মাছ-পুঁজি সংকটে কমছে শুঁটকি

উদ্বৃত্ত মাছ না থাকায় জেলায় শুঁটকির উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে পুঁজির অভাব ও লাভের মুখ না দেখায় আগ্রহ হারাচ্ছেন উৎপাদনকারীরা।

হাওরবেষ্টিত হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলায় বর্ষা মওসুমে দেশীয় মাছের প্রচুর উৎপাদন হয়। এই মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়। এখানকার মাছ দেশের খাদ্য চাহিদা যেমন পূরণ করে। তেমনি বিদেশে রপ্তানি করায় বিদেশের চাহিদা পূরণ করে। জেলায় হাওর অঞ্চল থাকায় এখানকার অধিকাংশ গ্রামীণ সমাজের মানুষের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা চাষ করা। মাছ চাষ করে এখানকার লোকজন দেশের উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছেন। কেউ হাওরের বিল লিজ নিয়ে, কেউ বা নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আর এ মাছ হাওর থেকে ধরে বা কিনে এনে উৎপাদন করছেন মওসুমি শুঁটকি ব্যবসায়ীরা শুঁটকি। কিন্তু এ বছর মাছ মেলেনি আগের মতো। উদ্বৃত্ত মাছ না থাকায় নিম্নমুখী হচ্ছে শুঁটকির উৎপাদন। সেই সঙ্গে পুঁজির অভাব ও লাভের মুখ না দেখায় আগ্রহ হারাচ্ছেন উৎপাদনকারীরা।

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সরকারি পৃষ্টপোষকতা চান স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচঙ্গ, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই ও মাধবপুর উপজেলাসহ বেশকিছু উপজেলার প্রায় দুই হাজারেরও অধিক পরিবার শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখানকার শুঁটকিতে কোন রাসায়নিকের ব্যবহার না হওয়ায় এর স্বাদ ও কদর বেশি। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ায় শুঁটকি উৎপাদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গতবছর জেলায় শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। আর এবার তা নেমে এসেছে প্রায় ৮০ শতাংশ । এমতাবস্থায় উৎপাদনকারীদের লোকসানের পরিমাণ বাড়িয়েছে ঋণ। এখন মহাজনদের দেনা শোধ নিয়েই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এসব মানুষ। এ অবস্থায় সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের দাবি তাদের। সরেজমিনে গিয়ে ওইসব এলাকায় দেখা যায়, এখন চলছে শুঁটকির মৌসুম। সারি সারি মাচায় মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। বানিয়াচং উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের শুঁটকি উৎপাদনকারী মালা সরকার জানান, হাওর খাল, বিল ও বাজার থেকে মাছ সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর মাছগুলো কেটে লবণ মাখানো হয়। পরে তৈরিকৃত মাচায় শুকানো হয়। এক সপ্তাহ শুকানোর পর শুঁটকি তৈরি হয়। তিনি বলেন, এই শুঁটকি তৈরির আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এ বছর পর্যন্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার ফলে দাম দিয়ে মাছ কিন্তু হচ্ছে। আমরা কিভাবে আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার চালাব তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না । তাই আমরা সরকারের সহযোগিতা প্রার্থনা করছি’। শুঁটকি ব্যবসায়ী মহাদেব সরকার জানান, ‘আমরা আমাদের দাদার আমল থেকে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছি। আমার এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র মহিলা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার ফলে শুঁটকি উৎপাদন ব্যবহৃত হচ্ছে। এমতাবস্থায় এ ব্যবসা এখন আমাদের জন্য বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে’। ব্যবসায়ী সয়দেব সরকার জানান, আমরা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শুঁটকি ব্যবসা করছি। এ বছর ব্যবসা ভাল না হওয়ায় আমি কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব বুঝে উঠতে পারছি না। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত তা হলে কিছু হলেও আমাদের জন্য ভাল হত। একইসঙ্গে এ শিল্পটিতে বাঁচিয়ে রাখতে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্যও দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. শাহজাদা খসরু বলেন, শুঁটকি উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে মাছের বংশবৃদ্ধিতে শুঁটকি ব্যবসায়ীসহ সকলকে সচেতন হতে হবে। এছাড়াও সহজশর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও মাছের অভয়াশ্রম করলে আবারও শুঁটকি শিল্পে সুদিন ফিরে আসতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ লাভের আশায় কথিত সুটকি ব্যবসায়ীরা ক্যামিকেল মিশিয়ে সুটকি তৈরি করেন। এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করা হবে।

image

হবিগঞ্জ : শুঁটকি পল্লীতে কর্মব্যস্ত নারী শ্রমিকরা -সংবাদ

আরও খবর
বাসাইলের বালিয়া গ্রামে ৪৯ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি
সুবর্ণচরে মামলার সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষের বৈরী ঘোষণা
বেকারি শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ
পাবনায় প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ ধর্ষক গ্রেফতার
সীতাকুণ্ড সড়কে ১৭ দিনে নিহত ১৩
পটুয়াখালী শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ৩ কিমি. নালা
প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ১ আহত ৬ গ্রেফতার ২
যে চা-বাগানে প্রা. স্কুল নেই, সেখানে স্কুল হবে : বনমন্ত্রী
নলছিটিতে যুবকের মরদেহ উদ্ধার
যানজটের প্রধান কারণ রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী
ফরিদপুরে বাস কাউন্টারের শৌচাগারে নারী নিগ্রহ শ্রমিকের দণ্ড
বগুড়ায় টায়ার গুদাম ছাই
খুলনায় সোনালী ব্যাংক কর্তার জামিন নামঞ্জুর

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০ , ৩০ পৌষ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মাছ-পুঁজি সংকটে কমছে শুঁটকি

মোহাম্মদ শাহ্ আলম, হবিগঞ্জ

image

হবিগঞ্জ : শুঁটকি পল্লীতে কর্মব্যস্ত নারী শ্রমিকরা -সংবাদ

উদ্বৃত্ত মাছ না থাকায় জেলায় শুঁটকির উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে পুঁজির অভাব ও লাভের মুখ না দেখায় আগ্রহ হারাচ্ছেন উৎপাদনকারীরা।

হাওরবেষ্টিত হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলায় বর্ষা মওসুমে দেশীয় মাছের প্রচুর উৎপাদন হয়। এই মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়। এখানকার মাছ দেশের খাদ্য চাহিদা যেমন পূরণ করে। তেমনি বিদেশে রপ্তানি করায় বিদেশের চাহিদা পূরণ করে। জেলায় হাওর অঞ্চল থাকায় এখানকার অধিকাংশ গ্রামীণ সমাজের মানুষের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা চাষ করা। মাছ চাষ করে এখানকার লোকজন দেশের উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছেন। কেউ হাওরের বিল লিজ নিয়ে, কেউ বা নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আর এ মাছ হাওর থেকে ধরে বা কিনে এনে উৎপাদন করছেন মওসুমি শুঁটকি ব্যবসায়ীরা শুঁটকি। কিন্তু এ বছর মাছ মেলেনি আগের মতো। উদ্বৃত্ত মাছ না থাকায় নিম্নমুখী হচ্ছে শুঁটকির উৎপাদন। সেই সঙ্গে পুঁজির অভাব ও লাভের মুখ না দেখায় আগ্রহ হারাচ্ছেন উৎপাদনকারীরা।

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সরকারি পৃষ্টপোষকতা চান স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচঙ্গ, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই ও মাধবপুর উপজেলাসহ বেশকিছু উপজেলার প্রায় দুই হাজারেরও অধিক পরিবার শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখানকার শুঁটকিতে কোন রাসায়নিকের ব্যবহার না হওয়ায় এর স্বাদ ও কদর বেশি। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ায় শুঁটকি উৎপাদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গতবছর জেলায় শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। আর এবার তা নেমে এসেছে প্রায় ৮০ শতাংশ । এমতাবস্থায় উৎপাদনকারীদের লোকসানের পরিমাণ বাড়িয়েছে ঋণ। এখন মহাজনদের দেনা শোধ নিয়েই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এসব মানুষ। এ অবস্থায় সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের দাবি তাদের। সরেজমিনে গিয়ে ওইসব এলাকায় দেখা যায়, এখন চলছে শুঁটকির মৌসুম। সারি সারি মাচায় মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। বানিয়াচং উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের শুঁটকি উৎপাদনকারী মালা সরকার জানান, হাওর খাল, বিল ও বাজার থেকে মাছ সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর মাছগুলো কেটে লবণ মাখানো হয়। পরে তৈরিকৃত মাচায় শুকানো হয়। এক সপ্তাহ শুকানোর পর শুঁটকি তৈরি হয়। তিনি বলেন, এই শুঁটকি তৈরির আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এ বছর পর্যন্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার ফলে দাম দিয়ে মাছ কিন্তু হচ্ছে। আমরা কিভাবে আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার চালাব তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না । তাই আমরা সরকারের সহযোগিতা প্রার্থনা করছি’। শুঁটকি ব্যবসায়ী মহাদেব সরকার জানান, ‘আমরা আমাদের দাদার আমল থেকে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছি। আমার এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র মহিলা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার ফলে শুঁটকি উৎপাদন ব্যবহৃত হচ্ছে। এমতাবস্থায় এ ব্যবসা এখন আমাদের জন্য বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে’। ব্যবসায়ী সয়দেব সরকার জানান, আমরা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শুঁটকি ব্যবসা করছি। এ বছর ব্যবসা ভাল না হওয়ায় আমি কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব বুঝে উঠতে পারছি না। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত তা হলে কিছু হলেও আমাদের জন্য ভাল হত। একইসঙ্গে এ শিল্পটিতে বাঁচিয়ে রাখতে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্যও দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. শাহজাদা খসরু বলেন, শুঁটকি উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে মাছের বংশবৃদ্ধিতে শুঁটকি ব্যবসায়ীসহ সকলকে সচেতন হতে হবে। এছাড়াও সহজশর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও মাছের অভয়াশ্রম করলে আবারও শুঁটকি শিল্পে সুদিন ফিরে আসতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ লাভের আশায় কথিত সুটকি ব্যবসায়ীরা ক্যামিকেল মিশিয়ে সুটকি তৈরি করেন। এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করা হবে।