জয়নুল আবেদীন
মূল উর্দু থেকে অনুবাদ : হাইকেল হাশমী
ওকে দেখছো” চলন্ত ট্যাক্সি থেকে বাইরের দিকে হাতের ইশারা দিয়ে পিছনের সিটে বসা লোকটি বলল। ড্রাইভার ক্ষণিকের জন্য সামনে রাস্তা থেকে নজর সরিয়ে দেখল যে একজন লোক বটগাছের নিচে বসে ঝিমাচ্ছে।
“সে আগামীকাল নির্বাণ পাবে তারপর দ্বিতীয় গৌতম বুদ্ধের জন্ম হবে”, সে খুব নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করলো। গাড়িচালক সাথে সাথে ব্রেক করলো, ট্যাক্সি চিৎকার দিয়ে থেমে গেল। সে বিস্ময় আর কঠিন স্বরে বলল-
“কি আবোল তাবোল বকছো, ওতো কোন ভিক্ষুক, তার গায়ে ছেঁড়া কাপড় আর চোখ থেকে ক্ষুধা টগবগ করে বেরিয়ে পড়ছে।”
“হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলছো”- সে একটি বিদ্রূপপূর্ণ মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “শোনো ভাই যখন সিদ্ধার্থ তার রাজ্য ছেড়ে কপিলাবস্তু থেকে এসে একটি বটগাছের নিচে বসেছিল তখন সেও এমনই ঝিমাচ্ছিল আর ক্ষুধার্ত ছিল। তার গায়ে কাপড় ছিল না আর তাকেও তোমার মতো লোকেরা ভিক্ষুক মনে করেছিল। যখন সে নির্বাণ পেলো তখন সে একটি অন্যরকম মানুষ হয়ে গেল, সে গৌতম বুদ্ধ হয়ে গেলো। সে তখন রৌদ্র আর ছায়া, জীবন ও মরণ, দুঃখ আর সুখের কথা বলতে লাগলো। সে বলল ভিতরে সব শূন্য, সব কিছু বাইরে আছে। ফুলের মধ্যে তার নিজের রঙ আর সুগন্ধি আছে।” সে কোন ইতিহাসের ছাত্রের মতো ড্রাইভারকে বোঝাতে লাগলো।
“তোমার মতো লোকেরাই প্রথম তার সামনে মাথা নত করলো। মাথা ন্যাড়া করে, হলুদ কাপড় পরলো আর তার আদর্শ অনুসরণ করলো। কোন জীবকে কষ্ট দেয়া তার ধর্মে পাপ হয়ে গেল।” সে ইতিহাস থেকে সরে গিয়ে বুদ্ধমতের উপর দার্শনিক আলোকপাত করল। ড্রাইভার তার কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিল তাই মনযোগ দিয়ে শুনছিল।
“ভিতর থেকে মানুষ দুঃখী যেহেতু বাইরে দুঃখ ছাড়া কিছু নাই। মনের ভিতর শান্তি নাই যেহেতু বাইরে অশান্তি বিরাজ করে।”
ট্যাক্সি গৃহ, দালান, অট্টালিকা, পথ, বৃক্ষ, কারখানা পিছে ফেলে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে। এখন তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু গৌতম বুদ্ধ নয়, বরং সমাজে বিরাজমান অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা। এখন তারা এইসব বিষয়ের কারণ নিয়ে আলাপরত। ড্রাইভার পড়াশোনা জানা লোক। সে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে জিজ্ঞাসা করলো-
“এতো অরাজকতা আর নৈরাজ্য কেন? তুমি কি এগুলোর কারণ বলতে পারো?”
“না” সে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল, কিন্তু পর মুহূর্তে বলে উঠলো, “তুমি দিনরাত ট্যাক্সি কেন চালাও? এতো কাজ কেন করো? এইজন্য যেন বেঁচে থাকতে পারো। কিন্তু যখন এই জীবন তোমার উপর দুর্বিষহ হয়ে যায় তখন তুমি কি করবে নৈরাজ্য ছাড়া?”
সেই লোকের যুক্তি শুনে ড্রাইভার চমকে উঠলো আর তার নিজের জ্ঞান যে সিমিত তা স্বীকার করার স্বরে বলল, “আমি ইংরেজি ভাষায় এমএ করেছি কিন্তু এই সব বিষয় ভাল করে বুঝতে পারি নি তুমি যতো সহজভাবে বুঝিয়ে দিলে।” তারপর সে গাড়ির ড্যাশ বোর্ড থেকে মদের বোতল বের করে নিজের গলা ভিজিয়ে তাকে বলল, “আমি যখন ‘লং ড্রাইভ’-এ যাই তখন এটা আমার সঙ্গে থাকে। তুমি খাবে?” এই বলে সে বোতল তার দিকে বাড়িয়ে দিল, “ডিলাক্স মদ, ওল্ড স্মাগ্লার” তোমার পছন্দ হবে।
“না আমি আমার নিজের “ব্র্যান্ড” ছাড়া খাই না”।
“আচ্ছা বুঝলাম তুমি ধার্মিক মানুষ, মদ খাও না।”
“না, আমি খুব খারাপ লোক, টাকার জন্য সব কিছু করতে পারি, এমনকি তোমাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবো না।” সে ট্যাক্সির বাইরে তাকিয়ে উত্তর দিল। আর ড্রাইভারের চেহারার রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, তার গলায় মদ আটকে গেল। ট্যাক্সির গতিও কমে গেল।
“ও ভয় পেয়ে গেলে? আমি শুধু তোমার কথার উত্তর দিয়েছি, আমি খুব ভদ্র মানুষ একদম জেন্টালম্যান।” সে মুচকি হেসে ড্রাইভারের দিকে তাকালো আর ড্রাইভারের জানে পানি ফিরে এলো। “তুমি জানো, তোমার ভয়ের কারণ ভিতরে নেই বাইরে, সহানুভূতি, আবেগ, বোধ আর স্পর্শানুভূতি সবই বাইরের অবস্থা আর অবস্থানের উপর পরিচালিত হয়, যেটা বিভিন্ন আকার ধারণ করে তোমার অন্তরে ব্যক্ত হয়। তুমি খুবই আনন্দিত হও যখন কোন যাত্রী তোমাকে বেশি ভাড়া দেয় আর তোমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় যখন কোন যাত্রী তোমাকে কম ভাড়া দেয়।”
“তুমি কি দর্শন বা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র” এই কথা জিজ্ঞাসা করাতে সেই লোকটি জোরে হেসে উঠলো আর বলল-
“আমি কোন দিন কোন স্কুলে বা কলেজে যাই নাই। এইসব ভাল ভাল আর জ্ঞানের কথা আমি আমার বন্ধু গৌতম থেকে শিখেছি।”
“গৌতম কে?”
“বললাম না, আমার বন্ধু, কিন্তু সে কাপিলাবস্তুর বাসিন্দা না আর কোন রাজ পরিবারের সদস্যও না। সে এক চামার-মুচির ছেলে যাকে তার বাবা কষ্ট করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছিল যেটা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। সে রাত দিন মোটা মোটা বই-এর ভিতর খোঁজে, কেন মানুষ আর মানবতা এখনো শোষিত। সে সেখান থেকে যা জ্ঞান পায় আমাদের মতো বন্ধুর মাঝে বিলিয়ে দেয়। তার বিনিময় আমরা তাকে মদ খাওয়াই যেটা সে খুব শখ করে খায়। সে বলে, “নেশা থেকে যে নির্বাণ পাওয়া যায় তা কোন মেয়ের উত্তপ্ত যৌবন আর তাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ রাখার মধ্যেও নেই। নেশায় ডুবে থাকো, কোন দুঃখ কাছে আসবে না, সব কিছু রঙ্গিন আর সুন্দর দেখাবে, বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে আর জীবন শোভাময় হয়ে যাবে।”
“হয়তবা সে দুঃখ পেয়েছে, এমনো হতে পারে কোন মেয়ে তার ভালবাসা প্রত্যাখান করেছে।”
“হ্যাঁ, এমনি কিছু হয়ে ছিল। সে তানিয়া নামের এক মেয়েকে অনেক ভালবাসতো। তানিয়াও তাকে ভালবাসত। তারা বিয়ে করতে চেয়েছিল কিন্তু তানিয়ার বাবা তাদের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়াল। তাঁর কথা সে কোন দিন তার মেয়েকে ওই যুবকের সাথে বিয়ে করার অনুমতি দিবে না যে তাকে ভালবাসে। যেহেতু প্রেম কোন বাঁধন মানে না, প্রেম কোন রীতি, নীতির ধার ধারে না আর তার বিপরীত হচ্ছে বিয়ে যেটা একটি সামাজিক বন্ধন, তাতে মানুষ একবার আবদ্ধ হলে তো আর কোন দিন রেহাই পায় না। তার অবস্থা ঐ পাখির মতো হয় যার পাখা কেটে দেয়া হয়েছে। যে নিজের দুঃখের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।”
ড্রাইভার খুব মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল আর উপভোগ করছিল।
তখন আমার বন্ধু খুব বিষণ্ন থাকা শুরু করলো। মদ খেতো আর যারা ওর কাছে আসতো তাদেরকে তার প্রেমের গল্প শোনাতো। তানিয়া তার সাথে প্রতারণা করেছে বলতো। এইভাবে সে তার মনের বোঝা নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতো কিন্তু সে জানতো না সে যে অজান্তে তার দুঃখ বিতরণ করছে তাতে দুঃখ আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। তারপর সে তার গল্প বলতে বলতে এতো ক্লান্ত হয়ে গেল যে সে চুপ থাকতে লাগলো। নিঃসঙ্গ হয়ে গেল। শুধু মদ খেতো আর চুপচাপ পড়ে থাকতো। একদিন শীতের গভীর রাতে মদ তার জীবন নাশ করল। সে বট গাছের নিচে এমন ঘুম দিল যে আর কোন দিন উঠলো না। তার শরীর শক্ত হয়ে ছিল কিন্তু তার নীল ঠোঁটে ওই মুচকি হাসি ছিল, তার চোখে সেই প্রেমের বর্ষা ছিল যেন বর্ষার রাতে ঝম ঝম বৃষ্টি পড়ছে। তার বন্ধুরা ওই বটগাছের নিচে তার একটা মূর্তি বানিয়ে রেখে দিয়েছে আর একটা ফলক যেখানে লেখা আছে, একে ঘুম থেকে তুলো না, সে এইমাত্র কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।”
ট্যাক্সির ভিতরে নীরবতা বিরাজ করছে শুধু গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ড্রাইভার মদ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর পিছনের সিটে সেই লোকটি চোখ বন্ধ করে বসে আছে যেন মনে হয় গৌতম-এর দুঃখ তার মনের উপর পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা বেশ দীর্ঘ আর ট্যাক্সি দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে তখন ড্রাইভার হঠাৎ দেখল একটি মেয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামানোর জন্য ইশারা করছে। মেয়েটি যুবতী আর সুন্দরী। লম্বা চুল আর বড় বড় চোখ, পোশাক দেখে কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য মনে হচ্ছে। কিন্তু সে একা এখানে কী করছে? তার মাথায় এই প্রশ্ন জাগল। সে কোন পেত্নী না তো, তার মনে সন্দেহ হলো। যদি এমন হয় আর সে কোন বিপদে পড়ে যায় তাহলে সে নিজেও মারা পড়বে আর তার ট্যাক্সিও যাবে তাই সে ট্যাক্সি থামাবে না সিদ্ধান্ত নিল। এখন মেয়েটি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে আর জোরে জোরে চিৎকার করছে। কিন্তু সে ট্যাক্সির গতি না কমিয়ে চিন্তা করল যে সে ট্যাক্সিটা তার পাশ কাটিয়ে বের করে নিয়ে যাবে। যখন সে কাছে পৌঁছালো তখন দেখতে পেল পাশে একটি বড় গর্ত আর সে জোরে ব্রেক করল। গাড়ি চিৎকার দিয়ে থেমে গেল। মেয়েটি দৌড় দিয়ে তার কাছে এলো, ড্রাইভার দেখতে পেল তার রক্তাক্ত কপাল। পিছনে শুয়ে থাকা লোকটি ঘুম থেকে জেগে উঠলো। সে মেয়েকে দেখলো, মেয়েও তাকে দেখতে পেলো তারপর মেয়েটি ড্রাইভারকে বলল, “আপনি আমাকে লিফট দেবেন আমি কয়েক ঘণ্টা ধরে কোন গাড়ি বা বাসের অপেক্ষা করছি, কেউ আসে নাই। আমার গাড়ি নিচে খাদে পড়ে গেছে। আমি আমার আহত ভাই আর বোনকে ড্রাইভারের সাথে চিকিৎসার জন্য শহরে পাঠিয়েছি, গাড়িতে জায়গা ছিল না বলে আমাকে থেকে যেতে হয়েছে, আপনি কি আমাকে লিফট দিবেন?” মেয়েটি অনুরোধ করল।
ড্রাইভার তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার চেহারার আবেগ পড়ার চেষ্টা করলো যেন বুঝতে পারে সে আসলে কতটা সত্য বলছে। সে ঘুরে তার সঙ্গীর দিকে দেখলো সে চোখে চোখে তাকে অনুমতি দিয়ে দিল।
ড্রাইভার হাত বাড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল আর মেয়েটি ধপাস করে পিছনের সিটে বসে পড়লো আর গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো।
“এই দুর্ঘটনাটা কী করে ঘটলো?” ড্রাইভার মেয়েটি যে তার কপাল থেকে রক্ত মুচ্ছিল তাকে নিজের সন্তুষ্টির জন্য জিজ্ঞাসা করলো। সে বলল, “আমরা আমদের গাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক দাউদকান্দির কাছে একটি পুলের নিচে থেকে একটি হলুদ রঙের গাড়ি আমাদের পিছু নিল। ভয় পেয়ে আমাদের ড্রাইভার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল, পিছনের গাড়িটিও গতি বাড়িয়ে দিল আর আমাদের গাড়ির একদম কাছে চলে এলো। ওই গাড়িতে কিছু ছেলে দেখতে পেলাম যাদের হাতে বন্দুক আর পিস্তল ছিল। তারপর আমাদের ড্রাইভার আরো গতি বাড়লো কিন্তু আমরা খাদে পড়ে গেলাম আর তারা আমাদের উপর গুলি বর্ষণ করতে করতে চলে গেল। কপাল ভাল আমাদের মধ্যে সবাই আহত হয়েছে কেউ মরে নাই তবে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়েছে।”
“হয়তবা তারা হাইজ্যাকার ছিল।”, ড্রাইভার বলল, “কোথায় যাবেন আপনি?”
“ময়নামতি যাচ্ছি, আজ গৌতম-এর মৃত্যুবার্ষিকী তাই যাচ্ছি ওখানে। ও আমার পুরান বন্ধু ছিল।” মেয়ের কথা শুনে পিছনে বসা লোকটি লাফ দিয়ে উঠলো আর মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল-
“কী বললে, গৌতম তোমার বন্ধু?”
“এটাতে বিস্ময়ের কী হলো, আপনি কি তাকে চিনতেন?”
“শুধু চিনতামই না, আমি তার খুব কাছের বন্ধু, তুমি তার বন্ধু ছিলে না, তুমি মিথ্যা কথা বলছ।”
ওই লোকটি তার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে বসলো। দুইজন তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো। তখনই ড্রাইভার চিৎকার দিয়ে বলল, “কী বক বক করছ, হাজার বছর হলো গৌতম মরে গেছে আর তোমরা এখনো তার বার্ষিকী আর জন্মদিন পালন করার জন্য মিথ্যার উপর মিথ্যা বলে চলছো। তোমরা মৃত মানুষের পূজারি, এটা তোমাদের ব্যবসা যেটা সংস্কৃতির নামে এখনো চালিয়ে যাচ্ছ।”
ভাষণ দিয়ে ড্রাইভারের গলা শুকিয়ে গেল, মদের কয়েক ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নিল। মেয়েটা ওর কথা শুনে প্রভাবিত হওয়া তো দূরের কথা হেসে ওই লোকের দিকে তাকালো সেও তার চোখ এমনভাবে মটকালো যেন ড্রাইভারকে ভাঁড় মনে করছে।
ড্রাইভার আবার বলতে শুরু করল, “আমাদের সাংস্কৃতি আর আগের মতন নেই, প্রতিবেশীদের অনেক প্রভাব পড়েছে।”
“এখন যুগ পাল্টে গেছে, কম্পিউটারে মানুষ আর তার ভবিষ্যৎ আটকে রাখা হয়েছে। সময়ও তার ভিতরে বন্দি” সেই লোকটি বলল।
“কিন্তু আবেগ, অনুভূতি, উচ্ছ্বাস-এসব তার স্পর্শ থেকে এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু এই কথাটি মানতে হবে যে টেকনোলজির বিকাশের সাথে সাথে সৌন্দর্যের অনুভূতি আর শক্তির প্রভাব জীবন আর সমাজে বিপ্লবের নতুন নতুন পথ উন্মোচন করতে পেরেছে। মেয়েটি যে পড়াশোনা জানে এবং তার চিন্তাধারা মারক্সিজম-এ প্রভাবিত তা স্পষ্ট কিন্তু এইসব কথাবার্তা তাদের মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। ড্রাইভার ট্যাক্সির গতি বাড়িয়ে দিল। সূর্য আকাশ থেকে নেমে গাছের আড়ালে আশ্রয় নেয়ার জন্য দৌড়াচ্ছে। সে খুব তাড়াতাড়ি ময়নামতি পৌঁছাতে চাচ্ছিল যেন তার যাত্রীরা গৌতমের বার্ষিকীতে অংশ নিতে পারে। ড্রাইভারের হাত স্টিয়ারিঙের উপর আর চোখ ওয়ইন্ড স্ক্রিনের উপর জমে ছিল। যেখানে আয়নায় মেয়েটির প্রতিচ্ছবি আটকে ছিল। মেয়েটি আড়চোখে ড্রাইভারকে মাঝে মাঝে লক্ষ্য করছিল। পিছনে সিটে বসা লোকটি গভীর ঘুমে ছিল। হঠাৎ মেয়েটি সামনের দিকে ঝুঁকে তার চিবুক ড্রাইভারের সিটের পিছনে রাখলো আর তার ঠোঁট ড্রাইভারের কানের লতি স্পর্শ করতে লাগলো। মেয়েটি আস্তে করে তার কানে বলল, “আমি আজ অবধি তোমার মতো সুপুরুষ আর সাস্থ্যবান যুবক দেখি নাই। তোমার চোখের নেশা, তোমার বাহুর শক্তি, তোমার অন্তরের তাপ আর উত্তাপ তোমাকে একটি সম্পূর্ণ পুরুষ বানিয়েছে। যে কোন মেয়ে তোমাকে ভালবাসতে চাইবে।”
মেয়েটি থেকে নিজের পৌরুষত্ব আর যৌবনের প্রশংসা শুনে ড্রাইভারের মদের নেশা চড়ে গেল। তার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। সে তার ঘাড় ঘুড়িয়ে মেয়েকে দেখার চেষ্টা করল তখনই তার গাল মেয়ের ঠোঁটকে স্পর্শ করল। ড্রাইভারের হৃদয়ের গতি বেড়ে গেল। তার হাত স্টিয়ারিঙে কেঁপে উঠলো আর এক্সিলেটারে পায়ের চাপ কমে গেল সে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ার চেঞ্জ করল।
“তুমি গাড়ি খুব দক্ষতার সাথে চালাও” মেয়েটি খুব নরম স্বরে বলল আর তার কানের কাছে নিজের গরম নিঃশ্বাস ছাড়লো। ড্রাইভার নিজের ভিতর একরকমের সুড়সুড়ি অনুভব করল আর তার পুরা শরীর নেশায় ভরে উঠলো। “আমার ইচ্ছে করছে তোমার কাছে এসে বসি, তোমাকে মন ভরে দেখি, আমার শরীর তোমার বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হোক আর আমার মাথা তোমার বুকে।”
ড্রাইভার হঠাৎ শক্ত ব্রেক করল, ট্যাক্সি এক ঝাঁকি খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সামনে শুয়ে থাকা মানুষটি জেগে উঠলো আর ড্রাইভারের দিকে অবাক হয়ে তাকিয় থাকলো। “তুমি পিছনের সিটি গিয়ে ঘুমাও” লোকটি কোন প্রশ্ন না করে দরজা খুলে পিছনের সিটে গিয়ে শুয়ে পড়লো। মেয়েটি সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে এসে বসে পড়লো। মেয়েটি মুচকি হেসে তার দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালো। ড্রাইভার তার বাহু প্রসারিত করলো আর মেয়েটি তার বাহুর ভিতরে চলে এলো। সে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল, “আমি কল্পনাও করতে পারি না যে তোমার মতো একজন সুন্দরী মেয়ে আমার এতো কাছে। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন, আমি আজ অনেক খুশি”। সে মেয়েকে নিজের আরো কাছে টেনে নিল, “ইচ্ছে করছে তোমাকে মন ভরে আদর করি।”
মেয়েটি তার দৃষ্টি নিচু করে নিল, তার শরীর কাঁপছে: “আমারও ইচ্ছে করছে তোমাকে মন ভরে আদর করি। আমার যৌবন আর সব বাসনা তোমার জন্য বিলীন করে দেই, কিন্তু...” মেয়েটি বলল। ড্রাইভার মুচকি হাসল আর চেষ্টা করলো মেয়েটির ঠোঁটে চুমু খেতে। স্টিয়ারিং ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলল আর গাড়ি একটি গাছের সাথে বাড়ি খেতে খেতে বেঁচে গেল। সে স্টিয়ারিং কোন রকম সামলিয়ে নিল। পিছনে শোয়া মানুষটি নাক ডেকে ডেকে ঘুমাচ্ছে। ট্যাক্সি রাস্তা অতিক্রম করে চলছে। মেয়েটি তার গায়ের সাথে গা মিশিয়ে তার কাঁধের উপর মাথা রেখে বসে আছে। ড্রাইভার দ্রুত মদ খেয়ে যাচ্ছে। সূর্য দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে গেছে আর গাছের আড়ালে নিজেকে লুকাচ্ছে। তখনই ড্রাইভার গাড়ি থামালো এবং মেয়েকে নিয়ে একটি টিলার আড়ালে চলে গেল।
“ডার্লিং এখন আমাদেরকে কেউ দেখতে পারবে না, এখন আমরা দুইজন একলা।” সে মেয়েটাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। “তোমার শরীরের উত্তাপের মধ্যে নির্বাণ লুকিয়ে রয়েছে। ওটা মদের নেশা আর বুদ্ধের নীতির মধ্যে নয়।” সে মেয়ের ঠোঁটে চুমু খেতে চাইল কিন্তু মেয়ে নিজ ঠোঁট হাতের তালু দিয়ে ঢেকে নিজেকে তার কবল থেকে মুক্ত করল আর দূরে দাঁড়িয়ে হেসে বলল, “তুমি অনেক হঠকারী, এতো তাড়াহুড়া কিসের? আরো একটু প্রেমের আলাপ করি তারপর তো নিজেদের মধ্যে হারিয়ে যাবই।”
“সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে, এই সময় চলে গেলে আমাদের ভালবাসা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে” ড্রাইভার এই কথা বলে আবার মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো আর চেষ্টা করল তাকে মাটিতে শুইয়ে দেয়ার। হঠাৎ ড্রাইভার তার বুকের উপর কোন শক্ত জিনিস অনুভব করল, সে মেয়েকে ছেড়ে দিল। মেয়েটি তার সামনে একটি পিস্তল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“তোমার নির্বাণ দরকার, তাই না? ভালবাসা সম্পূর্ণ করতে চাও। তার আগে তোমার মানিব্যাগ আর অন্য যা কিছু আছে আমাকে দাও।” মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে বলল: “তুমি কি এইসব নিজের প্রিয়াকে দিতে পারবে না?”
ড্রাইভার অগ্রসর হয়ে তার কাছ থেকে পিস্তল কাড়ার চেষ্টা করলে মেয়েটি গুলি ছুঁড়ল। নির্জনতা ওই গুলির শব্দে ভঙ্গ হলো।
“যদি তুমি বেশি চালাকি দেখাও তাহলে মারা পড়বে, তোমার আগে যে গাড়িটি ছিল ওটাও লুটেছি আর চার জনকে ঘায়েল করেছি। এখন ভালয় ভালয় তোমার মানিব্যাগ, আঙটি, গলার চেন, আমাকে দাও। যদি না দাও আমি গুলি করতে মোটেও দ্বিধা করব না।” মেয়েটি কঠিন কণ্ঠে বলল। ড্রাইভার এবার ভয় পেয়ে গেল আর তার মানিব্যাগ, আঙটি, গলার চেন কাঁপা কাঁপা হাতে তার দিকে বাড়িয়ে দিল। সে ওগুলো তার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। তারপর সে ড্রাইভারের পিছনে পিস্তল ধরে ট্যাক্সি পর্যন্ত এলো যেখানে ট্যাক্সিতে স্টিয়ারিং ধরে ওই লোকটি বসে ছিল। মেয়ে তাকে দেখে হাসল আর বলল-
“বাঃ গৌতম ডার্লিং”।
“হ্যাঁ ডিয়ার তানিয়া, চলো এবার গৌতমের বার্ষিকী উদযাপন করি”। ট্যাক্সি দ্রুত গতিতে রাস্তায় দৌড়াতে লাগলো আর টেপে একটি ইংরেজি গান জোরে জোরে বাজতে থাকলো।
বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ , ১ কার্তিক ১৪২৬, ১৭ সফর ১৪৪১
জয়নুল আবেদীন
মূল উর্দু থেকে অনুবাদ : হাইকেল হাশমী
ওকে দেখছো” চলন্ত ট্যাক্সি থেকে বাইরের দিকে হাতের ইশারা দিয়ে পিছনের সিটে বসা লোকটি বলল। ড্রাইভার ক্ষণিকের জন্য সামনে রাস্তা থেকে নজর সরিয়ে দেখল যে একজন লোক বটগাছের নিচে বসে ঝিমাচ্ছে।
“সে আগামীকাল নির্বাণ পাবে তারপর দ্বিতীয় গৌতম বুদ্ধের জন্ম হবে”, সে খুব নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করলো। গাড়িচালক সাথে সাথে ব্রেক করলো, ট্যাক্সি চিৎকার দিয়ে থেমে গেল। সে বিস্ময় আর কঠিন স্বরে বলল-
“কি আবোল তাবোল বকছো, ওতো কোন ভিক্ষুক, তার গায়ে ছেঁড়া কাপড় আর চোখ থেকে ক্ষুধা টগবগ করে বেরিয়ে পড়ছে।”
“হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলছো”- সে একটি বিদ্রূপপূর্ণ মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “শোনো ভাই যখন সিদ্ধার্থ তার রাজ্য ছেড়ে কপিলাবস্তু থেকে এসে একটি বটগাছের নিচে বসেছিল তখন সেও এমনই ঝিমাচ্ছিল আর ক্ষুধার্ত ছিল। তার গায়ে কাপড় ছিল না আর তাকেও তোমার মতো লোকেরা ভিক্ষুক মনে করেছিল। যখন সে নির্বাণ পেলো তখন সে একটি অন্যরকম মানুষ হয়ে গেল, সে গৌতম বুদ্ধ হয়ে গেলো। সে তখন রৌদ্র আর ছায়া, জীবন ও মরণ, দুঃখ আর সুখের কথা বলতে লাগলো। সে বলল ভিতরে সব শূন্য, সব কিছু বাইরে আছে। ফুলের মধ্যে তার নিজের রঙ আর সুগন্ধি আছে।” সে কোন ইতিহাসের ছাত্রের মতো ড্রাইভারকে বোঝাতে লাগলো।
“তোমার মতো লোকেরাই প্রথম তার সামনে মাথা নত করলো। মাথা ন্যাড়া করে, হলুদ কাপড় পরলো আর তার আদর্শ অনুসরণ করলো। কোন জীবকে কষ্ট দেয়া তার ধর্মে পাপ হয়ে গেল।” সে ইতিহাস থেকে সরে গিয়ে বুদ্ধমতের উপর দার্শনিক আলোকপাত করল। ড্রাইভার তার কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিল তাই মনযোগ দিয়ে শুনছিল।
“ভিতর থেকে মানুষ দুঃখী যেহেতু বাইরে দুঃখ ছাড়া কিছু নাই। মনের ভিতর শান্তি নাই যেহেতু বাইরে অশান্তি বিরাজ করে।”
ট্যাক্সি গৃহ, দালান, অট্টালিকা, পথ, বৃক্ষ, কারখানা পিছে ফেলে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে। এখন তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু গৌতম বুদ্ধ নয়, বরং সমাজে বিরাজমান অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা। এখন তারা এইসব বিষয়ের কারণ নিয়ে আলাপরত। ড্রাইভার পড়াশোনা জানা লোক। সে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে জিজ্ঞাসা করলো-
“এতো অরাজকতা আর নৈরাজ্য কেন? তুমি কি এগুলোর কারণ বলতে পারো?”
“না” সে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল, কিন্তু পর মুহূর্তে বলে উঠলো, “তুমি দিনরাত ট্যাক্সি কেন চালাও? এতো কাজ কেন করো? এইজন্য যেন বেঁচে থাকতে পারো। কিন্তু যখন এই জীবন তোমার উপর দুর্বিষহ হয়ে যায় তখন তুমি কি করবে নৈরাজ্য ছাড়া?”
সেই লোকের যুক্তি শুনে ড্রাইভার চমকে উঠলো আর তার নিজের জ্ঞান যে সিমিত তা স্বীকার করার স্বরে বলল, “আমি ইংরেজি ভাষায় এমএ করেছি কিন্তু এই সব বিষয় ভাল করে বুঝতে পারি নি তুমি যতো সহজভাবে বুঝিয়ে দিলে।” তারপর সে গাড়ির ড্যাশ বোর্ড থেকে মদের বোতল বের করে নিজের গলা ভিজিয়ে তাকে বলল, “আমি যখন ‘লং ড্রাইভ’-এ যাই তখন এটা আমার সঙ্গে থাকে। তুমি খাবে?” এই বলে সে বোতল তার দিকে বাড়িয়ে দিল, “ডিলাক্স মদ, ওল্ড স্মাগ্লার” তোমার পছন্দ হবে।
“না আমি আমার নিজের “ব্র্যান্ড” ছাড়া খাই না”।
“আচ্ছা বুঝলাম তুমি ধার্মিক মানুষ, মদ খাও না।”
“না, আমি খুব খারাপ লোক, টাকার জন্য সব কিছু করতে পারি, এমনকি তোমাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবো না।” সে ট্যাক্সির বাইরে তাকিয়ে উত্তর দিল। আর ড্রাইভারের চেহারার রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, তার গলায় মদ আটকে গেল। ট্যাক্সির গতিও কমে গেল।
“ও ভয় পেয়ে গেলে? আমি শুধু তোমার কথার উত্তর দিয়েছি, আমি খুব ভদ্র মানুষ একদম জেন্টালম্যান।” সে মুচকি হেসে ড্রাইভারের দিকে তাকালো আর ড্রাইভারের জানে পানি ফিরে এলো। “তুমি জানো, তোমার ভয়ের কারণ ভিতরে নেই বাইরে, সহানুভূতি, আবেগ, বোধ আর স্পর্শানুভূতি সবই বাইরের অবস্থা আর অবস্থানের উপর পরিচালিত হয়, যেটা বিভিন্ন আকার ধারণ করে তোমার অন্তরে ব্যক্ত হয়। তুমি খুবই আনন্দিত হও যখন কোন যাত্রী তোমাকে বেশি ভাড়া দেয় আর তোমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় যখন কোন যাত্রী তোমাকে কম ভাড়া দেয়।”
“তুমি কি দর্শন বা সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র” এই কথা জিজ্ঞাসা করাতে সেই লোকটি জোরে হেসে উঠলো আর বলল-
“আমি কোন দিন কোন স্কুলে বা কলেজে যাই নাই। এইসব ভাল ভাল আর জ্ঞানের কথা আমি আমার বন্ধু গৌতম থেকে শিখেছি।”
“গৌতম কে?”
“বললাম না, আমার বন্ধু, কিন্তু সে কাপিলাবস্তুর বাসিন্দা না আর কোন রাজ পরিবারের সদস্যও না। সে এক চামার-মুচির ছেলে যাকে তার বাবা কষ্ট করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছিল যেটা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। সে রাত দিন মোটা মোটা বই-এর ভিতর খোঁজে, কেন মানুষ আর মানবতা এখনো শোষিত। সে সেখান থেকে যা জ্ঞান পায় আমাদের মতো বন্ধুর মাঝে বিলিয়ে দেয়। তার বিনিময় আমরা তাকে মদ খাওয়াই যেটা সে খুব শখ করে খায়। সে বলে, “নেশা থেকে যে নির্বাণ পাওয়া যায় তা কোন মেয়ের উত্তপ্ত যৌবন আর তাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ রাখার মধ্যেও নেই। নেশায় ডুবে থাকো, কোন দুঃখ কাছে আসবে না, সব কিছু রঙ্গিন আর সুন্দর দেখাবে, বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে আর জীবন শোভাময় হয়ে যাবে।”
“হয়তবা সে দুঃখ পেয়েছে, এমনো হতে পারে কোন মেয়ে তার ভালবাসা প্রত্যাখান করেছে।”
“হ্যাঁ, এমনি কিছু হয়ে ছিল। সে তানিয়া নামের এক মেয়েকে অনেক ভালবাসতো। তানিয়াও তাকে ভালবাসত। তারা বিয়ে করতে চেয়েছিল কিন্তু তানিয়ার বাবা তাদের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়াল। তাঁর কথা সে কোন দিন তার মেয়েকে ওই যুবকের সাথে বিয়ে করার অনুমতি দিবে না যে তাকে ভালবাসে। যেহেতু প্রেম কোন বাঁধন মানে না, প্রেম কোন রীতি, নীতির ধার ধারে না আর তার বিপরীত হচ্ছে বিয়ে যেটা একটি সামাজিক বন্ধন, তাতে মানুষ একবার আবদ্ধ হলে তো আর কোন দিন রেহাই পায় না। তার অবস্থা ঐ পাখির মতো হয় যার পাখা কেটে দেয়া হয়েছে। যে নিজের দুঃখের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।”
ড্রাইভার খুব মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল আর উপভোগ করছিল।
তখন আমার বন্ধু খুব বিষণ্ন থাকা শুরু করলো। মদ খেতো আর যারা ওর কাছে আসতো তাদেরকে তার প্রেমের গল্প শোনাতো। তানিয়া তার সাথে প্রতারণা করেছে বলতো। এইভাবে সে তার মনের বোঝা নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতো কিন্তু সে জানতো না সে যে অজান্তে তার দুঃখ বিতরণ করছে তাতে দুঃখ আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। তারপর সে তার গল্প বলতে বলতে এতো ক্লান্ত হয়ে গেল যে সে চুপ থাকতে লাগলো। নিঃসঙ্গ হয়ে গেল। শুধু মদ খেতো আর চুপচাপ পড়ে থাকতো। একদিন শীতের গভীর রাতে মদ তার জীবন নাশ করল। সে বট গাছের নিচে এমন ঘুম দিল যে আর কোন দিন উঠলো না। তার শরীর শক্ত হয়ে ছিল কিন্তু তার নীল ঠোঁটে ওই মুচকি হাসি ছিল, তার চোখে সেই প্রেমের বর্ষা ছিল যেন বর্ষার রাতে ঝম ঝম বৃষ্টি পড়ছে। তার বন্ধুরা ওই বটগাছের নিচে তার একটা মূর্তি বানিয়ে রেখে দিয়েছে আর একটা ফলক যেখানে লেখা আছে, একে ঘুম থেকে তুলো না, সে এইমাত্র কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।”
ট্যাক্সির ভিতরে নীরবতা বিরাজ করছে শুধু গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ড্রাইভার মদ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর পিছনের সিটে সেই লোকটি চোখ বন্ধ করে বসে আছে যেন মনে হয় গৌতম-এর দুঃখ তার মনের উপর পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা বেশ দীর্ঘ আর ট্যাক্সি দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে তখন ড্রাইভার হঠাৎ দেখল একটি মেয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামানোর জন্য ইশারা করছে। মেয়েটি যুবতী আর সুন্দরী। লম্বা চুল আর বড় বড় চোখ, পোশাক দেখে কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য মনে হচ্ছে। কিন্তু সে একা এখানে কী করছে? তার মাথায় এই প্রশ্ন জাগল। সে কোন পেত্নী না তো, তার মনে সন্দেহ হলো। যদি এমন হয় আর সে কোন বিপদে পড়ে যায় তাহলে সে নিজেও মারা পড়বে আর তার ট্যাক্সিও যাবে তাই সে ট্যাক্সি থামাবে না সিদ্ধান্ত নিল। এখন মেয়েটি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে আর জোরে জোরে চিৎকার করছে। কিন্তু সে ট্যাক্সির গতি না কমিয়ে চিন্তা করল যে সে ট্যাক্সিটা তার পাশ কাটিয়ে বের করে নিয়ে যাবে। যখন সে কাছে পৌঁছালো তখন দেখতে পেল পাশে একটি বড় গর্ত আর সে জোরে ব্রেক করল। গাড়ি চিৎকার দিয়ে থেমে গেল। মেয়েটি দৌড় দিয়ে তার কাছে এলো, ড্রাইভার দেখতে পেল তার রক্তাক্ত কপাল। পিছনে শুয়ে থাকা লোকটি ঘুম থেকে জেগে উঠলো। সে মেয়েকে দেখলো, মেয়েও তাকে দেখতে পেলো তারপর মেয়েটি ড্রাইভারকে বলল, “আপনি আমাকে লিফট দেবেন আমি কয়েক ঘণ্টা ধরে কোন গাড়ি বা বাসের অপেক্ষা করছি, কেউ আসে নাই। আমার গাড়ি নিচে খাদে পড়ে গেছে। আমি আমার আহত ভাই আর বোনকে ড্রাইভারের সাথে চিকিৎসার জন্য শহরে পাঠিয়েছি, গাড়িতে জায়গা ছিল না বলে আমাকে থেকে যেতে হয়েছে, আপনি কি আমাকে লিফট দিবেন?” মেয়েটি অনুরোধ করল।
ড্রাইভার তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার চেহারার আবেগ পড়ার চেষ্টা করলো যেন বুঝতে পারে সে আসলে কতটা সত্য বলছে। সে ঘুরে তার সঙ্গীর দিকে দেখলো সে চোখে চোখে তাকে অনুমতি দিয়ে দিল।
ড্রাইভার হাত বাড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল আর মেয়েটি ধপাস করে পিছনের সিটে বসে পড়লো আর গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো।
“এই দুর্ঘটনাটা কী করে ঘটলো?” ড্রাইভার মেয়েটি যে তার কপাল থেকে রক্ত মুচ্ছিল তাকে নিজের সন্তুষ্টির জন্য জিজ্ঞাসা করলো। সে বলল, “আমরা আমদের গাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক দাউদকান্দির কাছে একটি পুলের নিচে থেকে একটি হলুদ রঙের গাড়ি আমাদের পিছু নিল। ভয় পেয়ে আমাদের ড্রাইভার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল, পিছনের গাড়িটিও গতি বাড়িয়ে দিল আর আমাদের গাড়ির একদম কাছে চলে এলো। ওই গাড়িতে কিছু ছেলে দেখতে পেলাম যাদের হাতে বন্দুক আর পিস্তল ছিল। তারপর আমাদের ড্রাইভার আরো গতি বাড়লো কিন্তু আমরা খাদে পড়ে গেলাম আর তারা আমাদের উপর গুলি বর্ষণ করতে করতে চলে গেল। কপাল ভাল আমাদের মধ্যে সবাই আহত হয়েছে কেউ মরে নাই তবে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়েছে।”
“হয়তবা তারা হাইজ্যাকার ছিল।”, ড্রাইভার বলল, “কোথায় যাবেন আপনি?”
“ময়নামতি যাচ্ছি, আজ গৌতম-এর মৃত্যুবার্ষিকী তাই যাচ্ছি ওখানে। ও আমার পুরান বন্ধু ছিল।” মেয়ের কথা শুনে পিছনে বসা লোকটি লাফ দিয়ে উঠলো আর মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল-
“কী বললে, গৌতম তোমার বন্ধু?”
“এটাতে বিস্ময়ের কী হলো, আপনি কি তাকে চিনতেন?”
“শুধু চিনতামই না, আমি তার খুব কাছের বন্ধু, তুমি তার বন্ধু ছিলে না, তুমি মিথ্যা কথা বলছ।”
ওই লোকটি তার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে বসলো। দুইজন তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো। তখনই ড্রাইভার চিৎকার দিয়ে বলল, “কী বক বক করছ, হাজার বছর হলো গৌতম মরে গেছে আর তোমরা এখনো তার বার্ষিকী আর জন্মদিন পালন করার জন্য মিথ্যার উপর মিথ্যা বলে চলছো। তোমরা মৃত মানুষের পূজারি, এটা তোমাদের ব্যবসা যেটা সংস্কৃতির নামে এখনো চালিয়ে যাচ্ছ।”
ভাষণ দিয়ে ড্রাইভারের গলা শুকিয়ে গেল, মদের কয়েক ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নিল। মেয়েটা ওর কথা শুনে প্রভাবিত হওয়া তো দূরের কথা হেসে ওই লোকের দিকে তাকালো সেও তার চোখ এমনভাবে মটকালো যেন ড্রাইভারকে ভাঁড় মনে করছে।
ড্রাইভার আবার বলতে শুরু করল, “আমাদের সাংস্কৃতি আর আগের মতন নেই, প্রতিবেশীদের অনেক প্রভাব পড়েছে।”
“এখন যুগ পাল্টে গেছে, কম্পিউটারে মানুষ আর তার ভবিষ্যৎ আটকে রাখা হয়েছে। সময়ও তার ভিতরে বন্দি” সেই লোকটি বলল।
“কিন্তু আবেগ, অনুভূতি, উচ্ছ্বাস-এসব তার স্পর্শ থেকে এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু এই কথাটি মানতে হবে যে টেকনোলজির বিকাশের সাথে সাথে সৌন্দর্যের অনুভূতি আর শক্তির প্রভাব জীবন আর সমাজে বিপ্লবের নতুন নতুন পথ উন্মোচন করতে পেরেছে। মেয়েটি যে পড়াশোনা জানে এবং তার চিন্তাধারা মারক্সিজম-এ প্রভাবিত তা স্পষ্ট কিন্তু এইসব কথাবার্তা তাদের মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। ড্রাইভার ট্যাক্সির গতি বাড়িয়ে দিল। সূর্য আকাশ থেকে নেমে গাছের আড়ালে আশ্রয় নেয়ার জন্য দৌড়াচ্ছে। সে খুব তাড়াতাড়ি ময়নামতি পৌঁছাতে চাচ্ছিল যেন তার যাত্রীরা গৌতমের বার্ষিকীতে অংশ নিতে পারে। ড্রাইভারের হাত স্টিয়ারিঙের উপর আর চোখ ওয়ইন্ড স্ক্রিনের উপর জমে ছিল। যেখানে আয়নায় মেয়েটির প্রতিচ্ছবি আটকে ছিল। মেয়েটি আড়চোখে ড্রাইভারকে মাঝে মাঝে লক্ষ্য করছিল। পিছনে সিটে বসা লোকটি গভীর ঘুমে ছিল। হঠাৎ মেয়েটি সামনের দিকে ঝুঁকে তার চিবুক ড্রাইভারের সিটের পিছনে রাখলো আর তার ঠোঁট ড্রাইভারের কানের লতি স্পর্শ করতে লাগলো। মেয়েটি আস্তে করে তার কানে বলল, “আমি আজ অবধি তোমার মতো সুপুরুষ আর সাস্থ্যবান যুবক দেখি নাই। তোমার চোখের নেশা, তোমার বাহুর শক্তি, তোমার অন্তরের তাপ আর উত্তাপ তোমাকে একটি সম্পূর্ণ পুরুষ বানিয়েছে। যে কোন মেয়ে তোমাকে ভালবাসতে চাইবে।”
মেয়েটি থেকে নিজের পৌরুষত্ব আর যৌবনের প্রশংসা শুনে ড্রাইভারের মদের নেশা চড়ে গেল। তার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। সে তার ঘাড় ঘুড়িয়ে মেয়েকে দেখার চেষ্টা করল তখনই তার গাল মেয়ের ঠোঁটকে স্পর্শ করল। ড্রাইভারের হৃদয়ের গতি বেড়ে গেল। তার হাত স্টিয়ারিঙে কেঁপে উঠলো আর এক্সিলেটারে পায়ের চাপ কমে গেল সে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ার চেঞ্জ করল।
“তুমি গাড়ি খুব দক্ষতার সাথে চালাও” মেয়েটি খুব নরম স্বরে বলল আর তার কানের কাছে নিজের গরম নিঃশ্বাস ছাড়লো। ড্রাইভার নিজের ভিতর একরকমের সুড়সুড়ি অনুভব করল আর তার পুরা শরীর নেশায় ভরে উঠলো। “আমার ইচ্ছে করছে তোমার কাছে এসে বসি, তোমাকে মন ভরে দেখি, আমার শরীর তোমার বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হোক আর আমার মাথা তোমার বুকে।”
ড্রাইভার হঠাৎ শক্ত ব্রেক করল, ট্যাক্সি এক ঝাঁকি খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সামনে শুয়ে থাকা মানুষটি জেগে উঠলো আর ড্রাইভারের দিকে অবাক হয়ে তাকিয় থাকলো। “তুমি পিছনের সিটি গিয়ে ঘুমাও” লোকটি কোন প্রশ্ন না করে দরজা খুলে পিছনের সিটে গিয়ে শুয়ে পড়লো। মেয়েটি সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে এসে বসে পড়লো। মেয়েটি মুচকি হেসে তার দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালো। ড্রাইভার তার বাহু প্রসারিত করলো আর মেয়েটি তার বাহুর ভিতরে চলে এলো। সে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল, “আমি কল্পনাও করতে পারি না যে তোমার মতো একজন সুন্দরী মেয়ে আমার এতো কাছে। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন, আমি আজ অনেক খুশি”। সে মেয়েকে নিজের আরো কাছে টেনে নিল, “ইচ্ছে করছে তোমাকে মন ভরে আদর করি।”
মেয়েটি তার দৃষ্টি নিচু করে নিল, তার শরীর কাঁপছে: “আমারও ইচ্ছে করছে তোমাকে মন ভরে আদর করি। আমার যৌবন আর সব বাসনা তোমার জন্য বিলীন করে দেই, কিন্তু...” মেয়েটি বলল। ড্রাইভার মুচকি হাসল আর চেষ্টা করলো মেয়েটির ঠোঁটে চুমু খেতে। স্টিয়ারিং ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলল আর গাড়ি একটি গাছের সাথে বাড়ি খেতে খেতে বেঁচে গেল। সে স্টিয়ারিং কোন রকম সামলিয়ে নিল। পিছনে শোয়া মানুষটি নাক ডেকে ডেকে ঘুমাচ্ছে। ট্যাক্সি রাস্তা অতিক্রম করে চলছে। মেয়েটি তার গায়ের সাথে গা মিশিয়ে তার কাঁধের উপর মাথা রেখে বসে আছে। ড্রাইভার দ্রুত মদ খেয়ে যাচ্ছে। সূর্য দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে গেছে আর গাছের আড়ালে নিজেকে লুকাচ্ছে। তখনই ড্রাইভার গাড়ি থামালো এবং মেয়েকে নিয়ে একটি টিলার আড়ালে চলে গেল।
“ডার্লিং এখন আমাদেরকে কেউ দেখতে পারবে না, এখন আমরা দুইজন একলা।” সে মেয়েটাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। “তোমার শরীরের উত্তাপের মধ্যে নির্বাণ লুকিয়ে রয়েছে। ওটা মদের নেশা আর বুদ্ধের নীতির মধ্যে নয়।” সে মেয়ের ঠোঁটে চুমু খেতে চাইল কিন্তু মেয়ে নিজ ঠোঁট হাতের তালু দিয়ে ঢেকে নিজেকে তার কবল থেকে মুক্ত করল আর দূরে দাঁড়িয়ে হেসে বলল, “তুমি অনেক হঠকারী, এতো তাড়াহুড়া কিসের? আরো একটু প্রেমের আলাপ করি তারপর তো নিজেদের মধ্যে হারিয়ে যাবই।”
“সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে, এই সময় চলে গেলে আমাদের ভালবাসা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে” ড্রাইভার এই কথা বলে আবার মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো আর চেষ্টা করল তাকে মাটিতে শুইয়ে দেয়ার। হঠাৎ ড্রাইভার তার বুকের উপর কোন শক্ত জিনিস অনুভব করল, সে মেয়েকে ছেড়ে দিল। মেয়েটি তার সামনে একটি পিস্তল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“তোমার নির্বাণ দরকার, তাই না? ভালবাসা সম্পূর্ণ করতে চাও। তার আগে তোমার মানিব্যাগ আর অন্য যা কিছু আছে আমাকে দাও।” মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে বলল: “তুমি কি এইসব নিজের প্রিয়াকে দিতে পারবে না?”
ড্রাইভার অগ্রসর হয়ে তার কাছ থেকে পিস্তল কাড়ার চেষ্টা করলে মেয়েটি গুলি ছুঁড়ল। নির্জনতা ওই গুলির শব্দে ভঙ্গ হলো।
“যদি তুমি বেশি চালাকি দেখাও তাহলে মারা পড়বে, তোমার আগে যে গাড়িটি ছিল ওটাও লুটেছি আর চার জনকে ঘায়েল করেছি। এখন ভালয় ভালয় তোমার মানিব্যাগ, আঙটি, গলার চেন, আমাকে দাও। যদি না দাও আমি গুলি করতে মোটেও দ্বিধা করব না।” মেয়েটি কঠিন কণ্ঠে বলল। ড্রাইভার এবার ভয় পেয়ে গেল আর তার মানিব্যাগ, আঙটি, গলার চেন কাঁপা কাঁপা হাতে তার দিকে বাড়িয়ে দিল। সে ওগুলো তার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। তারপর সে ড্রাইভারের পিছনে পিস্তল ধরে ট্যাক্সি পর্যন্ত এলো যেখানে ট্যাক্সিতে স্টিয়ারিং ধরে ওই লোকটি বসে ছিল। মেয়ে তাকে দেখে হাসল আর বলল-
“বাঃ গৌতম ডার্লিং”।
“হ্যাঁ ডিয়ার তানিয়া, চলো এবার গৌতমের বার্ষিকী উদযাপন করি”। ট্যাক্সি দ্রুত গতিতে রাস্তায় দৌড়াতে লাগলো আর টেপে একটি ইংরেজি গান জোরে জোরে বাজতে থাকলো।