লিবিয়ায় সৈন্য পাঠাতে সম্মতি দিল তুর্কি পার্লামেন্ট

লিবিয়ায় আঙ্কারা সমর্থিত সরকার ফয়েজ আল-সিরাজের গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডের (জিএনএ) হয়ে লড়তে তুর্কি সৈন্য পাঠানোর একটি বিলে সম্মতি দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। গত বৃহস্পতিবার বিলটি ৩১৫-১৮৪ ভোটে গৃহীত হয়। রয়টার্স।

রাশিয়া, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান সমর্থিত খলিফা হাফতারের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নাকাল জিএনএ গত মাসে তুরস্ককে সেনা পাঠাতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়। ফয়েজ আল সিরাজের সরকারের প্রতি তুরস্কের পাশাপাশি তিউনিসিয়ারও সমর্থন রয়েছে। ত্রিপোলির আশপাশে জিএনএ ও হাফতারের বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত আছে। গত বৃহস্পতিবার ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থলে হাজারখানের শরণার্থীর একটি অস্থায়ী শিবিরের কাছে তিনটি মর্টার পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গত সপ্তাহে জানান, পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে আঙ্কারা জানুয়ারিতেই লিবিয়ায় সৈন্য ও সরঞ্জাম পাঠাবে। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, পার্লামেন্ট সম্মতি দেয়ায় তুরস্ক এখন ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ফয়েজ আল-সিরাজের গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডের (জিএনএ) সমর্থনে সেনা পাঠাতে পারবে। গত বছরের নভেম্বরে লিবিয়ার জিএনএ সরকারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা ও ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রসীমা নিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে আঙ্কারা। সমুদ্রসীমার ওই চুক্তি গ্রিস, ইসরায়েল, মিসর ও সাইপ্রাসকে ক্ষুব্ধ করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ত্রিপোলিতে সেনা পাঠানো ইস্যূতে বৃহস্পতিবার তুর্কি পার্লামেন্টে বেশিরভাগ বিরোধী এমপিই বিলটির বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, লিবিয়ায় সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা ও সেনাদের প্রাণকে বিপন্ন করবে। এদিকে এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলছেন, উত্তর আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের স্বার্থ রক্ষায় এবং লিবিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে সেখানে জিএনএ সরকারের সমর্থনে সেনা পাঠানো খুবই প্রয়োজনীয়। জিএনএর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতি বাশাঘা বলেছেন, হাফতারের বাহিনীর ‘বিপজ্জনক অগ্রযাত্রা’ রুখতেই তারা তুরস্ককে সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেছেন। অপরদিকে তুর্কি পার্লামেন্টে লিবিয়ায় সেনা পাঠানোর বিল অনুমোদিত হওয়ার পরপরই মিসর এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।

আঙ্কারার আগ্রাসী পদক্ষেপ থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছে তারা। তবে রাশিয়ার এমপি দিমিত্রি নভিকভ বলছেন, লিবিয়ায় তুরস্কের সৈন্য উপস্থিতি সেখানকার পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে লিবিয়া নিয়ে এ মাসের শেষদিকে এরদোয়ানের আলোচনা হওয়ারও কথা রয়েছে। আঙ্কারা সেনা পাঠানোর প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও এখনি ত্রিপোলিতে তুর্কি সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা কম দেখছেন অনেক পর্যবেক্ষকই। এর বদলে সিরিয়ার ইদলিবে থাকা তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহীদেরই ত্রিপোলিতে পাঠানো হতে পারে বলেই ধারণা তাদের। বিদ্রোহীদের একটি অংশ এরই মধ্যে লিবিয়ায় পৌঁছেছে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।

শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২০ , ২১ পৌষ ১৪২৬, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

লিবিয়ায় সৈন্য পাঠাতে সম্মতি দিল তুর্কি পার্লামেন্ট

সংবাদ ডেস্ক |

লিবিয়ায় আঙ্কারা সমর্থিত সরকার ফয়েজ আল-সিরাজের গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডের (জিএনএ) হয়ে লড়তে তুর্কি সৈন্য পাঠানোর একটি বিলে সম্মতি দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। গত বৃহস্পতিবার বিলটি ৩১৫-১৮৪ ভোটে গৃহীত হয়। রয়টার্স।

রাশিয়া, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান সমর্থিত খলিফা হাফতারের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নাকাল জিএনএ গত মাসে তুরস্ককে সেনা পাঠাতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়। ফয়েজ আল সিরাজের সরকারের প্রতি তুরস্কের পাশাপাশি তিউনিসিয়ারও সমর্থন রয়েছে। ত্রিপোলির আশপাশে জিএনএ ও হাফতারের বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত আছে। গত বৃহস্পতিবার ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থলে হাজারখানের শরণার্থীর একটি অস্থায়ী শিবিরের কাছে তিনটি মর্টার পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গত সপ্তাহে জানান, পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে আঙ্কারা জানুয়ারিতেই লিবিয়ায় সৈন্য ও সরঞ্জাম পাঠাবে। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, পার্লামেন্ট সম্মতি দেয়ায় তুরস্ক এখন ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ফয়েজ আল-সিরাজের গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডের (জিএনএ) সমর্থনে সেনা পাঠাতে পারবে। গত বছরের নভেম্বরে লিবিয়ার জিএনএ সরকারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা ও ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রসীমা নিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে আঙ্কারা। সমুদ্রসীমার ওই চুক্তি গ্রিস, ইসরায়েল, মিসর ও সাইপ্রাসকে ক্ষুব্ধ করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ত্রিপোলিতে সেনা পাঠানো ইস্যূতে বৃহস্পতিবার তুর্কি পার্লামেন্টে বেশিরভাগ বিরোধী এমপিই বিলটির বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, লিবিয়ায় সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা ও সেনাদের প্রাণকে বিপন্ন করবে। এদিকে এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলছেন, উত্তর আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের স্বার্থ রক্ষায় এবং লিবিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে সেখানে জিএনএ সরকারের সমর্থনে সেনা পাঠানো খুবই প্রয়োজনীয়। জিএনএর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতি বাশাঘা বলেছেন, হাফতারের বাহিনীর ‘বিপজ্জনক অগ্রযাত্রা’ রুখতেই তারা তুরস্ককে সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেছেন। অপরদিকে তুর্কি পার্লামেন্টে লিবিয়ায় সেনা পাঠানোর বিল অনুমোদিত হওয়ার পরপরই মিসর এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।

আঙ্কারার আগ্রাসী পদক্ষেপ থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছে তারা। তবে রাশিয়ার এমপি দিমিত্রি নভিকভ বলছেন, লিবিয়ায় তুরস্কের সৈন্য উপস্থিতি সেখানকার পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে লিবিয়া নিয়ে এ মাসের শেষদিকে এরদোয়ানের আলোচনা হওয়ারও কথা রয়েছে। আঙ্কারা সেনা পাঠানোর প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও এখনি ত্রিপোলিতে তুর্কি সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা কম দেখছেন অনেক পর্যবেক্ষকই। এর বদলে সিরিয়ার ইদলিবে থাকা তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহীদেরই ত্রিপোলিতে পাঠানো হতে পারে বলেই ধারণা তাদের। বিদ্রোহীদের একটি অংশ এরই মধ্যে লিবিয়ায় পৌঁছেছে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।