রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাসামগ্রী ও বিভিন্ন মালামাল প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ব্যবহার অনুপযোগী ও নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে সরকারের সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অন্যতম আসামি ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে বুধবার বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দন রংপুর জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী হারুনর রশীদ অ্যাডভোকেট জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাসামগ্রী কেনার নামে সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা সম্পর্কে সংবাদে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর দুদক বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে এ মামলা দায়ের করে।
মামলার বাদী-দুদকের প্রধান কার্যালয়, ঢাকার উপসহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, রংপুর মেডিকেল কলেজে ভারি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পূর্বানুমোদন ব্যতীত ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য অধ্যক্ষ ডা. মো. নুর ইসলাম কর্তৃক বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। তিনি যথাযথ চাহিদা ব্যতীত স্পেসিফিকেশন ছাড়াই দরপত্র আহ্বান করেন এবং পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি’-কে কার্যাদেশ প্রদান করেন। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে ২১/০৬/১৮ইং তারিখে দরপত্র মূল্যায়ন করে একই তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। ২৩/৬/২০১৮ তারিখে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ প্রাপ্তির ৫ম দিন অর্থাৎ ২৭/০৬/১৮ তারিখে কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করলেও নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিল একই তারিখে পাশ করেন ও প্রশাসনিক অনুমোদনসহ ব্যয় মঞ্জুরিপ্রাপ্তির পূর্বেই বিল স্বাক্ষরপূর্বক জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করেন। এভাবে তিনি বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকাল কোম্পানির মালিক মো. জাহের উদ্দিন সরকারকে চার কোটি আট চল্লিশ লক্ষ ঊননব্বই হাজার তিনশত টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ও দরপ্রস্তাব দাখিলকারী বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোং এর স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী যথাক্রমে মো. আবদুস সাত্তার সরকার (জাহের উদ্দিন সরকারের পিতা) ও আহসান হাবীব (জাহের উদ্দিন সরকারের ছেলে) এবং ইউনিভার্সাল ট্রেড করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. আসাদুর রহমান (জাহের উদ্দিন সরকারের বোন জামাই) পরিচয় গোপন করে পরস্পর যোগসাজশে সিন্ডিকেট করে সাজানো দরপত্র দাখিল করেন। অতঃপর কার্যাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সরকারের চার কোটি আট চল্লিশ লক্ষ ঊননব্বই হাজার তিনশত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক আইনজীবী হারুনর রশীদ জানান, আসামি ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দন প্রধান আসামি মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষ নুর ইসলামের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। ডা. চন্দন ওই মালামাল ক্রয় কমিটি, দরপত্র কমিটি, বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন, দুর্নীতির সঙ্গে তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। ফলে মামলায় তাকেও আসামি করেছে দুদক। তিনি বুধবার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন তার বিরুদ্ধে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে অভিযোগ করে জামিনের আপত্তি প্রদান করার পর বিজ্ঞ বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। উল্লেখ্য, মামলার প্রধান আসামি মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাক্ষ অধ্যাপক নুর ইসলাম কারাগারে এখনো আটক রয়েছেন। তিনিও গত ২৬ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২০ , ১৯ পৌষ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাসামগ্রী ও বিভিন্ন মালামাল প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ব্যবহার অনুপযোগী ও নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে সরকারের সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অন্যতম আসামি ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে বুধবার বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দন রংপুর জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী হারুনর রশীদ অ্যাডভোকেট জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাসামগ্রী কেনার নামে সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা সম্পর্কে সংবাদে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর দুদক বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে এ মামলা দায়ের করে।
মামলার বাদী-দুদকের প্রধান কার্যালয়, ঢাকার উপসহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, রংপুর মেডিকেল কলেজে ভারি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পূর্বানুমোদন ব্যতীত ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য অধ্যক্ষ ডা. মো. নুর ইসলাম কর্তৃক বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। তিনি যথাযথ চাহিদা ব্যতীত স্পেসিফিকেশন ছাড়াই দরপত্র আহ্বান করেন এবং পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি’-কে কার্যাদেশ প্রদান করেন। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে ২১/০৬/১৮ইং তারিখে দরপত্র মূল্যায়ন করে একই তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। ২৩/৬/২০১৮ তারিখে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ প্রাপ্তির ৫ম দিন অর্থাৎ ২৭/০৬/১৮ তারিখে কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করলেও নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিল একই তারিখে পাশ করেন ও প্রশাসনিক অনুমোদনসহ ব্যয় মঞ্জুরিপ্রাপ্তির পূর্বেই বিল স্বাক্ষরপূর্বক জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করেন। এভাবে তিনি বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকাল কোম্পানির মালিক মো. জাহের উদ্দিন সরকারকে চার কোটি আট চল্লিশ লক্ষ ঊননব্বই হাজার তিনশত টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ও দরপ্রস্তাব দাখিলকারী বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোং এর স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী যথাক্রমে মো. আবদুস সাত্তার সরকার (জাহের উদ্দিন সরকারের পিতা) ও আহসান হাবীব (জাহের উদ্দিন সরকারের ছেলে) এবং ইউনিভার্সাল ট্রেড করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. আসাদুর রহমান (জাহের উদ্দিন সরকারের বোন জামাই) পরিচয় গোপন করে পরস্পর যোগসাজশে সিন্ডিকেট করে সাজানো দরপত্র দাখিল করেন। অতঃপর কার্যাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সরকারের চার কোটি আট চল্লিশ লক্ষ ঊননব্বই হাজার তিনশত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক আইনজীবী হারুনর রশীদ জানান, আসামি ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দন প্রধান আসামি মেডিকেল কলেজের অধ্যাক্ষ নুর ইসলামের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। ডা. চন্দন ওই মালামাল ক্রয় কমিটি, দরপত্র কমিটি, বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন, দুর্নীতির সঙ্গে তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। ফলে মামলায় তাকেও আসামি করেছে দুদক। তিনি বুধবার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন তার বিরুদ্ধে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে অভিযোগ করে জামিনের আপত্তি প্রদান করার পর বিজ্ঞ বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। উল্লেখ্য, মামলার প্রধান আসামি মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাক্ষ অধ্যাপক নুর ইসলাম কারাগারে এখনো আটক রয়েছেন। তিনিও গত ২৬ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।