাড়া, বালাবাড়ীসহ প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের মানুষ আবারও দুর্ভোগে পড়েছে।

বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে সারিয়াকান্দির অধিকাংশ নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধের পশ্চিমাঞ্চলে সারিয়াকান্দি, গাবতলী, শেরপুর, ধুনট ও সোনাতলা অধিকাংশ ফসলী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গাইবান্ধার বাঁধভাঙা পানি বাঙ্গালীতে প্রবেশ করায় এ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এবারের বন্যায় সরকারি হিসেবে বগুড়ার সারিয়াকান্দী সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ২৯টি ইউনিয়নের ৫৬৯টি গ্রামের ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগস্ত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : আবারও সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জেলার কাজিপুর, চৌহালি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে ।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল জেলার ৯টি উপজেলার ৪৬ ইউনিয়নের ৪০১টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। আর এতে প্রায় ৪ লাখ ২২ হাজার ৯২৮ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এছাড়া এসব গ্রামের রাস্তা এবং ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর নদীভাঙনের ফলে ১ হাজার ৩৩০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

ইসলামপুর (জামালপুর) : ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের সব রাস্তাই লণ্ডভণ্ড হয়েছে বন্যায়। বিধস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের। বানভাসিদের চোখেমুখে বেঁচে থাকার আহাজারি।

রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে আবার নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাউবি জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিবের ডাঙ্গী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র আল-আমিন (আড়াই বছর) মারা গেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল জানিয়েছেন।

শিবচর (মাদারীপুর) : পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদের ভাঙনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবন্দী প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।