প্রবৃদ্ধি অর্জনে তৃতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ : জাতিসংঘ

জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে যেসব দেশ সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে সেই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে সরকার আশা করছে, এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। গত শুক্রবার সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি ২০২০ সালে বিশ্বে মাত্র দুটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হবে। তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের।

বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ (ইউএন-ডেসা), আঙ্কটাড ও জাতিসংঘের পাঁচটি আঞ্চলিক পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গায়ানা ও আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানে। গায়ানায় হঠাৎ তেলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন এক লাখ ২০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হচ্ছে দেশটিতে। ফলে চলতি বছরে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া দক্ষিণ সুদানের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে। যেসব দেশের ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে তাদের মধ্যে ইথিওপিয়ার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, রুয়ান্ডার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, আইভরি কোস্টের ৭ দশমিক ১ শতাংশ ও মালদ্বীপের ৭ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশে। এ বছর তা খানিকটা বেড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তুলনামূলক বেশি অগ্রগতি করছে। বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়েছে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক চাহিদাকেও কাজে লাগিয়েছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ছিল অপ্রত্যাশিত। বাংলাদেশ এখনও বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পে নির্ভরশীল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসডিজির ৮ নম্বর অভীষ্টের প্রথম লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে এলডিসি দেশগুলোতে অন্তত ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। এই লক্ষ্যমাত্রা এলডিসি দেশগুলোর মাত্র ১৫ শতাংশ দেশ অর্জন করতে পেরেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে দুর্দশায় আছে। ভারতের অর্থনৈতিক মন্দা এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক অগ্রগতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হবে। তবে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপালে শক্তিশালী অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতার কারণে মূল্যস্ম্ফীতি বাড়বে। জলবায়ুর পরিবর্তন বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, এই অঞ্চলের দেশগুলোতে মৎস্য আহরণ, কৃষি উৎপাদন ও ভৌগোলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আসবে। এতে শ্রম উৎপাদনশীলতা কমে গিয়ে বৈষম্য বাড়াবে। বাংলাদেশ এই ঝুঁকির বাইরে নয়। বাংলাদেশের ৩০ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেই। এদের বয়স ২৪-৩৪ বছরের মধ্যে।

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

প্রবৃদ্ধি অর্জনে তৃতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ : জাতিসংঘ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে যেসব দেশ সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে সেই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে সরকার আশা করছে, এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। গত শুক্রবার সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি ২০২০ সালে বিশ্বে মাত্র দুটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হবে। তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের।

বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ (ইউএন-ডেসা), আঙ্কটাড ও জাতিসংঘের পাঁচটি আঞ্চলিক পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গায়ানা ও আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানে। গায়ানায় হঠাৎ তেলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন এক লাখ ২০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হচ্ছে দেশটিতে। ফলে চলতি বছরে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া দক্ষিণ সুদানের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে। যেসব দেশের ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে তাদের মধ্যে ইথিওপিয়ার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, রুয়ান্ডার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, আইভরি কোস্টের ৭ দশমিক ১ শতাংশ ও মালদ্বীপের ৭ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশে। এ বছর তা খানিকটা বেড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তুলনামূলক বেশি অগ্রগতি করছে। বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়েছে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক চাহিদাকেও কাজে লাগিয়েছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ছিল অপ্রত্যাশিত। বাংলাদেশ এখনও বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পে নির্ভরশীল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসডিজির ৮ নম্বর অভীষ্টের প্রথম লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে এলডিসি দেশগুলোতে অন্তত ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। এই লক্ষ্যমাত্রা এলডিসি দেশগুলোর মাত্র ১৫ শতাংশ দেশ অর্জন করতে পেরেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে দুর্দশায় আছে। ভারতের অর্থনৈতিক মন্দা এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক অগ্রগতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হবে। তবে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপালে শক্তিশালী অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতার কারণে মূল্যস্ম্ফীতি বাড়বে। জলবায়ুর পরিবর্তন বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, এই অঞ্চলের দেশগুলোতে মৎস্য আহরণ, কৃষি উৎপাদন ও ভৌগোলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আসবে। এতে শ্রম উৎপাদনশীলতা কমে গিয়ে বৈষম্য বাড়াবে। বাংলাদেশ এই ঝুঁকির বাইরে নয়। বাংলাদেশের ৩০ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেই। এদের বয়স ২৪-৩৪ বছরের মধ্যে।