এসডিজি বিষয় বাদ দিয়ে ১৩ লাখ ভূগোল বই বিতরণ

প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ

‘এসডিজি’ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রবন্ধ বাদ দিয়েই ২০২০ শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণীর ‘ভুগোল বিষয়’র প্রায় ১৩ লাখ কপি পাঠ্যবই ছেপে বিতরণ করেছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। ইতোমধ্যে সারাদেশের শিক্ষার্থীর কাছেই ওই বই বিতরণ করেছে স্কুলগুলো। এখন নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ‘ভুগোল বিষয়’র বইয়ে ‘এসডিজি’ (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বিষয়ক একটি ফার্ম (৮ পৃষ্ঠা) ‘ডিও পার্ট’ আকারে ছেপে বিতরণের সিন্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি। পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘এসডিজি’ বিষয়ক প্রবন্ধ বাদ পরায় ওই বিষয়ের দায়িত্বে থাকা এনসিটিবি’র ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ড. নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংস্থাটির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘সুপারিশনামা’ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ওই বইয়ের ৬৭টি কপি পাণ্ডুলিপিই ভালোভাবে না পড়ে নথি অনুমোদন করেন ওই কর্মকর্তা। ৬৭টি কপি পাণ্ডুলিপি অনুমোদনে তিনি ৬৭টি বার স্বাক্ষর করেছেন; কিন্তু একটি কপিও তিনি খুলে দেখেননি। এই গাফিলতির কারণেই ২৩২ পৃষ্ঠার বইয়ের ৮ পৃষ্ঠা বাদ পরেছে। এখন সারাদেশের স্কুলেই নিজস্ব উদ্যোগে ‘ডিও পার্ট’ পাঠাতে হচ্ছে এনসিটিবি’কে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ভুলে এসডিজি বিষয়ক একটি ফর্মা বাদ পরেছে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষের বই ভেবে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ভুগোল বিষয়ের সফ্ট কপি প্রিন্টার্সদের কাছে সরবরাহ করেছেন বিষয় বিশেষজ্ঞ নাজমা বেগম। এখানে আরও যদি কারও গাফিলতি থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

একটি ফর্মা বাদ পরলেও কোন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না জানিয়ে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এসডিজি বিষয়ক ফর্মার ১৩ লাখ কপি ছেপে শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ কাজ সম্পন্ন হবে।’

এনসিটিবি জানায়, নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা ভার্সনের ভুগোল বিষয়ের বই থেকে এসডিজি বিষয়ক ফর্মা বাদ পরেছে। তবে ইংরেজি ভার্সনের বইয়ে ওই অংশ রয়েছে। এখন ১৩ লাখ কপি ডিও পার্ট ছাপতে ৬ মেট্রিক টন কাগজ প্রয়োজন। মোট ৬৭টি প্রিন্টার্স (ছাপাখানা মালিক) ভুগোল বই ছেপেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের যে যতটি কপি বইয়ের কাজ পেয়েছিল তাকে সে সংখ্যক বইয়ের ডিও পার্ট ছাপার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।

এ কাজে সরকারের কী পরিমাণ বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে জানতে চাইলে প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে না। কারণ ভূগোল বইটি সাড়ে ২৯ ফর্মার; সেটি ছিল বইয়ের শেষ ফর্মা। সাড়ে ২৯ ফর্মা ধরে নিয়েই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এক ফর্মা বাদ পরায় প্রিন্টার্সরা সাড়ে ২৮ ফর্মার বই ছেপেছে। এই এক ফর্মার কাগজ তাদের কাছে এনসিটিবি’র পাওনা রয়েছে। সেই কাগজ দিয়েই তারা ডিও পার্ট ছেপে দেবে। ইতোমধ্যে প্রিন্টার্সরাও আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে ডিও পার্টগুলো আমাদেরই বিতরণ করতে হবে।’

জাতিসংঘের ইউনেসকো কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) সংক্রান্ত ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা একটি। এসডিজি ৪-এ শিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষার কথা সর্বাগ্রে বলা হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মানসম্মত পাঠ্যবই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এর আগে সহ¯স্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অভিলক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা সরকার অর্জন করেছে।

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ এবং ঝরে পড়ার হার ১৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অচিরেই এটা সিঙ্গেল ডিজিটে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) গ্রহণ করেছে। এসডিজি অর্জনের বিষয়গুলো সর্ম্পকে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতেই এই বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে এনসিটিবি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক কর্ম ও বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলেই সরকারের লক্ষ্য অর্জন হবে।

শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২০ , ৪ মাঘ ১৪২৬, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

নতুন শিক্ষাবর্ষে

এসডিজি বিষয় বাদ দিয়ে ১৩ লাখ ভূগোল বই বিতরণ

প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ

রাকিব উদ্দিন

‘এসডিজি’ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রবন্ধ বাদ দিয়েই ২০২০ শিক্ষাবর্ষের নবম ও দশম শ্রেণীর ‘ভুগোল বিষয়’র প্রায় ১৩ লাখ কপি পাঠ্যবই ছেপে বিতরণ করেছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। ইতোমধ্যে সারাদেশের শিক্ষার্থীর কাছেই ওই বই বিতরণ করেছে স্কুলগুলো। এখন নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ‘ভুগোল বিষয়’র বইয়ে ‘এসডিজি’ (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বিষয়ক একটি ফার্ম (৮ পৃষ্ঠা) ‘ডিও পার্ট’ আকারে ছেপে বিতরণের সিন্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি। পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘এসডিজি’ বিষয়ক প্রবন্ধ বাদ পরায় ওই বিষয়ের দায়িত্বে থাকা এনসিটিবি’র ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ড. নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংস্থাটির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘সুপারিশনামা’ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ওই বইয়ের ৬৭টি কপি পাণ্ডুলিপিই ভালোভাবে না পড়ে নথি অনুমোদন করেন ওই কর্মকর্তা। ৬৭টি কপি পাণ্ডুলিপি অনুমোদনে তিনি ৬৭টি বার স্বাক্ষর করেছেন; কিন্তু একটি কপিও তিনি খুলে দেখেননি। এই গাফিলতির কারণেই ২৩২ পৃষ্ঠার বইয়ের ৮ পৃষ্ঠা বাদ পরেছে। এখন সারাদেশের স্কুলেই নিজস্ব উদ্যোগে ‘ডিও পার্ট’ পাঠাতে হচ্ছে এনসিটিবি’কে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ভুলে এসডিজি বিষয়ক একটি ফর্মা বাদ পরেছে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষের বই ভেবে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ভুগোল বিষয়ের সফ্ট কপি প্রিন্টার্সদের কাছে সরবরাহ করেছেন বিষয় বিশেষজ্ঞ নাজমা বেগম। এখানে আরও যদি কারও গাফিলতি থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

একটি ফর্মা বাদ পরলেও কোন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না জানিয়ে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এসডিজি বিষয়ক ফর্মার ১৩ লাখ কপি ছেপে শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ কাজ সম্পন্ন হবে।’

এনসিটিবি জানায়, নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা ভার্সনের ভুগোল বিষয়ের বই থেকে এসডিজি বিষয়ক ফর্মা বাদ পরেছে। তবে ইংরেজি ভার্সনের বইয়ে ওই অংশ রয়েছে। এখন ১৩ লাখ কপি ডিও পার্ট ছাপতে ৬ মেট্রিক টন কাগজ প্রয়োজন। মোট ৬৭টি প্রিন্টার্স (ছাপাখানা মালিক) ভুগোল বই ছেপেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের যে যতটি কপি বইয়ের কাজ পেয়েছিল তাকে সে সংখ্যক বইয়ের ডিও পার্ট ছাপার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।

এ কাজে সরকারের কী পরিমাণ বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে জানতে চাইলে প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে না। কারণ ভূগোল বইটি সাড়ে ২৯ ফর্মার; সেটি ছিল বইয়ের শেষ ফর্মা। সাড়ে ২৯ ফর্মা ধরে নিয়েই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এক ফর্মা বাদ পরায় প্রিন্টার্সরা সাড়ে ২৮ ফর্মার বই ছেপেছে। এই এক ফর্মার কাগজ তাদের কাছে এনসিটিবি’র পাওনা রয়েছে। সেই কাগজ দিয়েই তারা ডিও পার্ট ছেপে দেবে। ইতোমধ্যে প্রিন্টার্সরাও আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে ডিও পার্টগুলো আমাদেরই বিতরণ করতে হবে।’

জাতিসংঘের ইউনেসকো কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) সংক্রান্ত ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা একটি। এসডিজি ৪-এ শিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষার কথা সর্বাগ্রে বলা হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মানসম্মত পাঠ্যবই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এর আগে সহ¯স্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অভিলক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা সরকার অর্জন করেছে।

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ এবং ঝরে পড়ার হার ১৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অচিরেই এটা সিঙ্গেল ডিজিটে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) গ্রহণ করেছে। এসডিজি অর্জনের বিষয়গুলো সর্ম্পকে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতেই এই বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে এনসিটিবি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক কর্ম ও বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলেই সরকারের লক্ষ্য অর্জন হবে।