রবিউল ইসলাম রবি
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের ৬ষ্ঠ প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে মারা যান তিনি। প্রয়াণের ছয় বছর পেরোলেও সুচিত্রার যেন আজও জীবন্ত, চিরসবুজ, চির নতুন। প্রয়ান দিবসে তাকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মহানায়িকা সুচিত্রা সেন যে পাবনার মেয়ে তা জানা ছিল না। তবে স্কুলজীবন থেকে সুচিত্রার রুপালি পর্দাজুড়ে সাবলীল অনবদ্য অভিনয় দেখে এসেছি বিস্ময়জাগা মুগ্ধতা নিয়ে। শতবার দেখার পরও তার সাড়া জাগানো ছবিগুলো একঘেঁয়ে লাগে না আজও। আমাদের কৈশোর, যৌবনের সে সব রঙ্গীন দিনের স্বপ্নে উত্তম সুচিত্রা যেন এক অবিচ্ছেদ্য নাম। পর্দায় তাদের অভিনয়, রসায়ন এতটাই জীবন্ত ও সাবলীল ছিল যে সুচিত্রা যেন হয়ে উঠেছিলেন পাশের বাড়ির মেয়েটি। কখনও দুষ্টু চপল যুবতী, কখনও বড়লোকের অহংকারী স্টাইলিশ কন্যা যে চরিত্রই হোক না কেন সুচিত্রা তাতে একশতে একশ। এক কথায় সুচিত্রা সেন সম্পর্কে বলতে গেলে যা বলতে হয় তা হলো, এত গ্ল্যামারাস, এত বুদ্ধিদীপ্ত অভিনেত্রী বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আর আসেনি। তার নিজস্ব একটা ধরন ছিল কথা বলার, চোখের চাহনি, ঘাড় বেকিয়ে তাকানো ইত্যাদি। মন অজান্তেই যেন গেয়ে উঠতো কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে পাশে। সে সময় সব তরুণের স্বপ্নের পৃথিবীতে ছিল তার বিচরণ। ঠিক যেন তার গানের মতোই আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি, আঁখি বলিতে পারেনি লজ্জায়!
যখন জানলাম সুচিত্রা সেন পাবনার মেয়ে তখন তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে, স্বেচ্ছা নির্বাসনে। ১৯৭৮ সালে ২৫ বছরের অভিনয় জীবনের ইতি টেনে সেই যে তিনি অন্তঃপুরের বাসিন্দা হয়েছিলেন, তারপর তিনি লোক সমক্ষে কখনও আসেননি। কারও সঙ্গে দেখা করেননি।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সুচিত্রার জন্ম। বাবা-মায়ের দেয়া নাম রমা। মামারা তাকে কৃষ্ণা বলে ডাকতেন।
পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লায় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি। সেখানেই কাটে তার শৈশব, কৈশোর। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত। বাবা ছিলেন পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানেটারি ইন্সপেক্টর। পরে কর্মযোগ্যতায় পদোন্নতি পেয়েছিলেন হেডক্লার্ক হিসেবে।
রমা, কৃষ্ণা বা সুচিত্রা সেন লেখা পড়া করেছেন পাবনার মহাকালী পাঠশালায়। এ পাঠশালায় চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত, তারপরে পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে। কৃষ্ণা, রমা বা পরবর্তীকালের সুচিত্রা সেন পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন সাইকেলে চেপে স্কুলে যেতেন। পাবনার মতো ছোট শহরে এমন দৃশ্য কেউ আশা করেনি। তিনি সে যুগে ছিলেন ভীষণ স্মার্ট এবং আধুনিকও বটে। তার ভুবন ভোলোনো হাসিটি ছিল ঐশ্বরিক পাওয়া।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ক’মাস আগে সুচিত্রার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনার বাড়িঘর, চাকরি, সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান। এরপর সুচিত্রা ও তার পরিবারের কেউই আর কখনোই এ বাড়িতে আসেননি। সুচিত্রা সেনেরও পাবনা থেকে যাবার পর চেনা জানা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গেও সম্পর্ক ও যোগাযোগের ইতি ঘটে। তবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় ২০০১ সালের ১৭ অক্টোবর এ বাড়িতে এসেছিলেন সুচিত্রা সেনের পিসতুতো ভাই অলোক সেনগুপ্ত, দিলীপ সেনগুপ্ত, পিসতুতো বোন সুজাতা সেনগুপ্ত ও পরমা সেনগুপ্ত। গণমাধ্যমের কাছে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সেদিন তারা বলেন, “এ বাড়িতে আমাদের মামাতো বোনের জন্ম। আমরা ধন্য শ্রীমতি সুচিত্রা সেন আমাদের রমাদির জন্মগৃৃহে এসে।”
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার ক’জন ব্যক্তি দেখা করতে গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেনের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথোপকথনে মহানায়িকা তার পাবনার জীবনের নানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, পাবনায় গার্লস স্কুলে আমি পড়েছি, সেখানকার কত স্মৃতি আমার মনে পড়ে। পাবনায় আমার আর যাওয়া হয়নি। একবার পাবনা যাব। কিছুদিন থাকব।’ তবে সুচিত্রার এ ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। তার আগেই ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সুচিত্রার শৈশব কৈশোরের স্মৃতিধন্য পাবনার বাড়িটি ১৯৮০ সাল থেকে চলে যায় বেদখলে। একপর্যায়ে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ইমাম গাযযালী ট্রাস্ট সেখানে আখড়া গেড়ে বসে। কিন্তু প্রথম থেকেই এর প্রতিবাদ করেছে পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা। সুচিত্রার প্রতিবেশী পাবনার বিশিষ্ট অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক প্রয়াত শ.ই শিবলীর প্রতিবেদনে এ কিংবদন্তি মহানায়িকার পাবনার বাড়ির খবর প্রকাশ হলে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করলে সুচিত্রার বাড়ি উদ্ধারের দাবি জোড়ালো হয়। কিন্তু সে সময় চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকায় এতে সরকার কর্ণপাত করেনি। পরবর্তীতে জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা এ বাড়ি উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে গঠিত হয় সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। পাবনার সর্বস্তরের মানুষ সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বাড়ি উদ্ধারে সমর্থন দেয়। ধারাবাহিকভবে সুচিত্রা সেনের অভিনীত চলচ্চিত্র নিয়ে আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্র উৎসব। সে সব উৎসবে যোগ দেন নায়করাজ রাজ্জাক, কবরী, প্রয়াত চিত্রনির্মাতা সুভাষ দত্ত, নায়ক ফারুকসহ দেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি তারকারা। তারাও সমর্থন দেন বাড়ি উদ্ধার আন্দোলনে।
একপর্যায়ে জনগণের দাবির মুখে ২০০৯ সালে পাবনা জেলা প্রশাসন বাড়ি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়। ইমাম গাযযালী ট্রাস্টকে লীজ বাতিলের নোটিস দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক এএফএম মনজুর কাদির। দীর্ঘ আইনি জটিলতা মোকাবিলার পর ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ঐতিহাসিক এ বাড়িটি নিজ দখলে নেয় পাবনা জেলা প্রশাসন। বর্তমান সরকার বাড়িটিতে একটি সংগ্রহশালা করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন হলে দেশ বিদেশের দর্শনার্থী ও সুচিত্রা ভক্তরা তার বাড়িটি ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।
সুচিত্রা সেনকে নিয়ে পাবনাবাসীর আবেগ পরিচিতি পায় বিশ্বব্যাপী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকালে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তার মৃত্যুর খবর পাবনায় পৌঁছলে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। কোন কোন গণমাধ্যমে খবর বেরোয় মহানায়িকার শেষকৃত্য পাবনায় হবে, তবে শেষ পর্যন্ত তা না হলেও পাবনাবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পথে মহাযাত্রায় শামিল হন। নশ্বর পৃথিবীতে কি স্বপ্নের দেশ পেয়েছিলেন তিনি? পৃথিবীর পথের শেষে স্বর্গের পথে কি আবারও গাইছেন তিনি, এ পথ যদি না শেষ হয়....।
[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সভাপতি পাবনা প্রেস ক্লাব]
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২০ , ৫ মাঘ ১৪২৬, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
রবিউল ইসলাম রবি
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের ৬ষ্ঠ প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে মারা যান তিনি। প্রয়াণের ছয় বছর পেরোলেও সুচিত্রার যেন আজও জীবন্ত, চিরসবুজ, চির নতুন। প্রয়ান দিবসে তাকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মহানায়িকা সুচিত্রা সেন যে পাবনার মেয়ে তা জানা ছিল না। তবে স্কুলজীবন থেকে সুচিত্রার রুপালি পর্দাজুড়ে সাবলীল অনবদ্য অভিনয় দেখে এসেছি বিস্ময়জাগা মুগ্ধতা নিয়ে। শতবার দেখার পরও তার সাড়া জাগানো ছবিগুলো একঘেঁয়ে লাগে না আজও। আমাদের কৈশোর, যৌবনের সে সব রঙ্গীন দিনের স্বপ্নে উত্তম সুচিত্রা যেন এক অবিচ্ছেদ্য নাম। পর্দায় তাদের অভিনয়, রসায়ন এতটাই জীবন্ত ও সাবলীল ছিল যে সুচিত্রা যেন হয়ে উঠেছিলেন পাশের বাড়ির মেয়েটি। কখনও দুষ্টু চপল যুবতী, কখনও বড়লোকের অহংকারী স্টাইলিশ কন্যা যে চরিত্রই হোক না কেন সুচিত্রা তাতে একশতে একশ। এক কথায় সুচিত্রা সেন সম্পর্কে বলতে গেলে যা বলতে হয় তা হলো, এত গ্ল্যামারাস, এত বুদ্ধিদীপ্ত অভিনেত্রী বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আর আসেনি। তার নিজস্ব একটা ধরন ছিল কথা বলার, চোখের চাহনি, ঘাড় বেকিয়ে তাকানো ইত্যাদি। মন অজান্তেই যেন গেয়ে উঠতো কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে পাশে। সে সময় সব তরুণের স্বপ্নের পৃথিবীতে ছিল তার বিচরণ। ঠিক যেন তার গানের মতোই আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি, আঁখি বলিতে পারেনি লজ্জায়!
যখন জানলাম সুচিত্রা সেন পাবনার মেয়ে তখন তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে, স্বেচ্ছা নির্বাসনে। ১৯৭৮ সালে ২৫ বছরের অভিনয় জীবনের ইতি টেনে সেই যে তিনি অন্তঃপুরের বাসিন্দা হয়েছিলেন, তারপর তিনি লোক সমক্ষে কখনও আসেননি। কারও সঙ্গে দেখা করেননি।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সুচিত্রার জন্ম। বাবা-মায়ের দেয়া নাম রমা। মামারা তাকে কৃষ্ণা বলে ডাকতেন।
পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লায় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি। সেখানেই কাটে তার শৈশব, কৈশোর। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত। বাবা ছিলেন পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানেটারি ইন্সপেক্টর। পরে কর্মযোগ্যতায় পদোন্নতি পেয়েছিলেন হেডক্লার্ক হিসেবে।
রমা, কৃষ্ণা বা সুচিত্রা সেন লেখা পড়া করেছেন পাবনার মহাকালী পাঠশালায়। এ পাঠশালায় চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত, তারপরে পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে। কৃষ্ণা, রমা বা পরবর্তীকালের সুচিত্রা সেন পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন সাইকেলে চেপে স্কুলে যেতেন। পাবনার মতো ছোট শহরে এমন দৃশ্য কেউ আশা করেনি। তিনি সে যুগে ছিলেন ভীষণ স্মার্ট এবং আধুনিকও বটে। তার ভুবন ভোলোনো হাসিটি ছিল ঐশ্বরিক পাওয়া।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ক’মাস আগে সুচিত্রার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনার বাড়িঘর, চাকরি, সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান। এরপর সুচিত্রা ও তার পরিবারের কেউই আর কখনোই এ বাড়িতে আসেননি। সুচিত্রা সেনেরও পাবনা থেকে যাবার পর চেনা জানা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গেও সম্পর্ক ও যোগাযোগের ইতি ঘটে। তবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় ২০০১ সালের ১৭ অক্টোবর এ বাড়িতে এসেছিলেন সুচিত্রা সেনের পিসতুতো ভাই অলোক সেনগুপ্ত, দিলীপ সেনগুপ্ত, পিসতুতো বোন সুজাতা সেনগুপ্ত ও পরমা সেনগুপ্ত। গণমাধ্যমের কাছে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সেদিন তারা বলেন, “এ বাড়িতে আমাদের মামাতো বোনের জন্ম। আমরা ধন্য শ্রীমতি সুচিত্রা সেন আমাদের রমাদির জন্মগৃৃহে এসে।”
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার ক’জন ব্যক্তি দেখা করতে গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেনের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথোপকথনে মহানায়িকা তার পাবনার জীবনের নানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, পাবনায় গার্লস স্কুলে আমি পড়েছি, সেখানকার কত স্মৃতি আমার মনে পড়ে। পাবনায় আমার আর যাওয়া হয়নি। একবার পাবনা যাব। কিছুদিন থাকব।’ তবে সুচিত্রার এ ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। তার আগেই ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সুচিত্রার শৈশব কৈশোরের স্মৃতিধন্য পাবনার বাড়িটি ১৯৮০ সাল থেকে চলে যায় বেদখলে। একপর্যায়ে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ইমাম গাযযালী ট্রাস্ট সেখানে আখড়া গেড়ে বসে। কিন্তু প্রথম থেকেই এর প্রতিবাদ করেছে পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা। সুচিত্রার প্রতিবেশী পাবনার বিশিষ্ট অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক প্রয়াত শ.ই শিবলীর প্রতিবেদনে এ কিংবদন্তি মহানায়িকার পাবনার বাড়ির খবর প্রকাশ হলে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করলে সুচিত্রার বাড়ি উদ্ধারের দাবি জোড়ালো হয়। কিন্তু সে সময় চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকায় এতে সরকার কর্ণপাত করেনি। পরবর্তীতে জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা এ বাড়ি উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে গঠিত হয় সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। পাবনার সর্বস্তরের মানুষ সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বাড়ি উদ্ধারে সমর্থন দেয়। ধারাবাহিকভবে সুচিত্রা সেনের অভিনীত চলচ্চিত্র নিয়ে আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্র উৎসব। সে সব উৎসবে যোগ দেন নায়করাজ রাজ্জাক, কবরী, প্রয়াত চিত্রনির্মাতা সুভাষ দত্ত, নায়ক ফারুকসহ দেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি তারকারা। তারাও সমর্থন দেন বাড়ি উদ্ধার আন্দোলনে।
একপর্যায়ে জনগণের দাবির মুখে ২০০৯ সালে পাবনা জেলা প্রশাসন বাড়ি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়। ইমাম গাযযালী ট্রাস্টকে লীজ বাতিলের নোটিস দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক এএফএম মনজুর কাদির। দীর্ঘ আইনি জটিলতা মোকাবিলার পর ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ঐতিহাসিক এ বাড়িটি নিজ দখলে নেয় পাবনা জেলা প্রশাসন। বর্তমান সরকার বাড়িটিতে একটি সংগ্রহশালা করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন হলে দেশ বিদেশের দর্শনার্থী ও সুচিত্রা ভক্তরা তার বাড়িটি ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।
সুচিত্রা সেনকে নিয়ে পাবনাবাসীর আবেগ পরিচিতি পায় বিশ্বব্যাপী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকালে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তার মৃত্যুর খবর পাবনায় পৌঁছলে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। কোন কোন গণমাধ্যমে খবর বেরোয় মহানায়িকার শেষকৃত্য পাবনায় হবে, তবে শেষ পর্যন্ত তা না হলেও পাবনাবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পথে মহাযাত্রায় শামিল হন। নশ্বর পৃথিবীতে কি স্বপ্নের দেশ পেয়েছিলেন তিনি? পৃথিবীর পথের শেষে স্বর্গের পথে কি আবারও গাইছেন তিনি, এ পথ যদি না শেষ হয়....।
[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সভাপতি পাবনা প্রেস ক্লাব]