ব্যয়ের নামে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ

রংপুর আনসার ও ভিডিপি জেলা কার্যালয়ে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়সহ বিভিন্ন কাজে ব্যয়ের নামে চরম অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। শুধু এক মাসেই ৬৭ বিল পাস করা হয়েছে এর মধ্যে একটি ছাড়া ৬৬টি বিল ভাউচারের মাধ্যমে খরচ দেখিয়ে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৭১ হাজার ২৮ টাকা ব্যায় দেখানো হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান করে তৈরি করা দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে রংপুর জেলা আনসার ও ভিডিপির কার্যালয়ে চলতি ২০১৯ ইং সালের ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের নামে কোন নিয়মনীতি মানা হয়নি। দরপত্র বা কোটেশন আহ্বান না করেই লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। জেলা আনসার ও ভিডিপির কমাড্যান্ট জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তথ্য অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে চরম অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র। এতে প্রশিক্ষণ বিল বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৭০ টাকা। কিন্তু এত অর্থ ব্যয় করা হলেও তা কোটেশন না করে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে। একইভাবে টেলিফোন বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে ২৪ হাজার টাকা যা অবাস্তব বলে খোদ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এক মাসে গাড়ি চালকের ওভার টাইম বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৪৭ হাজার টাকা, ২০টি এলইডি লাইট কেনা দেখানো হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার টাকা অথচ বাজারে এলইডি লাইটের দাম আড়াই শ’ টাকার উপরে নয়। ফলে ৫ হাজার টাকার এলইডি লাইট কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সাড়ে ৯ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। ২টি মোটর সাইকেলের জ্বালানি খরচ দেখানো হয়েছে ২৯ হাজার ৫শ’ টাকা, ইন্টারনেট ব্যয় দেখানো হয়েছে দুটি বিলের মাধ্যমে ১৭ হাজার টাকা, শ্রমিক মজুরি পরিশোধের নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ব্যায় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮শ’ টাকা। এছাড়াও মনোহারী দ্রব্য কেনার নামে ভুয়া ভাউচারের মাদ্যমে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনী ব্যয়ের নামে ভাউচার তৈরি করে ২ কোটি ৭২ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৩ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এই অর্থ শুধু মাত্র এক মাসে ব্যায় দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেবার নামে ২৪টি ভাউচার তৈরি করে ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪০ টাকা ব্যায় দেখানো হয়েছে। একইভাবে নির্বাচনী ব্যয়ের নামে ১৫টি ভাউচারের মাধ্যমে ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ৬শ’ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এখানে নির্বাচনী ব্যায়ের নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সম্মানীসহ বিভিন্ন ব্যয় দেখানো হলেও এখানে মোটা অংকের অর্থ ভুয়ার ভাউচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। একইভাবে ইউনিয়ন দল নেতাদের সম্মানী বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ২৩৯ টাকা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬২০ টাকা। এ ছাড়াও মোটরসাইকেল মেরামত বাবদ ২৫ হাজার ২শ’ টাকা জিপ গাড়ি সার্ভিসিং ৩৪ হাজার ৯৯৭ টাকা খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহ বাবদ ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকাসহ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১১ কোটি ১১ লাখ ৬১ হাজার ৫২০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে রংপুর জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কমাড্যান্ট আবদুস সামাদ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করার নামে নজিরবিহীন অনিয়ম করেছেন। তিনি ৬৭টি বিলের বিপরীতে মাত্র মাত্র ১টি ব্যয় করেছেন কোটেশনের মাধ্যমে বাকি ৬৬টি কোটেশন এবং দরপত্র আহবান না করেই ব্যায় দেখিয়েছেন, যা তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তাদের প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন রংপুর কমাড্যান্ট কার্যালয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এখানে কোন নিয়মনীতি এবং পিপিআর আইন মানা হয়নি। পুরো বিষয় উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করা হলে আরো অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে তারা জানান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর জেলা আনসার ও ভিডিপির কমাড্যান্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এসব আগের কমাড্যান্ট আবদুস সামাদ সাহেবের আমলে ব্যয় করা হয়েছে। তিনি এখন সিলেটে পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান অনেক অনিয়ম হয়েছে এতে তার করণীয় কিছু নেই। তবে এ ব্যাপারে খবর না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন এতে পুরো বাহিনীর বদনাম হবে।

তবে সাবেক আনসার ও ভিডিপি কমানড্যান্ট আবদুস সামাদের সঙ্গে সিলেটে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরও খবর
সেনাবাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করার কাজ করছে সরকার প্রধানমন্ত্রী
পূর্ণ প্যানেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নীল দল
স্বাস্থ্য খাতের সিস্টেম বদলাতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ঢাকা ওআইসির ইয়ুথ রাজধানী
স্বর্ণার মৃত্যুর কারণ গণধর্ষণ
ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে থাকার ঘোষণা ঐক্যফ্রন্টের
মহাসড়কে নসিমন-করিমন বন্ধের সুপারিশ
বিজ্ঞান লেখক নাদিরা মজুমদার পেলেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৬
ছায়ানটে দৃষ্টিনন্দন ধ্রুপদী নাচ
‘ক্ষুদে শিল্পী’ প্রতিযোগীদের পুরস্কার প্রদান
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হলেন ড. কায়কাউস
প্রথম পর্যায়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
চাকরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে ও টাকা লুট
ফের অনশনে রাজশাহী পাটকল শ্রমিকরা
ছাদ ধসে হতাহতের ঘটনায় মামলা হয়নি তিন দিনেও
বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডি অবরুদ্ধ

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৫ পৌষ ১৪২৬, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রংপুর আনসার-ভিডিপি কার্যালয়

ব্যয়ের নামে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর আনসার ও ভিডিপি জেলা কার্যালয়ে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়সহ বিভিন্ন কাজে ব্যয়ের নামে চরম অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। শুধু এক মাসেই ৬৭ বিল পাস করা হয়েছে এর মধ্যে একটি ছাড়া ৬৬টি বিল ভাউচারের মাধ্যমে খরচ দেখিয়ে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৭১ হাজার ২৮ টাকা ব্যায় দেখানো হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান করে তৈরি করা দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে রংপুর জেলা আনসার ও ভিডিপির কার্যালয়ে চলতি ২০১৯ ইং সালের ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের নামে কোন নিয়মনীতি মানা হয়নি। দরপত্র বা কোটেশন আহ্বান না করেই লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। জেলা আনসার ও ভিডিপির কমাড্যান্ট জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তথ্য অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে চরম অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র। এতে প্রশিক্ষণ বিল বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৭০ টাকা। কিন্তু এত অর্থ ব্যয় করা হলেও তা কোটেশন না করে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে। একইভাবে টেলিফোন বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে ২৪ হাজার টাকা যা অবাস্তব বলে খোদ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এক মাসে গাড়ি চালকের ওভার টাইম বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৪৭ হাজার টাকা, ২০টি এলইডি লাইট কেনা দেখানো হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার টাকা অথচ বাজারে এলইডি লাইটের দাম আড়াই শ’ টাকার উপরে নয়। ফলে ৫ হাজার টাকার এলইডি লাইট কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সাড়ে ৯ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। ২টি মোটর সাইকেলের জ্বালানি খরচ দেখানো হয়েছে ২৯ হাজার ৫শ’ টাকা, ইন্টারনেট ব্যয় দেখানো হয়েছে দুটি বিলের মাধ্যমে ১৭ হাজার টাকা, শ্রমিক মজুরি পরিশোধের নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ব্যায় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮শ’ টাকা। এছাড়াও মনোহারী দ্রব্য কেনার নামে ভুয়া ভাউচারের মাদ্যমে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনী ব্যয়ের নামে ভাউচার তৈরি করে ২ কোটি ৭২ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৩ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এই অর্থ শুধু মাত্র এক মাসে ব্যায় দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেবার নামে ২৪টি ভাউচার তৈরি করে ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪০ টাকা ব্যায় দেখানো হয়েছে। একইভাবে নির্বাচনী ব্যয়ের নামে ১৫টি ভাউচারের মাধ্যমে ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ৬শ’ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এখানে নির্বাচনী ব্যায়ের নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সম্মানীসহ বিভিন্ন ব্যয় দেখানো হলেও এখানে মোটা অংকের অর্থ ভুয়ার ভাউচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। একইভাবে ইউনিয়ন দল নেতাদের সম্মানী বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ২৩৯ টাকা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬২০ টাকা। এ ছাড়াও মোটরসাইকেল মেরামত বাবদ ২৫ হাজার ২শ’ টাকা জিপ গাড়ি সার্ভিসিং ৩৪ হাজার ৯৯৭ টাকা খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহ বাবদ ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকাসহ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১১ কোটি ১১ লাখ ৬১ হাজার ৫২০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে রংপুর জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কমাড্যান্ট আবদুস সামাদ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করার নামে নজিরবিহীন অনিয়ম করেছেন। তিনি ৬৭টি বিলের বিপরীতে মাত্র মাত্র ১টি ব্যয় করেছেন কোটেশনের মাধ্যমে বাকি ৬৬টি কোটেশন এবং দরপত্র আহবান না করেই ব্যায় দেখিয়েছেন, যা তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তাদের প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন রংপুর কমাড্যান্ট কার্যালয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এখানে কোন নিয়মনীতি এবং পিপিআর আইন মানা হয়নি। পুরো বিষয় উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করা হলে আরো অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে তারা জানান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর জেলা আনসার ও ভিডিপির কমাড্যান্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এসব আগের কমাড্যান্ট আবদুস সামাদ সাহেবের আমলে ব্যয় করা হয়েছে। তিনি এখন সিলেটে পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান অনেক অনিয়ম হয়েছে এতে তার করণীয় কিছু নেই। তবে এ ব্যাপারে খবর না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন এতে পুরো বাহিনীর বদনাম হবে।

তবে সাবেক আনসার ও ভিডিপি কমানড্যান্ট আবদুস সামাদের সঙ্গে সিলেটে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।