সরকারি বিধি অনুযায়ী নদীর দুই তীরের যে অংশ শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে এবং বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায় তা ফোরশোর নামে অভিহিত হয়ে থাকে। ওই ফোরশোর এলাকায় কারও অধিকার থাকে না। কেউ এই জমি দখল করলে তিনি বেআইনি দখলদার হিসেবে চিহ্নিত হবেন। তবে সরকারি এ বিধি ভঙ্গ করে বরিশাল নগরের পূর্ব রূপাতলী এলাকার খলিফা বাড়ি পয়েন্ট থেকে উত্তরে কাটাদিয়া খাল পর্যন্ত কীর্তনখোলার পশ্চিম তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার ফোরশোর দখল করা হচ্ছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকার প্রভাবশালী রাইভিউল কবির স্বপন প্রকাশ্যে কীর্তনখোলার তীর দখল করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দখল বন্ধে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
সরজমিনে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী মৌজার আওতাধীন কীর্তনখোলার ওই অংশে গিয়ে দেখা গেছে নদী তীরের খলিফা বাড়ি পয়েন্ট থেকে মেহগনি গাছ দিয়ে পাইলিং করে বালি ও মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে নদী। দখলের কবলে পরা নদীর এ অংশের দুই স্থানে ভাঙ্গণ প্রতিরোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেলানো কংক্রিটের ব্লক দিয়ে পাকা গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্ব রূপাতলী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রাইভিউল কবির স্বপন এক সময়ে নগরের মধ্যেই কীর্তনখোলার তীরে ইট ভাটা করেছিলেন। প্রশাসনিক চাপে ওই ইট ভাটা বন্ধ করলেও এখন কীর্তনখোলার তীর জুড়ে ইট, বালি, পাথরের স্তুপ এবং ডকইয়ার্ড গড়ে তুলেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে ‘স্বপন মিয়ার ডক’ নামে পরিচিত ইয়ার্ডটিতে সদ্য দুর্ঘটনা কবলিত কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি মেরামত করা হচ্ছে। ডকইয়ার্ডটির মধ্যে চোখে পড়ে শতশত কংক্রিটের ব্লক। যা পাউবো তৈরি করেছিল ভাঙ্গন প্রতিরোধ কাজে ব্যবহারের জন্য। আশপাশের লোকজনের অভিযোগ, রাইভিউল কবির স্বপন পাউবোর ওই ব্লকগুলো ডকইয়ার্ডের প্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। এ অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। ব্লক দিয়ে ডকইয়ার্ডের মধ্যে একাধিক দেয়াল নির্মান করা হয়েছে। পূর্ব রূপাতলী এলাকার প্রবীণদের মতে, রাইভিউল কবির স্বপন নানা কৌশলে কাগজপত্র তৈরি করে কীর্তনখোলা তীরের বিশাল অংশের মালিক হয়েছেন। এখন নদীর অংশ দখল করে সেই জমির প্রশস্ততা বাড়াচ্ছেন।
কীর্তনখোলার তীর ভরাট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাইভিউল কবির স্বপন বলেন, খলিফা বাড়ি থেকে কাটাদিয়া খাল পর্যন্ত কীর্তনখোলা তীরে তার ১৭ একর রেকর্ডিয় জমি আছে। যেখানে পাইলিং দেয়া হচ্ছে সেখানের একটি দাগে ৫৯ শতাংশ জমি ছিল। এখন আছে ২৫ শতাংশ। বাকিটা নদীতে ভেঙে গেছে। ভাঙ্গন ঠেকাতেই পাইলিং দিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে স্বপন বলেন, আমার সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রোটেকশন দিচ্ছি, কারো অনুমতি নেইনি। কারণ জমি আমার। গাইড ওয়াল নির্মাণে এবং ডকইয়ার্ডের কাজে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বরিশাল নৌ-বন্দরের উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণের রূপাতলী সিএসডি গোডাউনের খালের দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তীর বিআইডব্লিউটিএর। বাকি অংশ জেলা প্রশাসনের। তবে বন্দর সংলগ্ন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরে উচ্চ জলরেখা থেকে তীরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত উভয় তীরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর রয়েছে। যার অর্ধেকই বেদখল হয়ে গেছে।
বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, কীর্তনখোলা নদীর প্রশস্ততা ছিল এক কিলোমিটার। দখলে তা সংকুচিত হয়েছে। কীর্তনখোলার দখল প্রতিরোধ করা না হলে নগরী বিপন্ন হবে। নদীকে জীবন্তসত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ জীবন্তসত্তা রক্ষায় প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আমরা কীর্তনখোলার সব দখলদারদের উচ্ছেদ চাই। তার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগীতা আমরা করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএকে সঙ্গে নিয়ে দখলদারদের হালনাগাদ তালিকা করা হচ্ছে। ওই তালিকা চূড়ান্ত হলেই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট এখনও পাওয়া যায়নি। পূর্ব রূপাতলী পয়েন্টে কীর্তনখোলা দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদী দখল করা বেআইনি। ওই দখলদারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২০ , ৪ মাঘ ১৪২৬, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল
সরকারি বিধি অনুযায়ী নদীর দুই তীরের যে অংশ শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে এবং বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায় তা ফোরশোর নামে অভিহিত হয়ে থাকে। ওই ফোরশোর এলাকায় কারও অধিকার থাকে না। কেউ এই জমি দখল করলে তিনি বেআইনি দখলদার হিসেবে চিহ্নিত হবেন। তবে সরকারি এ বিধি ভঙ্গ করে বরিশাল নগরের পূর্ব রূপাতলী এলাকার খলিফা বাড়ি পয়েন্ট থেকে উত্তরে কাটাদিয়া খাল পর্যন্ত কীর্তনখোলার পশ্চিম তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার ফোরশোর দখল করা হচ্ছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকার প্রভাবশালী রাইভিউল কবির স্বপন প্রকাশ্যে কীর্তনখোলার তীর দখল করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দখল বন্ধে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
সরজমিনে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী মৌজার আওতাধীন কীর্তনখোলার ওই অংশে গিয়ে দেখা গেছে নদী তীরের খলিফা বাড়ি পয়েন্ট থেকে মেহগনি গাছ দিয়ে পাইলিং করে বালি ও মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে নদী। দখলের কবলে পরা নদীর এ অংশের দুই স্থানে ভাঙ্গণ প্রতিরোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেলানো কংক্রিটের ব্লক দিয়ে পাকা গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্ব রূপাতলী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রাইভিউল কবির স্বপন এক সময়ে নগরের মধ্যেই কীর্তনখোলার তীরে ইট ভাটা করেছিলেন। প্রশাসনিক চাপে ওই ইট ভাটা বন্ধ করলেও এখন কীর্তনখোলার তীর জুড়ে ইট, বালি, পাথরের স্তুপ এবং ডকইয়ার্ড গড়ে তুলেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে ‘স্বপন মিয়ার ডক’ নামে পরিচিত ইয়ার্ডটিতে সদ্য দুর্ঘটনা কবলিত কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি মেরামত করা হচ্ছে। ডকইয়ার্ডটির মধ্যে চোখে পড়ে শতশত কংক্রিটের ব্লক। যা পাউবো তৈরি করেছিল ভাঙ্গন প্রতিরোধ কাজে ব্যবহারের জন্য। আশপাশের লোকজনের অভিযোগ, রাইভিউল কবির স্বপন পাউবোর ওই ব্লকগুলো ডকইয়ার্ডের প্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। এ অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। ব্লক দিয়ে ডকইয়ার্ডের মধ্যে একাধিক দেয়াল নির্মান করা হয়েছে। পূর্ব রূপাতলী এলাকার প্রবীণদের মতে, রাইভিউল কবির স্বপন নানা কৌশলে কাগজপত্র তৈরি করে কীর্তনখোলা তীরের বিশাল অংশের মালিক হয়েছেন। এখন নদীর অংশ দখল করে সেই জমির প্রশস্ততা বাড়াচ্ছেন।
কীর্তনখোলার তীর ভরাট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাইভিউল কবির স্বপন বলেন, খলিফা বাড়ি থেকে কাটাদিয়া খাল পর্যন্ত কীর্তনখোলা তীরে তার ১৭ একর রেকর্ডিয় জমি আছে। যেখানে পাইলিং দেয়া হচ্ছে সেখানের একটি দাগে ৫৯ শতাংশ জমি ছিল। এখন আছে ২৫ শতাংশ। বাকিটা নদীতে ভেঙে গেছে। ভাঙ্গন ঠেকাতেই পাইলিং দিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে স্বপন বলেন, আমার সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রোটেকশন দিচ্ছি, কারো অনুমতি নেইনি। কারণ জমি আমার। গাইড ওয়াল নির্মাণে এবং ডকইয়ার্ডের কাজে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বরিশাল নৌ-বন্দরের উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণের রূপাতলী সিএসডি গোডাউনের খালের দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তীর বিআইডব্লিউটিএর। বাকি অংশ জেলা প্রশাসনের। তবে বন্দর সংলগ্ন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরে উচ্চ জলরেখা থেকে তীরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত উভয় তীরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর রয়েছে। যার অর্ধেকই বেদখল হয়ে গেছে।
বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, কীর্তনখোলা নদীর প্রশস্ততা ছিল এক কিলোমিটার। দখলে তা সংকুচিত হয়েছে। কীর্তনখোলার দখল প্রতিরোধ করা না হলে নগরী বিপন্ন হবে। নদীকে জীবন্তসত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ জীবন্তসত্তা রক্ষায় প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আমরা কীর্তনখোলার সব দখলদারদের উচ্ছেদ চাই। তার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগীতা আমরা করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএকে সঙ্গে নিয়ে দখলদারদের হালনাগাদ তালিকা করা হচ্ছে। ওই তালিকা চূড়ান্ত হলেই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট এখনও পাওয়া যায়নি। পূর্ব রূপাতলী পয়েন্টে কীর্তনখোলা দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদী দখল করা বেআইনি। ওই দখলদারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।