এবার বেকারপঞ্জির দাবিতে আন্দোলনে নামছে ভারতের বামপন্থিরা

সদ্য পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও বিতর্কিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ নতুন নয়। তবে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আইনের ডামাডোলে হারিয়ে গেছে বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মতো গুরুতর বিষয়গুলো। বিরোধীদের দাবি, দেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতেই মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে অভিনব এক দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে যাচ্ছে দেশটির বামপন্থিরা। তাদের দাবি, নাগরিকপঞ্জি নয়, এবার ভারতের বেকারপঞ্জি করা হোক। লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে পাশে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো। গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। জি নিউজ।

পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের জিডিপি এখন তলানিতে, ৪৫ বছরের মধ্যে বেকারত্ব সর্বোচ্চ এবং বাজারে আগুন। নাগরিকপঞ্জি-নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ডামাডোলের মাঝে হারিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তাই বেকারত্ব নিয়েও রাজপথে নামতে যাচ্ছে বামপন্থি যুব ও ছাত্ররা। তাদের দাবি, এনআরসি নয়, বরং দেশজুড়ে চালু হোক ‘ন?্যাশনাল রেজিস্টার অব বেরোজগারি’ বা এন?আরবি। এক?ইভাবে নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বদলে বিএএ চালুর দাবি তুলছে তারা। এ বিএএ-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ‘বেরোজগারি অ্যাবোলিশন অ্যাক্ট’ বা বেকারত্ব বিলোপ আইন। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে এ সংক্রান্ত ফরম বিতরণ করবে বামপন্থিরা। এতে জানতে চাওয়া হবে, আপনি বেকার নাকি চাকরিজীবী? কাজ করলে কি ধরনের প্রতিষ্ঠান? দৈনিক আয় কত?

বাম ছাত্র-যুবদের দাবি, দেশজুড়ে যেখানে বেকারত্ব সংখ্যা বাড়ছে, দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে সবার কাজ সুনিশ্চিত করতে নতুন আইন আনতে হবে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মাকর্সবাদীর (সিপিএম) যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সায়নদীপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘সবার পেটে ভাত, সবার হাতে কাজ চাই আমরা। এন?আরসি জুজু দেখিয়ে আতঙ্ক ছড়ালে হবে না। দেশে বেকার বাড়ছে, মোদি বাবু সমাধান করুন।’ অনেকেই ভাবছিলেন, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, তারপর নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ডামাডোলের মাঝে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের মতো গুরুতর বিষয়। ‘আচ্ছে দিন’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু ছয় বছর পর পাকিস্তান আর হিন্দু-মুসলিম বৈষম্যের বাইরে এ ‘আচ্ছে দিন’ মুখেই আনছেন না তিনি।

৬ বছর আগে এ ‘আচ্ছে দিন’ বা সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। যদিও দলটির নেতারা এখন আর এটি সামনে নিয়ে আসতে আগ্রহী নন। বিজেপির অভিধান থেকে দৃশ্যত ‘আচ্ছে দিন’ হারিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে আছে পাকিস্তান জুজুর ভয় দেখানোর পুরনো কৌশল। বৃহস্পতিবারও কর্নাটকের সভায় দেশটিকে টেনে এনেছেন মোদি। বলেছেন, ৭০ বছর ধরে পাকিস্তানে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নিয়ে সরব হোন। একদিন পর শিলিগুড়ির জনসভায় ওই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মোদিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পাকিস্তান, পাকিস্তান করেন কেন? পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়ে গেছেন?’ এমন পরিস্থিতিতেই ভারতের তরুণদের পাশে পেতে বেকারপঞ্জি নিয়ে সরব হতে যাচ্ছে সিপিএমের যুব সংগঠন। ধর্মীয় মেরুকরণের মোকাবিলায় ‘ভাত দে’ রাজনীতিতেই ভরসা রাখছে লাল পার্টির নতুন প্রজন্ম।

রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২০ , ২২ পৌষ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

এবার বেকারপঞ্জির দাবিতে আন্দোলনে নামছে ভারতের বামপন্থিরা

সংবাদ ডেস্ক |

সদ্য পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও বিতর্কিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ নতুন নয়। তবে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আইনের ডামাডোলে হারিয়ে গেছে বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মতো গুরুতর বিষয়গুলো। বিরোধীদের দাবি, দেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতেই মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে অভিনব এক দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে যাচ্ছে দেশটির বামপন্থিরা। তাদের দাবি, নাগরিকপঞ্জি নয়, এবার ভারতের বেকারপঞ্জি করা হোক। লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে পাশে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো। গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। জি নিউজ।

পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের জিডিপি এখন তলানিতে, ৪৫ বছরের মধ্যে বেকারত্ব সর্বোচ্চ এবং বাজারে আগুন। নাগরিকপঞ্জি-নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ডামাডোলের মাঝে হারিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তাই বেকারত্ব নিয়েও রাজপথে নামতে যাচ্ছে বামপন্থি যুব ও ছাত্ররা। তাদের দাবি, এনআরসি নয়, বরং দেশজুড়ে চালু হোক ‘ন?্যাশনাল রেজিস্টার অব বেরোজগারি’ বা এন?আরবি। এক?ইভাবে নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বদলে বিএএ চালুর দাবি তুলছে তারা। এ বিএএ-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ‘বেরোজগারি অ্যাবোলিশন অ্যাক্ট’ বা বেকারত্ব বিলোপ আইন। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে এ সংক্রান্ত ফরম বিতরণ করবে বামপন্থিরা। এতে জানতে চাওয়া হবে, আপনি বেকার নাকি চাকরিজীবী? কাজ করলে কি ধরনের প্রতিষ্ঠান? দৈনিক আয় কত?

বাম ছাত্র-যুবদের দাবি, দেশজুড়ে যেখানে বেকারত্ব সংখ্যা বাড়ছে, দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশছোঁয়া, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে সবার কাজ সুনিশ্চিত করতে নতুন আইন আনতে হবে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মাকর্সবাদীর (সিপিএম) যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সায়নদীপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘সবার পেটে ভাত, সবার হাতে কাজ চাই আমরা। এন?আরসি জুজু দেখিয়ে আতঙ্ক ছড়ালে হবে না। দেশে বেকার বাড়ছে, মোদি বাবু সমাধান করুন।’ অনেকেই ভাবছিলেন, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, তারপর নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ডামাডোলের মাঝে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের মতো গুরুতর বিষয়। ‘আচ্ছে দিন’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু ছয় বছর পর পাকিস্তান আর হিন্দু-মুসলিম বৈষম্যের বাইরে এ ‘আচ্ছে দিন’ মুখেই আনছেন না তিনি।

৬ বছর আগে এ ‘আচ্ছে দিন’ বা সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। যদিও দলটির নেতারা এখন আর এটি সামনে নিয়ে আসতে আগ্রহী নন। বিজেপির অভিধান থেকে দৃশ্যত ‘আচ্ছে দিন’ হারিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে আছে পাকিস্তান জুজুর ভয় দেখানোর পুরনো কৌশল। বৃহস্পতিবারও কর্নাটকের সভায় দেশটিকে টেনে এনেছেন মোদি। বলেছেন, ৭০ বছর ধরে পাকিস্তানে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নিয়ে সরব হোন। একদিন পর শিলিগুড়ির জনসভায় ওই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মোদিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পাকিস্তান, পাকিস্তান করেন কেন? পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়ে গেছেন?’ এমন পরিস্থিতিতেই ভারতের তরুণদের পাশে পেতে বেকারপঞ্জি নিয়ে সরব হতে যাচ্ছে সিপিএমের যুব সংগঠন। ধর্মীয় মেরুকরণের মোকাবিলায় ‘ভাত দে’ রাজনীতিতেই ভরসা রাখছে লাল পার্টির নতুন প্রজন্ম।