বর্ণাঢ্য আয়োজনে

বাংলা একাডেমিতে পৌষমেলা শুরু

শীতে বৃষ্টিস্নাত দিন পেরিয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় গতকাল ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে তিন দিনের পৌষ মেলা। গতকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে, সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। শিল্পীদের গানে, কবিতার উচ্চারণে, পিঠা-পুলির মন মাতাল করা ঘ্রাণ দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে গ্রামের সেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা।

নলেন গুড়ের পায়েস আর বিচিত্র পিঠাপুলির ম-ম গন্ধ পাওয়া যায় বাংলা একাডেমির চত্বরে প্রবেশ করতেই। সকালে যন্ত্রসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মেলার কার্যক্রম। মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রার্থী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন রফিকুল ইসলাম। এ সময় আইলা (মাটির সানকির মধ্যে তুষ দিয়ে জ্বালানো আগুন) জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ আবহে পিঠাপুলি তৈরি ও আয়োজনের উৎসব পৌষ মেলা। নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কৃষকেরা ঘরে যে ফসল তোলে, পরবর্তী সময়ে তা দিয়ে বিভিন্ন স্বাদ, গন্ধ ও বৈচিত্র্যের পিঠাপুলি তৈরির মধ্য দিয়ে এ মেলা তথা উৎসব উদ্যাপিত হয়। মূলত গ্রামীণ কৃষিনির্ভর জীবনের প্রতিচ্ছবি এ পৌষ মেলা। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নগরায়ণ ও আধুনিকতার নামে কৃত্রিমতা গ্রাস করেছে আমাদের, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে। কৃত্রিমতা ও বাহুল্য পরিহার করে সবাইকে লোকসংস্কৃতির প্রকৃত উপাদান ও অনুষঙ্গ অনুসরণ ও চর্চার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি এ সময় ২১ বছর ধরে পৌষ মেলা উদযাপনের মাধ্যমে গ্রামবাংলার চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতিকে নগরবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য পৌষ মেলা উদ্?যাপন পরিষদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ ও পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক মানজার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘হাজার বছরের এ ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আমাদের এর পরিচর্যা করতে হবে। ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন আয়োজন ও উৎসব সারাদেশে ছড়িয়ে দিলে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে আরও বেশি করে পরিচিত হবে এ প্রজন্ম।’ তিনি বাঙালির প্রকৃত মূল্যবোধ, চেতনা, জীবনবোধ নগরজীবনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে তুলে ধরতে এমন পৌষ মেলার গুরুত্ব অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেন।

গ্রাম এবং শহরের প্রভেদ না করার আহ্বান জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা আজ যে পিৎজা, স্যান্ডুইচ, বার্গারের ভিড়ে আমাদের পিঠা-পুলিগুলো ভুলতে বসেছে, এটা আমাদেরই দোষ। আমাদের উচিত তাদের সেগুলোর সঙ্গে আরও নীবিড়ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। নজরুল মঞ্চে ‘ঢেঁকি নাচে দাপুর-ধুপুর’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। ফেরদৌসী কাকলি গেয়ে শোনান ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় আয় আয়’ গানটি। এ সময় আরও নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যম, স্পন্দন ও নৃত্যজন। দলীয় সংগীত পরিবেশনে ছিল উদীচী, নিবেদন, বহ্নিশিখা এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সকালের পর্বে একক সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্বজিৎ রায়, আবু বকর সিদ্দিক, শারমিন সাথী ময়না, আবিদা রহমান, নবনীতা জাইদ চৌধুরী প্রমুখ। আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ এবং মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র।

আজ একদিকে চলছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন, অন্যদিকে পিঠা ভোজ। বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছিল দেশীয় পিঠা-পুলির স্টল। এসব স্টলে দেখা মেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাটিসাপটা, তালবড়া, বিবিখানা, মুন্ডা, মোরা, ঝিনুক, দুধ চিতই, জামাই পিঠা, বউ পিঠা, ভাপা পিঠা, সিদ্ধ পুলি, পাকন, খেজুর পিঠা, মালপোয়াসহ নানা স্বাদের পিঠা। শীতের জড়তা কাটিয়ে যারা সাতসকালে হাজির হয়েছিলেন বাংলা একাডেমিতে, আনন্দে-উষ্ণতায় সময় কাটিয়েছেন তারা।

image

বাংলা একাডেমিতে পৌষ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লোকনৃত্য পরিবেশনা - সংবাদ

আরও খবর
মানবাধিকার রক্ষায় সুশাসন নিশ্চিতে জনস্বার্থের মামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে প্রধান বিচারপতি
মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় গঠিত হচ্ছে বিশেষ পুলিশ ইউনিট
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করতে হবে মির্জা ফখরুল
বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
ঘন কুয়াশায় নৌরুট বন্ধ, যানবাহনের দীর্ঘ সারি
কালিগঙ্গা নদীর সেতু দীর্ঘদিন পর খুলে দেয়া হয়েছে
পুলিশের পদোন্নতি নিয়ে অসন্তোষ
গণধর্ষণে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের ৩ জন আটক
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চার ভাগে বিভক্ত
শীতপ্রধান রংপুর অঞ্চলকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা
তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ঘোষণা
সেলিম আল দীনের ‘পুত্র’ নাটকের মঞ্চায়ন আজ

রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২০ , ২২ পৌষ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বর্ণাঢ্য আয়োজনে

বাংলা একাডেমিতে পৌষমেলা শুরু

সাংস্কৃতিক বার্তা পরিবেশক |

image

বাংলা একাডেমিতে পৌষ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লোকনৃত্য পরিবেশনা - সংবাদ

শীতে বৃষ্টিস্নাত দিন পেরিয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় গতকাল ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে তিন দিনের পৌষ মেলা। গতকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে, সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। শিল্পীদের গানে, কবিতার উচ্চারণে, পিঠা-পুলির মন মাতাল করা ঘ্রাণ দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে গ্রামের সেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা।

নলেন গুড়ের পায়েস আর বিচিত্র পিঠাপুলির ম-ম গন্ধ পাওয়া যায় বাংলা একাডেমির চত্বরে প্রবেশ করতেই। সকালে যন্ত্রসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মেলার কার্যক্রম। মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রার্থী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন রফিকুল ইসলাম। এ সময় আইলা (মাটির সানকির মধ্যে তুষ দিয়ে জ্বালানো আগুন) জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ আবহে পিঠাপুলি তৈরি ও আয়োজনের উৎসব পৌষ মেলা। নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কৃষকেরা ঘরে যে ফসল তোলে, পরবর্তী সময়ে তা দিয়ে বিভিন্ন স্বাদ, গন্ধ ও বৈচিত্র্যের পিঠাপুলি তৈরির মধ্য দিয়ে এ মেলা তথা উৎসব উদ্যাপিত হয়। মূলত গ্রামীণ কৃষিনির্ভর জীবনের প্রতিচ্ছবি এ পৌষ মেলা। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নগরায়ণ ও আধুনিকতার নামে কৃত্রিমতা গ্রাস করেছে আমাদের, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে। কৃত্রিমতা ও বাহুল্য পরিহার করে সবাইকে লোকসংস্কৃতির প্রকৃত উপাদান ও অনুষঙ্গ অনুসরণ ও চর্চার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি এ সময় ২১ বছর ধরে পৌষ মেলা উদযাপনের মাধ্যমে গ্রামবাংলার চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতিকে নগরবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য পৌষ মেলা উদ্?যাপন পরিষদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ ও পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক মানজার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘হাজার বছরের এ ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আমাদের এর পরিচর্যা করতে হবে। ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন আয়োজন ও উৎসব সারাদেশে ছড়িয়ে দিলে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে আরও বেশি করে পরিচিত হবে এ প্রজন্ম।’ তিনি বাঙালির প্রকৃত মূল্যবোধ, চেতনা, জীবনবোধ নগরজীবনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে তুলে ধরতে এমন পৌষ মেলার গুরুত্ব অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেন।

গ্রাম এবং শহরের প্রভেদ না করার আহ্বান জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা আজ যে পিৎজা, স্যান্ডুইচ, বার্গারের ভিড়ে আমাদের পিঠা-পুলিগুলো ভুলতে বসেছে, এটা আমাদেরই দোষ। আমাদের উচিত তাদের সেগুলোর সঙ্গে আরও নীবিড়ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। নজরুল মঞ্চে ‘ঢেঁকি নাচে দাপুর-ধুপুর’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। ফেরদৌসী কাকলি গেয়ে শোনান ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় আয় আয়’ গানটি। এ সময় আরও নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যম, স্পন্দন ও নৃত্যজন। দলীয় সংগীত পরিবেশনে ছিল উদীচী, নিবেদন, বহ্নিশিখা এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সকালের পর্বে একক সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্বজিৎ রায়, আবু বকর সিদ্দিক, শারমিন সাথী ময়না, আবিদা রহমান, নবনীতা জাইদ চৌধুরী প্রমুখ। আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ এবং মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র।

আজ একদিকে চলছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন, অন্যদিকে পিঠা ভোজ। বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছিল দেশীয় পিঠা-পুলির স্টল। এসব স্টলে দেখা মেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাটিসাপটা, তালবড়া, বিবিখানা, মুন্ডা, মোরা, ঝিনুক, দুধ চিতই, জামাই পিঠা, বউ পিঠা, ভাপা পিঠা, সিদ্ধ পুলি, পাকন, খেজুর পিঠা, মালপোয়াসহ নানা স্বাদের পিঠা। শীতের জড়তা কাটিয়ে যারা সাতসকালে হাজির হয়েছিলেন বাংলা একাডেমিতে, আনন্দে-উষ্ণতায় সময় কাটিয়েছেন তারা।