গাঢ় অন্ধকার দিয়ে বছর শুরু দিশাহীনভাবে হাতড়ে বেড়াচ্ছে সরকার

সুপর্ণ পাঠক

অন্ধকার আমরা মাপতে পারি না। তাই দায় চাপাই বিশেষণের ঘাড়ে। কেউ যখন বলে ঘন অন্ধকার, তখন অন্যে তা মিলিয়ে নেয় তার নিজের অন্ধকার নিয়ে ভাবনার নিরিখে। তাই বিশেষণের মাপকাঠিতে বোঝা আর তা নিজে প্রত্যক্ষ করার মধ্যে প্রভেদ থেকেই যায়। আর তা হয় কারণ, কোন দু’জন মানুষের ইন্দ্রিয়ের শক্তি এক হয় না।

অর্থনীতির মারপ্যাঁচটাও আমাদের বোঝার জায়গায় গিয়ে শেষমেশ ওই অন্ধকার বোঝার মতোই হয়ে দাঁড়ায়। অন্ধকার কতটা তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা ওই বর্ণনাতেই আটকে থাকে, যতক্ষণ না আমরা সেই ঘোর অন্ধকারে পা হড়কাই। ওই আঘাতই শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে সূচক হয়ে দাঁড়ায় তমসার। ‘যা অন্ধকার! দেখিস হোঁচট খাস না’- হয়ে দাঁড়ায় অন্ধকারের কার্যকরী ব্যাখ্যা।

অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। ধরা যাক- নোটবন্দীর কথাই। হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী কালোবাজারি আর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দাবিতে হাজার আর পাঁচশ টাকাকে অচল ঘোষণা করে দিলেন। আমরা কিন্তু তখন বুঝিনি এর কুফল। শুধু লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তোলার ভোগান্তিটাই মাথায় থেকে গিয়েছে।

আজ তো নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছি- কালোবাজারি রোখার লক্ষ্যে যে নোটবন্দীকে এক পদক্ষেপ বলে দাবি করা হয়েছিল- তা আসলে ছিল পদস্খলন।

এর কুফলটা বুঝছি কখন? আজ যখন সেই ডাণ্ডায় চাকরির বাজার খোঁড়া তখন আমাদের টনক নড়েছে- ‘তাই তো!’ এটাও ঠিক যে নোটবন্দী আজকের দুরবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী নয়। কিন্তু আমাদের আলোচনার জন্য অন্যতম উদাহরণ। আমাদের বাজারে পিয়াজের দাম যখন একশ’ টাকা ছাড়িয়ে আরও উপরে দৌড়োয়, তখন কিন্তু চাষির ঘরে ঢুকছে কেজিপ্রতি আট টাকাই। তা হলে, চাষির ঘরে ঢোকা দাম আর খুচরো বাজারের দামের মধ্যে এই ফারাকের ব্যাখ্যা তো রয়েছে কালোবাজারিতেই! নোটবন্দীতে ছোট ব্যবসা মার খেয়েছে। তা নিয়ে লেখালেখিও হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে আকচাআকচি কম চলেনি। কিন্তু আজ তো নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছি যে, কালোবাজারি রোখার লক্ষ্যে যাকে এক পদক্ষেপ বলে দাবি করা হয়েছিল, তা আসলে ছিল পদস্খলন। এই আঁধারের বোধ তো রান্নাঘরের সঙ্কট হয়ে আমাদের ঘাড় ধরে বুঝিয়ে ছাড়ছে!

অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র আরও ঝিমিয়ে যাচ্ছে। সরকার যেখান থেকে পারছে টাকা বার করে নাকি বাজারকে চাগাড় দেয়ার চেষ্টা করে চলেছে। এখন তো সেবি’র কোষাগারেও হাত দেয়ার চেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাজার সাড়া দিচ্ছে না।

বছরের প্রথম দিন ভালো থাকলে, গোটা বছর নাকি ভালো যায়। আঁধার দিয়ে আলোচনার শুরু করেছি বছরের প্রথমে এবং দুঃখের কথা- ২০২০ সালের প্রথম দিনটিতে আশঙ্কা ছাড়া আশার আলো খুঁজতে পদার্থবিদের সাহায্য নেয়া ছাড়া তো গতি দেখছি না। কারণ আজ যা অবস্থা, তাতে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের সব আশঙ্কা ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়াটা তো রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে!

কিন্তু বছরটাই শুরু হল আরও অন্ধকার দিয়ে। গত বছরের শেষ মাসে আমরা জেনেছিলাম বাজারে সাধারণ চাহিদা কমেছে। এমনকি দৈনন্দিন বাজারের খরচও মানুষ কমানোর চেষ্টা করছে। আর আজ দেখছি অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র আরও ঝিমিয়ে যাচ্ছে। সরকার যেখান থেকে পারছে টাকা বার করে নাকি বাজারকে চাগাড় দেয়ার চেষ্টা করে চলেছে। এখন তো সেবি’র কোষাগারেও হাত দেয়ার চেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাজার সাড়া দিচ্ছে না। বাজার কোন নির্দিষ্ট দিশা খুঁজছে না তো! এ কি তবে সেই দিশার অভাবে ঘন হতে থাকা অন্ধকার!

যারা অবসরের পরে ব্যাংকে রাখা সঞ্চয়ের সুদে খান, আয় কমে যাওয়ায় তারা আতঙ্কিত। ... যারা মাইনে পান, তারাও চারিদিকে অনিশ্চয়তাই দেখছেন।

একই সঙ্গে বছরের প্রথম দিনের খবরের শিরোনাম জানাচ্ছে- একদিকে যখন পরিকাঠামো খাতে ১০২ লাখ কোটি টাকার খরচের কথা বলছে, তখনই দেখা যাচ্ছে রাজকোষ ঘাটতি (ফিসকাল ডেফিসিট) ইতিমধ্যেই গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এরই পাশাপাশি যখন দেখি কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য করের টাকা মেটাতে পারছে না, তখন কেন্দ্রের পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে সংশয়ের মেঘ জমলে কি খুব দোষের?

বাজারকে চাগাড় দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় সুদ কমিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টায় একই সঙ্গে বাজারের সাধারণ চাহিদাও মার খেয়ে গিয়েছে। যারা অবসরের পরে ব্যাঙ্কে রাখা সঞ্চয়ের সুদে খান, আয় কমে যাওয়ায় তারা আতঙ্কিত। আমাদের নড়বড়ে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় তারাও অনিশ্চয়তার শিকার হয়ে খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা মাইনে পান, তারাও চারিদিকে অনিশ্চয়তাই দেখছেন। আগামীতে চাকরি গেলে কী হবে, সেই দুশ্চিন্তায় আগে যেভাবে খরচ করতেন, রাশ টেনেছেন সেই খরচের প্রবণতায়।

বিনিয়োগকারীরা নীতি অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। আমরা কেউই করি না। কারণ নিকট ভবিষ্যতে বাজার নিয়ে সরকারের নীতি যদি আগাম আন্দাজ করা না যায়, তা হলে খরচ কীভাবে করব তার পরিকল্পনা করা যায় না।

অর্থাৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতা- সবাই এখন এক অনিশ্চয়তার শিকার। নোটবন্দী থেকে শুরু করে ৩৭০- সরকারের পদক্ষেপে বাজারের সবাই কিন্তু নীতি অনিশ্চয়তাই দেখছে।

যেমন সবাই মনে করছিল সুদের হার আবার কমবে। যে যে কারণে সুদের হার কমানো হচ্ছিল সবই বাজারে বিদ্যমান। এত দিন অবসরপ্রাপ্তদের কথা না ভেবে বা তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না করেই সুদের হার কমানো হচ্ছিল। হঠাৎই যেন তাদের দুর্দশার কথা ভেবে সুদের হার আপাতত ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। তাদের দুর্দশার কথা নিশ্চয়ই ভাবতে হবে। কিন্তু এত দিন সেই চাহিদা উপেক্ষা করেই নীতি তার পথে হাঁটছিল। হঠাৎ কী হলো যাতে এই হতভাগ্যরা হঠাৎ ভাগ্যবান হয়ে গেলেন! এখানেও সেই সমস্যা। পাল্টে গেল চিন্তাটা! আমরা নীতি-গ্রাহকরা, মানে আপনি আর আমি কিন্তু চমকেই চলেছি।

চমকানোর কারণ হলো বিনিয়োগকারীরা নীতি অনিশ্চয়তা পছন্দ করে না। আমরা কেউই করি না। কারণ নিকট ভবিষ্যতে বাজার নিয়ে সরকারের নীতি যদি আগাম আন্দাজ করা না যায়, তাহলে খরচ কীভাবে করব তার পরিকল্পনা করা যায় না। মানুষ- সে বিনিয়োগকারীই হোক বা ক্রেতা, ঝুঁকি এড়ানোর সহজ রাস্তায় হাঁটে। ঠিক যেভাবে বেড়াতে যাওয়ার আগে গন্তব্যে ঝামেলার কথা শুনলে বেড়ানো বাতিল করি আমরা। তার মধ্যে নীতির ঝুঁকি সাংঘাতিক।

সবার মনকেই একটা আজানা বিপদের আশঙ্কা তাড়িয়ে ফিরছে। নীতি আঁধার ক্রমাগত ঘন থেকে আরও ঘন হচ্ছে। এই আরও ঠিক ততটাই, যাতে ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ করতে হয়।

আর অন্ধকারের মূল সূত্রটা এখানেই। নোটবন্দীর পর থেকে যেভাবে নীতি আরোপ করা হচ্ছে বলে ধারণা গেঁড়ে বসছে, তাতে সবার মনকেই একটা আজানা বিপদের আশঙ্কা তাড়িয়ে ফিরছে। নীতি আঁধার ক্রমাগত ঘন থেকে আরও ঘন হচ্ছে। এই আরও ঠিক ততটাই, যাতে ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ করতে হয়। আর এই মুহূর্তে এটাই কিন্তু এ বাজারের বড় চাপ।

আর বছরের প্রথমটাই যেভাবে শুরু হলো, আর্থিক সমস্যা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দিয়ে- তাতে এই চাপ কমলো কি?

০২-০১-২০২০

সূত্র : আনন্দবাজার অনলাইন।

শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২০ পৌষ ১৪২৬, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

গাঢ় অন্ধকার দিয়ে বছর শুরু দিশাহীনভাবে হাতড়ে বেড়াচ্ছে সরকার

সুপর্ণ পাঠক

image

অন্ধকার আমরা মাপতে পারি না। তাই দায় চাপাই বিশেষণের ঘাড়ে। কেউ যখন বলে ঘন অন্ধকার, তখন অন্যে তা মিলিয়ে নেয় তার নিজের অন্ধকার নিয়ে ভাবনার নিরিখে। তাই বিশেষণের মাপকাঠিতে বোঝা আর তা নিজে প্রত্যক্ষ করার মধ্যে প্রভেদ থেকেই যায়। আর তা হয় কারণ, কোন দু’জন মানুষের ইন্দ্রিয়ের শক্তি এক হয় না।

অর্থনীতির মারপ্যাঁচটাও আমাদের বোঝার জায়গায় গিয়ে শেষমেশ ওই অন্ধকার বোঝার মতোই হয়ে দাঁড়ায়। অন্ধকার কতটা তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা ওই বর্ণনাতেই আটকে থাকে, যতক্ষণ না আমরা সেই ঘোর অন্ধকারে পা হড়কাই। ওই আঘাতই শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে সূচক হয়ে দাঁড়ায় তমসার। ‘যা অন্ধকার! দেখিস হোঁচট খাস না’- হয়ে দাঁড়ায় অন্ধকারের কার্যকরী ব্যাখ্যা।

অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। ধরা যাক- নোটবন্দীর কথাই। হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী কালোবাজারি আর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দাবিতে হাজার আর পাঁচশ টাকাকে অচল ঘোষণা করে দিলেন। আমরা কিন্তু তখন বুঝিনি এর কুফল। শুধু লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তোলার ভোগান্তিটাই মাথায় থেকে গিয়েছে।

আজ তো নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছি- কালোবাজারি রোখার লক্ষ্যে যে নোটবন্দীকে এক পদক্ষেপ বলে দাবি করা হয়েছিল- তা আসলে ছিল পদস্খলন।

এর কুফলটা বুঝছি কখন? আজ যখন সেই ডাণ্ডায় চাকরির বাজার খোঁড়া তখন আমাদের টনক নড়েছে- ‘তাই তো!’ এটাও ঠিক যে নোটবন্দী আজকের দুরবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী নয়। কিন্তু আমাদের আলোচনার জন্য অন্যতম উদাহরণ। আমাদের বাজারে পিয়াজের দাম যখন একশ’ টাকা ছাড়িয়ে আরও উপরে দৌড়োয়, তখন কিন্তু চাষির ঘরে ঢুকছে কেজিপ্রতি আট টাকাই। তা হলে, চাষির ঘরে ঢোকা দাম আর খুচরো বাজারের দামের মধ্যে এই ফারাকের ব্যাখ্যা তো রয়েছে কালোবাজারিতেই! নোটবন্দীতে ছোট ব্যবসা মার খেয়েছে। তা নিয়ে লেখালেখিও হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে আকচাআকচি কম চলেনি। কিন্তু আজ তো নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছি যে, কালোবাজারি রোখার লক্ষ্যে যাকে এক পদক্ষেপ বলে দাবি করা হয়েছিল, তা আসলে ছিল পদস্খলন। এই আঁধারের বোধ তো রান্নাঘরের সঙ্কট হয়ে আমাদের ঘাড় ধরে বুঝিয়ে ছাড়ছে!

অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র আরও ঝিমিয়ে যাচ্ছে। সরকার যেখান থেকে পারছে টাকা বার করে নাকি বাজারকে চাগাড় দেয়ার চেষ্টা করে চলেছে। এখন তো সেবি’র কোষাগারেও হাত দেয়ার চেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাজার সাড়া দিচ্ছে না।

বছরের প্রথম দিন ভালো থাকলে, গোটা বছর নাকি ভালো যায়। আঁধার দিয়ে আলোচনার শুরু করেছি বছরের প্রথমে এবং দুঃখের কথা- ২০২০ সালের প্রথম দিনটিতে আশঙ্কা ছাড়া আশার আলো খুঁজতে পদার্থবিদের সাহায্য নেয়া ছাড়া তো গতি দেখছি না। কারণ আজ যা অবস্থা, তাতে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের সব আশঙ্কা ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়াটা তো রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে!

কিন্তু বছরটাই শুরু হল আরও অন্ধকার দিয়ে। গত বছরের শেষ মাসে আমরা জেনেছিলাম বাজারে সাধারণ চাহিদা কমেছে। এমনকি দৈনন্দিন বাজারের খরচও মানুষ কমানোর চেষ্টা করছে। আর আজ দেখছি অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র আরও ঝিমিয়ে যাচ্ছে। সরকার যেখান থেকে পারছে টাকা বার করে নাকি বাজারকে চাগাড় দেয়ার চেষ্টা করে চলেছে। এখন তো সেবি’র কোষাগারেও হাত দেয়ার চেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাজার সাড়া দিচ্ছে না। বাজার কোন নির্দিষ্ট দিশা খুঁজছে না তো! এ কি তবে সেই দিশার অভাবে ঘন হতে থাকা অন্ধকার!

যারা অবসরের পরে ব্যাংকে রাখা সঞ্চয়ের সুদে খান, আয় কমে যাওয়ায় তারা আতঙ্কিত। ... যারা মাইনে পান, তারাও চারিদিকে অনিশ্চয়তাই দেখছেন।

একই সঙ্গে বছরের প্রথম দিনের খবরের শিরোনাম জানাচ্ছে- একদিকে যখন পরিকাঠামো খাতে ১০২ লাখ কোটি টাকার খরচের কথা বলছে, তখনই দেখা যাচ্ছে রাজকোষ ঘাটতি (ফিসকাল ডেফিসিট) ইতিমধ্যেই গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এরই পাশাপাশি যখন দেখি কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য করের টাকা মেটাতে পারছে না, তখন কেন্দ্রের পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে সংশয়ের মেঘ জমলে কি খুব দোষের?

বাজারকে চাগাড় দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় সুদ কমিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টায় একই সঙ্গে বাজারের সাধারণ চাহিদাও মার খেয়ে গিয়েছে। যারা অবসরের পরে ব্যাঙ্কে রাখা সঞ্চয়ের সুদে খান, আয় কমে যাওয়ায় তারা আতঙ্কিত। আমাদের নড়বড়ে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় তারাও অনিশ্চয়তার শিকার হয়ে খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা মাইনে পান, তারাও চারিদিকে অনিশ্চয়তাই দেখছেন। আগামীতে চাকরি গেলে কী হবে, সেই দুশ্চিন্তায় আগে যেভাবে খরচ করতেন, রাশ টেনেছেন সেই খরচের প্রবণতায়।

বিনিয়োগকারীরা নীতি অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। আমরা কেউই করি না। কারণ নিকট ভবিষ্যতে বাজার নিয়ে সরকারের নীতি যদি আগাম আন্দাজ করা না যায়, তা হলে খরচ কীভাবে করব তার পরিকল্পনা করা যায় না।

অর্থাৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতা- সবাই এখন এক অনিশ্চয়তার শিকার। নোটবন্দী থেকে শুরু করে ৩৭০- সরকারের পদক্ষেপে বাজারের সবাই কিন্তু নীতি অনিশ্চয়তাই দেখছে।

যেমন সবাই মনে করছিল সুদের হার আবার কমবে। যে যে কারণে সুদের হার কমানো হচ্ছিল সবই বাজারে বিদ্যমান। এত দিন অবসরপ্রাপ্তদের কথা না ভেবে বা তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না করেই সুদের হার কমানো হচ্ছিল। হঠাৎই যেন তাদের দুর্দশার কথা ভেবে সুদের হার আপাতত ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। তাদের দুর্দশার কথা নিশ্চয়ই ভাবতে হবে। কিন্তু এত দিন সেই চাহিদা উপেক্ষা করেই নীতি তার পথে হাঁটছিল। হঠাৎ কী হলো যাতে এই হতভাগ্যরা হঠাৎ ভাগ্যবান হয়ে গেলেন! এখানেও সেই সমস্যা। পাল্টে গেল চিন্তাটা! আমরা নীতি-গ্রাহকরা, মানে আপনি আর আমি কিন্তু চমকেই চলেছি।

চমকানোর কারণ হলো বিনিয়োগকারীরা নীতি অনিশ্চয়তা পছন্দ করে না। আমরা কেউই করি না। কারণ নিকট ভবিষ্যতে বাজার নিয়ে সরকারের নীতি যদি আগাম আন্দাজ করা না যায়, তাহলে খরচ কীভাবে করব তার পরিকল্পনা করা যায় না। মানুষ- সে বিনিয়োগকারীই হোক বা ক্রেতা, ঝুঁকি এড়ানোর সহজ রাস্তায় হাঁটে। ঠিক যেভাবে বেড়াতে যাওয়ার আগে গন্তব্যে ঝামেলার কথা শুনলে বেড়ানো বাতিল করি আমরা। তার মধ্যে নীতির ঝুঁকি সাংঘাতিক।

সবার মনকেই একটা আজানা বিপদের আশঙ্কা তাড়িয়ে ফিরছে। নীতি আঁধার ক্রমাগত ঘন থেকে আরও ঘন হচ্ছে। এই আরও ঠিক ততটাই, যাতে ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ করতে হয়।

আর অন্ধকারের মূল সূত্রটা এখানেই। নোটবন্দীর পর থেকে যেভাবে নীতি আরোপ করা হচ্ছে বলে ধারণা গেঁড়ে বসছে, তাতে সবার মনকেই একটা আজানা বিপদের আশঙ্কা তাড়িয়ে ফিরছে। নীতি আঁধার ক্রমাগত ঘন থেকে আরও ঘন হচ্ছে। এই আরও ঠিক ততটাই, যাতে ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ করতে হয়। আর এই মুহূর্তে এটাই কিন্তু এ বাজারের বড় চাপ।

আর বছরের প্রথমটাই যেভাবে শুরু হলো, আর্থিক সমস্যা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দিয়ে- তাতে এই চাপ কমলো কি?

০২-০১-২০২০

সূত্র : আনন্দবাজার অনলাইন।