নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ঠেকাতে কমিশন গঠনের নির্দেশ

শিশু ধর্ষণকারীকে কেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ঠেকাতে একজন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এদিকে, নারীদের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্র অ্যান্টি রেপ ডিভাইস সরবরাহের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ।

গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

রুলে ১৬ বছরের নিচে কেউ ভিকটিম হলে সেক্ষেত্রে ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রণয়ন করায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনায় কারও মৃত্যু ঘটলে সেক্ষেত্রে আইনে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজার যে বিধান রয়েছে, সে যাবজ্জীবন সাজা ওঠিয়ে দিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ভিকটিমদের জন্য স্বাক্ষী সুরক্ষা আইন কেন প্রণয়ন করা হবে না, ধর্ষকদের ডিএনএ সংরক্ষণের জন্য কেন ডিএনএ ডাটাবেজ করা হবে না, প্রতিটি জেলায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে ভিকটিমদের সুরক্ষায় কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, ভিকটিমদের ছবি গণমাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে কেন সতর্কতা অবলম্বন করা হবে না, সব ধরনের ধর্ষণের অপরাধের জন্য কেন পৃথক একটি আদালত গঠন করা হবে না এবং সে আদালতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালত আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই রিট মামলার সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের প্রতিনিধি, সুপরিচিত মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের একজন করে প্রতিনিধি, আইনজীবী, বিচারক, সমাজের সচেতন নাগরিক, সমাজের বিশিষ্টজন, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষাকরণ চিকিৎসক ও চাইলে ভিকটিমকে যুক্ত করে ওই কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই কমিশনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালা তৈরি করে আদালতে প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অ্যান্টি রেপ ডিভাইস

দেশে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে নারীদের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্র অ্যান্টি রেপ ডিভাইস সরবরাহের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটিতে বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাখতে বলা হয়েছে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এই কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নারীদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. আবদুল হালিম। গত ১২ জানুয়ারি অ্যান্টি রেপ ডিভাইস সরবরাহের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এ রিটটি দায়ের করা হয়।

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ঠেকাতে কমিশন গঠনের নির্দেশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

শিশু ধর্ষণকারীকে কেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ঠেকাতে একজন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এদিকে, নারীদের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্র অ্যান্টি রেপ ডিভাইস সরবরাহের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ।

গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

রুলে ১৬ বছরের নিচে কেউ ভিকটিম হলে সেক্ষেত্রে ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রণয়ন করায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনায় কারও মৃত্যু ঘটলে সেক্ষেত্রে আইনে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজার যে বিধান রয়েছে, সে যাবজ্জীবন সাজা ওঠিয়ে দিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ভিকটিমদের জন্য স্বাক্ষী সুরক্ষা আইন কেন প্রণয়ন করা হবে না, ধর্ষকদের ডিএনএ সংরক্ষণের জন্য কেন ডিএনএ ডাটাবেজ করা হবে না, প্রতিটি জেলায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে ভিকটিমদের সুরক্ষায় কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, ভিকটিমদের ছবি গণমাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে কেন সতর্কতা অবলম্বন করা হবে না, সব ধরনের ধর্ষণের অপরাধের জন্য কেন পৃথক একটি আদালত গঠন করা হবে না এবং সে আদালতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালত আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই রিট মামলার সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের প্রতিনিধি, সুপরিচিত মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের একজন করে প্রতিনিধি, আইনজীবী, বিচারক, সমাজের সচেতন নাগরিক, সমাজের বিশিষ্টজন, ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষাকরণ চিকিৎসক ও চাইলে ভিকটিমকে যুক্ত করে ওই কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই কমিশনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালা তৈরি করে আদালতে প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অ্যান্টি রেপ ডিভাইস

দেশে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে নারীদের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্র অ্যান্টি রেপ ডিভাইস সরবরাহের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটিতে বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাখতে বলা হয়েছে। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এই কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নারীদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. আবদুল হালিম। গত ১২ জানুয়ারি অ্যান্টি রেপ ডিভাইস সরবরাহের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এ রিটটি দায়ের করা হয়।