গণমাধ্যমে মুজিব

কেন্দ্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ফলে শিল্পোন্নয়নে অসুবিধা

পরিষদে শেখ মুজিবের বক্তৃতা : শিল্প খাতে অর্থ মঞ্জুরির প্রস্তাব উত্থাপন

গতকল্য (শুক্রবার) শিল্প সচিব শেখ মুজিবর রহমান বাজেটের শিল্প খাতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব উত্থাপন করিয়া বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, বৈদেশিক মুদ্রা, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, এমনকি প্রাদেশিক বাণিজ্যটিও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকায় পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পোন্নয়ন একটি অসম্ভব ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের এ অবস্থার জন্য একমাত্র প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার ও যুক্তফ্রন্টই দায়ী। শেখ মুজিব কঠোর হস্তে দুর্নীতি দমনের সংকল্প জ্ঞাপন করিয়া এক সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। প্রাদেশিক বাণিজ্য ও শিল্প সচিব শেখ মুজিবর রহমান ছাঁটাই প্রস্তাবে উত্থাপিত বিতর্কের জবাবদান প্রসঙ্গে সদস্যগণ কর্তৃক প্রস্তাবিত সুপারিশের জন্য অভিনন্দন করেন। তিনি আশ্বাসদান করিয়া বলেন যে, সরকার যে সমস্ত কার্যোপযোগী বলিয়া মনে করেন, তাহা গ্রহণ করিবেন।

দৈনিক সংবাদ : ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬

প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারে তীব্র নিন্দা

শেখ মুজিবুরের বিবৃতি, প্রচারণার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে বলিয়া ঘোষণা সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, বিশেষ করিয়া প্রদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে এক ধরনের অপপ্রচার শুরু হইয়াছে, পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য, শিল্প ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য (শনিবার) এক বিবৃতি প্রসঙ্গে উহার তীব্র নিন্দা করেন। এপিপির খবরে প্রকাশ, বিবৃতিতে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, এই প্রচারণার উদ্দেশ্য হইল একদিকে পাকিস্তান সরকার ও পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা এবং অপর দিকে পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে। অবিশ্বাসের সৃষ্টি করা। তিনি ইহাকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের অসতেদ্দেশ্যে প্রণাদিত প্রচারণা বলিয়া অভিহিত করেন এবং বলেন যে, জনসাধারণকে বিশেষ করিয়া ব্যবসা ও শিল্পে নিয়োজিত থাকিয়া যাহারা জীবিকা অর্জন করিতেছে তাহাদিগকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এইরূপ প্রচারণা চালান হইতেছে। শেখ মুজিবর রহমান বলেন- গত নবেম্বর মাসে করাচিতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প দফতরের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকারদ্বয়ের প্রতিনিধিগণের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তৎসম্পর্কে প্রচার করা হয় যে, কেন্দ্রীয় সরকার এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহে অনুমাদন করিবেন না। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা এবং পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে বিদ্বেষের সৃষ্টি করাই যে এইরূপ প্রতারণার উদ্দেশ্য, তাহা সুস্পষ্ট। কিন্তু পাকিস্তানের নয়া শাসনতন্ত্রে শিল্প-বাণিজ্যের ব্যাপারে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার পূর্ণবণ্টন ও সমন্বয় সাধনের যে বিধান রহিয়াছে মিথ্যার বেসাতিকারীরা তাহা খেয়ালই করে নাই। পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবসা-বাণিজ্যরত একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরু তাহাদিগকে এই প্রদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করিতে বারণ করা হইয়াছে বলিয়া প্রচার করা হইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমান শ্রমিক অসন্তোষের ফলে এই প্রদেশে শিল্পপতিগণ পুঁজি বিনিয়োগে পুনর্বিবেচনা করিতেছেন বলিয়া আরেকটি খবর মিথ্যা প্রচার করা হয়। এমনকি কতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পূর্ব পাকিস্তানের অফিসের কনস্ট্রাকশন ব্যবসার মালিকগণের কাছ হইতে এখানে আর পুঁজি নিয়োগ না করার নির্দেশ পাঠাইবেন বলিয়াও প্রচার করা হয়।

এই সকল মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ করিয়া শেখ মুজিবুর বলেন যে, বর্তমানে এ প্রদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যে শিল্পোন্নয়নের কাজ চলিতেছে অবশ্য কোন কোন স্থানে শ্রমিক ও মালিকদের সামান্য বিরাধ ঘটিয়াছে। তবে সেগুলোর আপোস নিষ্পত্তিও হইয়া গিয়াছে। শ্রমিক মালিকের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে সরকার সর্বদাই সজাগ রহিয়াছেন। শ্রমিকরা মালিকদের নিকট ন্যায্য ব্যবহার পায় ইহাই সরকারের কাম্য। তাছাড়া মালিকরাও শ্রমিকদিগকে সন্তুষ্ট রাখিতে আগ্রহশীল।

শেখ মুজিবুর রহমান আরও বলেন যে, কয়েকদিন পূর্বে তিনি যখন করাচিতে গিয়াছিলেন তখন কিছুসংখ্যক শিল্পপতি পূর্ব পাকিস্তানে পুঁজি নিয়াগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। সুতরাং মিথ্যা প্রচারণার উদ্দেশ্য সফল হইবে না। বর্তমান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মজলুম জনসাধারণের জন্য খাদ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সংস্থান করিতে ওয়াদাবদ্ধ। এই প্রদেশের আর্থিক উন্নয়নে পাকিস্তানের সকল অংশের বিত্তশালী ব্যক্তিরা আগাইয়া আসিবেন বলিয়া তিনি আশা করেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৩ জানুয়ারি, ১৯৫৭

পাক-ভারত বাণিজ্য সম্মেলন

যোগদানকল্পে বৃহস্পতিবার আতাউর রহমানের দিল্লি যাত্রা নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান-ভারত বাণিজ্য সম্মেলনে যোগদানের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ও চিফ সেক্রেটারি হামিদ আলী আগামী ১৭ জানুয়ারি নয়াদিল্লি যাত্রা করিবেন। আগামীকল্য (বুধবার) এ সম্মেলন শুরু হইবে। প্রাদেশিক বাণিজ্য সচিব শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে। নয়াদিল্লির পথে গতকল্য সোমবার কলিকাতা রওয়ানা হইয়া গিয়াছেন। তাঁহার দফতরের সেক্রেটারি ডব্লিউ বি কাদরী এবং ডেপুটি সেক্রেটারি আইএ ইমতিয়াজী তাহার সঙ্গে গিয়াছেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৫ জানুয়ারি ১৯৫৭

শান্তিপূর্ণভাবে কাশ্মীর দিবস পালনের জন্য শেখ মুজিবের আবেদন

অদ্য ঢাকায় পূর্ণ হরতাল পালনের উদ্যোগ অদ্য (শনিবার) ঢাকায় বিভিন্ন ছাত্র প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক কাশ্মীর দিবস পালিত হইবে। এই দিবস উপলক্ষে পূর্ণ হরতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট, শোভাযাত্রা ও সভানুষ্ঠানের আয়োজন করা হইয়াছে। সমস্ত প্রকার যানবাহনও বন্ধ থাকিবে বলিয়া জানা গিয়াছে। গত সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সম্পাদক শ্রমসচিব শেখ মুজিবুর রহমান কর্মীদের সভায় শান্তিভঙ্গের জন্য সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকিতে বলিয়াছেন। তিনি কাশ্মীরকে পাইবার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে ও শৃঙ্খলা রক্ষা করিয়া সভা শোভাযাত্রা করিতে বহির্বিশ্বে পাকিস্তানের যেন সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে সেই দিকে সকলকে দৃষ্টি রাখিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় মহল্লায় মহল্লায় শান্তিরক্ষার জন্য কর্মীদের সঙ্বদ্ধভাবে কার্য করিতে বলা হইয়াছে। কর্মীগণ অদ্য সমস্ত দিন ভারতীয় হাইকমিশন ও উহার প্রচার অফিসের সম্মুখ প্রহরারত থাকিবেন। তাহারা কোন প্রকার গোলযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে প্রতিরাধ করার উদ্দেশ্যে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন। পূর্বে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ছাত্রগণ দুপুর সাড়ে বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে জমায়েত হইয়া পরে শোভাযাত্রা করিয়া পল্টন ময়দানে সভা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হইবেন। অপর দলে ইসলাম লীগ মোহাজের প্রতিষ্ঠান কাশ্মীর জেহাদ প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা করিয়া অপরাহ্ণে ময়দানে পৌঁছিবে এবং তথা হইতে তাহারা বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য ভারতীয় দূতাবাস ও প্রচার অফিসের সম্মুখে যাইবেন। যানবাহন অদ্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকিবে। সিনেমা বা হাট-বাজার খোলা হইবে না।

রিকশা ধর্মঘট : ঢাকা রিকশা মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক এক বিবৃতিতে কাশ্মীর দিবস উপলক্ষে ঢাকা পৌর এলাকার রিকশা চালকদের প্রতি ধর্মঘটের আহ্বান জানাইয়াছেন। আরএসপি’র বিবৃতি

দৈনিক সংবাদ : ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৭

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২৯ পৌষ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

গণমাধ্যমে মুজিব

image

কেন্দ্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ফলে শিল্পোন্নয়নে অসুবিধা

পরিষদে শেখ মুজিবের বক্তৃতা : শিল্প খাতে অর্থ মঞ্জুরির প্রস্তাব উত্থাপন

গতকল্য (শুক্রবার) শিল্প সচিব শেখ মুজিবর রহমান বাজেটের শিল্প খাতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব উত্থাপন করিয়া বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, বৈদেশিক মুদ্রা, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, এমনকি প্রাদেশিক বাণিজ্যটিও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকায় পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পোন্নয়ন একটি অসম্ভব ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের এ অবস্থার জন্য একমাত্র প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার ও যুক্তফ্রন্টই দায়ী। শেখ মুজিব কঠোর হস্তে দুর্নীতি দমনের সংকল্প জ্ঞাপন করিয়া এক সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। প্রাদেশিক বাণিজ্য ও শিল্প সচিব শেখ মুজিবর রহমান ছাঁটাই প্রস্তাবে উত্থাপিত বিতর্কের জবাবদান প্রসঙ্গে সদস্যগণ কর্তৃক প্রস্তাবিত সুপারিশের জন্য অভিনন্দন করেন। তিনি আশ্বাসদান করিয়া বলেন যে, সরকার যে সমস্ত কার্যোপযোগী বলিয়া মনে করেন, তাহা গ্রহণ করিবেন।

দৈনিক সংবাদ : ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬

প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারে তীব্র নিন্দা

শেখ মুজিবুরের বিবৃতি, প্রচারণার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে বলিয়া ঘোষণা সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, বিশেষ করিয়া প্রদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে এক ধরনের অপপ্রচার শুরু হইয়াছে, পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য, শিল্প ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য (শনিবার) এক বিবৃতি প্রসঙ্গে উহার তীব্র নিন্দা করেন। এপিপির খবরে প্রকাশ, বিবৃতিতে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, এই প্রচারণার উদ্দেশ্য হইল একদিকে পাকিস্তান সরকার ও পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা এবং অপর দিকে পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে। অবিশ্বাসের সৃষ্টি করা। তিনি ইহাকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের অসতেদ্দেশ্যে প্রণাদিত প্রচারণা বলিয়া অভিহিত করেন এবং বলেন যে, জনসাধারণকে বিশেষ করিয়া ব্যবসা ও শিল্পে নিয়োজিত থাকিয়া যাহারা জীবিকা অর্জন করিতেছে তাহাদিগকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এইরূপ প্রচারণা চালান হইতেছে। শেখ মুজিবর রহমান বলেন- গত নবেম্বর মাসে করাচিতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প দফতরের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকারদ্বয়ের প্রতিনিধিগণের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তৎসম্পর্কে প্রচার করা হয় যে, কেন্দ্রীয় সরকার এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহে অনুমাদন করিবেন না। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করা এবং পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে বিদ্বেষের সৃষ্টি করাই যে এইরূপ প্রতারণার উদ্দেশ্য, তাহা সুস্পষ্ট। কিন্তু পাকিস্তানের নয়া শাসনতন্ত্রে শিল্প-বাণিজ্যের ব্যাপারে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার পূর্ণবণ্টন ও সমন্বয় সাধনের যে বিধান রহিয়াছে মিথ্যার বেসাতিকারীরা তাহা খেয়ালই করে নাই। পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবসা-বাণিজ্যরত একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরু তাহাদিগকে এই প্রদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করিতে বারণ করা হইয়াছে বলিয়া প্রচার করা হইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমান শ্রমিক অসন্তোষের ফলে এই প্রদেশে শিল্পপতিগণ পুঁজি বিনিয়োগে পুনর্বিবেচনা করিতেছেন বলিয়া আরেকটি খবর মিথ্যা প্রচার করা হয়। এমনকি কতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পূর্ব পাকিস্তানের অফিসের কনস্ট্রাকশন ব্যবসার মালিকগণের কাছ হইতে এখানে আর পুঁজি নিয়োগ না করার নির্দেশ পাঠাইবেন বলিয়াও প্রচার করা হয়।

এই সকল মিথ্যা প্রচারের প্রতিবাদ করিয়া শেখ মুজিবুর বলেন যে, বর্তমানে এ প্রদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যে শিল্পোন্নয়নের কাজ চলিতেছে অবশ্য কোন কোন স্থানে শ্রমিক ও মালিকদের সামান্য বিরাধ ঘটিয়াছে। তবে সেগুলোর আপোস নিষ্পত্তিও হইয়া গিয়াছে। শ্রমিক মালিকের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে সরকার সর্বদাই সজাগ রহিয়াছেন। শ্রমিকরা মালিকদের নিকট ন্যায্য ব্যবহার পায় ইহাই সরকারের কাম্য। তাছাড়া মালিকরাও শ্রমিকদিগকে সন্তুষ্ট রাখিতে আগ্রহশীল।

শেখ মুজিবুর রহমান আরও বলেন যে, কয়েকদিন পূর্বে তিনি যখন করাচিতে গিয়াছিলেন তখন কিছুসংখ্যক শিল্পপতি পূর্ব পাকিস্তানে পুঁজি নিয়াগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। সুতরাং মিথ্যা প্রচারণার উদ্দেশ্য সফল হইবে না। বর্তমান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মজলুম জনসাধারণের জন্য খাদ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সংস্থান করিতে ওয়াদাবদ্ধ। এই প্রদেশের আর্থিক উন্নয়নে পাকিস্তানের সকল অংশের বিত্তশালী ব্যক্তিরা আগাইয়া আসিবেন বলিয়া তিনি আশা করেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৩ জানুয়ারি, ১৯৫৭

পাক-ভারত বাণিজ্য সম্মেলন

যোগদানকল্পে বৃহস্পতিবার আতাউর রহমানের দিল্লি যাত্রা নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান-ভারত বাণিজ্য সম্মেলনে যোগদানের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ও চিফ সেক্রেটারি হামিদ আলী আগামী ১৭ জানুয়ারি নয়াদিল্লি যাত্রা করিবেন। আগামীকল্য (বুধবার) এ সম্মেলন শুরু হইবে। প্রাদেশিক বাণিজ্য সচিব শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে। নয়াদিল্লির পথে গতকল্য সোমবার কলিকাতা রওয়ানা হইয়া গিয়াছেন। তাঁহার দফতরের সেক্রেটারি ডব্লিউ বি কাদরী এবং ডেপুটি সেক্রেটারি আইএ ইমতিয়াজী তাহার সঙ্গে গিয়াছেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৫ জানুয়ারি ১৯৫৭

শান্তিপূর্ণভাবে কাশ্মীর দিবস পালনের জন্য শেখ মুজিবের আবেদন

অদ্য ঢাকায় পূর্ণ হরতাল পালনের উদ্যোগ অদ্য (শনিবার) ঢাকায় বিভিন্ন ছাত্র প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক কাশ্মীর দিবস পালিত হইবে। এই দিবস উপলক্ষে পূর্ণ হরতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট, শোভাযাত্রা ও সভানুষ্ঠানের আয়োজন করা হইয়াছে। সমস্ত প্রকার যানবাহনও বন্ধ থাকিবে বলিয়া জানা গিয়াছে। গত সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সম্পাদক শ্রমসচিব শেখ মুজিবুর রহমান কর্মীদের সভায় শান্তিভঙ্গের জন্য সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকিতে বলিয়াছেন। তিনি কাশ্মীরকে পাইবার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে ও শৃঙ্খলা রক্ষা করিয়া সভা শোভাযাত্রা করিতে বহির্বিশ্বে পাকিস্তানের যেন সুনাম অক্ষুণ্ন থাকে সেই দিকে সকলকে দৃষ্টি রাখিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় মহল্লায় মহল্লায় শান্তিরক্ষার জন্য কর্মীদের সঙ্বদ্ধভাবে কার্য করিতে বলা হইয়াছে। কর্মীগণ অদ্য সমস্ত দিন ভারতীয় হাইকমিশন ও উহার প্রচার অফিসের সম্মুখ প্রহরারত থাকিবেন। তাহারা কোন প্রকার গোলযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে প্রতিরাধ করার উদ্দেশ্যে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন। পূর্বে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ছাত্রগণ দুপুর সাড়ে বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে জমায়েত হইয়া পরে শোভাযাত্রা করিয়া পল্টন ময়দানে সভা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হইবেন। অপর দলে ইসলাম লীগ মোহাজের প্রতিষ্ঠান কাশ্মীর জেহাদ প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা করিয়া অপরাহ্ণে ময়দানে পৌঁছিবে এবং তথা হইতে তাহারা বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য ভারতীয় দূতাবাস ও প্রচার অফিসের সম্মুখে যাইবেন। যানবাহন অদ্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকিবে। সিনেমা বা হাট-বাজার খোলা হইবে না।

রিকশা ধর্মঘট : ঢাকা রিকশা মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক এক বিবৃতিতে কাশ্মীর দিবস উপলক্ষে ঢাকা পৌর এলাকার রিকশা চালকদের প্রতি ধর্মঘটের আহ্বান জানাইয়াছেন। আরএসপি’র বিবৃতি

দৈনিক সংবাদ : ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৭