বায়ুদূষণ রোধে ৯ নির্দেশনা হাইকোর্টের

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে তলব

বায়ুদূষণ রোধে মাত্রাতিরিক্ত কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন জব্দ, ঢাকার আশেপাশের ইটভাটা বন্ধ এবং টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধসহ বেশ ৯টি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ অধিদফতর ও ঢাকা সিটি করপোরেশনকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাঈদ আহমদ রাজা ও তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আদালত, সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক যানবাহনের ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলেছে। যেসব পরিবহনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’র পেরিয়ে গেছে, সেসব বাহন নিষিদ্ধের ব্যবস্থা নিতে বলেছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলেছে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনও বন্ধ করা হয়নি, সেগুলা বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলেছে। ঢাকার বায়ুমান উন্নয়নে পরিবেশ অধিদফতর কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অধিদফতরে জনবল নিয়োগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানাতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেছিল এইচআরপিবি। সেই প্রেক্ষিতে আদালত পানি ছিটানো ও ধুলাবালি কমানোর বিষয়ে দুটো নির্দেশনা দিয়েছিল। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রোববার দুটি বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। আমরা বলেছি, এখন পর্যন্ত বায়ু দূষণে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। এটা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ দরকার। সে জন্য সম্পূরক আবেদনে ১২ দফা নির্দেশনা চেয়ছিলাম। তার মধ্যে আদালত নয়টি নির্দেশনা দিয়েছে।

একই রাস্তা বারবার খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষোভ প্রকাশ করে উচ্চ আদালত বলেছেন, এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে : ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব ট্রাক বা অন্য যানবাহনে বালি বা মাটি পরিবহন করা হয়, সেগুলো ঢাকনাযুক্ত করতে হবে। যেসব জায়গায় নির্মাণ কাজ চলে সেসব জায়গায় ঢেকে দিয়ে কাজ করতে হবে। ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধের নির্দেশ। মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং মার্কেট ও দোকান বন্ধের পর ওই বর্জ্য সিটি করপোরেশনকে অপসারণ করার নির্দেশ।

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০ , ৩০ পৌষ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বায়ুদূষণ রোধে ৯ নির্দেশনা হাইকোর্টের

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে তলব

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বায়ুদূষণ রোধে মাত্রাতিরিক্ত কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন জব্দ, ঢাকার আশেপাশের ইটভাটা বন্ধ এবং টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধসহ বেশ ৯টি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ অধিদফতর ও ঢাকা সিটি করপোরেশনকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাঈদ আহমদ রাজা ও তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আদালত, সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক যানবাহনের ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলেছে। যেসব পরিবহনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’র পেরিয়ে গেছে, সেসব বাহন নিষিদ্ধের ব্যবস্থা নিতে বলেছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলেছে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনও বন্ধ করা হয়নি, সেগুলা বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলেছে। ঢাকার বায়ুমান উন্নয়নে পরিবেশ অধিদফতর কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অধিদফতরে জনবল নিয়োগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানাতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেছিল এইচআরপিবি। সেই প্রেক্ষিতে আদালত পানি ছিটানো ও ধুলাবালি কমানোর বিষয়ে দুটো নির্দেশনা দিয়েছিল। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রোববার দুটি বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। আমরা বলেছি, এখন পর্যন্ত বায়ু দূষণে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। এটা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ দরকার। সে জন্য সম্পূরক আবেদনে ১২ দফা নির্দেশনা চেয়ছিলাম। তার মধ্যে আদালত নয়টি নির্দেশনা দিয়েছে।

একই রাস্তা বারবার খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষোভ প্রকাশ করে উচ্চ আদালত বলেছেন, এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে : ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব ট্রাক বা অন্য যানবাহনে বালি বা মাটি পরিবহন করা হয়, সেগুলো ঢাকনাযুক্ত করতে হবে। যেসব জায়গায় নির্মাণ কাজ চলে সেসব জায়গায় ঢেকে দিয়ে কাজ করতে হবে। ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধের নির্দেশ। মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং মার্কেট ও দোকান বন্ধের পর ওই বর্জ্য সিটি করপোরেশনকে অপসারণ করার নির্দেশ।