প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এর কোন প্রয়োজন ছিল না। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে আসা শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদপত্র দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। গালফ নিউজের অনলাইন সংস্করণে গত শনিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
ভারতীয়দের একাংশের প্রবল আপত্তি এবং বিক্ষোভ-আন্দোলনের মধ্যেই গত ১০ জানুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করার কথা জানানো হয়। সংশোধিত এই নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলমানরা (হিন্দু, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন) ভারতের নাগরিকত্ব পাবে।
ভারতের এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গালফ নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (ভারত সরকার) কেন এটা (নাগরিকত্ব আইন সংশোধন) করল আমরা বুঝি না। এর প্রয়োজন ছিল না। তবে একই সঙ্গে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিষয়টিকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই বলে এসেছে যে, সিএএ ও এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত সরকারও বারবার তাদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করেছে যে এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফরকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগতভাবেও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলে এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে ১ কোটি ৬০ লাখ হিন্দু (মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ) থাকার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশিদের ভারতে পাড়ি দেয়ার বিষয়টি নাকচ করেন। এ ছাড়া এনআরসি বা সিএএর কারণে ভারত থেকে কারও বাংলাদেশে ফিরে আসার কোন তথ্য নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ভারত থেকে কোন অভিবাসী ফিরে আসছে না। তবে ভারতের ভেতরে মানুষ অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা নানা ক্ষেত্রে আরও প্রসারিত হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই সমস্যার শুরুটা যেহেতু মায়ানমারে, সেহেতু তাদেরই সমাধান করতে হবে। মায়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরতের উদ্যোগ নেয়া হলেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে তারা ফিরতে চাইছে না। প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে মায়ানমারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের অবসান না হলে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
বাংলাদেশ কয়লা বিদ্যুতের দিকে মনোযোগ বাড়ালেও এক্ষেত্রে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ এতদিন গ্যাসের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু গ্যাস ফুরিয়ে আসায় উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এখন কয়লাসহ অন্য উৎসের দিকে নজর দিতে হচ্ছে। বিশাল জনসংখ্যার দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেই সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন, তাও তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
সংবাদ ডেস্ক |
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এর কোন প্রয়োজন ছিল না। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে আসা শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদপত্র দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। গালফ নিউজের অনলাইন সংস্করণে গত শনিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
ভারতীয়দের একাংশের প্রবল আপত্তি এবং বিক্ষোভ-আন্দোলনের মধ্যেই গত ১০ জানুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করার কথা জানানো হয়। সংশোধিত এই নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলমানরা (হিন্দু, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন) ভারতের নাগরিকত্ব পাবে।
ভারতের এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গালফ নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (ভারত সরকার) কেন এটা (নাগরিকত্ব আইন সংশোধন) করল আমরা বুঝি না। এর প্রয়োজন ছিল না। তবে একই সঙ্গে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিষয়টিকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই বলে এসেছে যে, সিএএ ও এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত সরকারও বারবার তাদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করেছে যে এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফরকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগতভাবেও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলে এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে ১ কোটি ৬০ লাখ হিন্দু (মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ) থাকার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশিদের ভারতে পাড়ি দেয়ার বিষয়টি নাকচ করেন। এ ছাড়া এনআরসি বা সিএএর কারণে ভারত থেকে কারও বাংলাদেশে ফিরে আসার কোন তথ্য নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ভারত থেকে কোন অভিবাসী ফিরে আসছে না। তবে ভারতের ভেতরে মানুষ অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা নানা ক্ষেত্রে আরও প্রসারিত হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই সমস্যার শুরুটা যেহেতু মায়ানমারে, সেহেতু তাদেরই সমাধান করতে হবে। মায়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরতের উদ্যোগ নেয়া হলেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে তারা ফিরতে চাইছে না। প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে মায়ানমারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের অবসান না হলে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
বাংলাদেশ কয়লা বিদ্যুতের দিকে মনোযোগ বাড়ালেও এক্ষেত্রে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ এতদিন গ্যাসের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু গ্যাস ফুরিয়ে আসায় উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এখন কয়লাসহ অন্য উৎসের দিকে নজর দিতে হচ্ছে। বিশাল জনসংখ্যার দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেই সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন, তাও তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।