বছরে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ

সিগারেট ও তামাকের ধোঁয়ায় ৭ হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা থেকে ক্যানসার হতে পারে। নিকোটিন, কার্বন-মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া, পোলানিয়ামসহ ২১০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উল্লেখযোগ্য। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এক তথ্যে জানা গেছে, তামাক স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পৃথিবীতে যত মানুষ তামাক ব্যবহার করে তাদের অর্ধেকই কোন কোনভাবে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে।

দেশের ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ কোন না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করছে। এর মধ্যে এর মধ্যে ২ কেটি ১২ লাখ পুরুষ ও ৭ লাখ মহিলা রয়েছে। আক্রান্তদের ১ কোটি ১৫ লাখ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন সব ধরনের তামাকই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেশে প্রতি বছর ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৫৭ হাজার মৃত্যুবরণ করে। আর ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেন। এ ছাড়াও ধূমপায়ী না হয়েও অন্যের ধূমপানের কুফল ভোগ করতে হয়।

তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস হয়। ফুঁসফুসের ক্যানসার, যক্ষা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, হাঁপানি, মুখের স্বরযন্ত্রের, শ্বাসনালীর, খাদ্যনালীর ক্যানসার, বিবর্ণক্ষয় প্রাপ্ত দাঁত, ক্ষতিগ্রস্ত মাড়ি, সময়ের আগে সন্তান জন্ম নেয়া, কম ওজনের সন্তানের জন্ম ও গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু, মুখের ক্যানসার হতে পারে এর কারণে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (রেসপেরেটরি) বলেন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপান বিরোধী যে আইন আছে তা বাস্তবায়ন ও জরিমানার টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া ও জবাব দিহিতার ওপর গুরুত্ব দিলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান কমবে বলে তিনি আশবাদী। ধূমপান নিষিদ্ধ এমন এলাকায় অহরহ ধূমপান করা হচ্ছে। এ জন্য সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এক তথ্যে জানা গেছে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি কাগজে কলমে রয়েছে। বাস্তবে তাদের কার্যক্রমের ফলাফল আলোর মুখ দেখেনি। অপরদিকে তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়, বিক্রয় ও চোরাচালান রোধে এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ণ সব কিছু কাগজে কলমে রয়েছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ভবনের নিচেও অহরহ ধূমপান করা হচ্ছে। যারা আইন প্রয়োগ করবেন তারা সিগারেট সংগ্রহ করে ধূমপান করছে। ধূমপান কমাতে সিগারের ওপর কর বাড়িয়ে কাজ হচ্ছে না।

অধূমপায়ীদের মতে, ধূমপানবিরোধী প্রচলিত আইন কার্যকর ও নিয়মিত মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর হলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে যে আইন রয়েছে তা বাস্তবায়ন না করলে দেশে ক্যানসারসহ মরণব্যাধি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

কয়েকজন চাকরিজীবী পুরুষ ও মহিলা অভিযোগ করে বলেন, রাজধানীর প্রধানসড়ক থেকে অলিগলিতে প্রতিটি স্থানে ধূমপান ও তামাক সেবনের যেন উৎসব চলছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকসহ সবাই ধূমপান করছে।

এত তথ্যে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ জুন ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে। পাবলিক প্লেস হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সব অফিস, থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স ও ট্রাফিক ইউনিটসমূহকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়। উল্লেখিত স্থানে ধূমপান সম্পন্ন নিষিদ্ধ। ইউনিট প্রধানরা এ আদেশ কার্যকর করবেন । আর পুলিশ সদস্যরা জনগণকে নিরুৎসাহিত করবেন। তারা বিভিন্ন সময়ে জনগণের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিল। আর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করবেন। আর প্রয়োজনে দিক নির্দেশনা দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ধূমপান রাস্তায় দাঁড়িয়েও অহরহ করছেন। অথচ ওই আদেশের কপি পুলিশের সব থানা, বেতার, একচেঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছিল।

রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২০ , ৫ মাঘ ১৪২৬, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭ হাজার ক্ষতিকর উপাদান

বছরে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ

বাকিবিল্লাহ |

সিগারেট ও তামাকের ধোঁয়ায় ৭ হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা থেকে ক্যানসার হতে পারে। নিকোটিন, কার্বন-মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া, পোলানিয়ামসহ ২১০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উল্লেখযোগ্য। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এক তথ্যে জানা গেছে, তামাক স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পৃথিবীতে যত মানুষ তামাক ব্যবহার করে তাদের অর্ধেকই কোন কোনভাবে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে।

দেশের ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ কোন না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করছে। এর মধ্যে এর মধ্যে ২ কেটি ১২ লাখ পুরুষ ও ৭ লাখ মহিলা রয়েছে। আক্রান্তদের ১ কোটি ১৫ লাখ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন সব ধরনের তামাকই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেশে প্রতি বছর ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৫৭ হাজার মৃত্যুবরণ করে। আর ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেন। এ ছাড়াও ধূমপায়ী না হয়েও অন্যের ধূমপানের কুফল ভোগ করতে হয়।

তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস হয়। ফুঁসফুসের ক্যানসার, যক্ষা, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, হাঁপানি, মুখের স্বরযন্ত্রের, শ্বাসনালীর, খাদ্যনালীর ক্যানসার, বিবর্ণক্ষয় প্রাপ্ত দাঁত, ক্ষতিগ্রস্ত মাড়ি, সময়ের আগে সন্তান জন্ম নেয়া, কম ওজনের সন্তানের জন্ম ও গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু, মুখের ক্যানসার হতে পারে এর কারণে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (রেসপেরেটরি) বলেন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপান বিরোধী যে আইন আছে তা বাস্তবায়ন ও জরিমানার টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া ও জবাব দিহিতার ওপর গুরুত্ব দিলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান কমবে বলে তিনি আশবাদী। ধূমপান নিষিদ্ধ এমন এলাকায় অহরহ ধূমপান করা হচ্ছে। এ জন্য সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এক তথ্যে জানা গেছে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি কাগজে কলমে রয়েছে। বাস্তবে তাদের কার্যক্রমের ফলাফল আলোর মুখ দেখেনি। অপরদিকে তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়, বিক্রয় ও চোরাচালান রোধে এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ণ সব কিছু কাগজে কলমে রয়েছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ভবনের নিচেও অহরহ ধূমপান করা হচ্ছে। যারা আইন প্রয়োগ করবেন তারা সিগারেট সংগ্রহ করে ধূমপান করছে। ধূমপান কমাতে সিগারের ওপর কর বাড়িয়ে কাজ হচ্ছে না।

অধূমপায়ীদের মতে, ধূমপানবিরোধী প্রচলিত আইন কার্যকর ও নিয়মিত মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর হলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে যে আইন রয়েছে তা বাস্তবায়ন না করলে দেশে ক্যানসারসহ মরণব্যাধি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

কয়েকজন চাকরিজীবী পুরুষ ও মহিলা অভিযোগ করে বলেন, রাজধানীর প্রধানসড়ক থেকে অলিগলিতে প্রতিটি স্থানে ধূমপান ও তামাক সেবনের যেন উৎসব চলছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকসহ সবাই ধূমপান করছে।

এত তথ্যে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ জুন ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে। পাবলিক প্লেস হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সব অফিস, থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স ও ট্রাফিক ইউনিটসমূহকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়। উল্লেখিত স্থানে ধূমপান সম্পন্ন নিষিদ্ধ। ইউনিট প্রধানরা এ আদেশ কার্যকর করবেন । আর পুলিশ সদস্যরা জনগণকে নিরুৎসাহিত করবেন। তারা বিভিন্ন সময়ে জনগণের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিল। আর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করবেন। আর প্রয়োজনে দিক নির্দেশনা দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ধূমপান রাস্তায় দাঁড়িয়েও অহরহ করছেন। অথচ ওই আদেশের কপি পুলিশের সব থানা, বেতার, একচেঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছিল।