স্মৃতির আয়নায় বিউটি বোর্ডিং

বিউটি বোডিং ছিল বাঙালির সব স্বাধিকার আন্দোলনের আতুরঘর, আজ এখানে বসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। গতকাল পুরোনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং এ ‘ঢাকা শহরের ষাট দশকের ও একাত্তরের বিপ্লবী সতীর্থদের মিলনমেলা’ শীর্ষক আয়োজনে অংগ্রহণকারী দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের তারুণ্যের স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা বলেন। গত বছর এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে এমন দু’জন বন্ধুকে তারা হারিয়েছেন বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন সবাই।

ফিরোজ কবির মুকুল ডি.আই.জি (অব.) পুলিশ গত কয়েক বছর থেকেই বন্ধুদের নিয়ে এই আয়োজন করে আসছেন। বছরে এই একটা দিন নিজেদের মতো করে কাটান সবাই। তার আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ষাট ও সত্তর দশকে বিউটি বোর্ডিং এ আড্ডা দেয়া বন্ধুরা ছুটে আসেন শৈশব ও তারুণ্যের বন্ধুদের সঙ্গে একদিন মিলিত হতে। গতকাল এই মিলন মেলায় উপস্থিত ছিলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, চিত্র নায়য়ক এবং সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন শীল ঘোষাল, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল হান্নান খান, পুলিশের সাবেক এসপি মাহবুব, সংস্কৃতি কর্মী পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হক নুরু, পুলিশের সাবেক ডিআইজি মোস্তাক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফকির আলমগীর, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, লেখক ও গবেষক হাসেম সুফী, মাওলা বকস পাঠাগার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাত আজম বকসসহ শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

কামাল লোহানী বলেন, বিউটি বোডিং ছিল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নিরাপদ জায়গা। প্রতিবছর এই আয়োজনে আসলে মনে হয় আমরা পুরোনো দিনে ফিরে গেছি। সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে সমস্ত মানুষগুলো সৈনিক হিসেবে কাজ করেছে সেই মুখগুলোকে এই দিনে আমরা দেখতে পাই। আজ এখানে বসেছে বিপ্লোবী মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। পুরোনো ঢাকাকে আধুনিকায়ন করতে রাষ্ট্রের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার শহরবাসীর অধিকার নিশ্চিত করতে এই ছোট্র একটি করপোরেশনকে উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভক্ত করেছে। কিন্তু সেই তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহরবাসীর সেবা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। শহরবাসীরা নানা ধরনের দুষণের মধ্যে বাস করছে। আমরা নগর সরকার গঠন করতে গত ১০ বছর থেকে দাবি জনিয়ে যাচ্ছি। অথচ তারা আমাদের কথায় গুরুত্বই দিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরো ঢাকা পুরোনো ঢাকার মতো অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হবে।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ফিরোজ কবির মুকুল বলেন, গতবছর আমাদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন এমন দু’জন খায়রুল আলম চৌধুরী এবং শফিউদ্দিন আহমেদ নামের দু’জন বন্ধুকে হারিয়েছেন। তাদের জন্য বিশেষ দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। দেশের বাইরে থেকে অনেকেই এসেছেন। আমি আগামী বছর থাকবে কি না সে বিষয়ে মনোরঞ্জন শীল ঘোষাল বলেন, আমি ১৯৬৩ সাল থেকে বিউটি বোডিং এ আসতাম। তখন এখানে জহির রায়হান, খান আতা, সমর দাস, আবুল হাসান, কায়েস আহমেদসহ সব নামি দামি ব্যক্তিরা আড্ডা দিতেন। তখন সমর দাস আমাদেরকে গান শেখাতেন। তার শেখানো ‘যায় যদি যাক প্রাণ, দেবো না দেবো না গোলার গান’টি আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক গেয়েছি। তিনি বলেন, বাঙালির দুটি চরিত্র আছে একটি কোকিলের গানের মতো মিষ্টি, আরেকটি বৈশাখের খর রৌদ্রের মতো প্রখর। আর এই চরিত্র ফুটে উঠে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যখন বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখায়। তিনি তরুণ প্রজন্মকে নজরুল চর্চার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নজরুল চর্চা করলেই একজন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক মানুষ হওয়া সম্ভব।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি জুবলি স্কুলের ছাত্র ছিলাম। তখন বাইরে থেকে উকি দিয়ে দেখতাম নামিদামি ব্যক্তিরা এখানে ঢুকছে। এছাড়াও পরবর্তীতে যারা অনেক বিখ্যাত হয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ প্রত্যেকেই এখানে আসতেন। তখন আমরা এখানে ঢুকতে পারতাম না, তাই বাইরে রাস্তার ওপাশে একটি চায়ের দোকান ছিল সেই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতাম। তিনি বলেন, পুরোনো ঢাকা আগে সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দবিন্দু ছিল। এই সাংস্কৃতিক বোধ থেকেই বাঙালির সব স্বাধিকার আন্দোলনের উৎপত্তি। পরবর্তীতে ৬২টির আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠে বিউটি বোডিং। তখন এখানেই বসে আমরা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতাম।

মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, বিউটি বোর্ডিং ছিলো কবি, শিল্পী এবং সাংবাদিকদের চারণ ভুমি। আমদের মতো রাজনীতিবিদরা এখানে আসতো বিভিন্ন ধরনের তথ্য ছড়িয়ে দিতে। এখানে আন্দোলনের কোন তথ্য দিয়ে গেলে সেটা তখন মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পরতো। দল-মত নির্বিশেষে সবাই এখানে আসতেন। এই জায়গাকে কেন্দ্র করেই মুক্তিযুদ্ধে ঢাকাবাসী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল।

চিত্র নায়ক ফারুক বলেন, বাঙালিদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বিউটি বোডিংয়ের অবদান এখনও দেশবাসীর কাছে অজানা। আমাদের গণমাধ্যম এখনও বিউটি বোডিং এবং এখানকার মানুষের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারেনি। বিউটি বোডিং ছিল মুক্তিযুদ্ধের আতুরঘর। এখানে উপস্থিত সবাই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, আমি কোন সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলাম না। স্বাধীনতার আন্দোলনে পাকিস্তান সরকারের দেয়া ৩৭টি মামলা থেকেই রেহাই পেতেই সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করি। এভাবেই একসময় নায়ক হয়ে যাই।

গতকাল প্রজন্মের বন্ধুত্বের মেলবন্ধনে, এই হলুদ আঙিনা শুধু প্রাণের উচ্ছাসেই মেতে ওঠেনা, হয়ে ওঠে ইতিহাসের খণ্ড খণ্ড চিত্র। ঝাপসা হওয়া স্মৃতি আজও যেখানে স্পষ্ট। যেখানে বয়সের চেয়েও বেশি মূখ্য সম্পর্ক। যার নাম বন্ধুত্ব। বিউটি বোডিং চত্বর যেন সেই বন্ধুতেরই পুরোনো ইতিহাস হলুদ দালানের যে আঙিনায় মেলবন্ধনে কয়েক প্রজন্মের। ৫০, ৬০ কিংবা ৭০ দশকের তারুন্য এখন বয়োজ্যেষ্ঠ তবুও প্রাণচ্ছল এই আড্ডায় সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন যৌবনের সেই ক্ষণে।

image

বিউটি বোর্ডিংয়ে গুণীজনদের মিলনমেলা -সংবাদ

আরও খবর
বৃহত্তর জুমার নামাজ আদায়
কমছে পিয়াজের দাম
বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শে শিশুদের উজ্জীবিত করতে হবে স্পিকার
বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার
নির্বাচন-পূজা বিষয়টি ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মুজিববর্ষ উদযাপনে পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সাহিত্য ও সংস্কৃতির দুই বাংলার ১৬ গুণী ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয়া হবে
নাটক নৃত্য ও ঐতিহ্যবাহী পালাগান আজ
বগুড়ায় জমজমাট পিঠা উৎসব
এশিয়ান টিভির সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
তারিখ পরিবর্তন না করলে ভোট বর্জন করবে হিন্দু মহাজোট
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন
চিকিৎসা সেবার নামে চলছে চরম অনিয়ম
গণমাধ্যমে লিখেছিল ভেবেছি অতিরঞ্জিত নিহতের স্বামী
কক্সবাজার শহরের সড়কে পচা দুর্গন্ধ পানি

শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২০ , ৪ মাঘ ১৪২৬, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

স্মৃতির আয়নায় বিউটি বোর্ডিং

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

বিউটি বোর্ডিংয়ে গুণীজনদের মিলনমেলা -সংবাদ

বিউটি বোডিং ছিল বাঙালির সব স্বাধিকার আন্দোলনের আতুরঘর, আজ এখানে বসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। গতকাল পুরোনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং এ ‘ঢাকা শহরের ষাট দশকের ও একাত্তরের বিপ্লবী সতীর্থদের মিলনমেলা’ শীর্ষক আয়োজনে অংগ্রহণকারী দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের তারুণ্যের স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা বলেন। গত বছর এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে এমন দু’জন বন্ধুকে তারা হারিয়েছেন বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন সবাই।

ফিরোজ কবির মুকুল ডি.আই.জি (অব.) পুলিশ গত কয়েক বছর থেকেই বন্ধুদের নিয়ে এই আয়োজন করে আসছেন। বছরে এই একটা দিন নিজেদের মতো করে কাটান সবাই। তার আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ষাট ও সত্তর দশকে বিউটি বোর্ডিং এ আড্ডা দেয়া বন্ধুরা ছুটে আসেন শৈশব ও তারুণ্যের বন্ধুদের সঙ্গে একদিন মিলিত হতে। গতকাল এই মিলন মেলায় উপস্থিত ছিলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, চিত্র নায়য়ক এবং সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন শীল ঘোষাল, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল হান্নান খান, পুলিশের সাবেক এসপি মাহবুব, সংস্কৃতি কর্মী পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হক নুরু, পুলিশের সাবেক ডিআইজি মোস্তাক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফকির আলমগীর, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, লেখক ও গবেষক হাসেম সুফী, মাওলা বকস পাঠাগার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাত আজম বকসসহ শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

কামাল লোহানী বলেন, বিউটি বোডিং ছিল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নিরাপদ জায়গা। প্রতিবছর এই আয়োজনে আসলে মনে হয় আমরা পুরোনো দিনে ফিরে গেছি। সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে সমস্ত মানুষগুলো সৈনিক হিসেবে কাজ করেছে সেই মুখগুলোকে এই দিনে আমরা দেখতে পাই। আজ এখানে বসেছে বিপ্লোবী মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। পুরোনো ঢাকাকে আধুনিকায়ন করতে রাষ্ট্রের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার শহরবাসীর অধিকার নিশ্চিত করতে এই ছোট্র একটি করপোরেশনকে উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভক্ত করেছে। কিন্তু সেই তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহরবাসীর সেবা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। শহরবাসীরা নানা ধরনের দুষণের মধ্যে বাস করছে। আমরা নগর সরকার গঠন করতে গত ১০ বছর থেকে দাবি জনিয়ে যাচ্ছি। অথচ তারা আমাদের কথায় গুরুত্বই দিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরো ঢাকা পুরোনো ঢাকার মতো অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হবে।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ফিরোজ কবির মুকুল বলেন, গতবছর আমাদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন এমন দু’জন খায়রুল আলম চৌধুরী এবং শফিউদ্দিন আহমেদ নামের দু’জন বন্ধুকে হারিয়েছেন। তাদের জন্য বিশেষ দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। দেশের বাইরে থেকে অনেকেই এসেছেন। আমি আগামী বছর থাকবে কি না সে বিষয়ে মনোরঞ্জন শীল ঘোষাল বলেন, আমি ১৯৬৩ সাল থেকে বিউটি বোডিং এ আসতাম। তখন এখানে জহির রায়হান, খান আতা, সমর দাস, আবুল হাসান, কায়েস আহমেদসহ সব নামি দামি ব্যক্তিরা আড্ডা দিতেন। তখন সমর দাস আমাদেরকে গান শেখাতেন। তার শেখানো ‘যায় যদি যাক প্রাণ, দেবো না দেবো না গোলার গান’টি আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক গেয়েছি। তিনি বলেন, বাঙালির দুটি চরিত্র আছে একটি কোকিলের গানের মতো মিষ্টি, আরেকটি বৈশাখের খর রৌদ্রের মতো প্রখর। আর এই চরিত্র ফুটে উঠে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যখন বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখায়। তিনি তরুণ প্রজন্মকে নজরুল চর্চার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নজরুল চর্চা করলেই একজন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক মানুষ হওয়া সম্ভব।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি জুবলি স্কুলের ছাত্র ছিলাম। তখন বাইরে থেকে উকি দিয়ে দেখতাম নামিদামি ব্যক্তিরা এখানে ঢুকছে। এছাড়াও পরবর্তীতে যারা অনেক বিখ্যাত হয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ প্রত্যেকেই এখানে আসতেন। তখন আমরা এখানে ঢুকতে পারতাম না, তাই বাইরে রাস্তার ওপাশে একটি চায়ের দোকান ছিল সেই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতাম। তিনি বলেন, পুরোনো ঢাকা আগে সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দবিন্দু ছিল। এই সাংস্কৃতিক বোধ থেকেই বাঙালির সব স্বাধিকার আন্দোলনের উৎপত্তি। পরবর্তীতে ৬২টির আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠে বিউটি বোডিং। তখন এখানেই বসে আমরা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতাম।

মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, বিউটি বোর্ডিং ছিলো কবি, শিল্পী এবং সাংবাদিকদের চারণ ভুমি। আমদের মতো রাজনীতিবিদরা এখানে আসতো বিভিন্ন ধরনের তথ্য ছড়িয়ে দিতে। এখানে আন্দোলনের কোন তথ্য দিয়ে গেলে সেটা তখন মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পরতো। দল-মত নির্বিশেষে সবাই এখানে আসতেন। এই জায়গাকে কেন্দ্র করেই মুক্তিযুদ্ধে ঢাকাবাসী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল।

চিত্র নায়ক ফারুক বলেন, বাঙালিদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বিউটি বোডিংয়ের অবদান এখনও দেশবাসীর কাছে অজানা। আমাদের গণমাধ্যম এখনও বিউটি বোডিং এবং এখানকার মানুষের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারেনি। বিউটি বোডিং ছিল মুক্তিযুদ্ধের আতুরঘর। এখানে উপস্থিত সবাই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, আমি কোন সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলাম না। স্বাধীনতার আন্দোলনে পাকিস্তান সরকারের দেয়া ৩৭টি মামলা থেকেই রেহাই পেতেই সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করি। এভাবেই একসময় নায়ক হয়ে যাই।

গতকাল প্রজন্মের বন্ধুত্বের মেলবন্ধনে, এই হলুদ আঙিনা শুধু প্রাণের উচ্ছাসেই মেতে ওঠেনা, হয়ে ওঠে ইতিহাসের খণ্ড খণ্ড চিত্র। ঝাপসা হওয়া স্মৃতি আজও যেখানে স্পষ্ট। যেখানে বয়সের চেয়েও বেশি মূখ্য সম্পর্ক। যার নাম বন্ধুত্ব। বিউটি বোডিং চত্বর যেন সেই বন্ধুতেরই পুরোনো ইতিহাস হলুদ দালানের যে আঙিনায় মেলবন্ধনে কয়েক প্রজন্মের। ৫০, ৬০ কিংবা ৭০ দশকের তারুন্য এখন বয়োজ্যেষ্ঠ তবুও প্রাণচ্ছল এই আড্ডায় সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন যৌবনের সেই ক্ষণে।