চাকরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে ও টাকা লুট

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শান্তিনিকেতনে ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন (৭০) হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-পশ্চিম)। তারা হলো- গোলাম রাব্বী, বাবুল হোসেন ওরফে বাবু, সোহেল প্রধান, ইমন হোসেন ওরফে হাসান,আলামিন খন্দকান ওরফে রিহান। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, দড়ি ও লুট করে নেয়া ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন শান্তিনিকেতন এলাকায় নিজ বাসায় খুন হন কথিত পীর ও ব্যবসায়ী তোবারক হোসেন। তিনি বলেন, বাসার মোটা অঙ্কের নগদ টাকা লুট করার উদ্দেশ্যেই ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন তোবারকের সাবেক কর্মচারী শাহিন। চাকুরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে অর্থলুটের পরিকল্পনা করলেও হত্যার পরিকল্পনা ছিল না তাদের। কিন্তু ডাকাতির সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে মারা যান ব্যবসায়ী তোবারক।

আবদুল বাতেন বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মহাখালীর মামা প্লাজার কয়েকটি দোকানের মালিক শাহ মো. তোবারক হোসেন। তার দোকান ও ব্যবসার কিছু অংশ দেখভাল করতেন শাহিন ও শিহাব নামে দুই কর্মচারী। আর্থিক অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে শাহিনকে বরখাস্ত করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ করেন তোবারক। শাহিনকে বরখাস্ত করে অন্যকে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। একপর্যায়ে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে শাহিন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তোবারকের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। একপর্যায়ে সোহেল নামে এক ক্ষুদে ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে শাহীন। সাত মাস আগে তোবারকের বাসা থেকে টাকা লুটের জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। সে অনুযায়ী চাঁদপুরের চারজন ও কুমিল্লার একজনকে ভাড়া করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মোহাম্মদ আলী নামে এক কেয়ারটেকার ১০ বছর আগে তোবারকের বাসায় কাজ করতেন। তার ছেলে সাজিয়ে ইমন হোসেন নামে একজনকে কৌশলে ১৭ ডিসেম্বর তার বাসায় পাঠানো হয়। তোবারকের কাছে নিজেকে হাসান নামে পরিচয় দেন ইমন। মোহাম্মদ আলীর ছেলে হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করলে ইমনকে নিজ বাসাতেই থাকার ব্যবস্থা করে দেন তোবারক। যাতে সহজেই তোবারকের বিশ্বস্ততা অর্জন করা যায় এবং বাসার ভেতরে কোথায় কী আছে, তা জানা যায়। ভবনের দারোয়ান গেটের দরজা খুলে কখন ফজরের নামাজ পরতে যায়, কখন কী করে সে সব খবর রাখাও ছিল তার কাজ। এই সুযোগে ইমন প্রতিদিনকার বিষয়গুলো মোবাইল ফোনে শাহিনকে জানাতে শুরু করেন। হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে সবাই মিলে পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী রাব্বী, বাবু, হৃদয় ও শিহাব ঘটনার আগের দিন বিকেলে পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে ৬টি ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি কেনেন। সন্ধ্যার দিকে তোবারকের বাসা পর্যবেক্ষণ করেন সবাই। এরপর ইমন ও রিমনের বাড্ডা থানাধীন নর্দা এলাকার একটি মেসে গিয়ে অবস্থান নেন তারা।

আবদুল বাতেন বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা ও বাসা রেকি করার পর ২৫ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের নামাজের সময় শান্তিনিকেতনের বাসার নিচে গিয়ে অবস্থান নেয় তারা। ওই বাসার দারোয়ান গেট খুলে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে ইমন নিচে নামেন এবং ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বী, বাবু, রিমন, শিহাব ও হৃদয়কে নিয়ে চারতলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। এ সময় শাহিন ও সোহেল বাইরে অবস্থান নেন।

এদিকে, পরিকল্পনা মতো হাসান ও অন্যরা ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি নিয়ে ভিকটিমের শোবার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত তোবারক হোসেন ও সহকারী সাইফুলকে বিছানায় চেপে ধরেন। তারা ধস্তাধস্তি করলে একপর্যায়ে দুজনের হাত পা বেঁধে চোখে-মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে তারা। এ সময় বাবু নামে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিজেও ছুরিকাঘাতে আহত হয়। কিছুক্ষণ পর তোবারক নিস্তেজ হয়ে গেলে আহত সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বাসার এক কোনে ফেলে রাখা হয়। পরে তারা আলমারিতে থাকা নগদ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। নর্দার ওই মেসে গিয়ে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যে যার মতো নিজেদের গন্তব্যে চলে যান। আবদুল বাতেন বলেন, হত্যাকাণ্ডে মোট ৮জন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পশ্চিম বিভাগ। জড়িতদের মধ্যে শাহিন, শিহাব ও হৃদয় পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে লুটের টাকার পরিমাণ জানা যাবে। তাদের তিনজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

আরও খবর
সেনাবাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ করার কাজ করছে সরকার প্রধানমন্ত্রী
পূর্ণ প্যানেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নীল দল
স্বাস্থ্য খাতের সিস্টেম বদলাতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ঢাকা ওআইসির ইয়ুথ রাজধানী
স্বর্ণার মৃত্যুর কারণ গণধর্ষণ
ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে থাকার ঘোষণা ঐক্যফ্রন্টের
ব্যয়ের নামে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ
মহাসড়কে নসিমন-করিমন বন্ধের সুপারিশ
বিজ্ঞান লেখক নাদিরা মজুমদার পেলেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৬
ছায়ানটে দৃষ্টিনন্দন ধ্রুপদী নাচ
‘ক্ষুদে শিল্পী’ প্রতিযোগীদের পুরস্কার প্রদান
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হলেন ড. কায়কাউস
প্রথম পর্যায়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
ফের অনশনে রাজশাহী পাটকল শ্রমিকরা
ছাদ ধসে হতাহতের ঘটনায় মামলা হয়নি তিন দিনেও
বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডি অবরুদ্ধ

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৫ পৌষ ১৪২৬, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

তেজগাঁওয়ে ব্যবসায়ী খুন : গ্রেফতার ৫

চাকরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে ও টাকা লুট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শান্তিনিকেতনে ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন (৭০) হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-পশ্চিম)। তারা হলো- গোলাম রাব্বী, বাবুল হোসেন ওরফে বাবু, সোহেল প্রধান, ইমন হোসেন ওরফে হাসান,আলামিন খন্দকান ওরফে রিহান। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, দড়ি ও লুট করে নেয়া ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন শান্তিনিকেতন এলাকায় নিজ বাসায় খুন হন কথিত পীর ও ব্যবসায়ী তোবারক হোসেন। তিনি বলেন, বাসার মোটা অঙ্কের নগদ টাকা লুট করার উদ্দেশ্যেই ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন তোবারকের সাবেক কর্মচারী শাহিন। চাকুরিচ্যুতির প্রতিশোধ নিতে অর্থলুটের পরিকল্পনা করলেও হত্যার পরিকল্পনা ছিল না তাদের। কিন্তু ডাকাতির সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে মারা যান ব্যবসায়ী তোবারক।

আবদুল বাতেন বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মহাখালীর মামা প্লাজার কয়েকটি দোকানের মালিক শাহ মো. তোবারক হোসেন। তার দোকান ও ব্যবসার কিছু অংশ দেখভাল করতেন শাহিন ও শিহাব নামে দুই কর্মচারী। আর্থিক অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে শাহিনকে বরখাস্ত করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ করেন তোবারক। শাহিনকে বরখাস্ত করে অন্যকে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। একপর্যায়ে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে শাহিন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তোবারকের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। একপর্যায়ে সোহেল নামে এক ক্ষুদে ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে শাহীন। সাত মাস আগে তোবারকের বাসা থেকে টাকা লুটের জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। সে অনুযায়ী চাঁদপুরের চারজন ও কুমিল্লার একজনকে ভাড়া করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মোহাম্মদ আলী নামে এক কেয়ারটেকার ১০ বছর আগে তোবারকের বাসায় কাজ করতেন। তার ছেলে সাজিয়ে ইমন হোসেন নামে একজনকে কৌশলে ১৭ ডিসেম্বর তার বাসায় পাঠানো হয়। তোবারকের কাছে নিজেকে হাসান নামে পরিচয় দেন ইমন। মোহাম্মদ আলীর ছেলে হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করলে ইমনকে নিজ বাসাতেই থাকার ব্যবস্থা করে দেন তোবারক। যাতে সহজেই তোবারকের বিশ্বস্ততা অর্জন করা যায় এবং বাসার ভেতরে কোথায় কী আছে, তা জানা যায়। ভবনের দারোয়ান গেটের দরজা খুলে কখন ফজরের নামাজ পরতে যায়, কখন কী করে সে সব খবর রাখাও ছিল তার কাজ। এই সুযোগে ইমন প্রতিদিনকার বিষয়গুলো মোবাইল ফোনে শাহিনকে জানাতে শুরু করেন। হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে সবাই মিলে পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী রাব্বী, বাবু, হৃদয় ও শিহাব ঘটনার আগের দিন বিকেলে পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে ৬টি ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি কেনেন। সন্ধ্যার দিকে তোবারকের বাসা পর্যবেক্ষণ করেন সবাই। এরপর ইমন ও রিমনের বাড্ডা থানাধীন নর্দা এলাকার একটি মেসে গিয়ে অবস্থান নেন তারা।

আবদুল বাতেন বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা ও বাসা রেকি করার পর ২৫ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের নামাজের সময় শান্তিনিকেতনের বাসার নিচে গিয়ে অবস্থান নেয় তারা। ওই বাসার দারোয়ান গেট খুলে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে ইমন নিচে নামেন এবং ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বী, বাবু, রিমন, শিহাব ও হৃদয়কে নিয়ে চারতলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। এ সময় শাহিন ও সোহেল বাইরে অবস্থান নেন।

এদিকে, পরিকল্পনা মতো হাসান ও অন্যরা ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি নিয়ে ভিকটিমের শোবার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত তোবারক হোসেন ও সহকারী সাইফুলকে বিছানায় চেপে ধরেন। তারা ধস্তাধস্তি করলে একপর্যায়ে দুজনের হাত পা বেঁধে চোখে-মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে তারা। এ সময় বাবু নামে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিজেও ছুরিকাঘাতে আহত হয়। কিছুক্ষণ পর তোবারক নিস্তেজ হয়ে গেলে আহত সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বাসার এক কোনে ফেলে রাখা হয়। পরে তারা আলমারিতে থাকা নগদ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। নর্দার ওই মেসে গিয়ে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যে যার মতো নিজেদের গন্তব্যে চলে যান। আবদুল বাতেন বলেন, হত্যাকাণ্ডে মোট ৮জন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পশ্চিম বিভাগ। জড়িতদের মধ্যে শাহিন, শিহাব ও হৃদয় পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে লুটের টাকার পরিমাণ জানা যাবে। তাদের তিনজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।