থাইল্যান্ডের ডিজিটাল যাত্রা

মোস্তাফা জব্বার

থাইল্যান্ডে উদ্ভাবন সম্মেলন : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে প্রথম দায়িত্বকালেই ৫ থেকে ৭ জুন ২০১৮ তারিখে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ‘হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ইনোভেশন ডে’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আমি থাইল্যান্ড সফর করি। থাইল্যান্ড আমার অতি চেনা জায়গা। ভারতের বাইরে আকাশপথে প্রথম পা রাখার দেশ ছিল থাইল্যান্ড। স্পষ্ট মনে আছে প্রথমবার মাত্র পাচ ডলারের একটি হোটেলে ছিলাম। সেই হোটেলে কোন রেস্তোরা ছিলো না। হোটেলের বাইরে বের হয়ে খাবারের দোকানে সাপ ঝুলতে দেখে রুমে ফিরে নাবিস্কো বিস্কুট খেয়ে রাত কাটিয়েছিলাম। পরের সকালেও বিস্কুটের নাস্তা করেই বিকেলের ফ্লাইটের বদলে সকালে সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছিলাম। সেই থাইল্যান্ডে এরপর বহুবার গেছি। অনেকটা বাড়ির মতো মনে হয়। এখনতো প্রচুর বাংলাদেশি হোটেলও আছে। এক সময়ে সেক্সট্রেডের জন্য বিখ্যাত থাইল্যান্ড এখন আর সেই বদনাম ততোটা বহন করেনা। বরং থাইল্যান্ড এখন ব্যাপক অগ্রগতির পথে ধাবমান। ১৮ সালের আগে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আরও একাধিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। তবে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে প্রথম গেলাম ১৮ সালে। এরই মাঝে সেক্সট্রেডের দেশটি প্রথমে সৃজনশীল থাইল্যান্ড এবং পরে থাইল্যান্ড ৪.০ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সৃজনশীল থাইল্যান্ড কর্মসূচিটি আমার খুব পছন্দের। আমি এটি নিয়ে অনেক লিখেছি। তাদের ধারনাটি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যায় বলেও আমি মনে করি। তবে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি নিয়ে যতোই সামনে যাচ্ছি ততোই উদ্ভাবনের দিকে নজর যাচ্ছে। তবে সৃজনশীলতাও যে অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি হতে পারে তা থাইল্যান্ডই প্রথম দুনিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

থাইল্যান্ড পরিচিতি : থাইল্যান্ড বা তাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম তাইরাজ্য এর বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম ব্যাংকক। থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধকালীন সময় ব্যতীত কখনও কোন ইউরোপীয় বা বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ থাই জাতির মানুষ। এরা প্রায় সবাই থেরবাদী বৌদ্ধধর্ম পালন করে।

থাইল্যান্ডে বসবাসকারী অন্যান্য জাতির মধ্যে আছে চীনা, মালয় ও আদিবাসী পাহাড়ি জাতি, যেমন মং ও কারেন। থাইল্যান্ডের পরিশীলিত ধ্রুপদী সঙ্গীত ও নৃত্য এবং লোকশিল্প বিখ্যাত। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও ১৯৮০-এর দশক থেকে থাইল্যান্ডের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি ঘটছে। থাইল্যান্ড একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। থাইল্যান্ড এর ৫,১৪,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা যা মূল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যভাগে পরেছে। দেশটির এই ভৌগোলিক। অবস্থান জাতির সামাজ এবং সংস্কৃতিকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে- দেশটি এশিয়া থেকে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর যাওয়ার একমাত্র পথ নিয়ন্ত্রণ করে। থাই ভাষার আদর্শ রূপ থাইল্যান্ডের সরকারি ভাষা। এই আদর্শ থাই ভাষাতে এখানকার প্রায় ৪০% লোক কথা বলেন। এছাড়া থাই ভাষার অন্যান্য উপভাষায় আরও প্রায় ৫০% লোক কথা বলেন। থাইল্যান্ডে আরও প্রায় ৭০টি ভাষা প্রচলিত। আয়তন : ৩,২০০০০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ৬৭,০৯১,১২০ (২০১৪), শিক্ষার হার ৯২.৮৭%, মাথাপিছু আয় ৭২৭৭ ডলার।

সৃজনশীল থাইল্যান্ড : আমরা অনেকেই ছিলাম সেদিন। বাংলাদেশ থেকে একটি বিশাল প্রতিনিধিদল এবং থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের তথ্যপ্রযুক্তির জাতীয় সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ সেখানে জড়ো হয়েছিলাম। এসোসিওর বড় বড় নেতা মালয়েশিয়ার লি এবং থাইল্যান্ডের বুনরাকের সঙ্গে জাপান থেকে লুকাস লিমও এসেছিল। ব্যাংককের অভিজাত নভোটেল সিয়াম হোটেলের সম্মেলন কক্ষটি উৎসবের আমেজে সাজানো ছিল।

২০০৯ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে এসোসিও (এশিয়া ওসোনিয়া কম্পিউটিং সমিতি) নামক একটি আঞ্চলিক তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ব্যাংকক বিজনেস ভিজিট নামের একটি অনুষ্ঠানে আমরা ব্যাংককের নভোটেল সিয়াম হোটেলে জড়ো হয়েছিলাম। আমার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন আমার বন্ধু ও এসোসিওর ভিপি, সাবেক চেয়ারম্যান (বর্তমানে উপদেষ্টা) আব্দুল্লাহ এইচ কাফি। আমার সমিতির সাবেক ও বর্তমান পরিচালকদের কেউ কেউ ছিলেন-শফিক ভাই, সাইদ মুনির, ইউসূফ আলী শামিম, আশরাফ প্রমুখের নাম আমি স্মরণ করতে পারি।

সেখানেই প্রথম শুনলাম এক নতুন ও অভিনব ভাবনার কথা। ভাবনাটির নাম ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড-সৃজনশীল থাইল্যান্ড। কারও জন্য এটি বিস্ময়ের ছিল কিনা সেটি জানি না, তবে সত্যি সত্যি আমি অবাক হয়েছিলাম যখন থাইল্যান্ডের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সিপার প্রধান তার বক্তব্যে ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড কর্মসূচির কথা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বললেন। আমাদের ব্যাঙ্কক বিজনেস ভিজিটের অন্যতম আয়োজক এই সরকারি সংস্থার প্রধান খুব সহজে এমন একটি নতুন ধারণা পেশ করলেন; যা সত্যি সত্যি নুতন গন্তব্য ও প্রক্রিয়ার সন্ধান দেয়। থাইল্যান্ডের সেই কর্মসূচি তখন অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। কারণ থাইল্যান্ড তাদের সৃজনশীলতাকে কীভাবে কোথায় ব্যবহার করতে চায় সেটি হয়তো সবার কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তবে ৩১ আগস্ট ২০০৯ সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী অভিসিত সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেছিলেন, সৃজনশীল থাইল্যান্ড নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো থাইল্যান্ডের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, স্বাতন্ত্র্য ও উদ্ভাবনার সহায়তায় থাই সেবা ও পণ্যের মূল্য সংযোজন করা। এ ধারণাটির সঙ্গে থাইল্যান্ডের অব্যাহত অগ্রগতি ও পরিবেশ বান্ধব অর্থনীতি যুক্ত। যদি উৎপাদন ও শিল্প পণ্যের সঙ্গে সৃজনশীলতাকে যুক্ত করা যায় তবে থাইল্যান্ড তার কৃষি ও শিল্প পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতের মূল্য বহুগুণ বাাড়তে পারে। অভিসিৎ বলেন, ‘Thai food and handicrafts as examples in which uniqueness and creativity could be used to create greater value, based on the Thai identity, rich in artistic and aesthetic traditions.’

আমরা যদি সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলোর সাদামাটা ব্যাখ্যা করি তবে এটি স্পষ্ট হবে যে, এই জাতি থাইল্যান্ডের পণ্যের সঙ্গে তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবিষ্কারকে যুক্ত করে সেইসব পণ্যের উপযোগিতা বাড়াতে চায়। থাইল্যান্ডের এই কর্মসূচিটির বিষয়ে এক কথায় আমার মন্তব্য হলো, বাংলাদেশের সম্মানিত অর্থনীতিবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, নীতিনির্ধারক, আমলা, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ যদি এটি অনুভব করতো, তবে আমরা আমাদের চলমান অর্থনীতিকে রাতারাতি পাল্টে দিতে পারি।

আমি থাইল্যান্ডের এই কর্মসূচি নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে দেখেছি যে, এই কৌশল প্রয়োগ করার জন্য থাই সরকার ইতিমধ্যেই একটি সংস্থাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। এই সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা আছে. ‘Creative Thailand : Building Thailand’s Economy with Creativity’ is a campaign run by Thailand Creative & Design Center (TCDC), office of Knowledge Management and Development, with an aim to create public awareness toward the Creative Economy and promote the Creative Industry as a key for the national economic development. This project composes of the website www.creativethailand.org and the monthly magazine which is a free publication with an aim to promote creativity as a new economic engine for Thailand and to create better understanding of creativity as a key asset of Thai economic development in the future. http://www.tcdc.or.th/creative_thailand/

সৃজনশীল থাইল্যান্ড নিয়ে ভাবার মাঝেই থাইল্যান্ড আইআর ৪.০ এর কর্মসূচি হাতে নেয়। কোন সন্দেহ নেই যে এটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কর্মসূচি। যান্ত্রিক এই সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য থাইল্যান্ড এখন মরিয়া হয়ে কাজ করছে।

১৮ সালের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘ডিজিটাল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য উদ্ভাবন।’ সারা বিশ্বের মোট ৩০০ জন সরকারি প্রতিনিধি ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। আঞ্চলিক দেশসমূহের মধ্যে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার উন্নয়ন এবং উচ্চ গতি সম্পন্ন যোগাযোগ প্রযুক্তি স্থাপন বিষয়ক আলোচনা ছাড়াও এ সম্মেলনে ডিজিটাল অর্থনীতির ভবিষ্যৎ, কীভাবে ডিজিটাল অবকাঠানো মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, নতুন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেম নিয়ে আলোচনা হয়। থাইল্যান্ডের এই আয়োজন থেকে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট হয়েছে যে সারা দুনিয়ার একটি সাধারণ হুজুগের নাম ইনোভেশন বা উদ্ভাবন। সরকারি বেসরকারি কিংবা দেশি-বিদেশি সকলেই এই শব্দে ভবিষ্যৎ দেখতে পান।

হুয়াওয়ে রোটেটিং চেয়ারম্যান এর সঙ্গে ৫ জুন ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হুয়াওয়ের উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন কৌশল, বাংলাদেশে ইডিসি প্রকল্প বাস্তবায়ন, বাংলাদেশে ৫এ সামিট আয়োজনসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।

মূল সম্মেলনের শুরুতে ভিডিও প্রদর্শনীর পর Innovate for digital Economy শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে আমি অংশগ্রহণ করি।

সম্মেলনের দ্বিতীয়ার্ধে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে থাইল্যান্ড সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব ও উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও লাওস, কম্বোডিয়া, শ্রীলংকা এবং মালয়েশিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। শুরুতেই থাইল্যান্ডের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী Dr. Suvit Maesincee তার স্বাগত বক্তব্য ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের প্রভাব, বিজনেস মডেল, ডিজিটালাইজেশন এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনী বিষয়ে আলোচনা করেন। সেখানে আমি Government’s Role in Promoting Industrial Digitalization বিষয়ে মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য প্রদান করি। আমি আমার বক্তব্যে বলেছি যে, বাংলাদেশের টার্গেট হচ্ছে ২০২১ সালে ৫জি সেবা চালু করা। আমি একটি দেশের ডিজিটাল রূপান্তরে সরকারের ভূমিকা ও অধিক কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করি। আমি ডিজিটাল সরকারকে আরও কার্যকর করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা ও গ্লোবাল কানেক্টিভিটির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।

সম্মেলনে সমৃদ্ধ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল গড়তে নতুন উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের জন্য ৮১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীবর্গ নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমার এ সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।

থাইল্যান্ড সফরের প্রধানতম অর্জন হলো বাংলাদেশ সম্পর্কে অনুন্নত, পশ্চাদপদ, কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে যে পরিচিতি বিরাজ করছিলো তা দূরীভূত হয়ে একটি ডিজিটাল দেশের মর্যাদা অর্জন করা। যখনই বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের কথাগুলো দর্শক-মন্ত্রীদেরকে বলেছি তখনই তারা চোখ কপালে তুলেছে।

এক সময়ে থাইল্যান্ড গেলে আমাদের মনে হতো ওদের কাতারে যেতে আমাদের অনেক সময় লাগবে। আমি এটিসিআই’র সঙ্গে বিসিএস এর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সময় ভেবেছিলাম ওদের কাছ থেকে জ্ঞান নিয়ে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে হতে পারে। কিন্তু গত এগারো বছরে আমাদের অগ্রযাত্রা এমন যে এখন আমরা থাইল্যান্ডকে জ্ঞান দিতে পারি যে ডিজিটাইজেশন কাকে বলে। থাইল্যান্ডের বর্তমান সরকারের একটি বিষয় আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তারা এ অঞ্চলে অনেকের আগে ৫জি প্রযুক্তি চালু করতে যাচ্ছে।

ঢাকা, ১০ জানুয়ারি ২০২০ ॥ মতামত লেখকের নিজস্ব।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক]

mustafajabbar@gmail.com

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০ , ৩০ পৌষ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

থাইল্যান্ডের ডিজিটাল যাত্রা

মোস্তাফা জব্বার

থাইল্যান্ডে উদ্ভাবন সম্মেলন : ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে প্রথম দায়িত্বকালেই ৫ থেকে ৭ জুন ২০১৮ তারিখে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ‘হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ইনোভেশন ডে’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আমি থাইল্যান্ড সফর করি। থাইল্যান্ড আমার অতি চেনা জায়গা। ভারতের বাইরে আকাশপথে প্রথম পা রাখার দেশ ছিল থাইল্যান্ড। স্পষ্ট মনে আছে প্রথমবার মাত্র পাচ ডলারের একটি হোটেলে ছিলাম। সেই হোটেলে কোন রেস্তোরা ছিলো না। হোটেলের বাইরে বের হয়ে খাবারের দোকানে সাপ ঝুলতে দেখে রুমে ফিরে নাবিস্কো বিস্কুট খেয়ে রাত কাটিয়েছিলাম। পরের সকালেও বিস্কুটের নাস্তা করেই বিকেলের ফ্লাইটের বদলে সকালে সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছিলাম। সেই থাইল্যান্ডে এরপর বহুবার গেছি। অনেকটা বাড়ির মতো মনে হয়। এখনতো প্রচুর বাংলাদেশি হোটেলও আছে। এক সময়ে সেক্সট্রেডের জন্য বিখ্যাত থাইল্যান্ড এখন আর সেই বদনাম ততোটা বহন করেনা। বরং থাইল্যান্ড এখন ব্যাপক অগ্রগতির পথে ধাবমান। ১৮ সালের আগে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আরও একাধিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। তবে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে প্রথম গেলাম ১৮ সালে। এরই মাঝে সেক্সট্রেডের দেশটি প্রথমে সৃজনশীল থাইল্যান্ড এবং পরে থাইল্যান্ড ৪.০ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সৃজনশীল থাইল্যান্ড কর্মসূচিটি আমার খুব পছন্দের। আমি এটি নিয়ে অনেক লিখেছি। তাদের ধারনাটি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যায় বলেও আমি মনে করি। তবে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি নিয়ে যতোই সামনে যাচ্ছি ততোই উদ্ভাবনের দিকে নজর যাচ্ছে। তবে সৃজনশীলতাও যে অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি হতে পারে তা থাইল্যান্ডই প্রথম দুনিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

থাইল্যান্ড পরিচিতি : থাইল্যান্ড বা তাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম তাইরাজ্য এর বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম ব্যাংকক। থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধকালীন সময় ব্যতীত কখনও কোন ইউরোপীয় বা বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ থাই জাতির মানুষ। এরা প্রায় সবাই থেরবাদী বৌদ্ধধর্ম পালন করে।

থাইল্যান্ডে বসবাসকারী অন্যান্য জাতির মধ্যে আছে চীনা, মালয় ও আদিবাসী পাহাড়ি জাতি, যেমন মং ও কারেন। থাইল্যান্ডের পরিশীলিত ধ্রুপদী সঙ্গীত ও নৃত্য এবং লোকশিল্প বিখ্যাত। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও ১৯৮০-এর দশক থেকে থাইল্যান্ডের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি ঘটছে। থাইল্যান্ড একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। থাইল্যান্ড এর ৫,১৪,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা যা মূল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যভাগে পরেছে। দেশটির এই ভৌগোলিক। অবস্থান জাতির সামাজ এবং সংস্কৃতিকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে- দেশটি এশিয়া থেকে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর যাওয়ার একমাত্র পথ নিয়ন্ত্রণ করে। থাই ভাষার আদর্শ রূপ থাইল্যান্ডের সরকারি ভাষা। এই আদর্শ থাই ভাষাতে এখানকার প্রায় ৪০% লোক কথা বলেন। এছাড়া থাই ভাষার অন্যান্য উপভাষায় আরও প্রায় ৫০% লোক কথা বলেন। থাইল্যান্ডে আরও প্রায় ৭০টি ভাষা প্রচলিত। আয়তন : ৩,২০০০০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ৬৭,০৯১,১২০ (২০১৪), শিক্ষার হার ৯২.৮৭%, মাথাপিছু আয় ৭২৭৭ ডলার।

সৃজনশীল থাইল্যান্ড : আমরা অনেকেই ছিলাম সেদিন। বাংলাদেশ থেকে একটি বিশাল প্রতিনিধিদল এবং থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের তথ্যপ্রযুক্তির জাতীয় সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ সেখানে জড়ো হয়েছিলাম। এসোসিওর বড় বড় নেতা মালয়েশিয়ার লি এবং থাইল্যান্ডের বুনরাকের সঙ্গে জাপান থেকে লুকাস লিমও এসেছিল। ব্যাংককের অভিজাত নভোটেল সিয়াম হোটেলের সম্মেলন কক্ষটি উৎসবের আমেজে সাজানো ছিল।

২০০৯ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে এসোসিও (এশিয়া ওসোনিয়া কম্পিউটিং সমিতি) নামক একটি আঞ্চলিক তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ব্যাংকক বিজনেস ভিজিট নামের একটি অনুষ্ঠানে আমরা ব্যাংককের নভোটেল সিয়াম হোটেলে জড়ো হয়েছিলাম। আমার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন আমার বন্ধু ও এসোসিওর ভিপি, সাবেক চেয়ারম্যান (বর্তমানে উপদেষ্টা) আব্দুল্লাহ এইচ কাফি। আমার সমিতির সাবেক ও বর্তমান পরিচালকদের কেউ কেউ ছিলেন-শফিক ভাই, সাইদ মুনির, ইউসূফ আলী শামিম, আশরাফ প্রমুখের নাম আমি স্মরণ করতে পারি।

সেখানেই প্রথম শুনলাম এক নতুন ও অভিনব ভাবনার কথা। ভাবনাটির নাম ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড-সৃজনশীল থাইল্যান্ড। কারও জন্য এটি বিস্ময়ের ছিল কিনা সেটি জানি না, তবে সত্যি সত্যি আমি অবাক হয়েছিলাম যখন থাইল্যান্ডের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সিপার প্রধান তার বক্তব্যে ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড কর্মসূচির কথা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বললেন। আমাদের ব্যাঙ্কক বিজনেস ভিজিটের অন্যতম আয়োজক এই সরকারি সংস্থার প্রধান খুব সহজে এমন একটি নতুন ধারণা পেশ করলেন; যা সত্যি সত্যি নুতন গন্তব্য ও প্রক্রিয়ার সন্ধান দেয়। থাইল্যান্ডের সেই কর্মসূচি তখন অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। কারণ থাইল্যান্ড তাদের সৃজনশীলতাকে কীভাবে কোথায় ব্যবহার করতে চায় সেটি হয়তো সবার কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তবে ৩১ আগস্ট ২০০৯ সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী অভিসিত সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেছিলেন, সৃজনশীল থাইল্যান্ড নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো থাইল্যান্ডের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, স্বাতন্ত্র্য ও উদ্ভাবনার সহায়তায় থাই সেবা ও পণ্যের মূল্য সংযোজন করা। এ ধারণাটির সঙ্গে থাইল্যান্ডের অব্যাহত অগ্রগতি ও পরিবেশ বান্ধব অর্থনীতি যুক্ত। যদি উৎপাদন ও শিল্প পণ্যের সঙ্গে সৃজনশীলতাকে যুক্ত করা যায় তবে থাইল্যান্ড তার কৃষি ও শিল্প পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতের মূল্য বহুগুণ বাাড়তে পারে। অভিসিৎ বলেন, ‘Thai food and handicrafts as examples in which uniqueness and creativity could be used to create greater value, based on the Thai identity, rich in artistic and aesthetic traditions.’

আমরা যদি সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলোর সাদামাটা ব্যাখ্যা করি তবে এটি স্পষ্ট হবে যে, এই জাতি থাইল্যান্ডের পণ্যের সঙ্গে তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবিষ্কারকে যুক্ত করে সেইসব পণ্যের উপযোগিতা বাড়াতে চায়। থাইল্যান্ডের এই কর্মসূচিটির বিষয়ে এক কথায় আমার মন্তব্য হলো, বাংলাদেশের সম্মানিত অর্থনীতিবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, নীতিনির্ধারক, আমলা, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ যদি এটি অনুভব করতো, তবে আমরা আমাদের চলমান অর্থনীতিকে রাতারাতি পাল্টে দিতে পারি।

আমি থাইল্যান্ডের এই কর্মসূচি নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে দেখেছি যে, এই কৌশল প্রয়োগ করার জন্য থাই সরকার ইতিমধ্যেই একটি সংস্থাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। এই সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা আছে. ‘Creative Thailand : Building Thailand’s Economy with Creativity’ is a campaign run by Thailand Creative & Design Center (TCDC), office of Knowledge Management and Development, with an aim to create public awareness toward the Creative Economy and promote the Creative Industry as a key for the national economic development. This project composes of the website www.creativethailand.org and the monthly magazine which is a free publication with an aim to promote creativity as a new economic engine for Thailand and to create better understanding of creativity as a key asset of Thai economic development in the future. http://www.tcdc.or.th/creative_thailand/

সৃজনশীল থাইল্যান্ড নিয়ে ভাবার মাঝেই থাইল্যান্ড আইআর ৪.০ এর কর্মসূচি হাতে নেয়। কোন সন্দেহ নেই যে এটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কর্মসূচি। যান্ত্রিক এই সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য থাইল্যান্ড এখন মরিয়া হয়ে কাজ করছে।

১৮ সালের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘ডিজিটাল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য উদ্ভাবন।’ সারা বিশ্বের মোট ৩০০ জন সরকারি প্রতিনিধি ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। আঞ্চলিক দেশসমূহের মধ্যে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার উন্নয়ন এবং উচ্চ গতি সম্পন্ন যোগাযোগ প্রযুক্তি স্থাপন বিষয়ক আলোচনা ছাড়াও এ সম্মেলনে ডিজিটাল অর্থনীতির ভবিষ্যৎ, কীভাবে ডিজিটাল অবকাঠানো মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করে, নতুন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করে, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেম নিয়ে আলোচনা হয়। থাইল্যান্ডের এই আয়োজন থেকে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট হয়েছে যে সারা দুনিয়ার একটি সাধারণ হুজুগের নাম ইনোভেশন বা উদ্ভাবন। সরকারি বেসরকারি কিংবা দেশি-বিদেশি সকলেই এই শব্দে ভবিষ্যৎ দেখতে পান।

হুয়াওয়ে রোটেটিং চেয়ারম্যান এর সঙ্গে ৫ জুন ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হুয়াওয়ের উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন কৌশল, বাংলাদেশে ইডিসি প্রকল্প বাস্তবায়ন, বাংলাদেশে ৫এ সামিট আয়োজনসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।

মূল সম্মেলনের শুরুতে ভিডিও প্রদর্শনীর পর Innovate for digital Economy শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে আমি অংশগ্রহণ করি।

সম্মেলনের দ্বিতীয়ার্ধে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে থাইল্যান্ড সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব ও উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও লাওস, কম্বোডিয়া, শ্রীলংকা এবং মালয়েশিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। শুরুতেই থাইল্যান্ডের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী Dr. Suvit Maesincee তার স্বাগত বক্তব্য ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের প্রভাব, বিজনেস মডেল, ডিজিটালাইজেশন এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনী বিষয়ে আলোচনা করেন। সেখানে আমি Government’s Role in Promoting Industrial Digitalization বিষয়ে মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য প্রদান করি। আমি আমার বক্তব্যে বলেছি যে, বাংলাদেশের টার্গেট হচ্ছে ২০২১ সালে ৫জি সেবা চালু করা। আমি একটি দেশের ডিজিটাল রূপান্তরে সরকারের ভূমিকা ও অধিক কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করি। আমি ডিজিটাল সরকারকে আরও কার্যকর করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা ও গ্লোবাল কানেক্টিভিটির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।

সম্মেলনে সমৃদ্ধ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল গড়তে নতুন উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের জন্য ৮১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীবর্গ নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমার এ সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।

থাইল্যান্ড সফরের প্রধানতম অর্জন হলো বাংলাদেশ সম্পর্কে অনুন্নত, পশ্চাদপদ, কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে যে পরিচিতি বিরাজ করছিলো তা দূরীভূত হয়ে একটি ডিজিটাল দেশের মর্যাদা অর্জন করা। যখনই বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের কথাগুলো দর্শক-মন্ত্রীদেরকে বলেছি তখনই তারা চোখ কপালে তুলেছে।

এক সময়ে থাইল্যান্ড গেলে আমাদের মনে হতো ওদের কাতারে যেতে আমাদের অনেক সময় লাগবে। আমি এটিসিআই’র সঙ্গে বিসিএস এর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সময় ভেবেছিলাম ওদের কাছ থেকে জ্ঞান নিয়ে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে হতে পারে। কিন্তু গত এগারো বছরে আমাদের অগ্রযাত্রা এমন যে এখন আমরা থাইল্যান্ডকে জ্ঞান দিতে পারি যে ডিজিটাইজেশন কাকে বলে। থাইল্যান্ডের বর্তমান সরকারের একটি বিষয় আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তারা এ অঞ্চলে অনেকের আগে ৫জি প্রযুক্তি চালু করতে যাচ্ছে।

ঢাকা, ১০ জানুয়ারি ২০২০ ॥ মতামত লেখকের নিজস্ব।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক]

mustafajabbar@gmail.com