ইটভাটায় বিবর্ণ বাংলাদেশ

ভাটা মালিকদের প্রলোভনে ফসলি জমি হচ্ছে পুকুর!

নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় কৃষকের ধানী জমিতে ফসল চাষের বদলে বড় পুকুরের মালিক বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে এবং ইজারা প্রক্রিয়া চালু করে আবাদি জমিতে স্কেবেটার মেশিনে আট ফিট গভীর করে জমির চারদিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খনন করে অবাদে মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় ইটভাটায়। রানীনগর, আত্রাই এবং বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারের বিভিন্ন ইট ভাটাতে মাটি সরবারহ করছে তারা । কৃষকরা না বুঝে একদিকে হারাচ্ছে তাদের পৈত্রিক ফসলি জমি। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর থেকে এসে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এখানে পুকুর কেটে ইট ভাটার মালিকদের সঙ্গে মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় কিছু জমির মালিকরাও ধান চাষ বাদ দিয়ে পুকুর খনন করে মাষ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে এই এলাকার কৃষি জমি! ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভুক্ত জমিও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারাবছর কোন না কোন ধরনের ফসল হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের যথাযথমূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় এক শ্রেণির কৃষকরা পুকুর ব্যবসায়ী ও ইট ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে প্রতি বিঘা জমি বছরে ১২ হাজার টাকা দরে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদী লিজ প্রক্রিয়া চুক্তিনামা করে চাষযোগ্য ফসলি জমিতে বড় পুকুর করছে আর সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) সাতশত টাকায় ইট ভাটায় বিক্রয় করছে মাটি ব্যবসায়ীরা। জমিগুলো দেখে মনে হচ্ছে এ যেন উন্মুক্ত জলাশয়। ভূমি আইনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে আবাদি কৃষি জমিতে অবাদে পুকুর খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি অন্যদিকে পাসের জমির মালিকরা পুকুর পাড়ের প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বোরো ধান রোপণে অনেক কৃষকরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই কেউ চলে যাচ্ছে পুকুর দস্যুদের কাছে আবার কেউ জমি চাষ না করে ফেলে রাখছে। এতে করে পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমেই প্রায় ছয়শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে মিরাট ইউপি’র আয়াপুর ও আতাইকুলা মৌজার এক নাম্বার ও দুই নাম্বার স্লুইচ গেট নামকস্থানে পুকুর খননের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধুমাত্র মিরাট ইউনিয়নই প্রায় ৫০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।

কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, কৃষি জমিতে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা মৌজার বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুন জানান, বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছি, এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২০ পৌষ ১৪২৬, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ইটভাটায় বিবর্ণ বাংলাদেশ

ভাটা মালিকদের প্রলোভনে ফসলি জমি হচ্ছে পুকুর!

প্রতিনিধি, রানীনগর (নওগাঁ)

image

রানীনগর (নওগাঁ) : এভাবেই এসকেভেটরে ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি নেয়া হচ্ছে ইটভাটায় -সংবাদ

নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় কৃষকের ধানী জমিতে ফসল চাষের বদলে বড় পুকুরের মালিক বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে এবং ইজারা প্রক্রিয়া চালু করে আবাদি জমিতে স্কেবেটার মেশিনে আট ফিট গভীর করে জমির চারদিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খনন করে অবাদে মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় ইটভাটায়। রানীনগর, আত্রাই এবং বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারের বিভিন্ন ইট ভাটাতে মাটি সরবারহ করছে তারা । কৃষকরা না বুঝে একদিকে হারাচ্ছে তাদের পৈত্রিক ফসলি জমি। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর থেকে এসে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এখানে পুকুর কেটে ইট ভাটার মালিকদের সঙ্গে মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় কিছু জমির মালিকরাও ধান চাষ বাদ দিয়ে পুকুর খনন করে মাষ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে এই এলাকার কৃষি জমি! ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভুক্ত জমিও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারাবছর কোন না কোন ধরনের ফসল হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের যথাযথমূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় এক শ্রেণির কৃষকরা পুকুর ব্যবসায়ী ও ইট ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে প্রতি বিঘা জমি বছরে ১২ হাজার টাকা দরে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদী লিজ প্রক্রিয়া চুক্তিনামা করে চাষযোগ্য ফসলি জমিতে বড় পুকুর করছে আর সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) সাতশত টাকায় ইট ভাটায় বিক্রয় করছে মাটি ব্যবসায়ীরা। জমিগুলো দেখে মনে হচ্ছে এ যেন উন্মুক্ত জলাশয়। ভূমি আইনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে আবাদি কৃষি জমিতে অবাদে পুকুর খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি অন্যদিকে পাসের জমির মালিকরা পুকুর পাড়ের প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বোরো ধান রোপণে অনেক কৃষকরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই কেউ চলে যাচ্ছে পুকুর দস্যুদের কাছে আবার কেউ জমি চাষ না করে ফেলে রাখছে। এতে করে পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমেই প্রায় ছয়শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে মিরাট ইউপি’র আয়াপুর ও আতাইকুলা মৌজার এক নাম্বার ও দুই নাম্বার স্লুইচ গেট নামকস্থানে পুকুর খননের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধুমাত্র মিরাট ইউনিয়নই প্রায় ৫০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।

কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, কৃষি জমিতে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা মৌজার বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুন জানান, বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছি, এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।