রাজধানীর ভাটারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া গৃহবধূর সালাম আক্তার সুমির মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল চলছে। পুলিশের দাবি গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে কিন্তু নিহতের পরিবারের দাবি সুমিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ হত্যা মামলা গ্রহণ করেনি। পরে তিনি বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা মামলা করলেও সেখানে সুমির আত্মহত্যার প্রচরণার অভিযোগ আনেন তার স্বামী ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ৪০ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ সুমির স্বামীকে ওমর ফারুককে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত ৭ ডিসেম্বর বসুন্ধরার আবাসিক এলাকার জে ব্লকের ১৪ নম্বর রোডের ৪৩০ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে সালমা আক্তার সুমির (২৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মৃতের বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। মামলায় নিহতের স্বামীর বিরুদ্ধে সুমিকে অত্মহত্যা করতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ভাটারা থানার এসআই জিয়াউল হক। কিন্তু ইতোমদ্যে ৪০ দিন পর হয়ে গেলেও পুলিশ ফারুককে গ্রেফতার করেনি।
নিহতের বাবা ও মামলার বাদীর অভিযোগ তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তিনি পুলিশের কথায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে বলছে, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আসামিপক্ষ প্রভাবশালী। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে আসল রহস্য উদ্ঘাটন হবে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে উদাসীন।
অপমৃত্যুর মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই জিয়াউল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে পরবর্তীতে ওই মামলায় বাদী আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ করেন। মৃতের স্বামী ওমর ফারুককে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছে।
মামলার বাদী আবদুস সালাম বলেন, হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৬ জুন ওমর ফারুকের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর ওমর ফারুক যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ৫ লাখ টাকায় একটি রিকন্ডিশন প্রাইভেট কার কিনে দেয়া হয়। এরপরও মাঝে মধ্যে তার মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে যান। ওই সময় মেয়ের স্বামী ওমর ফারুক ফোন করে জানায় যে সুমি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসার কক্ষে গলায় দড়ি দিয়েছে। এই খবর শুনে ঢাকায় রওনা দেন। পরে তিনি ভাটারা থানায় পৌঁছলে, পুলিশ একটি আত্মহত্যার মামলায় স্বাক্ষর করতে বলে। ওই সময় তিনি পুলিশকে জানান যে তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যা মামলা দায়ের করতে চান। কিন্তু পুলিশ বলে যে, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা ছাড়া তাদের কাছে কোন আইন নেই। তিনি বাধ্য হয়ে অপমৃত্যুর মামলায় স্বাক্ষর করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার পর মেয়ের স্বামী সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে প্রভাব বিস্তার করে। গত ১৪ জানুয়ারি ভাটারা থানা থেকে জানানো হয় যে তার মেয়ের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের কাছে এসেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি থানায় উপস্থিত হয়ে ওই অপমৃত্যুর মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ আনেন। এতে ওমর ফারুককে আসামি করা হয়েছে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জিয়াউল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় আসামি পুলিশের কাছে বলেছিলেন, বাসার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে সুমি আরেকটি কক্ষে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয়। পরে দরজার নীচের ফাঁকা স্থান দিয়ে দেখতে পান যে সুমির দুই পা ঝুলছে। বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী ও পুলিশ ডেকে নিয়ে দরজা ভেঙে সুমির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২০ , ৪ মাঘ ১৪২৬, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
রাজধানীর ভাটারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া গৃহবধূর সালাম আক্তার সুমির মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল চলছে। পুলিশের দাবি গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে কিন্তু নিহতের পরিবারের দাবি সুমিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ হত্যা মামলা গ্রহণ করেনি। পরে তিনি বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা মামলা করলেও সেখানে সুমির আত্মহত্যার প্রচরণার অভিযোগ আনেন তার স্বামী ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ৪০ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ সুমির স্বামীকে ওমর ফারুককে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত ৭ ডিসেম্বর বসুন্ধরার আবাসিক এলাকার জে ব্লকের ১৪ নম্বর রোডের ৪৩০ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে সালমা আক্তার সুমির (২৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মৃতের বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। মামলায় নিহতের স্বামীর বিরুদ্ধে সুমিকে অত্মহত্যা করতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ভাটারা থানার এসআই জিয়াউল হক। কিন্তু ইতোমদ্যে ৪০ দিন পর হয়ে গেলেও পুলিশ ফারুককে গ্রেফতার করেনি।
নিহতের বাবা ও মামলার বাদীর অভিযোগ তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তিনি পুলিশের কথায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে বলছে, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আসামিপক্ষ প্রভাবশালী। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে আসল রহস্য উদ্ঘাটন হবে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে উদাসীন।
অপমৃত্যুর মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই জিয়াউল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে পরবর্তীতে ওই মামলায় বাদী আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ করেন। মৃতের স্বামী ওমর ফারুককে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছে।
মামলার বাদী আবদুস সালাম বলেন, হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৬ জুন ওমর ফারুকের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর ওমর ফারুক যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ৫ লাখ টাকায় একটি রিকন্ডিশন প্রাইভেট কার কিনে দেয়া হয়। এরপরও মাঝে মধ্যে তার মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে যান। ওই সময় মেয়ের স্বামী ওমর ফারুক ফোন করে জানায় যে সুমি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসার কক্ষে গলায় দড়ি দিয়েছে। এই খবর শুনে ঢাকায় রওনা দেন। পরে তিনি ভাটারা থানায় পৌঁছলে, পুলিশ একটি আত্মহত্যার মামলায় স্বাক্ষর করতে বলে। ওই সময় তিনি পুলিশকে জানান যে তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যা মামলা দায়ের করতে চান। কিন্তু পুলিশ বলে যে, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা ছাড়া তাদের কাছে কোন আইন নেই। তিনি বাধ্য হয়ে অপমৃত্যুর মামলায় স্বাক্ষর করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার পর মেয়ের স্বামী সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে প্রভাব বিস্তার করে। গত ১৪ জানুয়ারি ভাটারা থানা থেকে জানানো হয় যে তার মেয়ের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের কাছে এসেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি থানায় উপস্থিত হয়ে ওই অপমৃত্যুর মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ আনেন। এতে ওমর ফারুককে আসামি করা হয়েছে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জিয়াউল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় আসামি পুলিশের কাছে বলেছিলেন, বাসার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে সুমি আরেকটি কক্ষে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয়। পরে দরজার নীচের ফাঁকা স্থান দিয়ে দেখতে পান যে সুমির দুই পা ঝুলছে। বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী ও পুলিশ ডেকে নিয়ে দরজা ভেঙে সুমির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।