পিয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেটবাজি থামছেই না

আজম জহিরুল ইসলাম

পিয়াজ একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। রান্নায় পিয়াজ ব্যবহার না হলে খাবার যেমনি সুস্বাদু হয় না, তেমনি খাবারে রুচিও আসে না। বিশেষ করে বাঙালি সমাজে রান্নায় পিয়াজ থাকা আবশ্যিক একটি বিষয়। রান্নার সময় এটি হাতের কাছে না থাকলে গৃহিণীদের ষোলোকলা পূর্ণ হয় না। তাই ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ঘরে পিয়াজ থাকা চাই। কিন্তু হালে এটিকে পুঁজি করে রাজনীতি শুরু হয়েছে। জমে উঠেছে পিয়াজ নিয়ে রাজনীতি। পিয়াজের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে মানুষ যেমনি বিরক্ত, তেমনি উদ্বিগ্ধও। এ পণ্যটি নিয়ে এ ধরনের ফটকাবাজি অতীতে হয়েছে কি না আমার জানা নেই। যেখানে গত ঈদেও এই মসলাটির প্রতি কেজির দাম ছিল মাত্র ১৫/২০ টাকা। কিন্তু এটি এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে এটির দাম ২০০/২৫০ টাকা। এরই মধ্যে এই মসলাটির দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল। ভুক্তভোগী মানুষ ভেবেছিল, আস্তে আস্তে এটি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। আগের স্থানেই সমহিমায় ফিরে আসবে এই মহামূল্যবান দ্রব্যটি। কিন্তু না, মানুষ যা প্রত্যাশা করে তার প্রতিফলন ঘটে না। মানুষ যা ভাবে সাধারণত তার উল্টোটাই হয়।

পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে মানুষ জানলো, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। সে দেশেও পিয়াজের দারুণ আক্রা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে কৃষকের পিয়াজ। সেখানেও হু হু করে দাম বাড়ছে পিয়াজের। যার কারণে আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়ছে দারুণভাবে। আর এ সুযোগে বাংলাদেশের পিয়াজ ব্যবসায়ীরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মানুষের গলা কাটতে শুরু করেছে। পিয়াজের আড়ত, পাইকারি বাজার ও খুচরা দোকানগুলোতে প্রচুর পিয়াজ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে ভোক্তাদের কাছ থেকে। সারা দেশে এ নিয়ে যখন তুমুল হৈচৈ শুরু হলো, তখন সরকারের টনক নড়ে। সরকার বিদেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও পিয়াজ সিন্ডিকেট বাজার দখলে নিয়ে যায়। তারা যোগসাজস করে প্রতিদিনই দাম বাড়াতে থাকে। সকালে এক দামতো, বিকালে আরেক দাম। এমনি করে এই দ্রব্যটির দাম আকাশে গিয়ে ঠেকে, যা মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ বাণিজ্যমন্ত্রীর নজরে আসে। তারা রীতিমতো হুংকার দেন, পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি সহ্য করা হবে না। মাঝে মাঝে লোক দেখানো লম্পঝম্প শুরু হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। সরকার ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঠে নামিয়ে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করে বটে; কিন্তু যেই কদু সেই লাউয়ের মতোই অবস্থা হয়। দাম কমার বদলে প্রতিযোগিতামূলকভাবে দাম বাড়তে থাকে এ মহার্ঘ্য পণ্যটির। আর এভাবে জনগণের পকেট কেটে হাতিয়ে নেয়া হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, এমপি ও সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জনগণের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করে বলেছেন, পিয়াজ কম খান। আমরা পিয়াজ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। কেউ কেউতো আগ বাড়িয়ে বলেছেন, এ জিনিসটি না খেলে কী হয়? তরকারিতে পিয়াজ ব্যবহার না করলে তরকারির স্বাদ কমে না। সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী তো (পিয়াজ গবেষক) জনগণের উদ্দেশ্যে অমূল্য বাণী দিয়েছেন, তিনি পিয়াজ ছাড়া ২৬ রকমের তরকারি রান্না করতে পারেন। আর এই গরম খবরটি ফেসবুক ও ইউটিউবের বদৌলতে বিশ্বময় ভাইরাল হয়ে যায়।

বর্তমানে পিয়াজ জিনিসটি এমনই বাহুল্য, অনেক বিয়েশাদী ও নানা অনুষ্ঠানে পিয়াজ উপহার দিতে দেখা যায়। কিছু কিছু পত্রপত্রিকা পিয়াজ নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুনও তৈরি করে। অনেক পত্রিকা প্রকাশ করে পিয়াজ বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা। ভারতের একটি অঞ্চলে ছেলেমেয়ের বিয়েতে সোনার গহনার পরিবর্তে পিয়াজ দিয়ে তৈরি গহনা উপহার দেয়া হয়। আর এটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। ফেসবুক ও ইউটিউবতো পিয়াজ নিয়ে রসাত্মক সিরিজ তৈরি করেছে, যা দেখতে মজাই পায় মানুষ।

দেখতে দেখতে পবিত্র রমজান মাস সমাসন্ন। এই মাসটিকে কেন্দ্র করে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলা হয়, নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বাণী যেনো নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। ব্যবসায়ীরা সরকারের কথা শুনে না। বরং তাদের কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনতে হয় সরকারকে। কারণ রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে এবং অতীতেও পাল্লা দিয়ে এটির দাম বেড়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

সম্প্রতি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের উপস্থিতিতে ও বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান সাবেক এই মন্ত্রী। তোফায়েল আহমদ যখন বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনও তিনি ফি-বছর ব্যসায়ীদের নসিহত করতেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মন্ত্রী মহোদয়ের কথায় কর্ণপাত করতেন না।

মানুষ পিয়াজ নিয়ে যেভাবে হইচই শুরু করেছে, অন্যান্য নিত্যপণ্য নিয়ে তেমনিভাবে সোচ্চার হচ্ছে না। আজকে শুধু পিয়াজই নয়, সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এমন কোনো পণ্য নেই যেগুলো ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে আছে। মাছ, মাংস, তরি-তরকারি, চাল, আটা, ময়দা, বিস্কুট, চিনি, গুড়, ডাল, তেল, দুধ, সাবান, ওষুধ থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এসব জিনিসেরও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। অবস্থা এমন যে, এগুলো মনিটরিং করা বা দেখভালের কেউ নেই। যে যেভাবে পারছে ফ্রি-স্টাইলে দাম বৃদ্ধি করে চলছে।

সমাজে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে রয়েছে টাকার খনি। তাছাড়া যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের প্রচুর আয়-উপার্জন, অবৈধ রোজগার, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও তাদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়ে না। কিন্তু যারা খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের সীমিত আয় এবং অল্প আয়ে যারা সংসারের ঘানি টানে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে তাদের ওপর নেতিবাচক চাপ পড়ে। তাদের আকাশছোঁয়া দামে পিয়াজ কেনাতো দূরের কথা, অন্যসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও মাথার ঘাম ঝরে। এসব অসহায়-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর কথা চিন্তা করা দরকার। কারণ তারা প্রতিবাদ করতে জানে না, প্রতিবাদ করে না। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, সচেতন মানুষসহ সরকারকে এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে দেশের ভুক্তভোগী মানুষ।

[লেখক : সাংবাদিক, ছড়াকার, নাট্যকার]

মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২০ , ২৪ পৌষ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

পিয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেটবাজি থামছেই না

আজম জহিরুল ইসলাম

পিয়াজ একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। রান্নায় পিয়াজ ব্যবহার না হলে খাবার যেমনি সুস্বাদু হয় না, তেমনি খাবারে রুচিও আসে না। বিশেষ করে বাঙালি সমাজে রান্নায় পিয়াজ থাকা আবশ্যিক একটি বিষয়। রান্নার সময় এটি হাতের কাছে না থাকলে গৃহিণীদের ষোলোকলা পূর্ণ হয় না। তাই ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ঘরে পিয়াজ থাকা চাই। কিন্তু হালে এটিকে পুঁজি করে রাজনীতি শুরু হয়েছে। জমে উঠেছে পিয়াজ নিয়ে রাজনীতি। পিয়াজের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে মানুষ যেমনি বিরক্ত, তেমনি উদ্বিগ্ধও। এ পণ্যটি নিয়ে এ ধরনের ফটকাবাজি অতীতে হয়েছে কি না আমার জানা নেই। যেখানে গত ঈদেও এই মসলাটির প্রতি কেজির দাম ছিল মাত্র ১৫/২০ টাকা। কিন্তু এটি এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে এটির দাম ২০০/২৫০ টাকা। এরই মধ্যে এই মসলাটির দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল। ভুক্তভোগী মানুষ ভেবেছিল, আস্তে আস্তে এটি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। আগের স্থানেই সমহিমায় ফিরে আসবে এই মহামূল্যবান দ্রব্যটি। কিন্তু না, মানুষ যা প্রত্যাশা করে তার প্রতিফলন ঘটে না। মানুষ যা ভাবে সাধারণত তার উল্টোটাই হয়।

পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে মানুষ জানলো, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। সে দেশেও পিয়াজের দারুণ আক্রা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে কৃষকের পিয়াজ। সেখানেও হু হু করে দাম বাড়ছে পিয়াজের। যার কারণে আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়ছে দারুণভাবে। আর এ সুযোগে বাংলাদেশের পিয়াজ ব্যবসায়ীরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মানুষের গলা কাটতে শুরু করেছে। পিয়াজের আড়ত, পাইকারি বাজার ও খুচরা দোকানগুলোতে প্রচুর পিয়াজ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে ভোক্তাদের কাছ থেকে। সারা দেশে এ নিয়ে যখন তুমুল হৈচৈ শুরু হলো, তখন সরকারের টনক নড়ে। সরকার বিদেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও পিয়াজ সিন্ডিকেট বাজার দখলে নিয়ে যায়। তারা যোগসাজস করে প্রতিদিনই দাম বাড়াতে থাকে। সকালে এক দামতো, বিকালে আরেক দাম। এমনি করে এই দ্রব্যটির দাম আকাশে গিয়ে ঠেকে, যা মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ বাণিজ্যমন্ত্রীর নজরে আসে। তারা রীতিমতো হুংকার দেন, পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি সহ্য করা হবে না। মাঝে মাঝে লোক দেখানো লম্পঝম্প শুরু হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। সরকার ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঠে নামিয়ে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করে বটে; কিন্তু যেই কদু সেই লাউয়ের মতোই অবস্থা হয়। দাম কমার বদলে প্রতিযোগিতামূলকভাবে দাম বাড়তে থাকে এ মহার্ঘ্য পণ্যটির। আর এভাবে জনগণের পকেট কেটে হাতিয়ে নেয়া হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, এমপি ও সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জনগণের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করে বলেছেন, পিয়াজ কম খান। আমরা পিয়াজ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। কেউ কেউতো আগ বাড়িয়ে বলেছেন, এ জিনিসটি না খেলে কী হয়? তরকারিতে পিয়াজ ব্যবহার না করলে তরকারির স্বাদ কমে না। সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী তো (পিয়াজ গবেষক) জনগণের উদ্দেশ্যে অমূল্য বাণী দিয়েছেন, তিনি পিয়াজ ছাড়া ২৬ রকমের তরকারি রান্না করতে পারেন। আর এই গরম খবরটি ফেসবুক ও ইউটিউবের বদৌলতে বিশ্বময় ভাইরাল হয়ে যায়।

বর্তমানে পিয়াজ জিনিসটি এমনই বাহুল্য, অনেক বিয়েশাদী ও নানা অনুষ্ঠানে পিয়াজ উপহার দিতে দেখা যায়। কিছু কিছু পত্রপত্রিকা পিয়াজ নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুনও তৈরি করে। অনেক পত্রিকা প্রকাশ করে পিয়াজ বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা। ভারতের একটি অঞ্চলে ছেলেমেয়ের বিয়েতে সোনার গহনার পরিবর্তে পিয়াজ দিয়ে তৈরি গহনা উপহার দেয়া হয়। আর এটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। ফেসবুক ও ইউটিউবতো পিয়াজ নিয়ে রসাত্মক সিরিজ তৈরি করেছে, যা দেখতে মজাই পায় মানুষ।

দেখতে দেখতে পবিত্র রমজান মাস সমাসন্ন। এই মাসটিকে কেন্দ্র করে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলা হয়, নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বাণী যেনো নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। ব্যবসায়ীরা সরকারের কথা শুনে না। বরং তাদের কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনতে হয় সরকারকে। কারণ রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে এবং অতীতেও পাল্লা দিয়ে এটির দাম বেড়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

সম্প্রতি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের উপস্থিতিতে ও বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান সাবেক এই মন্ত্রী। তোফায়েল আহমদ যখন বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনও তিনি ফি-বছর ব্যসায়ীদের নসিহত করতেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মন্ত্রী মহোদয়ের কথায় কর্ণপাত করতেন না।

মানুষ পিয়াজ নিয়ে যেভাবে হইচই শুরু করেছে, অন্যান্য নিত্যপণ্য নিয়ে তেমনিভাবে সোচ্চার হচ্ছে না। আজকে শুধু পিয়াজই নয়, সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এমন কোনো পণ্য নেই যেগুলো ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে আছে। মাছ, মাংস, তরি-তরকারি, চাল, আটা, ময়দা, বিস্কুট, চিনি, গুড়, ডাল, তেল, দুধ, সাবান, ওষুধ থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এসব জিনিসেরও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। অবস্থা এমন যে, এগুলো মনিটরিং করা বা দেখভালের কেউ নেই। যে যেভাবে পারছে ফ্রি-স্টাইলে দাম বৃদ্ধি করে চলছে।

সমাজে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে রয়েছে টাকার খনি। তাছাড়া যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের প্রচুর আয়-উপার্জন, অবৈধ রোজগার, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও তাদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়ে না। কিন্তু যারা খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের সীমিত আয় এবং অল্প আয়ে যারা সংসারের ঘানি টানে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে তাদের ওপর নেতিবাচক চাপ পড়ে। তাদের আকাশছোঁয়া দামে পিয়াজ কেনাতো দূরের কথা, অন্যসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও মাথার ঘাম ঝরে। এসব অসহায়-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর কথা চিন্তা করা দরকার। কারণ তারা প্রতিবাদ করতে জানে না, প্রতিবাদ করে না। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, সচেতন মানুষসহ সরকারকে এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে দেশের ভুক্তভোগী মানুষ।

[লেখক : সাংবাদিক, ছড়াকার, নাট্যকার]