ভালুকায় সড়ক নির্মাণে ধীর গতি : জনদুর্ভোগ চরমে

ভালুকায় এলজিইডি বিভাগের আওতায় বনকুয়া-রামপুর সড়কের তৃতীয় অংশ পাকাকরণ কাজের ঠিকাদার ১১ শত মিটার খনন করে ফেলে রাখায় চরম দুর্ভোগে পরেছে এলাকাবাসী। প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৭ বছর পর রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এলজিইডি বিভাগের আওতায় বনকুয়া-রামপুর সড়কের তৃতীয় অংশ পাকাকরণ কাজের ঠিকাদার ১১ শত মিটার খনন করে ফেলে রাখায় রাস্তায় যান চলাচলে বিগ্নের কারণে মালামাল আনতে পারছে না বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার। ফলে, নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয় ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা দুরূহ হয়ে পরেছে বলে ভালুকা উপজেলা মেদুয়ারী ইউনিয়নের রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন জানান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আবাসন সমস্যা রয়েছে ওই বিদ্যালয়টিতে। সামনে বর্ষা মৌসুমে আবারও বৃষ্টি শুরু হলে আরও পিছিয়ে যাবে ওই ভবন নির্মাণ কাজ। রামপুর গ্রামের আতাব উদ্দিন জানান ‘পাকা করার জন্যে গত চৈত্র মাসে সড়কটি খনন করে সামান্য কিছু বালি ফেলে রাখায় এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায় রামপুর বাজার, রামপুর ফাজিল মাদরাসা, রামপুর বায়তুল হাম জামে মসজিদ ও রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি পোল্ট্রি ও একাধিক মাছের খামার ওই সড়কটির পাশে অবস্থিত। ওইসব পোল্ট্রি খামারের মুরগির বাচ্চা, মৎস্য খামারের মাছের পোনা, খাদ্য পরিবহন, খামারের মুরগি, মুরগির ডিম ও মাছ বাজারজাতকরণের এটি একমাত্র সড়ক। এছাড়া, স্থানীয় কৃষকগণ তাদের জমিতে উৎপাদিত নানা ধরনের কৃষি পণ্যও ওই সড়ক হয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাজারজাত করে থাকেন। রামপুর ফাজিল মাদরাসা ও রামপুর উত্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় ও পাশের ত্রিশাল উপজেলার অসংখ্য মানুষ এ সড়কে প্রতিদিন যাতায়ত করে। কিন্তু সড়কের তৃতীয় (রামপুর) অংশের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার সড়টির ১১শত মিটার খনন করে ও সড়কটির প্রথম (বনকূয়া) অংশের ঠিকাদার সংস্কারের জন্য সড়কের ৭শত মিটার এস কে ফাইলিং করে (চলটিয়ে) ফেলে রেখেছেন। খনন করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় ওই সড়কে এলাকাবাসী ও যানবাহন চলাচলে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। কৃষিপণ্যের বাজারজাত করণে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় সঠিক বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার কৃষক। সড়কটির উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান স্থানীয়রা।

রামপুর গ্রামের পোল্ট্রি খামারি মোফাচ্ছারুল আলম খোকা জানান, সড়কে মাটি কেটে গর্ত করে রাখায় খামারের মালামাল নিয়ে আগের ভাড়ায় কোন চালক যানবাহন নিয়ে আসতে চান না। সড়কের বর্তমান দুর্দশার জন্যে ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় মুরগি ও ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। একই গ্রামের শামছুদ্দিন সরকার জানান, প্রতিবছর নিজের গাছ থেকে তিনি গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেন। অথচ এ বছর সড়কের বেহাল দশার কারণে পাইকার না আসায় ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল মাত্র ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী মলি আক্তার জানান বৃষ্টির দিনে সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। তখন অনেক সময় পা পিছলে পড়ে তাদের জামাকাপড় ও বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়। আর শোকনা দিনে গায়ে ধুলা লাগে। ইসমাইল হোসেন জানান, রামপুর ফাজিল মাদরাসা ও মসজিদে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। দীর্ঘদিন যাবত খুঁড়ে রাখায় মাদরাসার ছাত্র ও মুসল্লিদের যাতায়তে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোট প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ ১১ হাজার ৬ শত টাকায় একটি প্যাকেজের আওতায় ভালুকা উপজেলার গতিয়ার বাজার-গনকা বাজার সড়কটির দুই কিলোমিটার (গ্রুপ-এ), উপজেলার বনকূয়া-রামপুর সড়কে ১ দশমিক ১ কিলোমিটার (গ্রুপ-বি) ও উপজেলার বাটাজোর-শৈলাট সড়কের ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার (গ্রুপ-সি) উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আর এস অ্যা- এস ই জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজটি করার জন্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। কার্যাদেশ অনুসারে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। অফিসের হিসাব অনুসারে এ পর্যন্ত ওই প্যাকেজে এ গ্রুপে শতকরা হিসাবে ৫%, বি গ্রুপে ১০% এবং সি গ্রুপে কাজ হয়েছে শতকরা ৭০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তার রানী বলেন বনকূয়া-রামপুর রাস্তাটির জন্য জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। কিন্তু রাস্তাটির কাজ শেষ করছেন না। বিষয়টি তিনি স্থানীয় প্রশাসনকেও জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ওই প্যাকেজের তিনটি সড়ক উন্নয়ন কাজের মেয়াদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তীর্ণ হয়েছে। কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্যে ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে বারবার তাগাদাসহ একাধিক চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ কামাল জানান ওই বিষয়ে খুঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান অচিরেই কাজটি ধরা হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১১ পৌষ ১৪২৬, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪১

ভালুকায় সড়ক নির্মাণে ধীর গতি : জনদুর্ভোগ চরমে

আতাউর রহমান তরফদার, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

image

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : উন্নয়নের জন্য খনন করে ফেলে রাখা বনকুয়া সড়ক -সংবাদ

ভালুকায় এলজিইডি বিভাগের আওতায় বনকুয়া-রামপুর সড়কের তৃতীয় অংশ পাকাকরণ কাজের ঠিকাদার ১১ শত মিটার খনন করে ফেলে রাখায় চরম দুর্ভোগে পরেছে এলাকাবাসী। প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৭ বছর পর রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এলজিইডি বিভাগের আওতায় বনকুয়া-রামপুর সড়কের তৃতীয় অংশ পাকাকরণ কাজের ঠিকাদার ১১ শত মিটার খনন করে ফেলে রাখায় রাস্তায় যান চলাচলে বিগ্নের কারণে মালামাল আনতে পারছে না বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার। ফলে, নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয় ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা দুরূহ হয়ে পরেছে বলে ভালুকা উপজেলা মেদুয়ারী ইউনিয়নের রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন জানান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আবাসন সমস্যা রয়েছে ওই বিদ্যালয়টিতে। সামনে বর্ষা মৌসুমে আবারও বৃষ্টি শুরু হলে আরও পিছিয়ে যাবে ওই ভবন নির্মাণ কাজ। রামপুর গ্রামের আতাব উদ্দিন জানান ‘পাকা করার জন্যে গত চৈত্র মাসে সড়কটি খনন করে সামান্য কিছু বালি ফেলে রাখায় এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায় রামপুর বাজার, রামপুর ফাজিল মাদরাসা, রামপুর বায়তুল হাম জামে মসজিদ ও রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি পোল্ট্রি ও একাধিক মাছের খামার ওই সড়কটির পাশে অবস্থিত। ওইসব পোল্ট্রি খামারের মুরগির বাচ্চা, মৎস্য খামারের মাছের পোনা, খাদ্য পরিবহন, খামারের মুরগি, মুরগির ডিম ও মাছ বাজারজাতকরণের এটি একমাত্র সড়ক। এছাড়া, স্থানীয় কৃষকগণ তাদের জমিতে উৎপাদিত নানা ধরনের কৃষি পণ্যও ওই সড়ক হয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাজারজাত করে থাকেন। রামপুর ফাজিল মাদরাসা ও রামপুর উত্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় ও পাশের ত্রিশাল উপজেলার অসংখ্য মানুষ এ সড়কে প্রতিদিন যাতায়ত করে। কিন্তু সড়কের তৃতীয় (রামপুর) অংশের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার সড়টির ১১শত মিটার খনন করে ও সড়কটির প্রথম (বনকূয়া) অংশের ঠিকাদার সংস্কারের জন্য সড়কের ৭শত মিটার এস কে ফাইলিং করে (চলটিয়ে) ফেলে রেখেছেন। খনন করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় ওই সড়কে এলাকাবাসী ও যানবাহন চলাচলে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। কৃষিপণ্যের বাজারজাত করণে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় সঠিক বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার কৃষক। সড়কটির উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান স্থানীয়রা।

রামপুর গ্রামের পোল্ট্রি খামারি মোফাচ্ছারুল আলম খোকা জানান, সড়কে মাটি কেটে গর্ত করে রাখায় খামারের মালামাল নিয়ে আগের ভাড়ায় কোন চালক যানবাহন নিয়ে আসতে চান না। সড়কের বর্তমান দুর্দশার জন্যে ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় মুরগি ও ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। একই গ্রামের শামছুদ্দিন সরকার জানান, প্রতিবছর নিজের গাছ থেকে তিনি গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেন। অথচ এ বছর সড়কের বেহাল দশার কারণে পাইকার না আসায় ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল মাত্র ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। রামপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী মলি আক্তার জানান বৃষ্টির দিনে সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। তখন অনেক সময় পা পিছলে পড়ে তাদের জামাকাপড় ও বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়। আর শোকনা দিনে গায়ে ধুলা লাগে। ইসমাইল হোসেন জানান, রামপুর ফাজিল মাদরাসা ও মসজিদে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। দীর্ঘদিন যাবত খুঁড়ে রাখায় মাদরাসার ছাত্র ও মুসল্লিদের যাতায়তে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোট প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ ১১ হাজার ৬ শত টাকায় একটি প্যাকেজের আওতায় ভালুকা উপজেলার গতিয়ার বাজার-গনকা বাজার সড়কটির দুই কিলোমিটার (গ্রুপ-এ), উপজেলার বনকূয়া-রামপুর সড়কে ১ দশমিক ১ কিলোমিটার (গ্রুপ-বি) ও উপজেলার বাটাজোর-শৈলাট সড়কের ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার (গ্রুপ-সি) উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আর এস অ্যা- এস ই জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজটি করার জন্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। কার্যাদেশ অনুসারে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। অফিসের হিসাব অনুসারে এ পর্যন্ত ওই প্যাকেজে এ গ্রুপে শতকরা হিসাবে ৫%, বি গ্রুপে ১০% এবং সি গ্রুপে কাজ হয়েছে শতকরা ৭০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তার রানী বলেন বনকূয়া-রামপুর রাস্তাটির জন্য জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। কিন্তু রাস্তাটির কাজ শেষ করছেন না। বিষয়টি তিনি স্থানীয় প্রশাসনকেও জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ওই প্যাকেজের তিনটি সড়ক উন্নয়ন কাজের মেয়াদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তীর্ণ হয়েছে। কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্যে ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে বারবার তাগাদাসহ একাধিক চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ কামাল জানান ওই বিষয়ে খুঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান অচিরেই কাজটি ধরা হবে।