খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের দ্বিতীয় দফা অনশন চলছে

পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে সড়কেই দিনরাত কাটাচ্ছেন খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা। মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। গত রোববার দুপুর ২টা থেকে ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন শ্রমিকরা।

গতকাল তৃতীয় দিনের মতো মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে খালিশপুরের বিআইডিসি সড়ক, আটরা ও রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়কে শ্রমিকরা অনশন পালন করছেন নিজ নিজ মিলের সামনের সড়কে থাকা প্যান্ডেলের নিচে অবস্থান নিয়ে।

খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পিপলস গোলচত্বর থেকে প্লাটিনাম জুটমিলের গেটের কিছুটা সামনে পর্যন্ত সড়ক বন্ধ। ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর ও দৌলতপুর এই পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকরা সড়কের ওপর তাবু টানিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড শীতে দুর্বল হয়ে পড়ায় অনেক শ্রমিকদের স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। প্যান্ডেলে শ্রমিক পরিবারে অসহায়ত্তের কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখছেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের কেউ ঘুমিয়ে পড়েছেন, কেউ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আবার কেউ হাঁটাহাঁটি করছেন।

গতকাল তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশ করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এ সময় বক্তৃতা করেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কমরেড মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি। দ্বিতীয়দফা অনশনের ৩ দিনে ২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও ২৫ জনকে প্যান্ডেল স্থানে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ২৫০ জনের প্রেসার মাপাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে।

স্টার জুটমিলের স্বাস্থ্য সহকারী আবিদ হোসেন বলেন, তার মিলের ১২ জনকে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত কাউকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। তবে ১৮০ জনকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়েছে।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, অনশনে প্লাটিনাম জুটমিলের তাঁত ও ফিনিশিং বিভাগের আবু ও শাহ আলম গত সোমবার রাতে স্ট্রোক করেছেন। তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। কনকনে শীতে সড়কে থাকায় বয়স্ক শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্লাটিনাম জুট মিলের ১৫ জন শ্রমিক ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

খালিশপুর জুটমিলের শ্রমিক আবু মোস্তফা বলেন, গনি নামে তাদের এক শ্রমিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের ফিনিশিং বিভাগের দুলাল সরদার বলেন, তাদের ১১ জন শ্রমিককে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। ৮০ জনকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়েছে। আলিম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম লিটু জানান, অনশন চলাকালে তাদের মিলের শ্রমিক কামরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ১৭ জন শ্রমিককে। প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত প্রচণ্ড শীত থাকে। এই শীতে শ্রমিকরা রাস্তার ওপর রয়েছেন। আমাদের আর কোন উপায় নেই। দাবি আদায়ে মরতে হলেও রাজি আছি।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে পাটকল শ্রমিকরা সড়কে অনশন করছেন। দিন যতই যাচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত কারণে অসুস্থের সংখ্যা ততই বাড়ছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৩০ জন শ্রমিক ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের মতো প্রতিটি মিলেই অনশনরত শ্রমিকদের অসুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তিনি।

বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৮ পৌষ ১৪২৬, ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের দ্বিতীয় দফা অনশন চলছে

শুভ্র শচীন, খুলনা

পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে সড়কেই দিনরাত কাটাচ্ছেন খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা। মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। গত রোববার দুপুর ২টা থেকে ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন শ্রমিকরা।

গতকাল তৃতীয় দিনের মতো মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে খালিশপুরের বিআইডিসি সড়ক, আটরা ও রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়কে শ্রমিকরা অনশন পালন করছেন নিজ নিজ মিলের সামনের সড়কে থাকা প্যান্ডেলের নিচে অবস্থান নিয়ে।

খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পিপলস গোলচত্বর থেকে প্লাটিনাম জুটমিলের গেটের কিছুটা সামনে পর্যন্ত সড়ক বন্ধ। ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর ও দৌলতপুর এই পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকরা সড়কের ওপর তাবু টানিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। প্রচণ্ড শীতে দুর্বল হয়ে পড়ায় অনেক শ্রমিকদের স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। প্যান্ডেলে শ্রমিক পরিবারে অসহায়ত্তের কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখছেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের কেউ ঘুমিয়ে পড়েছেন, কেউ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আবার কেউ হাঁটাহাঁটি করছেন।

গতকাল তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশ করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এ সময় বক্তৃতা করেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কমরেড মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি। দ্বিতীয়দফা অনশনের ৩ দিনে ২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও ২৫ জনকে প্যান্ডেল স্থানে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ২৫০ জনের প্রেসার মাপাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে।

স্টার জুটমিলের স্বাস্থ্য সহকারী আবিদ হোসেন বলেন, তার মিলের ১২ জনকে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। বেলা ২টা পর্যন্ত কাউকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। তবে ১৮০ জনকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়েছে।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, অনশনে প্লাটিনাম জুটমিলের তাঁত ও ফিনিশিং বিভাগের আবু ও শাহ আলম গত সোমবার রাতে স্ট্রোক করেছেন। তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। কনকনে শীতে সড়কে থাকায় বয়স্ক শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্লাটিনাম জুট মিলের ১৫ জন শ্রমিক ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

খালিশপুর জুটমিলের শ্রমিক আবু মোস্তফা বলেন, গনি নামে তাদের এক শ্রমিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের ফিনিশিং বিভাগের দুলাল সরদার বলেন, তাদের ১১ জন শ্রমিককে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। ৮০ জনকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়েছে। আলিম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম লিটু জানান, অনশন চলাকালে তাদের মিলের শ্রমিক কামরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ১৭ জন শ্রমিককে। প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত প্রচণ্ড শীত থাকে। এই শীতে শ্রমিকরা রাস্তার ওপর রয়েছেন। আমাদের আর কোন উপায় নেই। দাবি আদায়ে মরতে হলেও রাজি আছি।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে পাটকল শ্রমিকরা সড়কে অনশন করছেন। দিন যতই যাচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত কারণে অসুস্থের সংখ্যা ততই বাড়ছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৩০ জন শ্রমিক ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের মতো প্রতিটি মিলেই অনশনরত শ্রমিকদের অসুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তিনি।