নানা সমালোচনার পর অবশেষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ পরিবর্তন করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল এক জরুরি বৈঠকে নির্বাচনের দিন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরাও তারিখ পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। ভোট পেছানোর কারণে এসএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ভোট পেছানোর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও মেয়র প্রার্থীরা। গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা অভিনন্দন জানান নির্বাচন কমিশনকে। নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, দেরিতে হলেও ইসির বোধোদয় হয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্ত সানন্দে গ্রহণ করলাম। অন্য মেয়র প্রার্থীরাও তাদের প্রতিক্রিয়ায় একই কথা ব্যক্ত করেন। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, পরীক্ষার তারিখ পেছালে সমস্যা হবে কিনা। তারা বলেছে কোন সমস্যা হবে না। সে অনুযায়ী, তারা তারিখও পরিবর্তন করেছে। তাই আমরাও তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুয়াযী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। এর আগে বিকেল ৪টায় জরুরি ওই বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠকে চার কমিশনার ও ইসি সচিব ছাড়াও দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছিল ইসি। সরস্বতী পূজার কারণে ওই তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। এমনকি গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক দল ও ঢাকার দুই সিটির প্রার্থীরাও ভোট পেছানোর দাবি তুলে। ভোট পেছানোর ক্ষেত্রে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনও আপত্তি নেই বলে শুক্রবার জানিয়ে দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও।
গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোটের তারিখ পরিবর্তনে আমাদের কিংবা সরকারের কোন সমস্যা নেই। একই দিনে সিটি নির্বাচন এবং সরস্বতি পূজা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের সঙ্গে কথা বলে গ্রহণযোগ্য একটি তারিখ ঠিক করবে বলে প্রত্যাশা করছি।
নির্বাচনে আলোচনায় থাকা চার মেয়র প্রার্থীই ভোটের দিন পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন, আতিকুল ইসলাম ও তাবিথ আউয়াল তাদের প্রচারণায় দিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন। তারা বলেন, যদি ওইদিন ঈদ হতো, তাহলে কি ভোট হতো। যেহেতু বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, তাই ইসির উচিত বিষয়টি বিবেচনা করা।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও জাতীয় হিন্দু জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি অংশ এ দাবিতে আমরণ অনশনও করছিল। তারা গত ৩ দিন যাবৎ রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ দাবিতে অনশন করে।
ভোট পেছানোর দাবিতে হাইকোর্টে একটি রিটও দায়ের করা হয়েছিল। অবশ্য রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। তবে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। রোববার যার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা হওয়ার কথা। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছিল, তাদের তিথি অনুযায়ী ৩০ তারিখে সরস্বতী পূজা। এটি তাদের বৃহৎ উৎসব। রাজধানীর অনেক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার সিটি ভোটের কেন্দ্রও অনেক স্কুলে পড়েছে। ফলে এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৫১৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মোট ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ডিএসসিসিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ৯৯৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২০ , ৫ মাঘ ১৪২৬, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
নানা সমালোচনার পর অবশেষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ পরিবর্তন করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল এক জরুরি বৈঠকে নির্বাচনের দিন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরাও তারিখ পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। ভোট পেছানোর কারণে এসএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ভোট পেছানোর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও মেয়র প্রার্থীরা। গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা অভিনন্দন জানান নির্বাচন কমিশনকে। নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, দেরিতে হলেও ইসির বোধোদয় হয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্ত সানন্দে গ্রহণ করলাম। অন্য মেয়র প্রার্থীরাও তাদের প্রতিক্রিয়ায় একই কথা ব্যক্ত করেন। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, পরীক্ষার তারিখ পেছালে সমস্যা হবে কিনা। তারা বলেছে কোন সমস্যা হবে না। সে অনুযায়ী, তারা তারিখও পরিবর্তন করেছে। তাই আমরাও তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুয়াযী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। এর আগে বিকেল ৪টায় জরুরি ওই বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠকে চার কমিশনার ও ইসি সচিব ছাড়াও দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছিল ইসি। সরস্বতী পূজার কারণে ওই তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। এমনকি গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক দল ও ঢাকার দুই সিটির প্রার্থীরাও ভোট পেছানোর দাবি তুলে। ভোট পেছানোর ক্ষেত্রে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনও আপত্তি নেই বলে শুক্রবার জানিয়ে দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও।
গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোটের তারিখ পরিবর্তনে আমাদের কিংবা সরকারের কোন সমস্যা নেই। একই দিনে সিটি নির্বাচন এবং সরস্বতি পূজা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাদের সঙ্গে কথা বলে গ্রহণযোগ্য একটি তারিখ ঠিক করবে বলে প্রত্যাশা করছি।
নির্বাচনে আলোচনায় থাকা চার মেয়র প্রার্থীই ভোটের দিন পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন, আতিকুল ইসলাম ও তাবিথ আউয়াল তাদের প্রচারণায় দিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন। তারা বলেন, যদি ওইদিন ঈদ হতো, তাহলে কি ভোট হতো। যেহেতু বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ, তাই ইসির উচিত বিষয়টি বিবেচনা করা।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও জাতীয় হিন্দু জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি অংশ এ দাবিতে আমরণ অনশনও করছিল। তারা গত ৩ দিন যাবৎ রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ দাবিতে অনশন করে।
ভোট পেছানোর দাবিতে হাইকোর্টে একটি রিটও দায়ের করা হয়েছিল। অবশ্য রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। তবে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। রোববার যার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা হওয়ার কথা। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছিল, তাদের তিথি অনুযায়ী ৩০ তারিখে সরস্বতী পূজা। এটি তাদের বৃহৎ উৎসব। রাজধানীর অনেক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার সিটি ভোটের কেন্দ্রও অনেক স্কুলে পড়েছে। ফলে এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৫১৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মোট ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ডিএসসিসিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ৯৯৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।