সম্ভাব্য যুদ্ধে লাভবান হবেন ট্রাম্প!

গত শুক্রবার ইরাকের স্থানীয় সময় ভোরে ইরানের সেনাপ্রধান কাসিম সোলেইমানিকে হত্যা করে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। নিজ দেশের দ্বিতীয় প্রধান কর্মকর্তাকে হারিয়ে চরম ক্ষেভে ফুঁসছে ইরান। জবাবে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে- তাহলে কি যুদ্ধ অনিবার্য? ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র মার্কিন জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে দিয়ে বিভেদ আর ঔদ্ধত্বের প্রবক্তা হয়ে ওঠা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও কি তাই চান? এর পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যুদ্ধ যদি বেঁধেই যায়, এতে লাভবান হবে কে? গত কয়েকদিনে বিশ্বজুড়ে চলা যুদ্ধপরিস্থিতির বিশ্লেষণে এ প্রতিবেদনে এমন প্রশ্নগুলোর জবাব খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজ দেশে প্রেসিডেন্ট টাম্প তার কার্যকালের সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করেছেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ও মার্কিন কংগ্রেসের কার্যক্রমে বাধা দানের মতো গুরুতর দুটি অভিযোগ এনে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে উচ্চকক্ষ সিনেটে তার অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) বিষয়টি আলোচনায় ওঠার কথা। তার আগে ইরাকে ড্রোন হামলায় জেনারেল কাসিম সোলেইমানিকে হত্যা করে নিজের দেশের সবার নজর আপাতত ভালোভাবেই সরাতে পেরেছেন ট্রাম্প। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি প্রত্যাশিতভাবেই অন্যায় হামলায় তার এলিট বাহিনীর প্রধানকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছেন। অপরদিকে সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর টুইটার অ্যাকাউন্টে মার্কিন পতাকা শেয়ার করে একরকম আনন্দই প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প যে ইচ্ছে করেই এমন যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন তার প্রমাণ পেতে তিনি নিজেই দিয়েছেন। দু’দিন আগেই নিজের এক টুইট বার্তায় লেখেন বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে ‘কোন প্রাণহানি বা আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে তার জন্য ইরানই দায়ী থাকবে। সেজন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ওটা কোন সতর্কবার্তা ছিল না, তা সরাসরি হুমকি ছিল।’ ওই সময়ের ওই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি তার কড়া জবাব দিলেও মার্কিন দূতাবাস থেকে বিক্ষোভকারীরা সরে গিয়েছিল। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই তারপরের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসার কথা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাইলে তাইই হতো। কিন্তু কংগ্রেসকে কিছু না জানিয়ে তিনি হামলার নির্দেশ দিলেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনকে। হামলার নির্দেশ দিয়ে আর ইরানের এলিট বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের একটা পতাকা টুইট করে আপাতত স্থির রয়েছেন ট্রাম্প ।

অপরদিকে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানী সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যায় মধ্যপ্রাচ্যের একাংশে নেমেছে শোকের ছায়া। এর জেরে বাড়ছে ক্ষোভ আর আতঙ্ক। যার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পাড়বে না বিশ্ব । ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে (গতকাল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ শতাংশ)। মার্কিন হামলায় সোলেইমানির সঙ্গে ইরাকি কমান্ডার আবু মাহদি আল মুহান্দিসসহ আরও চারজন নিহত হয়েছেন। তাই ইরাকও ক্ষুব্ধ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি ইতোমধ্যেই ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত কয়েক মাস ধরে তার বিরুদ্ধে চলা অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিকভাবে দেশে যে কোণঠাসা পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন, মার্কিন জাতীয়তাবাদকে নতুন করে উসকে দিয়ে তা হয়ত খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। একইসঙ্গে লাভ হবে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বিক্রেতাদেরও। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে গত প্রায় এক দশক ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ধুকতে থাকা মধ্যপ্রচ্যের প্রতিবেশী দুই দেশ ইরান ও ইরাকের। পাশাপাশি দেশ দুটোর সাধারণ মানুষের। আশির দশকে প্রায় আট বছর নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেছে তারা। সেই যুদ্ধ শেষেও ইরাকের মানুষ বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারেনি।

১৯৯০ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত চলা উপসাগরীয় যুদ্ধের ক্ষত শুকানোর আগে ২০০৩ সালে আবার পড়ে যুদ্ধের খপ্পরে। আট বছরের সেই যুদ্ধে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার দেশটি বলতে গেলে আজ পুরো একটা ধংসস্তূপ। প্রাক মধ্যযুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ - যখন বিশ্বের যে প্রান্তে যত যুদ্ধ হয়েছে, তাতে পিরণামে মানবতার ক্ষতিই হয়েছে বেশি। লক্ষ- কোটি মানুষ নিহত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ভূখ-, সেই সঙ্গে ভেঙে পড়েছে দেশগুলোর অর্থনীতি। যুদ্ধের ধংসযজ্ঞ ট্রাম্পের মতো বিকারগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোন কোন যুদ্ধবাজ চাইলেও চাইতে পারেন! তবে বিশ্বের প্রায় আটশ’ (৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন) কোটি মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ শান্তিপ্রিয় মানুষই শান্তি চায়।

রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২০ , ২২ পৌষ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সম্ভাব্য যুদ্ধে লাভবান হবেন ট্রাম্প!

সংবাদ ডেস্ক |

image

গত শুক্রবার ইরাকের স্থানীয় সময় ভোরে ইরানের সেনাপ্রধান কাসিম সোলেইমানিকে হত্যা করে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। নিজ দেশের দ্বিতীয় প্রধান কর্মকর্তাকে হারিয়ে চরম ক্ষেভে ফুঁসছে ইরান। জবাবে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে- তাহলে কি যুদ্ধ অনিবার্য? ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র মার্কিন জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে দিয়ে বিভেদ আর ঔদ্ধত্বের প্রবক্তা হয়ে ওঠা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও কি তাই চান? এর পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যুদ্ধ যদি বেঁধেই যায়, এতে লাভবান হবে কে? গত কয়েকদিনে বিশ্বজুড়ে চলা যুদ্ধপরিস্থিতির বিশ্লেষণে এ প্রতিবেদনে এমন প্রশ্নগুলোর জবাব খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজ দেশে প্রেসিডেন্ট টাম্প তার কার্যকালের সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করেছেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ও মার্কিন কংগ্রেসের কার্যক্রমে বাধা দানের মতো গুরুতর দুটি অভিযোগ এনে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে উচ্চকক্ষ সিনেটে তার অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) বিষয়টি আলোচনায় ওঠার কথা। তার আগে ইরাকে ড্রোন হামলায় জেনারেল কাসিম সোলেইমানিকে হত্যা করে নিজের দেশের সবার নজর আপাতত ভালোভাবেই সরাতে পেরেছেন ট্রাম্প। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি প্রত্যাশিতভাবেই অন্যায় হামলায় তার এলিট বাহিনীর প্রধানকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছেন। অপরদিকে সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর টুইটার অ্যাকাউন্টে মার্কিন পতাকা শেয়ার করে একরকম আনন্দই প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প যে ইচ্ছে করেই এমন যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন তার প্রমাণ পেতে তিনি নিজেই দিয়েছেন। দু’দিন আগেই নিজের এক টুইট বার্তায় লেখেন বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে ‘কোন প্রাণহানি বা আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে তার জন্য ইরানই দায়ী থাকবে। সেজন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ওটা কোন সতর্কবার্তা ছিল না, তা সরাসরি হুমকি ছিল।’ ওই সময়ের ওই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি তার কড়া জবাব দিলেও মার্কিন দূতাবাস থেকে বিক্ষোভকারীরা সরে গিয়েছিল। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই তারপরের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসার কথা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাইলে তাইই হতো। কিন্তু কংগ্রেসকে কিছু না জানিয়ে তিনি হামলার নির্দেশ দিলেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনকে। হামলার নির্দেশ দিয়ে আর ইরানের এলিট বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের একটা পতাকা টুইট করে আপাতত স্থির রয়েছেন ট্রাম্প ।

অপরদিকে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানী সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যায় মধ্যপ্রাচ্যের একাংশে নেমেছে শোকের ছায়া। এর জেরে বাড়ছে ক্ষোভ আর আতঙ্ক। যার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পাড়বে না বিশ্ব । ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে (গতকাল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ শতাংশ)। মার্কিন হামলায় সোলেইমানির সঙ্গে ইরাকি কমান্ডার আবু মাহদি আল মুহান্দিসসহ আরও চারজন নিহত হয়েছেন। তাই ইরাকও ক্ষুব্ধ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি ইতোমধ্যেই ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত কয়েক মাস ধরে তার বিরুদ্ধে চলা অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিকভাবে দেশে যে কোণঠাসা পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন, মার্কিন জাতীয়তাবাদকে নতুন করে উসকে দিয়ে তা হয়ত খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। একইসঙ্গে লাভ হবে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বিক্রেতাদেরও। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে গত প্রায় এক দশক ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ধুকতে থাকা মধ্যপ্রচ্যের প্রতিবেশী দুই দেশ ইরান ও ইরাকের। পাশাপাশি দেশ দুটোর সাধারণ মানুষের। আশির দশকে প্রায় আট বছর নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেছে তারা। সেই যুদ্ধ শেষেও ইরাকের মানুষ বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারেনি।

১৯৯০ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত চলা উপসাগরীয় যুদ্ধের ক্ষত শুকানোর আগে ২০০৩ সালে আবার পড়ে যুদ্ধের খপ্পরে। আট বছরের সেই যুদ্ধে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার দেশটি বলতে গেলে আজ পুরো একটা ধংসস্তূপ। প্রাক মধ্যযুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ - যখন বিশ্বের যে প্রান্তে যত যুদ্ধ হয়েছে, তাতে পিরণামে মানবতার ক্ষতিই হয়েছে বেশি। লক্ষ- কোটি মানুষ নিহত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ভূখ-, সেই সঙ্গে ভেঙে পড়েছে দেশগুলোর অর্থনীতি। যুদ্ধের ধংসযজ্ঞ ট্রাম্পের মতো বিকারগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোন কোন যুদ্ধবাজ চাইলেও চাইতে পারেন! তবে বিশ্বের প্রায় আটশ’ (৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন) কোটি মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ শান্তিপ্রিয় মানুষই শান্তি চায়।