ঢামেক থেকে ছাড়পত্র পেলেন ডাকসু ভিপি নুর

গ্রেফতারের জন্য তড়িঘড়ি করে ছাড়পত্র : নুরের দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরকে ছাড়পত্র দিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভিপি নুর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এছাড়া, তিনি গ্রেফতারের আশঙ্কায় রয়েছেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নুরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়। হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে আশঙ্কার কথা জানান তিনি। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে হামলার শিকার হয়ে ঢামেকে ভর্তি হয়েছিলেন। এতদিন ঢামেকে ভর্তি ছিলেন ভিপি নুর।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকে সাংবাদিকদের নুর বলেন, হাসপাতালের ট্রিটমেন্ট নিয়ে আমি সন্দিহান। কারণ, আমি পুরোপুরি সুস্থ না। হাসপাতালে ভর্তির প্রথম তিন দিনের চেয়ে শরীরের অবস্থা এখন আরও খারাপ। এখনো নানা জটিলতা আছে। তিনি বলেন, আমি হাঁটতে পারি না, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি না। কাশি দিলে পাঁজরে ব্যথা পাই। মাথা ঘোরে, চোখে ঝাপসা দেখি। আমার চিকিৎসার ব্যাপারে সন্দেহ আছে। আমাকে মেরে ফেলার জন্য আটবার হামলা করা হয়েছে। এগুলো করা হচ্ছে সরকারের ইশারায়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলার বিষয়ে নুর বলেন, আমার ডাকসুর মেয়াদ আর তিন মাস বাকি আছে। ইতোমধ্যে আমার নামে আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। আমাকে যাতে গ্রেফতার করা হয়, আমি যাতে জামিন না পাই, সেজন্য তড়িঘড়ি করে আমাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভিপি নুর সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন লাইট বন্ধ করে আমাদের মারধর করে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম। সরকারের দুঃশাসন ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কথা বলায় আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে। ছাত্রলীগের এমন হামলার পরও যদি বিচার না হয়, তাহলে অন্য দল ক্ষমতায় এলে একই ঘটনা ঘটবে। হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে গ্রেফতারের বিষয়ে নুরুল বলেন, এটি আইওয়াশ। নুর বলেন, নিজেদের জন্য কিংবা পরিবারের জন্য তার সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কোন আন্দোলন করেন না। তাদের আন্দোলন দমনপীড়নের বিরুদ্ধে।

এদিকে, ডাকসু ভিপি নুরসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়েই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ভিপি নুর তো সুস্থ না। তারপরও তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, নাজমুলের মাথা থেকে পুজ বের হচ্ছে, ওর হাত ভাঙা, মাথা ও হাতে সেলাই। তারপরও ডাক্তার তাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। মামুন বলেন, ঢাকা মেডিকেলে আমাদের ৫ জন নেতাকর্মী ভর্তি রয়েছেন। সেখানে চিকিৎসাধীন এপিএম সুহেলের অবস্থা একটু ক্রিটিক্যাল। ওর মেরুদ- ভেঙে গেছে, মাথায় ইনফেকশন একটু বেশি। এছাড়া, নুরসহ আমাদের সংগঠনের চারজন নেতাকর্মী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অন্যদিকে, চিকিৎসা নিয়ে ডাকসু ভিপি নুরের সন্দেহ প্রকাশের বিষয়টি ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, হাসপাতালে হাজার হাজার মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার (ভিপি নুর) ক্ষেত্রে ভিন্নতার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় আহত ছাত্রদের ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা যত দিন মনে করেছেন, ততদিন চিকিৎসা দিয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পরেই ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিউল হক ভিপি নুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নুরকে ছুটি দেয়া হয়েছে। গতকাল তার কাছে ছাড়পত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়। কোন সমস্যা হলে ফলোআপে আসতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ভিপি নুরের ওপর হামলা চালান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নুরের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি কলেজের কিছু ছাত্রসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।

বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৮ পৌষ ১৪২৬, ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ঢামেক থেকে ছাড়পত্র পেলেন ডাকসু ভিপি নুর

গ্রেফতারের জন্য তড়িঘড়ি করে ছাড়পত্র : নুরের দাবি

প্রতিনিধি, ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরকে ছাড়পত্র দিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভিপি নুর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এছাড়া, তিনি গ্রেফতারের আশঙ্কায় রয়েছেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নুরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়। হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে আশঙ্কার কথা জানান তিনি। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে হামলার শিকার হয়ে ঢামেকে ভর্তি হয়েছিলেন। এতদিন ঢামেকে ভর্তি ছিলেন ভিপি নুর।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকে সাংবাদিকদের নুর বলেন, হাসপাতালের ট্রিটমেন্ট নিয়ে আমি সন্দিহান। কারণ, আমি পুরোপুরি সুস্থ না। হাসপাতালে ভর্তির প্রথম তিন দিনের চেয়ে শরীরের অবস্থা এখন আরও খারাপ। এখনো নানা জটিলতা আছে। তিনি বলেন, আমি হাঁটতে পারি না, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি না। কাশি দিলে পাঁজরে ব্যথা পাই। মাথা ঘোরে, চোখে ঝাপসা দেখি। আমার চিকিৎসার ব্যাপারে সন্দেহ আছে। আমাকে মেরে ফেলার জন্য আটবার হামলা করা হয়েছে। এগুলো করা হচ্ছে সরকারের ইশারায়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলার বিষয়ে নুর বলেন, আমার ডাকসুর মেয়াদ আর তিন মাস বাকি আছে। ইতোমধ্যে আমার নামে আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। আমাকে যাতে গ্রেফতার করা হয়, আমি যাতে জামিন না পাই, সেজন্য তড়িঘড়ি করে আমাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভিপি নুর সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন লাইট বন্ধ করে আমাদের মারধর করে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম। সরকারের দুঃশাসন ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কথা বলায় আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে। ছাত্রলীগের এমন হামলার পরও যদি বিচার না হয়, তাহলে অন্য দল ক্ষমতায় এলে একই ঘটনা ঘটবে। হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে গ্রেফতারের বিষয়ে নুরুল বলেন, এটি আইওয়াশ। নুর বলেন, নিজেদের জন্য কিংবা পরিবারের জন্য তার সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কোন আন্দোলন করেন না। তাদের আন্দোলন দমনপীড়নের বিরুদ্ধে।

এদিকে, ডাকসু ভিপি নুরসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়েই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ভিপি নুর তো সুস্থ না। তারপরও তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, নাজমুলের মাথা থেকে পুজ বের হচ্ছে, ওর হাত ভাঙা, মাথা ও হাতে সেলাই। তারপরও ডাক্তার তাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। মামুন বলেন, ঢাকা মেডিকেলে আমাদের ৫ জন নেতাকর্মী ভর্তি রয়েছেন। সেখানে চিকিৎসাধীন এপিএম সুহেলের অবস্থা একটু ক্রিটিক্যাল। ওর মেরুদ- ভেঙে গেছে, মাথায় ইনফেকশন একটু বেশি। এছাড়া, নুরসহ আমাদের সংগঠনের চারজন নেতাকর্মী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অন্যদিকে, চিকিৎসা নিয়ে ডাকসু ভিপি নুরের সন্দেহ প্রকাশের বিষয়টি ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, হাসপাতালে হাজার হাজার মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার (ভিপি নুর) ক্ষেত্রে ভিন্নতার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় আহত ছাত্রদের ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা যত দিন মনে করেছেন, ততদিন চিকিৎসা দিয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পরেই ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিউল হক ভিপি নুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নুরকে ছুটি দেয়া হয়েছে। গতকাল তার কাছে ছাড়পত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়। কোন সমস্যা হলে ফলোআপে আসতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ভিপি নুরের ওপর হামলা চালান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নুরের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি কলেজের কিছু ছাত্রসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।