আলোচিত ঘটনায় গ্যাস বিস্ফোরণ প্রধান দুই নদীর হালচাল

কক্সবাজার সৈকতে ৯ পর্যটকের প্রাণহানি

দেখতে দেখতে কেটে যাচ্ছে আরও একটি বছর। নতুন বছরে আগমনে বিগত বছরের ঘটে যাওয়া নানান ঘটনাই ঘটনার ঘনঘটায় গত হয়ে যায়। বিশেষ করে নতুন স্বপ্নকে ধারণ করেই প্রতিটি নতুন বছরকে মানুষ স্বাগত জানায়। বিদায়ী বছরের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসেব ভূমিতেই রচিত হয় নতুন স্বপ্ন-আশা। বছর শেষে চলতি বছরের চট্টগ্রামের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাদের যেমন আনন্দ দিয়েছে তেমনি ব্যথিত করেছে। একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে, নতুন প্রেরণা নিয়ে। সেই প্রেরণা নিয়েই শুরু হয়েছিল ২০১৯। প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ হয়নি সত্য, তবুও নব-উদ্যমে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বরণ করা হবে নতুন বছর।

এর আগে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০১৯ সালের প্রথম দিনটি বরণ করা হয়েছিল। সবকিছু ছাপিয়ে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

বিশেষ করে বিদায়ী বছরের শেষ সময়ে চট্টগ্রামের পাথরঘাটা গ্যাস লাইন বিস্ফোরণ নগরবাসীকে ব্যথিত করেছে। চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার ব্রিক ফিল্ড রোডের একটি বাড়ির নিচতলায় গত ১৭ নভেম্বর গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা যান সাতজন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের ময়ুরপঙ্খী নামের একটি বোয়িং বিমান ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাইকালে সেনা অভিযানের পরপরই কথিত ছিনতাইকারী ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। কমান্ডোদের আত্মসমর্পণের অনুরোধে সাড়া না দেয়ায় এনকাউন্টারে প্রথমে আহত এবং ওই ব্যক্তি মারা যান। বিমানটিতে ১৩৪ জন যাত্রী আর ১৪ জন ক্রু ছিলেন। অস্ত্রধারী ব্যক্তি ছাড়া সবাই অক্ষত ছিলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নবনিযুক্ত বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। অন্যদিকে এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিল অধিবেশনে চট্টগ্রামের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। তারমধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সন্তান ড. হাছান মাহমুদ। দফতর সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সদ্য সাবেক কমিটির উপদফতর সম্পাদক তথা চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া গ্রামের বিপ্লব বড়ুয়া। নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। জাতীয় কাউন্সিলের পাঁচদিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিভিন্ন পদে নেতাদের নাম ঘোষণায় চট্টগ্রাম থেকে নতুন করে ওয়াসিকা আয়েশা খান অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং আমিনুল ইসলাম উপ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব চট্টগ্রামবাসীকে আশা যুগিয়েছেন। আবার উপদেষ্টা পরিষদে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনকে রাখা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের প্রধান দুই নদী কর্ণফুলী ও হালদা। বন্দরের ‘লাইফলাইন’ খ্যাত কর্ণফুলীর তীর দখল করে গড়ে তোলা কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান এবং দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর দূষণ ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়ে এ দুই নদী বছরজুড়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরের শিরোনাম হয়েছে একাধিকবার।

ঢাকঢোল বাজিয়ে উচ্ছেদের ঘোষণা

বছরের শুরুতেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে কর্ণফুলী তীরের ২১শ’ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানের প্রস্তুতি নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন নগরের সদরঘাট এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। টানা পাঁচদিনের উচ্ছেদ অভিযানে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত নদীর তীরে অভিযান চালিয়ে ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত করা হয় ১০ একর ভূমি। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

কর্ণফুলী রক্ষায় ২০১৯ সালে সুখবর না থাকলেও দূষণে বিপর্যস্ত হালদায় পরিবর্তন হচ্ছে অবস্থার। নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। জব্দ হয়েছে ড্রেজার, ধ্বংস করা হয়েছে নৌকা, পোড়ানো হয়েছে কারেন্ট জাল, জরিমানা করা হচ্ছে অবৈধ মা মাছ আহরণকারীদের। ২০১৯ সালে হালদা থেকে জব্দ করা হয় প্রায় দেড় লাখ মিটার ভাসা ও ঘেরা জাল। ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ১৭টি ড্রেজার এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা। জব্দ করা হয় এক লাখ ৩ হাজার ঘনফুট বালু। জরিমানা আদায় ও কারাদণ্ড দেয়া হয় কয়েকজনকে।

বছরের শেষ দিকে ওয়াসা কার্যালয়ে দুদকের হানা, পুরো বছরজুড়ে সড়কে ধুলোর রাজত্ব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্বাভাবিক ভুতুড়ে বিল কিংবা প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের উগান্ডা ভ্রমণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। ওয়াসার এমন কর্মকাণ্ডে এ সেবা সংস্থার প্রতি নগরবাসীর বেড়েছে আস্থাহীনতা। বছরের পর বছর ধরে লেগে থাকা দুর্ভোগ লাঘবে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি না থাকলেও বরাবরের মতোই আশ্বাসের বুলি আওড়াচ্ছেন সংস্থাটির কর্তারা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেতনের চেয়ে ওভারটাইম বেশি পান এমন অভিযোগ ওঠে সংস্থাটির কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এমনকি কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এ হরিলুট চলে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আটঘাট বেধে তদন্তে নামে দুদক। গত ২৬ নভেম্বর তিন সদস্যের টিম নিয়ে ওয়াসা কার্যালয়ে হাজির হয় দুদক টিম।

এছাড়া চলতি বছরের জুনে সিস্টেম লসের নামে পানি চুরি, উৎপাদন নিয়ে হিসাবে গড়মিল, বিল আদায়ে অনিয়ম, বকেয়া অনাদায় ও মিটারবিহীন পানির সংযোগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রাজস্ব বিভাগে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে ওয়াসা লাভের মুখ দেখছে না। এমন অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করে ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড।

তাছাড়া বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় প্রশিক্ষণের জন্য ওয়াসা এবং মন্ত্রণালয়ের ৪১ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উগান্ডা ভ্রমণ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ‘চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট’ বাস্তÍবায়নে কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ প্রকল্পের আওতায় ‘ওয়াসার সক্ষমতা বাড়াতে’ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উগান্ডার ‘ন্যাশনাল ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজ করপোরেশন’ কাজ করছে। এজন্য ফি হিসেবে প্রায় ১১০ কোটি টাকা নিচ্ছে তারা। এসব ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া চট্টগ্রাম- ৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুও চট্টগ্রামবাসীকে শোকার্ত করেছে।

চট্টগ্রামে সারাবছর আলোচনায় ছিলেন স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। একের পর এক ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করে তিনি আলোচনায় আসেন। দীর্ঘদিন থেকে এসব জনহিতকর কাজ করে আসছেন তিনি। ‘প্রাণের টানে পায়ে হেঁটে রাউজানের ঘরে ঘরে’ কর্মসূচিতে পাঁচ দিনে ২৪৩ বর্গ কিলোমিটারের পরিভ্রমণ শেষ করে আলোচনায় উঠেন তিনি।

সারাদিন কাজের মাঝে ডুবে থেকেই চলমান জীবনের আনন্দ খুঁজে পাওয়া এই সংসদ সদস্য এক ঘণ্টায় ৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ফলদ গাছের চারা রোপণ করে জাতীয় পর্যায়ে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত হন। যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে রূপ নেয়। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে রাউজানে ১ হাজার ৮৪ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে তিনি বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। একজন প্রকৃতি ও মানবপ্রেমী হিসেবে তার এসব কর্মকাণ্ড ১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে যোগদানের পর থেকে অব্যাহত রয়েছে। তিনি রাউজানের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ভিটামিনযুক্ত ফলমূলের চাহিদা সহজলভ্য করতে যেমন ফলদ বৃক্ষ রোপণে উৎসাহ যুগিয়েছেন, তেমনি আমিষসমৃদ্ধ খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিবছর রাউজানের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাছের পোনা বিতরণ করেন। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্যকেন্দ্র ‘হালদা নদী’তে প্রতিবছর ডিমওয়ালা বড় মা মাছ ছাড়ার ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে এই ফলদায়ক নদীটির স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ ও সংরক্ষণ, অবৈধ মাছ শিকারিদের আইনের আওতায় আনা এবং নদীর দু’পাড়ের জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন ও দুই তীরের ভাঙন রোধে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। রাউজানে ৭শ’টি মসজিদ, ২২১টি হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ১১৯টি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। প্রতিবছর তিনি স্ব স্ব ধর্মাম্বলীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আয়োজনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বস্ত্র বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদান, ভোগ্যপণ্য প্রদান, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, সুস্বাদু খাবারের আয়োজন ইত্যাদি করে থাকেন। অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী মাস্টার’দা সূর্য সেন ও মহাকবি নবীন সেনের জন্মস্থান রাউজান। মাস্টার’দার বেহাত হয়ে যাওয়া ভূ-সম্পত্তি উদ্ধার ও স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপন, সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, আবক্ষ মূর্তি স্থাপন, মাস্টার’দার নামে বিশেষায়িত স্কুল প্রতিষ্ঠা, মাস্টার’দার নামে স্মৃতি তোরণ নির্মাণ ও সড়কের নামকরণ, পাঠাগার স্থাপন ও কবি নবীন সেনের নামে স্কুল স্থাপন, কবি নবীন সেন অডিটোরিয়াম স্থাপনসহ রাউজানে জন্মগ্রহণকারী বিভিন্ন জ্ঞানতাপস ব্যক্তিত্বদের যথাযথ সম্মান প্রতিষ্ঠায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন ফজলে করিম চৌধুরী।

আগামী বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় স্থাপন করা হচ্ছে জাতির জনকের একশটি ম্যুরাল। স্থানীয় সাংসদ আলহাজ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর উদ্যোগে ম্যুরালগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। এর আগে কখনও বাংলাদেশের কোন উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর এত সংখ্যক ম্যুরাল স্থাপন করা হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে ঘিরে অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন রাউজানের সাংসদ। পাশাপাশি বাংলাদেশে আবারও উদাহরণ সৃষ্টি করবে রাউজান।

কক্সবাজার সৈকতে ২০১৯ সালে ৯ পর্যটকের প্রাণহানি

কক্সবাজার থেকে জসিম সিদ্দিকী জানান

কক্সবাজার সৈকতে এক বছরে ৯ পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। চলিত বছরে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ‘২০১৯ সালে সাগরে গোসল করতে নেমে পানিতে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন পর্যটক। এ সময় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২০ জন পর্যটককে। একইভাবে ২০১৮ সালে ১৩ জন পর্যটক গোসল করতে গিয়ে ভেসে প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল ৩৭ জন পর্যটককে। গত ১০ বছরে সাগরে গোসল করার সময় ভেসে গিয়ে প্রাণ হারান অন্তত দেড় শতাধিত পর্যটক। এদের বেশিরভাগ সাগরের পানিতে নামার নির্দেশনা না মেনে এবং গুপ্তখালে পড়ে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সতর্কতামুলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন হ্যান্ড মাইকিং করে সাগরে নামার বিষয়ে সতর্ক বার্তা দেয়া হচ্ছে। পর্যটকদের সেবায় জেলা প্রশাসন থেকে ৪০ জন বিচকর্মী ও ৩০ জন লাইফগার্ড সদস্য কাজ করছে। এছাড়াও সুগন্ধা, লাবনীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তথ্য কেন্দ্র (হেল্প ডেস্ক) খোলা হয়েছে। একইভাবে পুরো সমুদ্র সৈকত জুটে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর কারণে অন্যসব বছরের চেয়ে এ বছর প্রাণহানির সংখ্যা কমে এসেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য সাগরে সতর্কতামূলক বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। সচেতনতার জন্য এসব নির্দেশনা মাইকে এবং বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু, অনেকেই তা মানছে না। যারা মানছে না এদের বেশিরভাগ পর্যটক সাগরে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

আরও খবর
আরও দুটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদাপূর্ণ এশিয়ান টাউনস্কেপ জুরিস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ
আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দল ১৪টি পদে জয়ী একটিতে সাদা
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে আ’লীগের মনোনয়ন ২৮ জনই নতুন মুখ
সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে মৎস্য আহরণ অনুমোদন
ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন খায়রুল মজিদ মাহমুদ
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২ র‌্যাব সদস্য গুলিবিদ্ধ
শিল্পকলায় আজ খেয়ালির মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘কদমতলী আর্মি ক্যাম্প’
ঢাবির চারুকলায় জয়নুল উৎসব ও লোকজ মেলা শেষ হচ্ছে আজ
বেরিয়েছে আকাশ চৌধুরী সম্পাদিত ‘বিজয় চিরন্তন’
নুরের সংগঠন ক্যাম্পাসে বাজেয়াপ্তের ঘোষণা ছাত্রলীগের
ভুয়া ভাউচার বানিয়ে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম
প্রেমে সাড়া না পেয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ

শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২০ , ২১ পৌষ ১৪২৬, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

আলোচিত ঘটনায় গ্যাস বিস্ফোরণ প্রধান দুই নদীর হালচাল

কক্সবাজার সৈকতে ৯ পর্যটকের প্রাণহানি

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেখতে দেখতে কেটে যাচ্ছে আরও একটি বছর। নতুন বছরে আগমনে বিগত বছরের ঘটে যাওয়া নানান ঘটনাই ঘটনার ঘনঘটায় গত হয়ে যায়। বিশেষ করে নতুন স্বপ্নকে ধারণ করেই প্রতিটি নতুন বছরকে মানুষ স্বাগত জানায়। বিদায়ী বছরের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসেব ভূমিতেই রচিত হয় নতুন স্বপ্ন-আশা। বছর শেষে চলতি বছরের চট্টগ্রামের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাদের যেমন আনন্দ দিয়েছে তেমনি ব্যথিত করেছে। একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে, নতুন প্রেরণা নিয়ে। সেই প্রেরণা নিয়েই শুরু হয়েছিল ২০১৯। প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ হয়নি সত্য, তবুও নব-উদ্যমে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বরণ করা হবে নতুন বছর।

এর আগে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০১৯ সালের প্রথম দিনটি বরণ করা হয়েছিল। সবকিছু ছাপিয়ে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

বিশেষ করে বিদায়ী বছরের শেষ সময়ে চট্টগ্রামের পাথরঘাটা গ্যাস লাইন বিস্ফোরণ নগরবাসীকে ব্যথিত করেছে। চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার ব্রিক ফিল্ড রোডের একটি বাড়ির নিচতলায় গত ১৭ নভেম্বর গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা যান সাতজন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের ময়ুরপঙ্খী নামের একটি বোয়িং বিমান ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাইকালে সেনা অভিযানের পরপরই কথিত ছিনতাইকারী ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। কমান্ডোদের আত্মসমর্পণের অনুরোধে সাড়া না দেয়ায় এনকাউন্টারে প্রথমে আহত এবং ওই ব্যক্তি মারা যান। বিমানটিতে ১৩৪ জন যাত্রী আর ১৪ জন ক্রু ছিলেন। অস্ত্রধারী ব্যক্তি ছাড়া সবাই অক্ষত ছিলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নবনিযুক্ত বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। অন্যদিকে এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিল অধিবেশনে চট্টগ্রামের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। তারমধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সন্তান ড. হাছান মাহমুদ। দফতর সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সদ্য সাবেক কমিটির উপদফতর সম্পাদক তথা চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া গ্রামের বিপ্লব বড়ুয়া। নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। জাতীয় কাউন্সিলের পাঁচদিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিভিন্ন পদে নেতাদের নাম ঘোষণায় চট্টগ্রাম থেকে নতুন করে ওয়াসিকা আয়েশা খান অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং আমিনুল ইসলাম উপ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব চট্টগ্রামবাসীকে আশা যুগিয়েছেন। আবার উপদেষ্টা পরিষদে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনকে রাখা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের প্রধান দুই নদী কর্ণফুলী ও হালদা। বন্দরের ‘লাইফলাইন’ খ্যাত কর্ণফুলীর তীর দখল করে গড়ে তোলা কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান এবং দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর দূষণ ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়ে এ দুই নদী বছরজুড়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরের শিরোনাম হয়েছে একাধিকবার।

ঢাকঢোল বাজিয়ে উচ্ছেদের ঘোষণা

বছরের শুরুতেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে কর্ণফুলী তীরের ২১শ’ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানের প্রস্তুতি নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন নগরের সদরঘাট এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। টানা পাঁচদিনের উচ্ছেদ অভিযানে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত নদীর তীরে অভিযান চালিয়ে ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত করা হয় ১০ একর ভূমি। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

কর্ণফুলী রক্ষায় ২০১৯ সালে সুখবর না থাকলেও দূষণে বিপর্যস্ত হালদায় পরিবর্তন হচ্ছে অবস্থার। নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। জব্দ হয়েছে ড্রেজার, ধ্বংস করা হয়েছে নৌকা, পোড়ানো হয়েছে কারেন্ট জাল, জরিমানা করা হচ্ছে অবৈধ মা মাছ আহরণকারীদের। ২০১৯ সালে হালদা থেকে জব্দ করা হয় প্রায় দেড় লাখ মিটার ভাসা ও ঘেরা জাল। ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ১৭টি ড্রেজার এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা। জব্দ করা হয় এক লাখ ৩ হাজার ঘনফুট বালু। জরিমানা আদায় ও কারাদণ্ড দেয়া হয় কয়েকজনকে।

বছরের শেষ দিকে ওয়াসা কার্যালয়ে দুদকের হানা, পুরো বছরজুড়ে সড়কে ধুলোর রাজত্ব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্বাভাবিক ভুতুড়ে বিল কিংবা প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের উগান্ডা ভ্রমণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। ওয়াসার এমন কর্মকাণ্ডে এ সেবা সংস্থার প্রতি নগরবাসীর বেড়েছে আস্থাহীনতা। বছরের পর বছর ধরে লেগে থাকা দুর্ভোগ লাঘবে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি না থাকলেও বরাবরের মতোই আশ্বাসের বুলি আওড়াচ্ছেন সংস্থাটির কর্তারা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেতনের চেয়ে ওভারটাইম বেশি পান এমন অভিযোগ ওঠে সংস্থাটির কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এমনকি কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এ হরিলুট চলে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আটঘাট বেধে তদন্তে নামে দুদক। গত ২৬ নভেম্বর তিন সদস্যের টিম নিয়ে ওয়াসা কার্যালয়ে হাজির হয় দুদক টিম।

এছাড়া চলতি বছরের জুনে সিস্টেম লসের নামে পানি চুরি, উৎপাদন নিয়ে হিসাবে গড়মিল, বিল আদায়ে অনিয়ম, বকেয়া অনাদায় ও মিটারবিহীন পানির সংযোগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রাজস্ব বিভাগে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে ওয়াসা লাভের মুখ দেখছে না। এমন অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করে ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড।

তাছাড়া বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় প্রশিক্ষণের জন্য ওয়াসা এবং মন্ত্রণালয়ের ৪১ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উগান্ডা ভ্রমণ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ‘চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট’ বাস্তÍবায়নে কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ প্রকল্পের আওতায় ‘ওয়াসার সক্ষমতা বাড়াতে’ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উগান্ডার ‘ন্যাশনাল ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজ করপোরেশন’ কাজ করছে। এজন্য ফি হিসেবে প্রায় ১১০ কোটি টাকা নিচ্ছে তারা। এসব ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া চট্টগ্রাম- ৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুও চট্টগ্রামবাসীকে শোকার্ত করেছে।

চট্টগ্রামে সারাবছর আলোচনায় ছিলেন স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। একের পর এক ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করে তিনি আলোচনায় আসেন। দীর্ঘদিন থেকে এসব জনহিতকর কাজ করে আসছেন তিনি। ‘প্রাণের টানে পায়ে হেঁটে রাউজানের ঘরে ঘরে’ কর্মসূচিতে পাঁচ দিনে ২৪৩ বর্গ কিলোমিটারের পরিভ্রমণ শেষ করে আলোচনায় উঠেন তিনি।

সারাদিন কাজের মাঝে ডুবে থেকেই চলমান জীবনের আনন্দ খুঁজে পাওয়া এই সংসদ সদস্য এক ঘণ্টায় ৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ফলদ গাছের চারা রোপণ করে জাতীয় পর্যায়ে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত হন। যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে রূপ নেয়। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে রাউজানে ১ হাজার ৮৪ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে তিনি বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। একজন প্রকৃতি ও মানবপ্রেমী হিসেবে তার এসব কর্মকাণ্ড ১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে যোগদানের পর থেকে অব্যাহত রয়েছে। তিনি রাউজানের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ভিটামিনযুক্ত ফলমূলের চাহিদা সহজলভ্য করতে যেমন ফলদ বৃক্ষ রোপণে উৎসাহ যুগিয়েছেন, তেমনি আমিষসমৃদ্ধ খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিবছর রাউজানের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাছের পোনা বিতরণ করেন। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্যকেন্দ্র ‘হালদা নদী’তে প্রতিবছর ডিমওয়ালা বড় মা মাছ ছাড়ার ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে এই ফলদায়ক নদীটির স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ ও সংরক্ষণ, অবৈধ মাছ শিকারিদের আইনের আওতায় আনা এবং নদীর দু’পাড়ের জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন ও দুই তীরের ভাঙন রোধে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। রাউজানে ৭শ’টি মসজিদ, ২২১টি হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ১১৯টি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। প্রতিবছর তিনি স্ব স্ব ধর্মাম্বলীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আয়োজনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বস্ত্র বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদান, ভোগ্যপণ্য প্রদান, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, সুস্বাদু খাবারের আয়োজন ইত্যাদি করে থাকেন। অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী মাস্টার’দা সূর্য সেন ও মহাকবি নবীন সেনের জন্মস্থান রাউজান। মাস্টার’দার বেহাত হয়ে যাওয়া ভূ-সম্পত্তি উদ্ধার ও স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপন, সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, আবক্ষ মূর্তি স্থাপন, মাস্টার’দার নামে বিশেষায়িত স্কুল প্রতিষ্ঠা, মাস্টার’দার নামে স্মৃতি তোরণ নির্মাণ ও সড়কের নামকরণ, পাঠাগার স্থাপন ও কবি নবীন সেনের নামে স্কুল স্থাপন, কবি নবীন সেন অডিটোরিয়াম স্থাপনসহ রাউজানে জন্মগ্রহণকারী বিভিন্ন জ্ঞানতাপস ব্যক্তিত্বদের যথাযথ সম্মান প্রতিষ্ঠায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন ফজলে করিম চৌধুরী।

আগামী বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় স্থাপন করা হচ্ছে জাতির জনকের একশটি ম্যুরাল। স্থানীয় সাংসদ আলহাজ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর উদ্যোগে ম্যুরালগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। এর আগে কখনও বাংলাদেশের কোন উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর এত সংখ্যক ম্যুরাল স্থাপন করা হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে ঘিরে অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন রাউজানের সাংসদ। পাশাপাশি বাংলাদেশে আবারও উদাহরণ সৃষ্টি করবে রাউজান।

কক্সবাজার সৈকতে ২০১৯ সালে ৯ পর্যটকের প্রাণহানি

কক্সবাজার থেকে জসিম সিদ্দিকী জানান

কক্সবাজার সৈকতে এক বছরে ৯ পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। চলিত বছরে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ‘২০১৯ সালে সাগরে গোসল করতে নেমে পানিতে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন পর্যটক। এ সময় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২০ জন পর্যটককে। একইভাবে ২০১৮ সালে ১৩ জন পর্যটক গোসল করতে গিয়ে ভেসে প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল ৩৭ জন পর্যটককে। গত ১০ বছরে সাগরে গোসল করার সময় ভেসে গিয়ে প্রাণ হারান অন্তত দেড় শতাধিত পর্যটক। এদের বেশিরভাগ সাগরের পানিতে নামার নির্দেশনা না মেনে এবং গুপ্তখালে পড়ে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সতর্কতামুলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন হ্যান্ড মাইকিং করে সাগরে নামার বিষয়ে সতর্ক বার্তা দেয়া হচ্ছে। পর্যটকদের সেবায় জেলা প্রশাসন থেকে ৪০ জন বিচকর্মী ও ৩০ জন লাইফগার্ড সদস্য কাজ করছে। এছাড়াও সুগন্ধা, লাবনীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তথ্য কেন্দ্র (হেল্প ডেস্ক) খোলা হয়েছে। একইভাবে পুরো সমুদ্র সৈকত জুটে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর কারণে অন্যসব বছরের চেয়ে এ বছর প্রাণহানির সংখ্যা কমে এসেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য সাগরে সতর্কতামূলক বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। সচেতনতার জন্য এসব নির্দেশনা মাইকে এবং বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু, অনেকেই তা মানছে না। যারা মানছে না এদের বেশিরভাগ পর্যটক সাগরে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।