সমর বিশারদ সোলেইমানি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন সেনাবাহিনীর চালকবিহীন ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান ইরানের এলিট কুদস ফোর্সের জেনারেল কাসেম সোলেইমানি এবং ইরাকি শিয়া সশস্ত্র সংগঠন হাশদ আল-শাবির উপ-অধিনায়ক আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ ১০ জন। বোমার আঘাতে সোলেইমানির শরীরের এমনই অবস্থা হয়েছিল যে, তার মরদেহ চিনতে হযেছে হাতের একটি আংটি দেখে। ইরাকি সেনা ও ইরাকের মেহমান সোলেইমানির রাজনৈতিক হত্যাকা- ইরাকের মাটিতে বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত হওয়া ইরাকের জন্য ছিলো তা অপমানজনক। কিন্তু আমেরিকার ঘোষিত নীতি হচ্ছে, তাদের জাতীয় স্বার্থরক্ষায় তারা পৃথিবীর যে কোন দেশে শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করতে আক্রমণ করার অধিকার রাখে। ইরাকের এখন আত্মসম্মানে লাগলেও কিছু করার নেই। সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়েও লাভ নেই, কারণ আইএস বিরোধী লড়াইয়ে সহায়তার জন্য মার্কিন বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইরাকই।

জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যা করার পেছনে অজুহাত হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র বাহিনীর শত শত হাজার হাজার সেনার মৃত্যু ও আহত হওয়ার জন্য সোলেইমানি এবং তার কুদস বাহিনী দায়ী। আরেক অজুহাত হচ্ছে, কাসেম সোলেইমানির সহায়তায় ইরানের দিল্লি ও লন্ডন হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে; কারণ কাসেম সোলেইমানি দিল্লি ও লন্ডনে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। এছাড়াও এই ঘটনার পূর্বে মার্কিন হামলায় ইরান সমর্থিত বাগদাদের হিজবুল্লা গোষ্ঠীর ৩০ জনের মৃত্যুর পর বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালানো হয়। মার্কিনীদের এই হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গ্রুপ বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা, ভাংচুর, আগুন লাগায়। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনী ও সেনা ঘাঁটির উপর যে সকল হামলা হয়েছে তার পেছনে সোলেইমানির হাত রয়েছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে থাকে। আমেরিকার অভিযোগ হচ্ছে, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাসসহ ইসলামী জিহাদি গোষ্ঠী এবং যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের অর্থ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ করছে ইরানের কুদস ফোর্স। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিমত হচ্ছে, সোলেইমানিকে আরও আগে খুন করা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের আরও কিছু লোক জানে বেঁচে যেত।

জেনারেল সোলেইমানি ছিলেন ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমর কৌশলবিদ। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি তাকে ‘জীবন্ত শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।অতি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠা আসা স্বল্প শিক্ষিত সোলেইমানি নিজের প্রতিভা ও প্রজ্ঞায় শুধু ইরানের অভিজাত ও শক্তিশালী কুদস ফোর্সের অধিনায়ক হননি তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির ঘনিষ্ঠও হয়ে উঠেছিলেন।মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারে তার পরিকল্পনার মোকাবিলা করতে সৌদি আরব ও ইসরাইলকে বেগ পেতে হয়েছে। আইএসদের মোকাবিলায়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং আসাদের পক্ষে রাশিয়াকে সংশ্লিষ্ট করতে তার মুখ্য ভূমিকা ছিলো। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার করার ক্ষেত্রে তার মুখ্য ভূমিকার জন্য আইএস, সৌদি আরব এবং ইসরাইল তাকে শত্রু জ্ঞানে হত্যা করার চেষ্টা এর পূর্বেও কয়েকবার করেছে। বহির্বিশ্বে ইরানের প্রভাব বিস্তারে তার এমন ভূমিকার জন্য জেনারেল সোলেইমানিকে ইরানে জাতীয় বীর হিসেবে গণ্য করা হয়; তার মৃত্যুর পর জানাজায় ইরাক ও ইরানে লক্ষ লক্ষ লোক সমবেত হয়ে তার জন্য মাতম করেছে, ইরানে ৩৫ জন লোক পদদলিত হয়ে মারা গেছেন।

জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার জবাবে ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের গ্রিন জোন ও সেনা ঘাঁটিতে রকেট হামলার পর ইরাকে অবস্থিত দুইটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ১২টির বেশি ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন আমেরিকান ‘সন্ত্রাসী’ সেনা মারা গেছে বলে ইরান দাবী করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প বলছেন, কিচ্ছু হয়নি, ‘অল ইজ ওয়েল’। যুদ্ধে সত্যের মৃত্যু হয় প্রথমে; নতুবা ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দুই দেশের বক্তব্যের মিল থাকতো। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মিথ্যে বলে পার পাওয়ার সুযোগ কম, ওখানে তার জবাবদিহিতা আদায় করার ব্যবস্থা আছে, যা ইরানের আছে বলে মনে হয় না। তবে ইরানের মানসম্মান বাঁচানোর জন্য, ইরানি জনগণকে শান্ত করতে এমন একটি হামলার দরকার ছিলো। আমেরিকার কোন সেনার কোনরূপ ক্ষতি না হওয়ায় মনে হচ্ছে, ইরান জেনেশুনে এমন স্থানে আঘাত করেছে যেখানে আমেরিকার কোন সেনা ছিলো না, অথবা সমঝোতার ভিত্তিতে আক্রমণের পূর্বে ওখান থেকে সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইরান আর কোন আক্রমণ না করলে এখানেই উত্তেজনা থেমে যাবে বলে মনে হয়; কারণ ট্রাম্প তার টুইট বার্তায় এ আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিআক্রমণের কথা বলেননি। ট্রাম্পের আচরণে মনে হচ্ছে, আমেরিকার সম্মতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।

ইরানের চারিদিকে বিভিন্ন মুসলিম দেশ ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, জর্ডান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ইরান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে মুসলিম দেশগুলো বিপদে পড়বে, কারণ আমেরিকা এয়ারস্ট্রাইকের জন্য নিকটবর্তী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চাইবে। অবশ্য পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরাক ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে যে, ইরান আক্রমনে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। সোলেইমানিকে হত্যার পর ইরাকের জনতাও আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছে, ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে হবে মর্মে ইরাকের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে। কিন্তু এই জাতীয় প্রস্তাবকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে আমেরিকা আরও তিন হাজার মার্কিন সেনা ইরাকে পাঠাচ্ছে।পাকিস্তান হয়তো দর কষাকষির জন্য আমেরিকান প্রস্তাব নাকচ করেছে, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে একমাত্র পাকিস্তান লাভবান হবে, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো করার একটা মওকা পেয়ে যাবে। পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থার পুনরুজ্জীবনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চীন ও সৌদি আরবের নিকট বহুবার ধর্ণা দিয়েছেন, সৌদি যুবরাজ তার আকুতিতে সাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থ দিয়েছেনও। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ইমরান খানের আবেদন কয়েকবার পেশ করা হলেও সাহায্য সহযোগিতা আমেরিকা থেকে খুব বেশি আসেনি, সন্ত্রাসীর লালন ক্ষেত্র হিসাবে পাকিস্তানকে তারা চিহ্নিত করে রেখেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগ হচ্ছে, পাকিস্তান আমেরিকার অর্থ দিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে চালায়। ইরানের সাথে যুদ্ধ বাঁধলে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুবর্ণ সুযোগ পাকিস্তান পেয়ে যাবে। তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত দেশ, ন্যাটোর চুক্তি মোতাবেক আমেরিকা আক্রান্ত হলে আমেরিকাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা তুরস্কের চুক্তিবদ্ধ দায়িত্ব। রাশিয়া থেকে এন্টি মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র কেনার কারণে তুরস্কের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিছুটা শীতল- ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে সহায়তা করা হলে সম্পর্কে এই শীতলতা কিছুটা কাটবে। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে গেলে প্রথমেই ইরান এই হরমুজ প্রণালীতে পশ্চিমা স্বার্থে আঘাত করার চেষ্টা করবে। কিন্তু ইরানের সেই চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হরমুজ প্রণালীর পাশে অবস্থিত ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ইরান কখনো আমেরিকার ভূখণ্ডে আক্রমণ করতে সমর্থ হবে না, ইরানকে আক্রমণ করতে হবে আরেকটি মুসলিম দেশের আমেরিকান ঘাঁটিতে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই সৌদি আরবের প্ররোচনায় ইরানকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটছিলো। তাই ইরানের সামান্যতম ভুল পদক্ষেপে আমেরিকার ফন্দি সফল হয়ে যেতে পারে। সৌদি আরব এবং ইসরাইল বহুদিন যাবত ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের জন্য পাঁয়তারা করে আসছে। সৌদি আরব চায় না ইরান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হোক। আমেরিকা সম্মত থাকলে ইসরাইল বহু পূর্বেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করতো; কিছু রাজনৈতিক কূটকৌশলের কারণে আমেরিকা চায় না ইসরাইলের তরফ থেকে এই আক্রমণ হোক। ইরান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হলে তা ইসরাইল নয়, সৌদি আরবের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি হতে সৌদির রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করতে ইরান যেভাবে বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করছে তা থেকে সৌদি আরবের এই আশঙ্কা অমূলক বলে মনে হয় না। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, একটি মুসলিম দেশ আরেকটি মুসলিম দেশকে ভয় করে। অবশ্য ভয় করার কারণও আছে, অধিকাংশ মুসলিম রাজা-বাদশাহর মাথায় গরম গোবর ছাড়া আর কিছু নেই। শুধু মুসলিম দেশ বলেই বিনা কারণে ইরাক-ইরান আট বছরব্যাপী যুদ্ধ করেছে, আফগানিস্তানকে শায়েস্তা করতে মুসলিম দেশ পাকিস্তানের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে; ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে পরাস্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছে সৌদি আরব, কুয়েতের মাটি; লিবিয়াকে ধ্বংস করার সময়ও ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন আরব দেশের ভূখণ্ড। সোলেইমানিকে হত্যা করতে ‘হান্টার-কিলার’ নামের ড্রোনটিও নাকি পাঠানো হয়েছিল কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড হেডকোয়ার্টার থেকে। মুসলমান দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর বাংলাদেশের মুসলমানেরা ইজ্জত বাঁচানোর জন্য দায়ী করে ইসরাইল এবং আমেরিকাকে। কোরআন সকল জ্ঞানের আধার হওয়া সত্ত্বেও আমরা মুসলমানেরা কেন ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা অর্জন করতে পারলাম না, ইসরাইল বা আমেরিকার প্ররোচনায় পরষ্পর যুদ্ধে লিপ্ত হই সে ব্যাপারে বাংলাদেশের মুসলমান নিশ্চুপ। আসলে আমরা জ্ঞান-গরিমায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে সকল দোষ ইসরাইল আর আমেরিকার ওপর চাপিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা খুঁজছি।

বিশ্বযুদ্ধ তো দূরের কথা, ইরানের সাথে যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে হয় না; যুদ্ধ বাধলে সেই যুদ্ধ হবে একচেটিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধ-প্রযুক্তির কাছে চরম পরাজয় হবে ইরানের। আঘাত করা তো দূরের কথা, যুদ্ধ বাধলে ইরানের প্রতিরোধ করার সামান্যতম ক্ষমতাও কাজে লাগবে না। আট বছর ধরে ইরাক আর ইরান- এই দুইটি দেশ পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে যে ধ্বংসস্তূপের সৃষ্টি করেছিলো তার মধ্যে প্রাণটি টিকে আছে শুধু তরল স্বর্ণ ও তেল বিক্রির বদৌলতে। ইরানের তেল ক্ষেত্র এবং উপকূলবর্তী শোধনাগারগুলো আমেরিকার গোলার আঘাতে ধ্বংস হয় গেলে দেশের অর্থনীতির চরম দুরবস্থা শুরু হবে। অন্যদিকে এই যুদ্ধ লাগলে তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়বে, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকরা চাকরি হারাবে। পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে সব যুদ্ধেই বিপদগ্রস্ত হয়েছে মানবতা-মরেছে সাধারণ মানুষ, ধ্বংস হয়েছে কৃষ্টি-সভ্যতা, ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনীতি। অসম যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে বোধশক্তি না থাকায় ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার গাদ্দাফির চরম বিপর্যয় হয়েছে, একই বোধশক্তি নিয়ে ইরান এগুলে ভঙ্গুর অর্থনীতিতে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ চাঙ্গা হবে এবং সম্রাট রেজা শাহ পাহলবির বংশধরেরা ক্ষমতায় বসার সুযোগ পাবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

zeauddinahmed@gmail.com

রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২০ , ২৮ পৌষ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সমর বিশারদ সোলেইমানি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

image

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন সেনাবাহিনীর চালকবিহীন ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান ইরানের এলিট কুদস ফোর্সের জেনারেল কাসেম সোলেইমানি এবং ইরাকি শিয়া সশস্ত্র সংগঠন হাশদ আল-শাবির উপ-অধিনায়ক আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ ১০ জন। বোমার আঘাতে সোলেইমানির শরীরের এমনই অবস্থা হয়েছিল যে, তার মরদেহ চিনতে হযেছে হাতের একটি আংটি দেখে। ইরাকি সেনা ও ইরাকের মেহমান সোলেইমানির রাজনৈতিক হত্যাকা- ইরাকের মাটিতে বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত হওয়া ইরাকের জন্য ছিলো তা অপমানজনক। কিন্তু আমেরিকার ঘোষিত নীতি হচ্ছে, তাদের জাতীয় স্বার্থরক্ষায় তারা পৃথিবীর যে কোন দেশে শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করতে আক্রমণ করার অধিকার রাখে। ইরাকের এখন আত্মসম্মানে লাগলেও কিছু করার নেই। সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়েও লাভ নেই, কারণ আইএস বিরোধী লড়াইয়ে সহায়তার জন্য মার্কিন বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইরাকই।

জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যা করার পেছনে অজুহাত হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র বাহিনীর শত শত হাজার হাজার সেনার মৃত্যু ও আহত হওয়ার জন্য সোলেইমানি এবং তার কুদস বাহিনী দায়ী। আরেক অজুহাত হচ্ছে, কাসেম সোলেইমানির সহায়তায় ইরানের দিল্লি ও লন্ডন হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে; কারণ কাসেম সোলেইমানি দিল্লি ও লন্ডনে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। এছাড়াও এই ঘটনার পূর্বে মার্কিন হামলায় ইরান সমর্থিত বাগদাদের হিজবুল্লা গোষ্ঠীর ৩০ জনের মৃত্যুর পর বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালানো হয়। মার্কিনীদের এই হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গ্রুপ বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা, ভাংচুর, আগুন লাগায়। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনী ও সেনা ঘাঁটির উপর যে সকল হামলা হয়েছে তার পেছনে সোলেইমানির হাত রয়েছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে থাকে। আমেরিকার অভিযোগ হচ্ছে, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাসসহ ইসলামী জিহাদি গোষ্ঠী এবং যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের অর্থ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ করছে ইরানের কুদস ফোর্স। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিমত হচ্ছে, সোলেইমানিকে আরও আগে খুন করা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের আরও কিছু লোক জানে বেঁচে যেত।

জেনারেল সোলেইমানি ছিলেন ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমর কৌশলবিদ। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি তাকে ‘জীবন্ত শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।অতি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠা আসা স্বল্প শিক্ষিত সোলেইমানি নিজের প্রতিভা ও প্রজ্ঞায় শুধু ইরানের অভিজাত ও শক্তিশালী কুদস ফোর্সের অধিনায়ক হননি তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির ঘনিষ্ঠও হয়ে উঠেছিলেন।মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারে তার পরিকল্পনার মোকাবিলা করতে সৌদি আরব ও ইসরাইলকে বেগ পেতে হয়েছে। আইএসদের মোকাবিলায়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং আসাদের পক্ষে রাশিয়াকে সংশ্লিষ্ট করতে তার মুখ্য ভূমিকা ছিলো। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার করার ক্ষেত্রে তার মুখ্য ভূমিকার জন্য আইএস, সৌদি আরব এবং ইসরাইল তাকে শত্রু জ্ঞানে হত্যা করার চেষ্টা এর পূর্বেও কয়েকবার করেছে। বহির্বিশ্বে ইরানের প্রভাব বিস্তারে তার এমন ভূমিকার জন্য জেনারেল সোলেইমানিকে ইরানে জাতীয় বীর হিসেবে গণ্য করা হয়; তার মৃত্যুর পর জানাজায় ইরাক ও ইরানে লক্ষ লক্ষ লোক সমবেত হয়ে তার জন্য মাতম করেছে, ইরানে ৩৫ জন লোক পদদলিত হয়ে মারা গেছেন।

জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার জবাবে ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের গ্রিন জোন ও সেনা ঘাঁটিতে রকেট হামলার পর ইরাকে অবস্থিত দুইটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ১২টির বেশি ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন আমেরিকান ‘সন্ত্রাসী’ সেনা মারা গেছে বলে ইরান দাবী করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প বলছেন, কিচ্ছু হয়নি, ‘অল ইজ ওয়েল’। যুদ্ধে সত্যের মৃত্যু হয় প্রথমে; নতুবা ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দুই দেশের বক্তব্যের মিল থাকতো। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মিথ্যে বলে পার পাওয়ার সুযোগ কম, ওখানে তার জবাবদিহিতা আদায় করার ব্যবস্থা আছে, যা ইরানের আছে বলে মনে হয় না। তবে ইরানের মানসম্মান বাঁচানোর জন্য, ইরানি জনগণকে শান্ত করতে এমন একটি হামলার দরকার ছিলো। আমেরিকার কোন সেনার কোনরূপ ক্ষতি না হওয়ায় মনে হচ্ছে, ইরান জেনেশুনে এমন স্থানে আঘাত করেছে যেখানে আমেরিকার কোন সেনা ছিলো না, অথবা সমঝোতার ভিত্তিতে আক্রমণের পূর্বে ওখান থেকে সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইরান আর কোন আক্রমণ না করলে এখানেই উত্তেজনা থেমে যাবে বলে মনে হয়; কারণ ট্রাম্প তার টুইট বার্তায় এ আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিআক্রমণের কথা বলেননি। ট্রাম্পের আচরণে মনে হচ্ছে, আমেরিকার সম্মতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।

ইরানের চারিদিকে বিভিন্ন মুসলিম দেশ ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, জর্ডান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্কে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ইরান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে মুসলিম দেশগুলো বিপদে পড়বে, কারণ আমেরিকা এয়ারস্ট্রাইকের জন্য নিকটবর্তী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চাইবে। অবশ্য পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরাক ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে যে, ইরান আক্রমনে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। সোলেইমানিকে হত্যার পর ইরাকের জনতাও আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছে, ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে হবে মর্মে ইরাকের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে। কিন্তু এই জাতীয় প্রস্তাবকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে আমেরিকা আরও তিন হাজার মার্কিন সেনা ইরাকে পাঠাচ্ছে।পাকিস্তান হয়তো দর কষাকষির জন্য আমেরিকান প্রস্তাব নাকচ করেছে, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে একমাত্র পাকিস্তান লাভবান হবে, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো করার একটা মওকা পেয়ে যাবে। পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থার পুনরুজ্জীবনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চীন ও সৌদি আরবের নিকট বহুবার ধর্ণা দিয়েছেন, সৌদি যুবরাজ তার আকুতিতে সাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থ দিয়েছেনও। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ইমরান খানের আবেদন কয়েকবার পেশ করা হলেও সাহায্য সহযোগিতা আমেরিকা থেকে খুব বেশি আসেনি, সন্ত্রাসীর লালন ক্ষেত্র হিসাবে পাকিস্তানকে তারা চিহ্নিত করে রেখেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগ হচ্ছে, পাকিস্তান আমেরিকার অর্থ দিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে চালায়। ইরানের সাথে যুদ্ধ বাঁধলে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুবর্ণ সুযোগ পাকিস্তান পেয়ে যাবে। তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত দেশ, ন্যাটোর চুক্তি মোতাবেক আমেরিকা আক্রান্ত হলে আমেরিকাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা তুরস্কের চুক্তিবদ্ধ দায়িত্ব। রাশিয়া থেকে এন্টি মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র কেনার কারণে তুরস্কের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিছুটা শীতল- ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে সহায়তা করা হলে সম্পর্কে এই শীতলতা কিছুটা কাটবে। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে গেলে প্রথমেই ইরান এই হরমুজ প্রণালীতে পশ্চিমা স্বার্থে আঘাত করার চেষ্টা করবে। কিন্তু ইরানের সেই চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হরমুজ প্রণালীর পাশে অবস্থিত ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ইরান কখনো আমেরিকার ভূখণ্ডে আক্রমণ করতে সমর্থ হবে না, ইরানকে আক্রমণ করতে হবে আরেকটি মুসলিম দেশের আমেরিকান ঘাঁটিতে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই সৌদি আরবের প্ররোচনায় ইরানকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটছিলো। তাই ইরানের সামান্যতম ভুল পদক্ষেপে আমেরিকার ফন্দি সফল হয়ে যেতে পারে। সৌদি আরব এবং ইসরাইল বহুদিন যাবত ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের জন্য পাঁয়তারা করে আসছে। সৌদি আরব চায় না ইরান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হোক। আমেরিকা সম্মত থাকলে ইসরাইল বহু পূর্বেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করতো; কিছু রাজনৈতিক কূটকৌশলের কারণে আমেরিকা চায় না ইসরাইলের তরফ থেকে এই আক্রমণ হোক। ইরান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হলে তা ইসরাইল নয়, সৌদি আরবের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি হতে সৌদির রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করতে ইরান যেভাবে বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করছে তা থেকে সৌদি আরবের এই আশঙ্কা অমূলক বলে মনে হয় না। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, একটি মুসলিম দেশ আরেকটি মুসলিম দেশকে ভয় করে। অবশ্য ভয় করার কারণও আছে, অধিকাংশ মুসলিম রাজা-বাদশাহর মাথায় গরম গোবর ছাড়া আর কিছু নেই। শুধু মুসলিম দেশ বলেই বিনা কারণে ইরাক-ইরান আট বছরব্যাপী যুদ্ধ করেছে, আফগানিস্তানকে শায়েস্তা করতে মুসলিম দেশ পাকিস্তানের ভূখন্ড ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে; ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে পরাস্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছে সৌদি আরব, কুয়েতের মাটি; লিবিয়াকে ধ্বংস করার সময়ও ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন আরব দেশের ভূখণ্ড। সোলেইমানিকে হত্যা করতে ‘হান্টার-কিলার’ নামের ড্রোনটিও নাকি পাঠানো হয়েছিল কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড হেডকোয়ার্টার থেকে। মুসলমান দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর বাংলাদেশের মুসলমানেরা ইজ্জত বাঁচানোর জন্য দায়ী করে ইসরাইল এবং আমেরিকাকে। কোরআন সকল জ্ঞানের আধার হওয়া সত্ত্বেও আমরা মুসলমানেরা কেন ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা অর্জন করতে পারলাম না, ইসরাইল বা আমেরিকার প্ররোচনায় পরষ্পর যুদ্ধে লিপ্ত হই সে ব্যাপারে বাংলাদেশের মুসলমান নিশ্চুপ। আসলে আমরা জ্ঞান-গরিমায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে সকল দোষ ইসরাইল আর আমেরিকার ওপর চাপিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা খুঁজছি।

বিশ্বযুদ্ধ তো দূরের কথা, ইরানের সাথে যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে হয় না; যুদ্ধ বাধলে সেই যুদ্ধ হবে একচেটিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধ-প্রযুক্তির কাছে চরম পরাজয় হবে ইরানের। আঘাত করা তো দূরের কথা, যুদ্ধ বাধলে ইরানের প্রতিরোধ করার সামান্যতম ক্ষমতাও কাজে লাগবে না। আট বছর ধরে ইরাক আর ইরান- এই দুইটি দেশ পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে যে ধ্বংসস্তূপের সৃষ্টি করেছিলো তার মধ্যে প্রাণটি টিকে আছে শুধু তরল স্বর্ণ ও তেল বিক্রির বদৌলতে। ইরানের তেল ক্ষেত্র এবং উপকূলবর্তী শোধনাগারগুলো আমেরিকার গোলার আঘাতে ধ্বংস হয় গেলে দেশের অর্থনীতির চরম দুরবস্থা শুরু হবে। অন্যদিকে এই যুদ্ধ লাগলে তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়বে, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকরা চাকরি হারাবে। পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে সব যুদ্ধেই বিপদগ্রস্ত হয়েছে মানবতা-মরেছে সাধারণ মানুষ, ধ্বংস হয়েছে কৃষ্টি-সভ্যতা, ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনীতি। অসম যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে বোধশক্তি না থাকায় ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার গাদ্দাফির চরম বিপর্যয় হয়েছে, একই বোধশক্তি নিয়ে ইরান এগুলে ভঙ্গুর অর্থনীতিতে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ চাঙ্গা হবে এবং সম্রাট রেজা শাহ পাহলবির বংশধরেরা ক্ষমতায় বসার সুযোগ পাবে।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

zeauddinahmed@gmail.com